২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারত-পাকিস্তান সঙ্ঘাত : বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নে বিশ্লেষকদের অভিমত

ভারত-পাকিস্তান সঙ্ঘাত
ভারত-পাকিস্তান সঙ্ঘাত : বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নে বিশ্লেষকদের অভিমত - ছবি : নয়া দিগন্ত

ভারত-পাকিস্তান হামলা-পাল্টাহামলা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। অনেকে এটাকে যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান না হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। তবে অনেকের মতে এ সঙ্ঘাতের পেছনে রয়েছে একটি পক্ষের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সে কারণে এ সঙ্ঘাত বেশিদূর অগ্রসর নাও হতে পারে। তবে এ সঙ্ঘাতে বাংলাদেশকে কোনো একটি পক্ষের দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকে না পড়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

উভয় দেশের যুদ্ধ যদি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে এবং বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অবলম্বনে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুদ্ধ চলতে থাকলে তা তার নিজের বা নরেন্দ্র মোদি কারোরই নিয়ন্ত্রণে নাও থাকতে পারে। অনেকের মতে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শেষপর্যায়ে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি কেউ কেউ। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল গোটা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতি। আর সে কারণে ভারত-পাকিস্তান সর্বশেষ সঙ্ঘাত নিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা।

বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, পরিস্থিতি তো খারাপের দিকেই চলে গেল। হামলা-পাল্টাহামলা চলছে। এটা তো যুদ্ধ। অবিলম্বে এটা থামাতে না পারলে আরো গুরুতর পর্যায়ে চলে যেতে পারে এবং গোটা উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতি নস্যাৎ হবে এতে।

সঙ্ঘাতের পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি রয়েছে এ ধরনের অভিযোগ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি মনে করি এটা নরেন্দ্র মোদির একটা স্ট্যান্ট। কারণ তার জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে।

যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিণতিতে পারমাণবিক হামলার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন মাহবুবুর রহমান।

মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের মধ্যে শান্তির চেষ্টা চালাবে না কি কোনো একটি পক্ষকে সমর্থন দেবে সে বিষয়ে আমি এখনো পরিষ্কার নই। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ভারতমুগ্ধ। তাই আমি চিন্তিত তারা যদি একতরফাভাবে ভারতকে সমর্থন দেয় তাহলে আমাদের কূটনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি অবস্থান নিতেই হবে। তা হলো কাশ্মিরের স্বাধীনতার পক্ষে। ১৯৪৭-৪৮ সালের ইতিহাস ঘাটলেই তা পরিষ্কার। আমাদের সংবিধানে বলা আছে সব মুক্তিকামী স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে অবস্থানের। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কি ভারতের পক্ষে অবস্থান নেবে, না কাশ্মিরের পক্ষে। ভারত আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। কিন্তু এখন কাশ্মিরে ভারতের যে নিপীড়ন-অত্যাচার চলছে বাংলাদেশ কি তা বন্ধে কোনো আবেদন করবে, চেষ্টা চালাবে নাকি ভারতকেই সমর্থন জানিয়ে যাবে। এসব বিষয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মেজর জেনারেল ইবরাহিম বলেন, আমার আবেদন কোনো দেশই যেন দলীয় স্বার্থে কাশ্মিরের যুদ্ধকে ব্যবহার না করে।

সাবেক বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, জইশে মোহাম্মদের ঘাঁটি পাকিস্তানের ভাওয়ালপুরে। ভারত হামলা করলে সেখানে করবে; কিন্তু তারা হামলা করেছে বালাকোটে। সেখানে তো ঘাঁটি নেই।

তিনি বলেন, মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের তিনটি রাজ্য নির্বাচনে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল হেরেছে। ওই সব রাজ্যে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কারণেও মোদি আতঙ্কে ভুগছেন। মোদির নীতি বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদ ভারতের জনগণ আর নিচ্ছে না। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় হামলার জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায় সরাসরি নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন মোদি এটা আগে থেকে জেনেও এ হামলা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি। মোদি এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও অভিযোগ করেছেন মোদি পুলওয়ামা হামলা নিয়ে রাজনীতি করছেন। এ থেকে এটা পরিষ্কার মোদির এ নীতি ভারতে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না।

সাবেক এ সেনাকর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তনের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পুলওয়ামার ঘটনা তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন; কিন্তু ভারত তার সে প্রস্তাবে কোনো সাড়া না দিয়ে হামলা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনে এই মুহূর্তে দুই দেশ ইমরানের প্রস্তাব মতো আলোচনার উদ্যোগের মধ্যেই রয়েছে। এতে হয়তো সাময়িক এ উত্তেজনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কিন্তু যে কারণে এ সঙ্ঘাত সেই কাশ্মির সমস্যার সমাধান অসমাপ্তই রয়ে গেল। আর বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় কাশ্মির সমস্যা রাতারাতি সমাধানেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। কাশ্মির সমস্যা সমাধানে বড় বাধা ভারত। আর এ সমস্যা সমাধানে চীনকেও এগিয়ে আসতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement