১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

  শ্রুতি ও স্মৃতির সোনালি শিখা : যেমন দেখেছি তাকে

-

চুয়াল্লিশ

মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল তাঁর মৃত্যু সংবাদ। দেশে। বিদেশেও। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দ্রুততার সাথে সংবাদ ছড়িয়ে দিলো অনলাইন। ফেসবুক। তার পর ইলেকট্রনিকস মিডিয়া। তার পর পত্রপত্রিকা। ঝড়ের গতিতে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ল চার দিকে। ইবনে সিনা হাসপাতালে মিডিয়াকর্মীদের ভিড় বেড়ে গেল। নানা দিক থেকে ফোন আর ফোন। হাসপাতালে আল মাহমুদের পরিবারের কাছে এবং যারা তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট এদের সবার কাছে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করার তীব্র তৃষ্ণা থেকে আল মাহমুদ ভক্তরা ফোন করছিলেন। যার যেখানে খবর নেয়ার সুবিধা। যিনি যেখান থেকে সত্য খবরটি পাবেন বলে ধারণা করলেন, তিনি সেখানেই ফোন করলেন। জেনে নিলেন তাঁর মৃত্যু সংবাদটির সত্যতা।
‘আল মাহমুদ নেই’ এই একটি ছোট বাক্য যেন মুহূর্তে পুুরো মিডিয়া কাঁপিয়ে তুলল। ছোট বাক্যটি শত শত তো বটে, হাজার হাজার বার চালাচালি হয়েছে। পরস্পরকে শেয়ার করেছে। দিয়েছে একে অন্যকে। ছোট বাক্যটি কী বিশাল এক সংবাদ বয়ে বেড়াচ্ছিল। এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে। এক ম্যাসেঞ্জার থেকে আরেক ম্যাসেঞ্জারে। মনে হচ্ছিল বাক্যটি চোখের অশ্রুতে ভিজে ভিজে যাচ্ছিল একজন থেকে আরেকজনের কাছে। সংবাদটির কারণে ভারী হয়ে গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এর মধ্যরাত। রাত ১১টার পর নানাদিকের ফোন রিসিভ করতে করতে প্রায় রাত ৩টা ধরধর। এর মধ্যে দেশের বাইরের বেশ ক’টি ফোন ছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এলো ফোন। একটি ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে আরেকটি ওয়েটিংয়ে। ওয়েটিংয়ের ফোনটি রিসিভ করলেই আরেকটি ওয়েটিংয়ে। এভাবে রাত ৩টা অবধি ফোন রিসিভ করতে হলো আমাকে। শুধু একটি জিজ্ঞাসাÑ যে সংবাদটি তারা পেয়েছেন অথবা দেখছেন কিংবা শুনছেন সত্য কি না? এমনি আকুলতার ভেতর কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন জানাজার নামাজ কখন? কোথায়? কিভাবে? এই প্রশ্নগুলোর জবাব তখন দেয়া যায়নি। যায়নি কারণÑ এটি একটি সিদ্ধান্তের বিষয়। পরিবার এবং গণ্যমান্য দু-চারজনের পরামর্শ নিয়ে বিষয়টি ফায়সালা করতে হবে। এ ছাড়া যেখানেই হোক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিষয়টিও জরুরি। ফলে রাতে নির্দিষ্ট করে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু একটি খবর মিডিয়ায় চাউর হতে থাকেÑ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। সেই সাথে শহীদ মিনারে রাখা হবে লাশ। বিষয়টি সিদ্ধান্ত ছাড়া কিভাবে এবং কার মাধ্যমে মিডিয়ায় গেল সে হদিস জানা ছিল দুষ্কর!
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা হওয়াটা সময়ের দাবি। শহীদ মিনারে লাশ রাখাও সেই দাবিরই ধারাবাহিকতা মাত্র। কেননা আল মাহমুদ ভাষাসৈনিক ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু দুটো জায়গার পক্ষেই অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনুমতি না নিয়ে মধ্যরাতে এ দুটো স্থানের বরাত দিয়ে মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়টি ছিল প্রশ্নবোধক। সিদ্ধান্তহীন এই প্রচারণার ফলে অনেক মানুষকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। টিভি স্ক্রলে সংবাদটি দেখে জানাজায় হাজির হওয়ার আকাক্সক্ষা থেকে জাতীয় ঈদগাহে হাজির হন অনেক মুসল্লি। গিয়ে দেখেন ঈদগাহটি শূন্য। গেটে তালা। সেখান থেকে কেউ কেউ ছোটেন শহীদ মিনারের দিকে। গিয়ে দেখেন শহীদ মিনারও খালি। এভাবে কিছু মানুষ কষ্ট পেয়েছেন।
সকাল ৭টার পরপরই আমি পৌঁছলাম আল মাহমুদের বড় ছেলে শরীফ আল মাহমুদের বাসায়। যেখান থেকে মাত্র এক সপ্তাহ আগে আল মাহমুদকে তুলে দিয়েছিলাম অ্যাম্বুলেন্সে।
পৌঁছে দেখি ড্রয়িংরুমে প্রায় বিধ্বস্ত চেহারায় বসা তাঁর বড় ছেলে শরীফ আল মাহমুদ। ছোট ছেলে আনিসের শ্বশুর আবুল হোসেন এবং ছোট মেয়ের জামাই ব্যবসায়ী সালাহউদ্দীন। কোথায় জানাজা হবে, দাফন কোথায় এবং শহীদ মিনারে ও বাংলা একাডেমিতে নেয়া হবে কি না এর কোনো ফায়সালা হয়নি। আমাকে দেখেই আনিসের শ্বশুর এবং শরীফ দু’জনই ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বিশেষ করে শরীফ আল মাহমুদ আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন অঝোরে। বড় ছেলেটির চেহারা আল মাহমুদের প্রায় অবিকল। কথা বলার ধরন-ধারণ এবং গলার স্বরও আল মাহমুদের মতোই প্রায়। তার হৃদয়বিদারী ডুকরে ওঠার তীব্র শোক ভিজিয়ে দিলো আমার চোখও। পিঠে হাত বুলিয়ে কিছুটা সান্ত্বনার কথা বললাম। বললাম, এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে জানাজার স্থানের বিষয়টি। এটিই জরুরি। আমরা জাতীয় ঈদগাহের লক্ষ্যে চেষ্টা শুরু করলাম। শুক্রবার রাতে তিনি মারা গেলেন। পরদিন শনিবার। সব সরকারি অফিস বন্ধ। অনুমতি নেয়ার জন্য সিটি করপোরেশন অফিস অথবা সংশ্লিষ্ট অন্য অফিসে যোগাযোগের কোনো সূত্র সহসা মিলছিল না। ব্যক্তিবিশেষে যোগাযোগের চেষ্টা করে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হলো আমাদেরÑ ঈদগাহের অনুমতি নিয়ে জানাজার আয়োজন করতে হলে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাবে। অনুমতি পাওয়া কতটা সম্ভব হবে তাও অনিশ্চিত। এ ছাড়া কে যে এর অনুমতি কর্তৃপক্ষ সে তথ্য পাওয়াও সহজসাধ্য ছিল না।
সুতরাং আমাদের হাতে বিকল্প স্থান হিসেবে সামনে থাকল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। এর মধ্যে বাসায় লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেল। বাসায় এলেন কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, কবি কামরুজ্জামান, কবি ছড়াকার আবিদ আজম, তরুণ কবি ইমরান মাহফুজসহ অনেকেই। আল মাহমুদের ছোট মেয়ের জামাই সালাহউদ্দীনও নানান টায়ারে যোগাযোগ করলেন ঈদগাহের ব্যাপারে। যোগাযোগ করলাম আমিও। কাজের কাজ কিছুই হলো না। যেহেতু আমাদের সামনে বিকল্প স্থান বায়তুল মোকাররম মসজিদ এবং এটি একটি পবিত্রতম স্থান, এখানে জানাজার ব্যাপারে কেউ ভিন্নমত উত্থাপন করেননি। কিন্তু কথা এখানেও আছে। অনুমতি নিতে হবে এটিরও। অনুমতি নেয়ার জন্য সশরীরে যেতে হলে সময় লাগবে বেশ। এদিকে, জানাজার নির্ধারিত স্থান এবং সময়ের ঘোষণা না দিলে চলছেই না। উপর্যুপরি ফোন আসতেই থাকল কখন কোথায় জানাজা?
হঠাৎ আমার মনে পড়ল কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী নামটি। তার সাথে বায়তুল মোকাররম খতিবের বেশ ভালো সম্পর্ক। বিষয়টি আমার জানা। মুহূর্ত দেরি না করে ফোন দিলাম তাকে। বিষয়টি বুঝিয়ে বলতেই তিনি ভীষণ আগ্রহের সাথে বললেনÑ ঠিক আছে, আমি দেখছি এক্ষুণি। জানাচ্ছি আপনাকে।
দু’মিনিট পরই ফিরতি ফোন দিলেন কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী। বললেনÑ মৌখিক অনুমতি নিয়ে নিয়েছি মোবাইলেই। বাকিটা দেখছি আমি। সেই সাথে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, জানাজার নামাজে ইমামতি করবেন কে? বললাম, আল মাহমুদের পরিবারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির প্রস্তাবনা নেই। সেই অর্থে বায়তুল মোকাররমে জোহরের নামাজের ইমাম যিনি থাকবেন, তিনিই ইমামতি করবেন। কিন্তু কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী একটি প্রস্তাব রাখলেন। প্রস্তাবটি ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই পছন্দ হলো। বললেনÑ মাওলানা ক্বারী আহমদ উল্লাহ আশরাফকে অনুরোধ করলে তিনি নিশ্চয়ই জানাজার নামাজে ইমামতি করার সম্মতি দেবেন। ক্বারী আহমদ উল্লাহ আশরাফ হাফেজ্জী হুজুরের কনিষ্ঠ ছেলে। খেলাফত আন্দোলনের আমির। কামরাঙ্গীরচর নুরিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক। কবিকে ফোনে রেখেই আমি আল মাহমুদের বড় ছেলে শরীফকে লক্ষ্য করে উপস্থিত সবার কাছে প্রস্তাবটি বললাম। সবাই একবাক্যে বললেন, প্রস্তাবটি খুবই ভালো।
মোবাইলটি কানে তুলে পরিবারের সম্মতির কথা জানিয়ে দিলাম। তিনি মোবাইলে কথা বললেন মাওলানা আহমদ উল্লাহ আশরাফের সাথে। তিনি খুবই সম্মানের সাথে সম্মতি দিলেন। জানালেন, আল মাহমুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা।
ফোন ছেড়ে আমরা কথা বলছি দাফনের বিষয়ে। কোথায় কবরস্থ করা হবে কবিকে। তরুণ কবিদের কেউ কেউ প্রস্তাব তুললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে কবর দেয়ার কথা। কেউ বললেনÑ বনানী বুদ্ধিজীবী গোরস্তানের কথা। আবার কেউ কেউ বললেনÑ আল মাহমুদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কথা।
কবি নজরুলের পাশে কবর দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিন্ডিকেটের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত আছেÑ এখানে নতুন করে আর কারো কবর হবে না। এমন সিদ্ধান্ত থাকায় এ স্থানটির প্রস্তাব বাদ পড়ে যায়। থাকল বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, বনানী। এখানে কবর দেয়ার বিষয়টি বেশ জটিল একটি পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। যা বেশ সময়সাপেক্ষ। এদিকে আল মাহমুদের পরিবার থেকে প্রায় সবারই দাবি, তাঁকে গ্রামের বাড়ি কবরস্থ করার। মায়ের পাশেই হবে তাঁর কবর। স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের দাবির পক্ষে আমাদের সম্মতি দিতে হলো।
দাফনের বিষয়টি সুরাহা হলো। এখন আলোচনা শহীদ মিনারে লাশ নেয়ার বিষয়টি। একই সাথে বাংলা একাডেমিতেও।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বিশিষ্ট কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজীকে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, বিষয়টি আমি সিরিয়াসলি দেখছি। কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনও ফোন দিলেন তাঁকে। একই কথা তাকেও বললেন। এ ছাড়া দেশের একটি বড় মিডিয়া হাউস থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে ফোন দেয়া হলো। তিনি আলাপ করে বিষয়টি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে জানালেন।
এর মধ্যে কবি আবদুল হাই শিকদার আমাকে ফোনে প্রস্তাব দিলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি জানাজার কথা। বললেনÑ প্রেস ক্লাব সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলমের সাথে কথা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
বাকি থাকল শহীদ মিনারের বিষয়টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারের বিষয়টি দেখভাল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিলামÑ কবি পরিবারের সদস্যসহ একটি প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে যাওয়ার। কবি আবদুল হাই শিকদার ফোনে এবং কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ প্রত্যক্ষ আমাকে বললেনÑ একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আপনিই যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গেলাম আমরা। আল মাহমুদের চতুর্থ ছেলে মনির, ছোট ছেলের শ্বশুর আবুল হোসেন, ছোট মেয়ের জামাই সালাহউদ্দীন ইসমাইল মোহাম্মদ এবং আমিÑ আমরা পৌঁছলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রি ভবনের সামনে। এই ভবনে ভাইস চ্যান্সেলরের অফিস। এখানে আমাদের সাথে যোগ দিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী নাসিম আহমেদ ও কবি জামসেদ ওয়াজেদ। ভিসির অফিসে প্রবেশ করলাম। ভিসির পিএস জানালেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের সাথে মিটিং করছেন। পাশেই প্রোভিসির অফিস। তিনি আছেন অফিসে। আমরা যেন তার সাথে কথা বলি। পরামর্শমতো গেলাম আমরা। প্রোভিসি কবি মুহম্মদ সামাদ। তিনি আমাদের পরিচিত। বিশেষ করে নাসিম আহমেদ ও আমার। তার সাথে বিষয়টি উত্থাপন করলে বললেনÑ এটি ভিসির অধীন। তিনি তো মিটিংয়ে জানালাম আমরা। বললেনÑ তবে অপেক্ষা করতে হবে। তিনি চা খাওয়ালেন আমাদের। খোঁজখবর নিলেন। কিছু সময় পর আমরা আবার এলাম ভিসির অফিসে। পিএসএর দফতরে বসলাম সবাই। পিএস জানালেনÑ তিনি আল মাহমুদের কবিতার ভক্ত। আমাদের সাথে বেশ সৌজন্যতা দেখালেন তিনি। চা-বিস্কিট দিয়ে আপ্যায়িত করলেন। বেশ সময় অপেক্ষা করতে হলো আমাদের। মিটিং শেষ হচ্ছে না সহসা। কী আর করা। এর মধ্যে পিএস একাধিকবার ভেতরে গেলেন। ভিসিকে বিষয়টি অবহিত করলেন। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে একসময় শেষ হলো মিটিং। সাথে সাথে অনুমতি দিলেন আমাদের। আমরা প্রবেশ করার সাথে সাথে বেশ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন তিনি। আমরা বিষয়টি অবহিত করলাম তাঁকে। তিনি বললেনÑ এটি প্রক্টরের সাথে কথা বললেই হয়। প্রক্টর প্রফেসর এ কে এম গোলাম রব্বানী একটু আগেই শেষ হয়ে যাওয়া ভিসির মিটিংয়ে ছিলেন। এসময় তিনি ছিলেন ভিসির পিএসের কক্ষে। আমরা দ্রুত তার কাছে এলাম। বললাম বিষয়টি। তিনি আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেন না। একরকম খারাপ ব্যবহারই করলেন। আমাদের কথা শোনার প্রয়োজন বোধই করলেন না। আবৃত্তিশিল্পী নাসিম আহমেদ একরকম ক্ষোভ থেকে বললেনÑ আমাদের কথা শুনবেন না কেন? কথা শুনতে হবে আপনাকে।
তবু থামলেন না তিনি। দ্রুত হাঁটতে থাকলেন বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমরাও ছুটলাম তার সাথে। আমাদের কথা আপনাকে শুনতেই হবেÑ এমন বাক্যে থমকালেন বটে। কিন্তু বললেনÑ আপনারা ভিসির কাছে যান। আমার কিছুই করার নেই। বলে হন হন করে চলে গেলেন তিনি। ভিসি বললেন প্রক্টরের কথা। প্রক্টর ঝাঁঝালো শব্দে বললেন ভিসির কথা। আমরা অবাক।
অগত্যা আমরা আবার ফিরলাম ভিসির কাছে। ভিসি আখতারুজ্জামান খুব ভালো ব্যবহার করলেন। বেশ ভদ্রতার সাথে তিনি বললেনÑ সত্য কথা বলতে কী, শহীদ মিনারের দেয়াল ঠিক করা আর রঙ করে দেয়া ছাড়া আমাদের হাতে কিছু নেই। কে অনুষ্ঠান করবে কে করবে নাÑ এসব নির্ধারণ করেন সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা। তিনি আরো বললেনÑ ব্যক্তিগতভাবে কবি আল মাহমুদ আমার প্রিয় কবি। আমি শোক প্রকাশ করে একটি বিবৃতি পাঠাব মিডিয়ায়। তিনি তার কথা রেখেছিলেন। বিবৃতি দিয়েছিলেন শোক প্রকাশ করে। কিন্তু শহীদ মিনারের কোনো সুরাহা তিনি দিতে পারেননি। একজন ক্ষমতাবান মানুষের অক্ষমতা দেখে ফিরে এলাম আমরা। এই যখন অবস্থা, কী আর করার থাকে।
আমরা ভিসির সামনে যখন, ঠিক তখন আমার মোবাইলে ফোন দিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। বললেনÑ কবি আল মাহমুদ আসবেন বাংলা একাডেমিতে। সব ব্যবস্থা করেছি আমি। সব কিছুর ওপরে তিনি একজন বিশিষ্ট কবি ও মুক্তিযোদ্ধা। সুতরাং তিনি আসবেন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে।
আসলেন আল মাহমুদ। তাঁর একসময়ের প্রিয় স্থান সাহিত্যের আনন্দে উদ্ভাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিতে। নজরুল মঞ্চে রাখা হলো তাঁর লাশ। এখানে বাংলাদেশের প্রায় সব মিডিয়া উপস্থিত হলো। জমায়েত হলেন অনেক কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক। মিডিয়ায় কথা বললেনÑ কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, কবি শাহীন রেজা ও কবি জাকির আবু জাফর। সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন পরিবারের পক্ষ থেকে আল মাহমুদের চতুর্থ ছেলে মনির ও তরুণ কবি আবিদ আজম।
বাংলা একাডেমি থেকে লাশ নেয়া হলো জাতীয় প্রেস ক্লাব। ক্লাবের সামনের মাঠে অনুষ্ঠিত হলো সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আলোচনায় অংশ নেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, কবি আবদুল হাই শিকদার ও জাকির আবু জাফর। আলোচনা শেষে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এখানে। ক্লাবে জানাজা শেষ করে আল মাহমুদের দেহবাহী গাড়িটি রওনা হলো বায়তুল মোকাররমের দিকে। যেখানে অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার মুসল্লি।
[আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত]


আরো সংবাদ



premium cement