২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাহাথিরের ঘোষণা থেকে ফায়দা নিতে চাচ্ছে আদম ব্যাপারিরা!

মাহাথির মোহাম্মদ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সি এবার শ্রমিক পাঠাতে পারবে, এমন ঘোষণা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ দেয়ার পরই জনশক্তি রফতানিকারকদের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী যাওয়ার আগেই কিছু জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান এবং তাদের মাঠপর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীরা (দালাল) গ্রামের অসহায় বিদেশগামীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট এবং নগদ টাকা সংগ্রহ শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ২০০৮ সালের মতো আবারো শ্রমবাজারে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ায় থাকা কূটনীতিক, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও ‘ক্লিন’ ইমেজের রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা। 

তারা বলছেন, অবিলম্বে এসব দুষ্ট লোককে দ্রুত চিহ্নিত করে প্রশাসনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সম্ভবনাময় শ্রমবাজার যাতে কারো দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন। 

গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ: শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। তবে হাইকমিশনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ২৪ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের যে বৈঠক কুয়ালালামপুরের পুত্রজায়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে আমরা উভয়পক্ষই সন্তুষ্ট। কারণ তারা এবার শুধুমাত্র ১০টি এজেন্সি নয়, আমাদের দাবি মোতাবেক সব রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসা করতে পারবে বলে নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি তারা এ-ও বলেছেন, অভিবাসন ব্যয় অবশ্যই কমাতে হবে। খুব শিগগির তারা ইউনিফাইড নতুন অনলাইন সিস্টেমে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিক আনার চাহিদাপত্র দেয়া শুরু করবে।

ওই কূটনীতিক বলেন, আমরা আশা করছি এসপিএএ সিস্টেমের আদলে নতুন সিস্টেমে যেকোনো সময় বাংলাদেশ থেকে কর্মী আসতে শুরু করবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত নতুনভাবে কর্মী না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (অন্তর্বর্তীকালীন) ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অর্ধেক আবার অনলাইন পদ্ধতিতে বাকি অর্ধেক কর্মী এদেশে আসতে পারবে। এ সময়ের মধ্যে যারা কেডিএন থেকে চাহিদাপত্র নিয়ে আমাদের হাইকমিশনে জমা দিবেন সেগুলো আমরা যাচাই বাছাই করে (সত্যায়ন) দিয়ে দেবো। 

গতকাল মালয়েশিয়া থেকে একজন জনশক্তি রফতানিকারক এ প্রতিবেদককে টেলিফোনে জানান, সবার জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ায় একদিকে যেমন সুবিধা হয়েছে, অপর দিকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু এজেন্সি তাদের লোক দিয়ে গ্রাম থেকে পাসপোর্ট কালেকশন ও টাকা নেয়া শুরু করেছে। এ ঘটনার সত্যতা জানতে গতকাল শুক্রবার যোগাযোগ করা হলে গুলশান থেকে এক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এ প্রতিবেদককে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার কোন পদ্ধতিতে লোক নেবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তার আগেই একটি চক্র সারা দেশ থেকে পাসপোর্ট আর টাকা কালেকশনে নেমে পড়েছে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। নতুবা এই সুযোগ তৃতীয়পক্ষ লুফে নিতে পারে। তখন শ্রমবাজার হুমকিতে পড়তে পারে। দেখা দিতে পারে বিশৃঙ্খলা। 

গতকাল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, এখনো মালয়েশিয়া সরকার তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি, তারা কোন পদ্ধতিতে শ্রমিক নেবে। তবে তারা কিভাবে আমাদের এখান থেকে কর্মী নেবে সেই পলিসি তারা দিচ্ছে। তার আগে কেউ যদি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর কথা বলে টাকা, পাসপোর্ট নিয়ে থাকে বা টাকা লেনদেন করে থাকে, তাহলে সেই এজেন্সি ও তাদের লোকজনের ওপর এর দায় পড়বে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের ক্যাবিনেট সভায় বসে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ কোন দেশেই কাউকে আমরা সিন্ডিকেট করতে দেবো না। এর জন্য আগামী ৮ অক্টোবর বেলা আড়াইটায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সাথে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে অনেক এজেন্ডা থাকবে।

এর মধ্যে অভিবাসন ব্যয় কমানো, রিক্রুটমেন্ট পলিসি কী হবে, ডাটাবেস, নতুন মার্কেট খোলা, মালয়েশিয়ায় কিভাবে শ্রমিক যাবে, সিন্ডিকেট বন্ধ করা। বিশেষ করে সৌদি আরবের ড্রপবক্স যাতে চালু হতে না পারে সে ব্যাপারেও এজেন্ডা রয়েছে।

এর আগে মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রির সাথে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন দাতো এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়া সরকার কর্মী আমদানি স্থগিত ঘোষণা করেছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। এ সময়ের মধ্যে যে ৭২ হাজার কর্মী বিদেশ যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল তাদের সবাইকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে ভারতসহ ৪টি সফটওয়্যার কোম্পানি অনলাইনে নতুন পদ্ধতিতে শ্রমিক আমদানির ফর্মুলা জমা দিয়েছে। এর মধ্যে থেকে যেটি ভালো হবে সেটিই তারা ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বসে গ্রহণ করতে পারে। তবে সেই সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহেও আসতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

মালয়েশিয়ায় ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ২০০৭-০৮ সালে যে পৌনে ৮ লাখ শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছিলেন তার মধ্যে অনেকেই লাখ লাখ টাকা খরচ করে যাওয়ার পরও তারা কোম্পানিই খুঁজে পাননি। অসহায় শ্রমিকদের জন্য খুলতে হয়েছিল হাইকমিশনের শেল্টার হোম। পরবর্তীতে অনেকে জেলজুলুম সহ্য করে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন। এই অবস্থায় ৫৯ হাজার কলিং ভিসা থাকার পরও মালয়েশিয়া সরকার এক ঘোষণায় শ্রমবাজার স্থগিত ঘোষণা করে।

ওই পরিস্থিতি যাতে আর না ফিরে আসে সে ব্যাপারে এখন থেকেই অভিবাসন বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা সবাইকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। একই সাথে শ্রমবাজার নষ্টের সাথে জড়িতদের চিহ্নিহ্নত করে তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।


আরো সংবাদ



premium cement