২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাগদাদে সাড়ে ৩ মাস ধরে জিম্মি ১৬৫ কর্মী, হুঁশিয়ারি দূতাবাস কর্মকর্তাদের

বাগদাদে সাড়ে ৩ মাস ধরে জিম্মি ১৬৫ কর্মীর খোঁজ নিয়েছে দূতাবাস - সংগৃহীত

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি দোতলা বাড়িতে সাড়ে তিন মাস জিম্মি ১৬৫ শ্রমিকের খোঁজ অবশেষে নিয়েছেন দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। 
বুধবার সকালে ইরাকি পুলিশসহ দূতাবাস কর্মকর্তারা ওই বাড়িতে সরেজমিন খোঁজ নেন এবং বেশ কিছু ছবি তোলেন। পরে জিম্মি থাকা শ্রমিকদের সমস্যার দ্রুত সমাধান করে কাজে যোগদান করাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেন। এরপরেও যদি অসহায় এসব কর্মীর পাসপোর্ট উদ্ধারসহ সমস্যা সমাধানে কোনো রকমের টালবাহানা করা হয় তাহলে ইরাকের আইন অনুযায়ী তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বাগদাদের জিম্মিদশায় আটক শ্রমিকদের একজন সুজন নয়া দিগন্তকে বলেন, বুধবার বাংলাদেশ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি (এইচওসি) আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরান স্যার পুলিশ নিয়ে আমাদের এখানে এসেছিলেন। তিনি আমাদের সমস্যাগুলো শুনেছেন। পরে যারা আমাদের আটকে রেখেছেন তাদেরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে গেছেন, শ্রমিকদের পাসপোর্ট সমস্যার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করে কাজে যোগদান করাতে হবে। দূতাবাসের কর্মকর্তা তাদেরকে আরো বলেছেন, শ্রমিকদের সাথে টাকা নিয়ে কোনো কথা থাকলে দালালদের সাথে বোঝেন, অফিসে বসে আলোচনা করেন; কিন্তু আপনারা আমাদের লোক আটকিয়ে রাখবেন কেন? এর পরে এসে যদি দেখি ঝামেলা শেষ হয়নি তাহলে আমরা জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেবো। 

শ্রমিক সুজন এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, আমাদেরকে যে পাতাকপি খাওয়াতো দূতাবাসের কর্মকর্তা সেগুলোর ছবিসহ আরো বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, পত্রিকায় আমাদের যে ১৪ জনের নাম উঠেছে মূলত তাদের বিষয়ে দূতাবাস কর্মকর্তা জোর দিয়েছেন। এখন অন্য যারা এত দিন মুখ খোলেনি তারাও তাদের সমস্যার কথা দূতাবাস কর্মকর্তার কাছে জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি কাপাসিয়া ওভারসিস ও নাজ অ্যাসোসিয়েটস থেকে আমরা যে ১৪ জন এসেছি তাদের মধ্য থেকে ফজলু ও অলি হাওলাদার এখানকার অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আগেই পাসপোর্ট ছাড়া পালিয়ে গেছে। আর শাহজাহান নামের এক শ্রমিক দেড় লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসা করে ছাড়া পেয়েছে। এখন আমরা বাকি রয়েছি ১১ জন। তিনি বলেন, আমাদের কারো কাছে এক টাকাও তারা পাবে না। আমরা ঢাকা থেকে আসার আগেই সব টাকা দিয়ে তারপর ইরাকে এসেছি। তবে দূতাবাস কর্মকর্তারা খোঁজখবর নেয়ায় সুজন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা এখন আমাদের পাসপোর্টগুলো ফেরত পাবো বলে আশা করছি। তবে অবশ্যই তাদের যেন কাজে যোগদান করানো হয় সে জন্য তিনি দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানান। 

গতকাল ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে দূতাবাসের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, যে ১৬৫ জন শ্রমিক সাড়ে তিন মাস বাগদাদের বাড়িতে আটকাবস্থায় আছে তাদের খোঁজ নেয়ার জন্য দূতাবাস থেকে কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১৬৫ জন কর্মী কোন কোন এজেন্সি থেকে এসেছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। আমরা শ্রমিকদের মুক্ত করার বিষয়ে তথ্যগুলো সংগ্রহ করছি। এরপর দূতাবাসের পক্ষ থেকে যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হবে। 

এ দিকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ‘ডাক্তার লিটনের’ বিষয়ে ইরাকে এবং বাংলাদেশে ব্যাপক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মূলত লিটন, মতিয়ার, মামুনসহ ইরাকে গড়ে ওঠা একটি চক্র বাংলাদেশী কর্মীদের কাজে যোগদান না করিয়ে জিম্মি করে রাখছেন। পরে ঢাকায় তাদের স্বজনদের ফোন করে দ্বিতীয় দফা টাকা দাবি করছেন; কিন্তু আটক শ্রমিকদের স্বজনেরা বলেছেন তারা আর কোনোভাবেই টাকা দিতে পারবেন না। তারপরও প্রিয় মানুষগুলো যাতে কষ্টে না থাকে সে জন্য স্বজনেরা তাদের খাওয়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ এখন প্রতি মাসে সাত-আট হাজার টাকা পাঠাচ্ছেন। 

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শ্রমিক আখতার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমারা এসেছি এখানে কাজ করতে; কিন্তু আমাদের কাজ তো দেয়া হচ্ছে না উল্টো এখন দেশ থেকে টাকা এনে জীবন বাঁচাচ্ছি। এভাবে আর কত দিন চলবে জানি না। আখতারের চাচা বুধবার রাতে এ প্রতিবেদককে ফোন করে তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, তাদের আর কত দিন আটকে রাখা হবে? 
এ দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সবুজবাগ থানার ইন্সপেক্টর আজাদ টেলিফোন করে জানতে চান- শ্রমিকদের পাসপোর্ট উদ্ধারের পর কাজ না দিয়ে কি দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে? 
তিনিও ইরাকে আটক তার আত্মীয়ের জন্য কয়েক দিন ধরে কাকরাইলের জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো অফিসে খোঁজ নিচ্ছেন। 

এ প্রসঙ্গে গতকাল রাত ৮টায় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। পরে বিএমইটির বহির্গমন শাখার পরিচালক মো: মুজিবর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকেও পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল