২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাহিত্য কবিতা

-

হাসান হাফিজ
মোক্ষধামে চল্ দোঁহে যাই

গাঙের ঘাটে নৌকা বান্ধা মাঝির হদিস নাই
ওই পারেতে ভুবনতীর্থে ক্যামনে তবে যাই?
আকাশ কালো ঘনাইছে মেঘ
উথালপাথাল ঝড়ের নাচন হয়তো সহসাই
দুঃসময়ে কোন্ উছিলায় মাঝির দেখা পাই?
ও মাঝি তুই দেখা দে রে
কান্দি আকুল কণ্ঠ ছেড়ে...
যাবো ওপার সাধুর কাছে আপনজনের ঠাঁই
গাঙ বেতালা রাক্ষুসে হাঁ কোথায় মাঝি ভাই?
পার হবো রে তৃষায় ডুবে প্রাণ করে আইঢাই
হঠাৎ মাঝি উধাও কেন শাস্তি বিধান চাই
তাপ অনুতাপ উছলে পড়ে তিক্ত সে আশনাই
ও মাঝি তুই নিকটে আয়
কালসন্ধ্যার এই বিরানায়
চল্ দু’জনায়, মোক্ষ ধামে পথ চেয়ে র’ন সাঁই॥

 

 


শাহাজাদা বসুনিয়া
দুরন্ত উন্মাদনা

আনন্দ কি মøান হলো মেরুকরণে?
মেরু রেখা!
একপাশে উষ্ণতা, অন্যপাশে শীতলতা
মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে যৌবনকাল।
আমরা লজ্জিত যৌবনের জোয়ারে
নীতিহীন পাপের পঙ্কিলতায় ডুবি
অসুন্দরে আমরা নিজেদের চিনি-জানি
আমি জানি তোমার দুরন্ত যৌবন
তীর-ধনুক দিয়ে শান্ত করা যাবে না।
তুমি অস্থির, বেগবান ঘোড়া
ছুটে চলো বেসামাল কল্লোলে
আমি অদক্ষ সাওয়ারি পড়ে যাই খাদে
খাদে পড়া ও ছুটে চলা একই সঙ্গে
সুন্দর ও স্পর্শকাতর মর্মবেদনা।
যৌবন!
তুমি স্বল্পকাল শান্তির ইপ্সিত লক্ষ্য
তুমি অকপট সত্য
প্রৌঢ়ত্বে দয়া-দক্ষিণ্যের বিজয় গৌরবে।
প্রত্যাশা করি ফিরে আসুক উন্মাদনা
এই দুরন্ত যৌবনে আমরা হবো সত্যের প্রেমিক-প্রেমিকা।

 

 

 

নাসির মাহমুদ
ভুল ফোন

ভুল করে ফোন করি আজো ছুটির সকালে মাকে
সে তো বহতা নদীর প’রে অনন্য বাগানে থাকে
ব্যস্ত সময় কাটায় স্রষ্টার কৃতজ্ঞতায় সারা দিন
বাবার হাতে রঙতুলি ক্যানভাসে মা তারই ছবি আঁকে।

পৃথিবীর ফোন বাজে নাকি সেই নন্দিত কাননে
আমার নিয়মিত ‘মা’ ডাক শ্রুতিতে কি হানে?
দেখতে কি পায় এ মনে জমে আছে কত ঘন হাহাকার
জানি না তবু এ মন সারাক্ষণ ডেকে যায় আনমনে।

মা খেতেন পান আর নিজের বানানো জর্দা
এখন খান পবিত্র শরাব,প’রে তাকওয়ার পর্দা?
সঙ্গী বাবা ও শরাব, বাজে কি মধুর রবাব
হুর ও পরী বেষ্টিত দু’জনকেই জানায় শ্রদ্ধা

সময় কাটে তাঁদের সদানন্দ কোলাহলে
ফোনের সুযোগ কই অনন্ত ঐ হৃৎমহলে
এখানে আনন্দ মানে শুধু স্রষ্টার বন্দনা
পৃথিবীর ফোন ভুলে থাকা তাহলে মন্দ না।

 

 

অমিতাভ মীর
ছিলো না শুধু মানবতার উপস্থিতি

সেখানে সব কিছুই ছিলোÑ
বোধ-বুদ্ধি, ঈর্ষণীয় মেধা, জ্ঞান, বিবেক সবই ছিলো,
একচোখা ব্রাত্য চেতনার উপস্থিতি সেখানেও ছিলো;
বুকের সিন্দুকে দাসত্বের দলিলও তোলা ছিলো।

নইলে, মেধার সর্বোচ্চ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই মুখগুলোÑ
কি করে অবলীলায় মুহূর্তের মধ্যে হিংস্র শ্বাপদ
হয়ে ওঠতে পারে?
হাতের সুখ মিটিয়ে পেটাতে পেটাতে
নিজের সহপাঠীকে মেরে উল্লাস করতে পারে?

হত্যার পরও কোন বিকার নেই যাদেরÑ
তাদের বিদ্যা আছে, বোধ আছে, বুদ্ধি আছে,
জরাগ্রস্ত চেতনা আছে,
বিবেক আছে, দাসত্ববৃত্তির ইতিহাস আছে;
ভয়ঙ্কর স্বার্থপরতার সঙ্কীর্ণতাও তাদের আছে।

এত কিছু থেকেও তারা মানুষের পর্যায়ে নেই,
দ্বিপদী শ্বাপদ এদেরকেই তো লোকে বলে।
বোধ-বুদ্ধি, ঈর্ষণীয় মেধা, জ্ঞান, বিবেক সবই ছিলো,
এদের মননে ছিলো না শুধু মানবতার উপস্থিতি।

 

 


শ্যামলী বেগম
হিসেব

কিছু খরচ হয়তো বাড়ায় দেনা
আর কিছু কখনোই ফুরোয় না
কিছুতে জমে যায় অনেক ঋণ
আর কিছুতে সৃষ্টি হয় নতুন দিন।

কিছু খরচে, চলে যায় অহেতুক সময়
কিছুটাতে জীবন হয় গতিময়,
কিছু খরচ, না চাইলেও করতে হয় বেশ
তাতেই মেলে অপার শান্তি, সুখ অনিমেষ।

কিছু খরচে বাড়ে দুঃখ, হয় তৃষিত অকাল মৃত্যু
কিছু খরচে অনুরাগে ভরে ওঠে, আবেগী চিত্ত
কিছু খরচ ফুরাতে চাইলেও ফুরোয় না কোনো দিন
ত্যাগে, টানে,্ আত্মায় মিশে থাকে চিরদিন।

কিছু খরচে পাওয়া যায়, ইচ্ছে ঘুড়ির ছাড়
কিছুতে কেবলি বাড়তে থাকে না পাওয়ার
অধিকার।


আরো সংবাদ



premium cement