২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ই-টোকেন প্রত্যাহার হচ্ছে : ভারতীয় ভিসা আবেদনের নতুন কেন্দ্রের উদ্বোধন কাল

ভারতীয় ভিসা আবেদনের নতুন কেন্দ্রের উদ্বোধন কাল - সংগৃহীত

ভারতীয় ভিসা আবেদনে ই-টোকেন ব্যবস্থা প্রত্যাহার হচ্ছে। কাল শনিবার সকালে যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা আবেদনের নতুন কেন্দ্রের উদ্বোধনের মাধ্যমে তার কার্যক্রম শুরু হবে। এই কেন্দ্র উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান ই-টোকেন ব্যবস্থাও প্রত্যাহার হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথভাবে এই আবেদন কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন।

ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যমুনা ফিউচার পার্কে এই নতুন ভিসা আবেদন কেন্দ্রে ঢাকায় বিদ্যমান সব ভিসা আবেদন কেন্দ্র (মতিঝিল, উত্তরা, গুলশান ও মিরপুর রোড) প্রতিস্থাপিত হবে। একই সঙ্গে ভারতীয় ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার জন্য বিদ্যমান ই-টোকেন (সাক্ষাৎকার) ব্যবস্থাও প্রত্যাহার করা হবে। মতিঝিল ও উত্তরায় অবস্থিত ভিসা আবেদন কেন্দ্র ১৫ জুলাই থেকে যমুনা ফিউচার পার্কে নতুন ভিসা আবেদন কেন্দ্রে প্রতিস্থাপিত হবে। বাকি দুটি ভিসা আবেদন কেন্দ্রও (গুলশান ও মিরপুর রোড) ৩১ আগস্টের মধ্যে নতুন ভিসা আবেদন কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হবে। এরপর থেকে ঢাকায় এটিই হবে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকারসূচি ছাড়াই সব শ্রেণির ভিসা আবেদনের জন্য একমাত্র ভিসা আবেদন কেন্দ্র।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যমুনা ফিউচার পার্কে নতুন ভিসা আবেদন কেন্দ্র একটি মডেল ভিসা কেন্দ্র হবে। ১৮ হাজার ৫০০ বর্গফুট বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত এই ভিসা আবেদন কেন্দ্রে থাকবে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত টোকেন ভেন্ডিং মেশিন (প্রত্যাশিত প্রতীক্ষা সময় নির্দেশিত হবে), আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা ও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অপেক্ষা করার স্থান, কফি ও কোমল পানীয় ভেন্ডিং মেশিন, খাবার দোকান ও আবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৪৮টি কাউন্টার।

জ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায় ভিসা আবেদনের জন্য আলাদা কাউন্টার থাকবে। একটি বিশেষ সহায়তা ডেস্ক ও প্রিন্টিং, ফটোকপি ইত্যাদি সেবার জন্য কাউন্টার থাকবে, যেখানে মূল্য পরিশোধ করে সেবাগুলো পাওয়া যাবে। একটি প্রশস্ত ও নিরাপদ বিপণিকেন্দ্রে নতুন ভিসা আবেদন কেন্দ্র হওয়ায় আবেদনকারীদের আরামদায়ক ও নিরবচ্ছিন্ন ভিসা সেবা প্রদান সম্ভব হবে এবং আবেদনের জন্য অপেক্ষা করার সময়ও কমবে বলে দাবি করেছে হাইকমিশন।

 

ভারতীয় ভিসা আবেদনের বর্তমান নিয়ম
চলুন, প্রথমেই জেনে নেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপগুলো কি কি।
১. আবেদন ফর্ম রেডি করা (পুরণ করা, ছবি আর স্বাক্ষর দেয়া) ২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ ৩. ভিসা আবেদন ফি পরিশোধ করা ৪. ভিসা আবেদন জমা দেয়া ৫. পাসপোর্ট সংগ্রহ বা ফেরত নেয়া।


ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আপনারা যারা জানেন কিভাবে কি করতে হয়, শুধু জানতে এসেছেন যে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে এখং এত বড় লেখা পড়ার সময় নেই তাদের জন্য এটুকুই যথেষ্ট। তাহলে চলুন এখন, যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে তা এক নজরে দেখে নিই। এখানে সব ডকুমেন্ট যে ক্রমে জমা দিতে হবে সেই ক্রম অনুযায়ী দেয়া হল। IVAC গেলেই দেখবেন উচ্চসরে বারবার বলা হবে যে এই ক্রমে কাগজ রেডি করুন।

পাসপোর্ট
এককপি ২x২ ইঞ্চি মাপের প্রিন্টেড ছবি ও আরেটি সফট কপি।
পুরনকৃত ফর্ম
স্মার্ট কার্ড/এনআইডি অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি
ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা টেলিফোন বিল)
ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এনডোর্সমেন্ট
পেশার প্রমাণপত্র (চাকুরিজীবি হলে NOC, ছাত্র হলে আইডি কার্ড বা বেতনের রশিদ আর ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি)
অন্য কোন সাপোর্টিং কাগজ যদি দিতে চান।
পাসপোর্ট এর ডাটা পেইজের ফটোকপি
যদি পুরাতন পাসপোর্ট থাকে তাহলে অবশ্যই দিতে হবে। আর হারিয়ে গেলে লস্ট সার্টিফিকেট।

আইভ্যাক এ ঝুলানো কাগজপত্রের লিস্ট
সকল কাগজপত্রের মেইন কপি নিয়ে যাবেন, ওরা দেখতে চাইবে। না দেখাতে পারলে জমা নাও নিতে পারে। কাগজগুলো স্ট্যাপল করার দরকার নেই, ওরা বলে স্ট্যাপল করা থাকলে খুলে ফেলতে। আপনি চাইলে একটা ফাইলে সব নিতে পারেন।

এখানে শুধুমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে তা উল্লেখ করা হয়েছে। মেডিক্যাল, ট্রানজিট ও ব্যাবসা ভিসার জন্য প্রধান সব ডকুমেন্ট একই তবে আলাদা আলাদা কিছু ডকুমেন্ট লাগে যা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। আপনারা IVAC এর হেল্পলাইন থেকে জেনে নিতে পারেন।

১. ভারতীয় ভিসার আবেদন ফরম প্রস্তুত করা
আবেদন ফর্ম পুরন করার আগে আপনার এই অফিসিয়াল নির্দেশনাগুলো পড়া উচিৎ। আবেদনপত্র পুরন করার আগে আপনার ছবির একটা সফট কপি লাগবে যেটা আপনাকে একেবারে শেষ ধাপে আপলোড করতে হবে। তাই আগে থেকেই রেডি রাখুন। ওদের মতে ”ডিজিটাল ছবি ও একটি রঙ্গীন ছবি (উভয় ছবিই একই হতে হবে এবং তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে তোলা হতে হবে।” আর কোথায় কি তথ্য দিয়ে ফর্ম পুরন করতে হবে তা দেখুন IVAC প্রদত্ত এই ফাইলটিতে।

এখন ইন্ডিয়ান ভিসা ফরম পুরন করতে যান চলে এই লিংক https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/index.html তারপর ‘Online Visa Application‘ লিংকে ক্লিক করে তথ্য পুরন করা শুরু করুন।

উপরের স্যাম্পল ফাইল দেখলেই বুঝবেন কি কি তথ্য কোথায় দিতে হবে। শুধু যেখানে ইন্ডিয়ার কোন রেফারেন্স চাইবে সেখানে যেকোন হোটেলের নাম ঠিকানা, টেলিফোন দিলেই হবে। গুগল ম্যাপে সার্চ দিলেই অনেক হোটেলের নাম পাবেন। একি ভাবে শেষের দিকে ভারতে কোন হোটেলে থাকবেন সেইরকম হোটেলের নাম চাইবে, সেখানেও সেইম হোটেলের নাম, ঠিকানা, টেলিফোন দিন।


ভিসা ডিটেলস
আপনি কি ভিসা চাচ্ছেন, কত মাসের জন্য, এন্ট্রি সংখ্যা ও সবচেয়ে গুরত্বপুর্ন হল পোর্ট সিলেকশন অংশ।

আপনাকে একেবারে প্রথম দিকেই ‘Visa Type’ সিলেক্ট করতে হবে। আপনি যেহেতু টুরিস্ট হিসেবে যাচ্ছেন সেহেতু ‘TOURIST VISA’ সিলেক্ট করুন।

কত মাসের ভিসা চাচ্ছেন এখানে আপনি ৩, ৬, ১২ আপনার যেটা দরকার সেটা দিতে পারেন। তবে ১২ দেয়াই ভাল, কেননা ওরা চাইলে ১২ বদলে ৬ মাস দিতে পারে। কিন্তু আপনি ৩ মাস চাইলে তো আর ওরা ৬ মাস দিবে না।

No of Entries অপশনে আপনি কতবার ভারতে প্রবেশ করতে চান সেটা দিবেন। আপনি SINGLE অথবা MULTIPLE যেতা দরকার দিতে পারেন। তবে ভিসার মেয়াদের মাঝে একাধিকবার যেতে চাইলে MULTIPLE দিবেন।


সবচেয়ে গুরত্বপুর্ন অংশ হল পোর্ট সিলেকশন। মানে যাওয়া আসার জন্য কোন পোর্ট সিলেক্ট করবেন। যেমন ধরুন আমাদের দেশে ৩ টা পোর্ট খুবই জনপ্রিয়। হরিদাসপুর/বেনাপোল, ডাউকি/তামাবিল ও চ্যাংড়াবান্ধা/বুড়িমারি। যারা শিলং যেতে চান তারা BY ROAD DAWKI, যারা দার্জিলিং যেতে চান তারা Changrabandha ও যারা কলকাতা বা কলকাতা হয়ে ইন্ডিয়ার অন্য শহর যাবেন তারা Haridaspur সিলেক্ট করবেন। এখন আরেকটি বিষয় মাথায় রাখবেন যে আপনার যেকোন পোর্টের ইন্ডিয়ার ভিসা থাকলেই আপনি ইন্ডিয়ার যেকোন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে, Haridaspur দিয়ে গাড়িতে ও Gede দিয়ে রেলে যেতে পারবেন। তাই আমার মতে আপনি প্রিফারেন্সের ভিত্তিতে অন্য যেকোন পোর্ট সিলেক্ট করতে পারেন কেননা আপনি Haridaspur by Road, Gede by Rail and AIR তো ফ্রি পাচ্ছেনই এর সাথে। তাই আমি আমার বেলায় ‘BY ROAD DAWKI’ সিলেক্ট করেছিলাম। আশা করি বুঝতে পারছেন।

সবার শেষে ছবি আপলোড করে ফর্মটি প্রিন্ট করে নিন।

এখন এক কপি ২x২ ইঞ্চি মাপের ওই একই ছবির একটি ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিন।

এখন ছবির ঠিক নিচের বক্সে ও ২য় পেইজের নিচে ডান দিকে পাসপোর্টের মত স্বাক্ষর করুন।

ব্যাস হয়ে গেল ফর্ম রেডি।


মনে রাখবেন
ফর্ম পুরন শুরু করার পর ওরা একটা Temporary ID দিবে। এইটা সেইভ করে রাখুন। কারন কোন কারণে সার্ভারে সমস্যা থাকলে বা আপনি বাকি অংশ পরে পুরন করতে চাইলে এই লিংকে গিয়ে ‘Complete Partially Filled
Form’ এ ক্লিক করে Temporary ID ও ক্যাপচা দিয়ে আবার আগের জায়গা থেকে শুরু করতে পারেবেন।
ফর্ম সম্পুর্ন পুরন হয়ে গেলে আর নিজে এডিট করতে পারবেন না। তবে আবেদন কেন্দ্রে গেলে ওরা ঠিক করে দিবে, কিন্তু ফি ৩০০ টাকা।
ফর্ম পুরন করার পর ৮ দিনের মাঝে জমা দিতে হবে, না হলে এক্সপায়ার হয়ে যাবে।
জরুরি তথ্যগুলো সতর্কতার সাথে, পাসপোর্ট দেখে পুরন করুন। যেমন নামের বানান, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নাম্বার ও অন্যান্য তথ্য।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ
যেসব কাগজপত্র পাসপোর্ট ও ফর্মের সাথে দিতে হবে তা উপরে সংক্ষপে বলা হয়েছে। এখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হল। আপনি অফিয়াল ওয়েবসাইট হতেও দেখে নিতে পারেন এখান থেকে। তবে এখানে আমি সহজে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব।

স্মার্ট কার্ড/এনআইডি অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি
এর যেকোন একটা হলেই হবে। এইগুলা দ্বারা দেখা হয় যে আপনি এই দেশের নাগরিক, এছাড়া স্থায়ী ঠিকানা প্রমানের জন্যও এটা দরকার। ফর্মে স্থায়ী ঠিকানা এ অনুযায়ী পুরন করবেন।

ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি
গত তিনমাসের, Paid অথবা Unpaid বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা টেলিফোন বিলের ফটোকপি। এর সাথে শুধুমাত্র আপনার বর্তমান ঠিকানার মিল থাকতে হবে। হুবুহু, মিল থাকতে হবে এমন হয়, তবে ঝামেলা এড়াতে এটা দেখেই ফর্ম পুরন করা উচিৎ।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এনডোর্সমেন্ট
আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণের জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এনডোর্সমেন্ট লাগবে।

ব্যাংক স্টেটমেন্টঃ একাউন্টে কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা রেখে গত ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিন। অনলাইন কপি হলে হবে না, ব্যংকে সিল ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। আর ভিসা আবেদন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যালেন্স বজায় রাখুন। ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর ফটোকপি না দিয়ে, মেইন কপিই দিয়ে দিতে পারেন। আপনার নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট না থাকলে আপনি আপনার বাবা-মায়ের ব্যাংক স্টেটমেন্টও ব্যাবহার করতে পারেন।


ডলার এনডোর্সমেন্টঃ এখন থেকে মানি এক্সচেঞ্জ এর ডলার এনডোর্সমেন্ট IVAC গ্রহণ করে না। তাই আপনাকে কোন তফসিলি ব্যাংক মানে সরকারি, বেসরকারি যেকোন ব্যাংক থেকে ১৫০ ডলার এনডোর্স করতে হবে। তবে আপনি ২০০ করাতে পারেন। আর অবশ্যই এনডোর্সমেন্ট এর পেপার এর কপি জমা দিতে হবে, শুধু পাসপোর্টে এনডোর্স করালে হবে না। এনডোর্সমেন্ট এর পেপার বর্ডারে লাগতে পারে তাই কপি বা মেইন কপি সংরক্ষণ করুন।


ক্রেডিট কার্ডঃ আপনার যদি আন্তর্জাতিক ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে, এর জন্যও ব্যাংক থেকে এনডোর্সমেন্টের কপি নিয়ে জমা দিতে হবে। মেইন কপি সাথে রাখুন। ওরা সম্ভবত এটাকে yearly endorsement বলে।


পেশার প্রমাণপত্র
আপনি ছাত্র হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বা বেতনের রশিদ এর ফটোকপি।

চাকুরীজীবী হলে NOC (No Objection Certificate)

আর ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের কপি দিবেন।

ফ্রিল্যান্সার হলে যে প্লাটফর্মে কাজ করেন সেখান থেকে কিছু দিতে পারেন। যেমন ধরুন প্রোফাইলের প্রিন্ট, আর্নিং হিস্টোরি। আর যারা Upwork এর কাজ করেন তারা ‘Certificate of Earnings’ দিতে পারেন। যেকোন দেশের ভিসা আবেদনে ইহা ওষুধের মত কাজ করে।


আরো সংবাদ



premium cement