১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিজয়ের পদাবলী

-

মুহম্মদ নূরুল হুদা
বিজয়

বিজয় পতাকা মানি,
পরাজয় কখনো মানি না।

স্বর্গপতনের পর সেই যে লড়াই,
সে লড়াই তোমাকে পাবারÑ
সে লড়াই নয় হারাবার।

আপন পাঁজর থেকে বের করে
আর্য আর অনার্যের তাবৎ হরফে
তোমাকে লিখেছি আমি মানব শোণিতে,
তোমাকে রেখেছি পুঁতে
পূর্বপুরুষের অজেয় ভূমিতে।

যে যুদ্ধ হয়েছে শুরু শেষ নেই,
তার শেষ নেই;
তবু আঁধারে আঁধার ঘষে
আমাদের জোড়া আত্মা
আলো জ্বালবেই।

আমরা তো মাতাপিতা
আমরা আদম সীতা
প্রেমিক প্রেমিকা কিম্বা জগৎজননীÑ
আমাদের বুকে বুকে প্রমুক্তির মহামন্ত্র,
বিজয়ের ধ্বনি।

না, কোনো পরাজয় নেই;
অনন্ত যুদ্ধের শেষে
অনন্ত মানবলোকে
অনন্ত বিজয় আসবেই।

 

 


এনাম রাজু
সাহসের বিজয়

পূর্ণিমা চাঁদ উঁকি দেয় আঁধারের সামিয়ানা ছিঁড়ে
ধ্বংসের নকশা বুকে মেতে ওঠে সভ্যতার দানবঈগল
আকাশে-বাতাসে খুব একাকার আগুনের হুইসেল
কারার অন্ধকারে তখন মানবিক অসুখ
বিবেকের কলিজা খায় করপোরেট শকুন।

ভাগ্য বদল নাকি নতুন বোতলে হবে পুরনো নেশা
তারামন-সেতারারা এই সব কিছুই বোঝে না
কিছুই বোঝে না এই অসহায় মা-মাসি, দেশের স্বজন।

তবুও মৃত্যুর মিছিলে যায়,
ক্রাসে ভর দিয়ে যায় স্বদেশ সাহস
ধ্বংসের উৎসব শেষে ফিরে আসে আশার বিজয়
কানন বিবিরা তার পায় না সুবাস...

রুদ্র সাহাদাৎ
হারানোর দীর্ঘশ্বাস

দেশ ও দশের মুক্তির জন্য যুদ্ধে যাওয়া ভাইটি
আটচল্লিশ বছর আসে না, কখন যেনো আসে ফিরে
গোরকঘাটা বাবুদীঘির পাড়ে প্রতীক্ষায় থাকি

কত দিন দেখি না প্রিয়মুখ
কত দিন শুনি না কোনো ডাক

স্মৃতিসৌধের পাদদেশে খুঁজি হারানো ভাইকে
মাঝে মাঝে মাঝরাতে পদধ্বনি আসে কানে
কখনও যে স্বচোখে দেখি না

আজো মা কাঁদে তাসবিহ হাতে পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা
বুকে দীর্ঘশ্বাস...

 


আযাদ কামাল
বিজয় একাত্তরে

দরজায় কড়া নাড়ে এক সত্যের মহিমা
নূপুর তালে বেজে উঠে সঙ্গীতসুর
আজিকার প্রভাতবেলা
কী মধুর আশে প্রাণিত পৃথিবী আমার
বিজয় উল্লাসে মাতে!
আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে বিজয় ইতিহাস
নিবিড় পরিচর্যায় শুয়ে আছে আজও...
যদিও ঘুণপোকা ওঁৎ পেতে আছে
বীভৎস গোপন পথে
আমি, আমরা জেগে আছি
রাতজাগা পাখি-অতঃপর ভোরের আলো
চশমার ফাঁকে উঁকি দেয়
ফুল পাখি আর ঝরনাধারা নেমে আসে
চেতনার কাব্যপাঠে-রক্ত-আখরে
আমি বিজয়ের আবাহনে শিহরিত হই
বিজয়োৎসবে, বিজয় একাত্তরে।


শাহীন ভূঁঞা
বিজয়ের কবিতা

এসেছে বিজয় দিন; ফুলে ফুলে ওড়ে প্রজাপতি;
আনন্দে উতলা আজ বাউণ্ডুলে বিহ্বল বাতাস।
তবুও আনন্দ কই? চারদিকে দুঃখের বসতি
অজস্র কান্নায় ভরা... রক্তস্নাত ডিসেম্বর মাস।

এসেছে বিজয় আর চক্রবালে দুঃখের আগুন
এমন বিজয় দিনে মুহ্যমান প্রেমিক হৃদয়
দিকে দিকে চলে আজো প্রতিদিন তরতাজা খুন
বিজয়ের দিবসেও কাটে না কারোর কোনো ভয়।

আগুন-সমুদ্র থেকে সে-বিজয় এসেছিল কবে
ভুলে গেছি সেই কথা, মনপোড়া বিষাদের রেখা
বুকের শোণিতে শুধু ফুটে আছে গৌরবে সৌরভে
তার এই মর্মকথা; আজও পাইনি তার দেখা।

বিজয়-হাসির ফোটা পুষ্পশোভা এক মুক্ত ভূমি
এসো, এ-হৃদয় গড়ি ভালোবেসে আমি আর তুমি।

 


মালিহা পারভিন
আজ ডিসেম্বরের ভোর...

ইতিহাস খুলে দেয় জানালা তার।
সেখানে বঞ্চিত পূর্ব পুরুষের ঝলসানো চোখ,
সেখানে রোদে পোড়া মুখ, চাবুকের দাগ পিঠে,
শ্রম রুক্ষ নগ্ন পায়ের শুকিয়ে যাওয়া ঘায়ের চিহ্ন।

শস্যের মাঠে প্রপিতামহ কপালের ঘাম মুছে
একদিন বলেছিল
'দেখিস আমাদের শস্যের ভাগ হবে না আর,
দেখিস শ্রম, মেধা, সততার দাম
ঠিক পেয়ে যাবো একদিন।

কিন্তু বিচূর্ণ আশায় স্বপ্ন গেছে পুড়ে
দাউ দাউ আগুনে পুড়েছে শপথ।
বিজাতীয় ভাষায় গান গাইতে গাইতে
পূর্ব পুরুষ জ্বলে একদিন উঠেছিল।
ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়ে তারা বলেছিল
বিজয় পতাকা নিয়েই তবে ফিরবি স্বদেশে।

এভাবে ইতিহাস হেঁটে গেছে সময়ের হাত ধরে
যুদ্ধ, বিভেদ, সংঘাত, মৃত্যু পেরিয়ে
বায়ান্ন, একাত্তর, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, ডিসেম্বর ছুঁয়ে
ইতিহাস হেঁটে গেছে বঞ্চিত মানুষের
প্রলম্বিত ছায়া মাড়িয়ে,
যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে মহাকালে।

আজ মুছে গেছে অন্ধকার,
নির্ঘুম অগনন রাত্রি মেখেছে আলোর রেণু,
এসেছে স্বাধীনতা মর্ম মননে, রক্তে শোণিতে
উত্তাল উচ্ছ্বাসে, গৌরবে সুরভীতে।
উড়েছে পতাকা বিজয় বিজয়ে
ডিসেম্বরের ভোর তাই কেঁপেছে উল্লাসে।


শাহীন আরা আনওয়ারী
রক্তাক্ত পিঞ্জরে উইঘুরবাসী

উইঘুরের আকাশে রক্তাক্ত মেঘের ছোপ
রুদ্র ক্রোধে এলোমেলো,
কান্না আহাজারি কেবলই হাহাকার
নজিরবিহীন জুলুম-নির্যাতনে ধর্ষণের
যাতাকলে পিষ্ট ওরা
শরীরের অঙ্গ কেটে ব্যবসা করে মানুষ!
হায়রে বিবেক।

ওদের হৃদয় রক্তাক্ত-জমিন রক্তের নদে ডুবুডুবু
চোখে পানি নেই, বুকে শুধু জ্বালা আর জ্বালা
জীবনখানা বানিয়েছে ওরা মৃত্যুর কারবালা।
শুনেছে কি কেউ কোনো কালে জীবন্ত
মানুষের অঙ্গ কাটে?
হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা আর প্রার্থনায়
আজ তোমাদেরই রাখি। ক্ষমা নেই ঐ পাষণ্ডদের।
বিশ্ববিবেক, জাতিসঙ্ঘ- কেন নীরব
কেনো নেই ওদের পাশে।
মজলুমের কান্নায় এখন খোদার আরশ কাঁপছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল