২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করতে হবে

আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করতে হবে - ছবি : সংগৃহীত

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত জাতিগত নিধনকে গণহত্যা আখ্যায়িত করে এর জন্য মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মাধ্যমে বিচার দাবি করেছেন দেশী ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ‘জবাবদিহিতা : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও রোহিঙ্গা সংকট’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তারা এ দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ, একশনএইড বাংলাদেশ, এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিস যৌথভবে এর আয়োজন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর যে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তার তদন্ত ও বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর মাধ্যমেই করা সম্ভব। যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও ‘গণহত্যা’র বিষয়ে মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে। সেক্ষেত্রে আগামী ১১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের কাছে আইসিসি যে তথ্য চেয়েছ তা দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

সেমিনারে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় উঠে আসে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে সংঘটিত জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিভিন্ন দিক। যেখানে বলা হয়, মে মাসে ৪০০ রোহিঙ্গা নারীর পক্ষে তাদের স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জমা দেন আইনজীবীরা। তারা মনে করেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতই একমাত্র ভরসা।

সেমিনারে আইসিসি-এর উদ্যোগ ও বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (হাইকোর্ট বিভাগ) বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশের কাছে যে তথ্য-প্রমাণ চেয়েছে সেগুলো দেয়া উচিত। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মূল ভিত্তি ‘রোম বিধি’ অনুযায়ী আইসিসি চাইলে মিয়ানমার যে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তার তদন্ত করতে পারে। কারণ, অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সাত লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যার মধ্যে অর্ধেক শিশু। তিনি আরো বলেন, যে মানবতা বিরোধী অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে আইসিসি চাইলে তা আমলে নিয়ে তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। কারণ, এই অপরাধের যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে। আর বাংলাদেশ ‘স্টেট পার্টি’ হিসেবে এখানে ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মিয়ানমারের গণহত্যাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রসিকিউটর কেট ভিগনেসওয়ারেন বলেন, হত্যা ও নিপীড়নের পরেই মানুষ বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আইসিসি ভৌগলিক বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। রোম বিধি ধারা-১২ অনুযায়ী মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব। এছাড়া যেহেতু মিয়ানমার হত্যা ও ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিলিপ রুড্ক বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞকে গণহত্যা বলার মতো যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ আছে। তাই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। এজন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ সকলকে একসঙ্গে কাজ করা খুবই জরুরি। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদ চাইলে এই বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আইনী উদ্যোগ খুবই জরুরি। গণহত্যার বিচার কিংবা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিায়নমারকে কে জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই হবে। এক্ষেত্রে আইসিসি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। একই সাথে মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করতে হবে। আর এটা করা সম্ভব। কারন, রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার যে হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন করেছে, তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। সেজন্য শুধুমাত্র দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এর সমাধান সম্ভব নয়। বহুপক্ষীয় চাপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাশিয়াকেও এক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে নিতে হবে।

আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে একশনএইড বাংলাদেশের কান্টি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, মিয়ানমারকে যতক্ষণ পর্যন্ত আইনি বাধ্যবাধকতায় আওতায় আনা না যায়, ততক্ষণ তারা বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না। সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসঙ্ঘকে উদ্যোগী হয়ে মিয়ারমারকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের বিষয়টি তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে কিনা, গত ৯ এপ্রিল তা জানতে চেয়েছিলেন আইসিসি’র কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা৷ এ সম্পর্কে বাংলাদেশকে তিনটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ জমা দেয়ার আহবান জানানো হয়। বাংলাদেশ তার জবাব দেয়ার জন্য ১১ জুন পর্যন্ত সময় পাবে। আগামী ২০ জুন শুনানির দিন ধার্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।

উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইনে ব্যাপক অভিযানের পর প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল