২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক আদালতে ওআইসি

সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত
রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক আদালতে ওআইসি - ফাইল ছবি

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের ওপর চালানো নৃশংসতার সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজধানী আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ৫৭ জাতির ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে শেষে সর্বসম্মতভাবে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ওআইসির সিদ্ধান্তকে একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসাবে দেখছে বাংলাদেশ।

একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার ওআইসির সিদ্ধান্তটি হয়েছে। এ জন্য গাম্বিয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছিল। গত ১০ ফেব্রুয়ারি গাম্বিয়াতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণহত্যা সনদ, মানবাধিকার ও মানবিক আইনের নীতির আওতায় রোহিঙ্গাদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইসিজেতে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়।

আরো পড়ুন :
রোহিঙ্গা নৃশংসতার বিচারে ওআইসির সহায়তা চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ০২ মার্চ ২০১৯
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতায় জড়িতদের জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনার জন্য ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সহায়তা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন। তিনি একই সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আবুধাবিতে গতকাল শুক্রবার ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের (কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স) ৪৬তম অধিবেশনে ড. মোমেন এ আহ্বান জানান। গত মাসে মিনিস্ট্রিয়াল কমিটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওআইসি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে ওআইসির দৃঢ় পদক্ষেপ কামনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার নমনীয় ও কঠোর- উভয় পদ্ধতিতেই সন্ত্রাস দমনে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ওআইসি সম্মেলনের সাইডলাইনে ড. মোমেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজসহ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ ও গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তবে এর প্রতিবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি সম্মেলনে আসেননি। তার একজন প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছেন।

সম্মেলনে রাখা বক্তব্যে সুষমা স্বরাজ ভারতের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেন। তিনি অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।

ড. মোমেনের সাথে সাইডলাইন বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটিসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করতে হবে
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
জাতিসঙ্ঘের ভাষায় বর্তমানে ‘দুনিয়ায় সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী’ রোহিঙ্গা। শত শত বছর ধরে নিজবাসভূমে বসবাস করলেও এখন নাগরিকত্বহীন। সব ধরনের নাগরিক অধিকারহারা। অধিকন্তু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ওপর চালায় নির্মম নির্যাতন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে বলেছেন, রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। জীবন বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে সংঘটিত হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনেও তা স্পষ্ট, যা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে নজিরবিহীন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেও মিয়ানমার রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি বলে তাদের এখনো ফেরত পাঠানো যায়নি।

এমন প্রেক্ষাপটে রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা কারা চালিয়েছে, নির্মূল অভিযানে মিয়ানমারের কোন কোন সামরিক ইউনিট অংশ নিয়েছে এবং তাদের অধিনায়কদের নাম-পরিচয় কী? মিয়ানমারকে এসব প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে কনভেনশন অন দ্য এলিমিনেশন অব ডিসক্রিমিনেশন অ্যাগেইনস্ট উইমেন (সিডও) বা ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বিলোপ কমিটি’। গত শুক্রবার জেনেভায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদে চলা সিডও’র অধিবেশনে প্রশ্নবাণের জবাবে মিথ্যাচার করেছে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল।

সিডও বিশেষজ্ঞদের প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতা বলেছেন, ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ (নির্মূল অভিযান) রুটিন কাজ। সামরিক বাহিনীর লোক না হওয়ায় ওই বিষয়ে তথ্য জানার সুযোগও তাদের নেই। মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতা তার সমাপনী বক্তব্যে সিডও সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের সীমাবদ্ধতা বোঝার আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিষয় নিয়ে তথ্য-প্রমাণসহ বহু সংবাদ বেরিয়েছে, যা দুনিয়াবাসী জানে। মিয়ানমার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তা জানবেন না, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এমন মিথ্যাচারে বিশ্ববিবেক লজ্জিত।

সিডওর বিশেষজ্ঞদের অনেক মন্তব্যকে ‘অভিযোগ’ ও ‘অতিরঞ্জিত’ হিসেবে উল্লেখ করে মিয়ানমার প্রতিনিধি বলেছেন, এসব প্রশ্ন মিয়ানমার মেনে নিতে পারে না। সিডও কমিটির একটি প্রশ্ন ছিল, মিয়ানমারের বিচারব্যবস্থা কতটা স্বাধীন? বেসামরিক আদালত কি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর আদৌ বিচার করতে পারে? মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা এর ইতিবাচক উত্তর দেন। সিডও রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের বিষয়ে জানায়। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জবাবে বলেন, তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করা হচ্ছে।

সিডও জানতে চায়, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার কী করছে? রাখাইনে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল বলে মন্তব্য করে সংস্থাটি। সেখানে তাদের কঠিন বিধিনিষেধের শিকার হতে হয় বলেও জানানো হয়। রাখাইনে আরো অন্তত দুই লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর এমন সহিংসতা গত তিন দশকে অন্তত আরো দু’বার হলেও তার সুরাহা হয়নি।

সিডও বলে, নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে। নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমার যে উত্তর দিয়েছে তা যথার্থ নয়। চলাফেরার অধিকার না থাকা নিয়ে উদ্বেগ জানানো যৌক্তিক। মিয়ানমার বলেছে, আইন অনুযায়ী তারা সব নাগরিক অধিকার পায়। মিয়ানমার প্রতিনিধিদল শুরুতে তাদের দেশের সবার সমান অধিকার, শান্তি, সম্প্রীতির বিবরণ দিলেও বিশেজ্ঞদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিমশিম খায়। তারা প্রশ্ন এড়ানোর চেষ্টা করেছে সময়স্বল্পতার অজুহাতে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আজকের রাখাইন রাজ্য এক সময় রোহিঙ্গাদের স্বাধীন আবাস ভূমি আরাকান নামে পরিচিত ছিল, যা এখন মিয়ানমারের অন্তর্ভুক্ত। এরা ছিল মিয়ানমারের নাগরিক। কিন্তু এক সময় মিয়ানমারের সামরিক সরকার তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে শুরু করে জাতিগত নিধনের নানা প্রক্রিয়া। তারা নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে দফায় দফায় স্বদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ অংশ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে চাপ দিলেও কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে টালবাহানা করছে মিয়ানমার। আর নির্যাতনের ব্যাপারে মিথ্যাচার করে সত্যকে ঢাকা দেয়ার নীতি নিয়েছে নেপিডো।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের আহ্বান, রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধ করেছে, তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হোক। এর জন্য জাতিসঙ্ঘকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অপরাধী মিয়ানমার নিজের অপরাধ ঢাকতে মিথ্যাচার করবে, তা চলতে দেয়া যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল