২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেউ ভোলে না কেউ ভোলে

-

গেল শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ঢাকা বেতার কেন্দ্র ছিল নক্ষত্রের হাট। আক্ষরিক অর্থেই প্রতিটি প্রতিভাই ছিল নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমুজ্জ্বল। ছিল বহুমাত্রিকতা। ষাটের দশকের শুরুতে নবীন কর্মকর্তা হিসেবে সেই অলোকসামান্য সভায় অবতীর্ণ হন সদ্য পরলোকগত মোবারক হোসেন খান (১৯৩৮-২০১৯)। মোবারক হোসেন খান ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ, লেখক ও অনুবাদক। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন সজ্জন ও সদালাপী। ছিলেন বেতারের সাবেক পরিচালক ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর স্মৃতিচারণমূলক অসামান্য লেখাটি ‘কেউ ভোলে না, কেউ ভোলে’ শিরোনামে পুনর্মুদ্রিত হলো। এটি কাজী মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত ‘বেতার স্মৃতি’ (ফেব্রুয়ারি ২০০৭) থেকে সঙ্কলিত। প্রকাশক ঐতিহ্য। Ñ সাহিত্য সম্পাদক
[পূর্ব প্রকাশের পর]
আমি একদিন সময় নিয়েছিলাম। বাসায় এসে ফুল লেংথ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করলাম। এক্সপ্রেশনগুলো যাচাই করে দেখলাম। আমার ভয় কেটে গেল। জানো, নেমেসিস ছিল আমার অভিনীত শ্রেষ্ঠ নাটক।
আয়নার কথা উঠল তখন যখন নূরুল মোমেন সাহেব সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একটা মজার চালু গল্প শুনতে পেয়েছিলাম সে কথা বলি। তিনি আইনের অধ্যাপক। ক্লাসে নাকি গল্প করে এ কথা বলেছিলেন। ঘটনা সত্যি হয়ত নয়, কিন্তু তাঁর ভেতর দিয়ে তাঁর সারল্যের একটা সুন্দর চিত্র পাওয়া যায়। গল্পটা এমন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাট্যকারকে দেখার ইচ্ছা হলে নাকি তিনি নিজে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াতেন। এটাকে বলা যায়, আত্মপ্রেম, নাটকের প্রতি তাঁর অসীম প্রেম, মোহ, অন্তরঙ্গতা। তিনি যে নাটক-পাগল মানুষ ছিলেন তাঁরই স্বাক্ষর। গল্পটা সত্য না হলেও তিনি যে তদানীন্তন পাকিস্তান আমলের একজন শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ছিলেন তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। নূরুল মোমেন সাহেবের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা নিবিড় ছিল। তাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। তাঁর হৃদয়ের পরিচয় আমি পেয়েছি। তাঁকে উদার হস্তে দান করতে শুনেছি এবং দেখেছি। আমার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে। আমি রেডিওতে চাকরি করি। একদিন নূরুল মোমেন সাহেব এসে আমার সামনে বসলেন। তার পর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, আমি পাঁচটা লেখা নিয়ে এসেছি। টাকার দরকার। বাসায় লোক বসিয়ে রেখে এসেছি তাকে দিতে হবে। ওর সাহায্যের প্রয়োজন। তবে লেখাগুলো তোমার প্রোগ্রামের উপযুক্ত করেই রাতে বসে লিখেছি। কারণ জানতাম সকালে লোক আসবে টাকা নিতে। অথচ এই মুহূর্তে হাতে টাকা নেই। তিনি সে দিন কথিকাগুলো রেকর্ড করে দিয়ে চেক নিয়ে গিয়ে তাঁর বাড়িতে বসা লোককে দিয়েছিলেন। বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও পরোপকার করার এমনি ছিল তাঁর আন্তরিকতা ও আগ্রহ।
আরেকটা ঘটনা। তাঁর একটি কার ছিল। হয়তো কারটা বিক্রি করে দিয়েছেন বা দেবেন। আমার কাছে এসে হাজির। বললেন, কার চলে গেলে ড্রাইভার বেকার হয়ে যাবে। তাঁর চাকরির দরকার। আর সে তো আমার ড্রাইভার নয়, আমার ছেলে, আমার পালক ছেলে। তাঁর ব্যবস্থা না করে আমি গাড়ি হাতছাড়া করি কিভাবে? অতএব তুমি তাঁর একটা বিহিতব্যবস্থা করো। সে ড্রাইভারকে চাকরি দিয়েছিলাম। এ ঘটনা তাঁর মানবতাবোধের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
আরেক দিনের কথা। একদিন বৃষ্টির দিন। সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ সন্ধ্যার আগে স্যার আমার মতিঝিল ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত। তখন তিনি অবসর জীবনযাপন করছিলেন। সমাজসেবার কাজে গ্রামের বাড়িতেই বেশি থাকেন। আমি তো স্যারকে দেখে অবাক। অবাক হওয়ারই কথা। কারণ এর আগে তিনি আমার বাসায় কোনো দিন আসেননি। আমার বাসার ঠিকানাও তাঁকে দিইনি। সুতরাং আমার বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই গুলশান থেকে বাসে করে মতিঝিল এসেছেন। আশ্চর্য হওয়ারই কথা। আমি স্যারকে আদর-আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তিনি আমাকে এসব থেকে বিরত করে বললেন, তোমাকে দেখতে ইচ্ছা হলো, আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। তাই তোমাকে দেখতে এসেছি। বসো, তোমাকে দেখি। শিক্ষক তিনি, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, নাট্য জগতের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী, আমার মতো নগণ্য একজন স্নেহাস্পদকে দেখবার জন্যে অতদূর থেকে ছুটে এসেছেন, আমি সে দিন নিজেকে ধন্য মনে করেছিলাম।
অতীত দিনের এসব কথা ভাবতে গেলেই এমন সব স্মৃতি মনের পর্দায় ভেসে ওঠে যে কখনো মন ভরে ওঠে, কখনো বিষাদে মন বিষণœ হয়ে ওঠে।
আমার বাবার চরিত্রের বিশ্লেষণ করলে অবাক হতে হয়। একজন অতি সাধারণ মানুষ, অথচ কী অলঙ্ঘনীয় এক দৃঢ় সঙ্কল্পচেতা মানুষ ছিলেন তিনি। জীবনে অনেক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। অবলীলাক্রমে আবার তা অতিক্রমও করেছেন। হয়েছেন দেশবরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ। সঙ্গীতের সাধনাই ছিল তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্রত। সঙ্গীতের শেষ সোপানে আরোহণ করেও তিনি আপেক্ষ করে বলেছেন, সারাজীবন শুধু সঙ্গীতের সাধনা করলাম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দেখছি আমার সে সাধনা অপূর্ণ রয়ে গেল। শিখতে পারলাম না। শিক্ষানবিশই রয়ে গেলাম।
ত্যাগ, তিতিক্ষা, ধৈর্য, সঙ্কল্প, সংযম আর নিষ্ঠার নাম বুঝি ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, আমার বাবা।
সঙ্গীতের সুর নদীর স্রোতের মতোই বহমান। উৎস থেকে সঙ্গমের পথে বয়ে চলেছে নিরবধি। এই বহমানতাঁর পথ ধরেই বীণা থেকে সুর বাহারের উদ্ভব। সুর বাহারে পাওয়া যায় অমোঘ এক সুরের অনুরণন। এই সুর মানুষের মনকে আকর্ষণ করে সুরের এক মহাসমুদ্রের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
বাবা সুরবাহারের ভেতর দিয়ে সঙ্গীতের মহাসমুদ্র পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। আমি তাঁর বাজনা শুনে সুরবাহারের প্রতি আকৃষ্ট হই। মাঝে মাঝে পড়াশোনার ফাঁকে সুরবহার যন্ত্রটা হাতে তুলে নিই। রাগের আলাপ তুলি। সুরবাহার ধ্রুপদী যন্ত্র। এ যন্ত্র আলাপচারির। সুর যেন রাগ হয়ে মনের কথা বলে। আমার পিতৃপুরুষের ঐতিহ্য সঙ্গীত। তাই তাদের ঐতিহ্যের ধারা আমার রক্তে প্রবাহিত। সুতরাং সুরবাহারের সুরের ঝঙ্কার তুলে দক্ষতা অর্জন আমার জন্যে খুব দুরূহ ছিল না। তবে সাধনার দরকার ছিল। রেয়াজ আর অনুশীলন তো অবশ্যই করতে হতো। সুরবাহারের অডিশন দিতে এলাম বেতারে। আর অডিশনের দিনই চিনলাম আশরাফ-উজ-জামান খানকে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক হিসেবে তখন তিনি সুধী আর বিদগ্ধ মহলে প্রশংসিত। তাঁর সয়লাব’ সাহিত্যের অঙ্গনে বেশ জনপ্রিয়। তাহলেও সেদিন কিন্তু তাকে একজন সাহিত্যিক হিসেবে চিনিনি। চিনেছিলাম একজন রেডিও অফিসার হিসেবে। তিনি বুথে বসে আছেন। আর জামান আলী খান একজন করে শিল্পীকে অডিশনে ডাকছেন। জামান আলী তখন রেডিওর অনুষ্ঠান প্রযোজক। সঙ্গীত বিভাগের দায়িত্বে ন্যস্ত। তাই অডিশনের ভারও তাঁর ওপর। পরে জামান আলী খানের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বও হয়েছিল। কেননা অডিশনের দুই বছর বাদে আমিও অনুষ্ঠান প্রযোজকের চাকরি নিয়ে বেতারে যোগ দিয়েছিলাম।
অডিশন হচ্ছে। একজন শিল্পীর পর আরেকজন শিল্পীর ডাক পড়ছে। ভীরু কম্পিত হৃদয়ে স্টুডিওতে যাচ্ছেন। খানিক পর ফিরে আসছেন। তার পর আরেকজন যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর আমার পালা এল। সুরবাহারটা আগেই স্টুডিওতে রেখে এসেছিলাম। আমার ডাক আসতেই স্টুডিওতে ঢুকে সুরবাহারটা হাতে তুলে নিলাম। চোখ তুলে কাচের দেয়ালের ওপাশে তাকালাম। কনসোলের সামনে বসে আছেন একজন লোক। বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। গোলগাল চেহারা, চোখের দৃষ্টি ধারালো। মাথার চুল কৃষ্ণ কালো। হাতে একটা কলম। সামনে একটা কাগজ। তাঁর চোখে চোখ পড়তেই ইশারা করলেন। যেন বললেন, বাজাও। আমি শুরু করলাম। রাগ ভৈরবী বাজালাম। খানিক পর কাচের দেয়ালে ঠকঠক আওয়াজ শুনে তাকাতেই দেখলাম জামান আলী আমাকে বাজনা থামাতে ইশারা করছেন। বাজনা থামালাম। পরে শুনেছি অডিশনে পাস করেছি। তাঁরপর থেকে প্রতি মাসে একবার করে সুরবাহারের অনুষ্ঠান করে চলেছিলাম। পারিতোষিক চল্লিশ টাকা। প্রথমবারে নাকি এত পারিতোষিক দেয়ার নিয়ম ছিল না। কুড়ি টাকা দিয়ে শুরু হতো। আমার বেলাতেই হঠাৎ ব্যতিক্রম ঘটল। আরো পরে জামান আলীর কাছে শুনেছিলাম, একে তো ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর পুত্র, তাঁর ওপর এম এ পাস উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিল্পী, তাই আশরাফ-উজ-জামান সাহেব বিশেষ বিবেচনা করে আমার পারিতোষিক প্রথমবারেই চল্লিশ টাকায় উন্নীত করেছিলেন। ১৯৬০ সাল থেকে বেতারে নিয়মিত সুরবাহার বাজাতাম। ১৯৬২ সালের ২২শে অক্টোবর অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে রেডিওতে যোগদানের পর আর বাজাতে দেয়া হতো না। কারণ, রেডিওর কর্মকর্তা বেতারে বাজালে নাকি জনসাধারণের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাকে রেডিওতে সুরবাহার বাজানো সেদিন থেকে ত্যাগ করতে হয়েছিল।
আশরাফ-উজ-জামান খান রেডিওতে ‘বড় জামান’ নামে পরিচিত ছিলেন। কারণ তাঁর ছোট ভাই আমীর-উজ-জামান খানও রেডিওতে চাকরি করতেন। আশরাফ-উজ-জামান খান বেতারের একজন প্রবীণতম ব্রডকাস্টার। ব্রিটিশ আমলে অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা কেন্দ্রে চাকরিতে ঢুকেন। সেখান থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন দেশ বিভাগের পর। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর রেডিওর প্রথম মহাপরিচালকের দায়িত্বভার সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে তাঁর সুদীর্ঘ ব্রডকাস্টিং কর্মকর্তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।
আশরাফ-উজ-জামান একজন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রবন্ধকার। বেতার নাট্য-প্রযোজনায় এক দক্ষ প্রযোজক। তিনি একজন গীতিকার, একজন সুরকার। বেতারের অনেক নাটক, অনেক সঙ্গীতালেখ্য তিনি প্রযোজনা করে প্রশংসাধন্য হয়েছেন। অনেক নামী-দামি শিল্পী সে গান গেয়ে প্রশংসা ও সুনাম কুড়িয়েছেন। অনেক গান রচনা করেছেন। সুরারোপ করেছেন সে সকল গানের। বেতারের একজন বেতার অধিকর্তা হিসেবেও তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। নতুন নতুন প্রোগ্রাম তাঁর পরিকল্পনায় বেতার থেকে প্রচারিত হয়েছে। অনেক শিল্পী তিনি নিজের হাতে গড়েছেন। অনেক শিল্পীকে তিনি প্রত্যাবাসন করেছেন। একদিন কথাচ্ছলে ওস্তাদ কাদের জামেরীর কথা বললেন। লোকান্তরিত হয়েছেন। একজন নিবেদিতচিত্ত শিল্পী ছিলেন কাদের জামেরী। আশরাফ-উজ-জামান বললেন, একদিন কলকাতার এক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। দেখেন, কাদের জামেরী এক রিকশায় একটি মুর্দা নিয়ে গোরস্থানের দিকে যাচ্ছেন। পরের দিনই তিনি কাদের জামেরীর সঙ্গে দেখা করলেন। তাঁকে নিয়ে এলেন ঢাকায়। পরবর্তীকালে তাঁকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে নিয়োগ করলেন।
আশরাফ-উজ-জামান খানকে আমার অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁর গুণাবলির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাঁকে কোনো দিন অলস দেখিনি। অবসর নিয়েছেন আজ কত বছর হলো। তবু তিনি অত্যন্ত সচল। তরুণদের মতোই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি অনুষ্ঠান করে বেড়াচ্ছেন, জলসা করছেন, বক্তৃতা দিচ্ছেন আর অবসর পেলেই পরিচিত জনদের সঙ্গে দেখা আর গল্পগুজব করে কিছুক্ষণ আডডা দিয়ে নিচ্ছেন। তাঁর দর্শন যেন গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাসের আদর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়Ñ ‘ঈট ড্রিংক অ্যান্ড বি মেরি, ফর টুমোরো ইউ মে ডাই’। যার বাংলা তরজমা করলে দাঁড়ায় পানাহার ও আনন্দে মত্ত থাকো, যেহেতু আমরা আগামীকাল মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারি।’ চার্বাকও এ কথাগুলো অন্যভাবে বলে গেছেন যতদিন জীবিত থাকবে, সুখ সম্ভোগ করবে আর ঋণ করে হলেও ঘি খাবে’। ইরানের কবি ওমর খৈয়ামের কণ্ঠে এ কথাগুলো ধ্বনিত হয়েছে আরো সহজ ভাষায়। তিনি কবিতার ছন্দে বলেছেন পান কর হে রাজা/ এ জগতে যে কটা দিন জীবন আছে তাজা’। আশরাফ-উজ-জামান খানও তাজা জীবন নিয়ে পৃথিবীর সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে মহানন্দে বেঁচে আছেন। আমাদেরকেও তিনি সেই উপদেশই দেন, যে কদিন বেঁচে আছ, জীবনটা ভোগ করে নাও। আনন্দ ফুর্তি করে দিনগুলো কাটিয়ে দাও।
বেতার অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগদানের পর আমাকে জামান আলী খানের সঙ্গে সঙ্গীত বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখন প্রতি মাসেই সঙ্গীত শিল্পীদের অডিশন নেয়া হতো। একবার অডিশন দিতে এলেন অজিত রায়। অজিত রায় অডিশন দিলেন। ফেল করলেন। কারণও ছিল। তিনি সেদিন আধুনিক গানের অডিশন দিয়েছিলেন। আধুনিক গান গাইলেন রবীন্দ্র সঙ্গীতের ঢঙে। ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হলো। পাশ করলেন না। তাকে বেতারের তাঁর যে শুভাকাক্সক্ষীরা অডিশন দিতে নিয়ে এসেছিলেন তাদের বলে দিলাম, অজিত রায়কে রবীন্দ্র সঙ্গীতের অডিশন দিতে বলুন। পরবর্তীতে তিনি অডিশনে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইলেন। তাঁকে অডিশন পাশ করাতে বেগ পেতে হলো না। নিয়মিত বেতারে গান গাইতেন। পরে বেতারে চাকরিতে যোগদান করেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বেতার থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
[বাকি অংশ আগামী সংখ্যায়]


আরো সংবাদ



premium cement