২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কী অগ্রগতি হতে পারে?

রোহিঙ্গা
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। - ছবি : বিবিসি

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে আজ কক্সবাজার গিয়ে পৌঁছেছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা বলে মনে করেন শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরুর চেয়ারপার্সন তাসনিম সিদ্দিকী।

মিজ. সিদ্দিকী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হওয়া নির্যাতনকে 'জাতিগত নির্মূল' হিসেবে বিশ্বের কাছে বারবার তুলে ধরেছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব, যা রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় জনমত গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে।’

জাতিসঙ্ঘের অনেক সদস্য দেশ, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা, এই সমস্যাকে বড় করে না দেখলেও বৈশ্বিক পরিসরে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সমর্থন গড়ে ওঠাকেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন মিজ. সিদ্দিকী।

মিজ. সিদ্দিকীর মতে, এই সমর্থনের কারণে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যে কোনো পদক্ষেপ নিলে ঐসব বৈশ্বিক সংস্থা বা সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সহায়তা পাবে।

মিজ. সিদ্দিকী বলেন, ‘এবার সরেজমিনে দেখতে গিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব যখন জানতে পারবেন প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের অবস্থান আসলে কী, তখন জাতিসঙ্ঘের সাথে বৈশ্বিক সহায়তা সংস্থাগুলোর একসাথে কাজ করার অনেক বড় একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে।’

মিজ. সিদ্দিকী বলেন, রোহিঙ্গারা শুধুমাত্র জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে সংরক্ষিত ও নিরাপদ ভূমিতে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী। এছাড়া তারা চায় রাখাইনের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যেন আগে প্রত্যাবাসিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় তারা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চীনের মত শক্তিশালী দেশকে পাশে না পাওয়ার কারণ বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন মিজ. সিদ্দিকী।

মিজ. সিদ্দিকী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বা চীনকে আমাদের সমর্থনে নিয়ে আসতে না পারা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা।’

‘এই কারণে এই বিষয়ে মানবিক দিক থেকে যে সহায়তা দেয়া দরকার, সেদিকে নিয়ে যেতে পেরেছে জাতিসঙ্ঘ, কিন্তু এর কোনো রাজনৈতিক সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে পারেনি।’

মিজ. সিদ্দিকী মনে করেন, কানাডা, ফ্রান্সের মতো যেসব শক্তিশালী রাষ্ট্র রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে তাদের পাশাপাশি সেসব রাষ্ট্রের ভেতরের সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমর্থন পেতে কাজ করা উচিত বাংলাদেশের, যেক্ষেত্রে বড় একটি ভূমিকা রাখতে পারে জাতিসঙ্ঘ। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এই সংস্থাগুলো বাংলাদেশের পক্ষে যখন শক্ত অবস্থানে যেতে পারবে তখন জাতিসঙ্ঘও নিজেদের ভূমিকাকে জোরদার করতে পারবে।

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনও এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আনতে পারে বলে মনে করেন মিজ. সিদ্দিকী।

মিজ. সিদ্দিকী বলেন, ‘এখন রোহিঙ্গা শিবিরে শরণার্থীরা যেভাবে রয়েছে তা মানবিক সহায়তার ভিত্তিতে। কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্ক যদি এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিতে চায় তাহলে কয়েকটি বিষয়ে ভাবতে হবে তাদের।’

তাসনিম সিদ্দিকী মনে করেন রোহিঙ্গাদের শিক্ষা প্রদান, বিভিন্ন কাজে দক্ষতা তৈরির মতো কার্যক্রম চালিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিশ্বব্যাঙ্কের প্রকল্পে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে সংস্থাটি।

মিজ. সিদ্দিকী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সমস্যা যে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বের এবং বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা তা এসব প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বারবার তুলে ধরতে হবে।’

‘আর এই কথা তুলে ধরার একটা অন্যতম প্রধান পন্থা তাদের এখানে নিয়ে আসা।’

মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধান হবে না বুঝতে পেরেই বাংলাদেশ বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে বলেন মিজ. সিদ্দিকী। তার মতে এভাবে বাংলাদেশ ইতিবাচক ফলাফল তৈরি করতে পারবে।

সূত্র: বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement