২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শ্রুতি ও স্মৃতির সোনালি শিখা

যেমন দেখেছি তাকে

-

একত্রিশ.

হেমন্তের শেষাশেষি এক সকাল। শিশির ঝরার মুহূর্ত। শীতল বাতাস বুলিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির মুখ। সোনালি রোদের মিষ্টি চেহারা উজ্জ্বল করে তুলল চার পাশ। হেমন্তের এমনি কোমল সকালে একটি নোয়াহ গাড়ি এসে থামল আমার বাসার গেটে। প্রস্তুত ছিলাম আমি। গাড়ি পৌঁছতেই নেমে এলাম। গাড়ির দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লাম ভেতরে। চলতে শুরু করল গাড়িটি। আরেকটি বাসার গেটে পৌঁছবে গাড়ি। সে গেট দিয়ে নেমে আসবেন আল মাহমুদ। ছুটল গাড়িটি। পৌঁছে গেল আল মাহমুদের বাসার গেটে। মাহমুদ ভাইও ছিলেন প্রস্তুত। নেমে এলেন তিনি। বিসমিল্লাহ বলে উঠলেন গাড়িতে। গাড়ি চলতে শুরু করল। আমাদের গন্তব্য নোয়াখালী-মাইজদী। মাইজদী টাউন হলে একটি সাংস্কৃতিক উৎসব। প্রধান অতিথি আল মাহমুদ। বিশেষ অতিথির তালিকায় ছিল আমার নাম। আমরা ছুটলাম নোয়াখালীর উদ্দেশে।
হেমন্তের মিষ্টি-মায়াবি সকালে ছুটে চলল আমাদের গাড়ি। না ধীর না দ্রুত। মাধ্যম গতিতে গাড়িটি ছুটছে। ঢাকা ছেড়ে আমাদের গাড়িটি কাঁচপুর ব্রিজের ওপারে পৌঁছল। এখান থেকে শুরু হলো প্রকৃতির আনন্দ! রাস্তার দু’পাশে বৃক্ষের সারি। বুনো লতাপাতায় জড়ানো সবুজে হেমন্তের সোনালি রোদ ছড়িয়ে পড়লে ঝলমলে সুন্দর খেলছিল পাতায় পাতায়। এর ভেতর বিহঙ্গের উড়ে যাওয়া। পাখির ছড়ানো পাখনা এবং বাতাসের কম্পনে দোলানো পল্লব আহা যেন এক স্বপ্নের মায়াপুরী। তন্ময় হয়ে দেখছিলেন আল মাহমুদ। মুখে কথা নেই। চোখে জমা হয়েছে অনেক ভাষার চিত্রা। প্রকৃতির এ মায়া দর্শনে হারিয়েছি আমিও। শাঁ শাঁ করে বাতাস কেটে ছুটছে গাড়ি। গাড়িতে ড্রাইভারসহ তিন-তিনটি প্রাণীর মুখে কোনো শব্দ নেই। মনোসংযোগে গাড়ি ড্রাইভ করছে ড্রাইভার। আমরা দু’জন প্রকৃতির রূপদর্শনে মগ্নতার ঘোরে মুক। মুখে ভাষা নেই। অথচ অন্তরে ভাষার জোয়ার। মনে শব্দের মৌমাছি ম ম করছিল। সাত সকালে কথা বলার মানসিকতা কারইবা থাকে। আমাদেরও নেই। না আল মাহমুদ, না আমি। মনে হয় যেন রাতের ঘুমের ঘোরের সাথে সেতু গড়েছে প্রকৃতিরূপ মায়ার সকাল। দেখতে দেখতে গাড়ি পৌঁছে গেল মেঘনা ব্রিজে। রোদের ঝলকে রুপালি ঢেউ উপচে পড়ছিল মেঘনার বুকে। ব্রিজের মাঝামাঝি যেতেই কথা বললেন আল মাহমুদ। বললেনÑ ড্রাইভারকে, গাড়িটি একটু থামান তো ভাই। জবাবে বললেন ড্রাইভার, স্যার, এখানে গাড়ি থামানো খুব রিস্কি। থামলে আমাদের ব্রিজের শেষ মাথায় পৌঁছে থামতে হবে। চুপ করে গেলেন আল মাহমুদ। নদীর রুপালি শরীরে চেয়ে রইলেন তিনি। ব্রিজের মাথায় এসে ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলেন, এখানে থামব? রাখুন এখানে, বললেন আল মাহমুদ। গাড়িটি ব্রিজ ছেড়ে কয়েক গজ সামনে। এখানেই দাঁড়িয়ে গেল গাড়ি। দরজা ঠেলে পেছনে পাঠিয়ে নেমে পড়লেন আল মাহমুদ। সাথে আমিও। নেমেই ব্রিজে উঠে এলেন মাহমুদ ভাই। কিছু দূর এগোলেন ব্রিজের দিকে। যে পর্যন্ত না ব্রিজের তলপেটে রুপালির স্রোতের প্রবাহ ছুটছিল। নিজেকে থামালেন তিনি। ব্রিজের বাহু ধরে দাঁড়ালেন। যত দূর চোখ যায় দেখলেন নদী ও নদীর আকাশ। নদী তো ছুটে যায় দিগন্তের শেষ রেখায়। যেখানে আকাশ নেমে গেছে নদীর মাথায়। আর গোটা আকাশ ডুবে থাকে নদীর বুকের কাছে। বেশ খানিক সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন আল মাহমুদ। এক সময় একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, চলো। চললাম। গাড়ির উদরে ঢুকে পড়লাম দু’জন। গাড়ি নিজের শরীরে কম্পন তুলে ছুটল।
জিজ্ঞেস করলাম মাহমুদ ভাইÑ কী কথা হলো নদীর সাথে!
বললেন, নদী হলো পৃথিবীর পাত্র। আকাশের যত বৃষ্টি, বৃষ্টির যত পানি সবই তো ধারণ করে নদী। নদীই সমুদ্রকে ধনী করে তুলেছে। পৃথিবীর বুক থেকে যত ঝরনা, পাথরের যত অশ্রু সবই গড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে নদীর বুকে। নদী তাকে পৌঁছে দিচ্ছে সমুদ্রের কাছে। মানুষের জীবনও নদীর মতোই ধাবমান-বহমান। ছুটে চলাই নদীর জীবন। মানুষের জীবনও সেই গতির কাছেই বেঁচে থাকে। গতি নেই তো জীবন নেই। চলা নেই তো বলা নেই। চলাই জীবন। চলাই কর্মের নিশান। শোনো মিয়া, আমার একটি বিষয় প্রায়ই মনে হয়। এই নদী থেকে আমাদের বাঙালি নারীদের সৌন্দর্যের পোশাক শাড়ির উদ্ভব। নদীর মতোই বাঁক ফেরে শাড়ি। যে-ই শাড়ির আবিষ্কারক তার চোখে নদীই ছিল দৃশ্যমান। নদী দেখেই শাড়ির চিন্তা ঢুকেছে মাথায়।
বললাম, আপনার নদী তো তিতাস! আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, আমার নদী শুধু তিতাস নয়। গোটা বাংলাদেশের সমস্ত নদীই আমার। তিতাস আমার কৈশোরের নদী। আমার স্মৃতির নদী। আমার প্রতিবেশী নদী। কিন্তু যৌবনে বাংলাদেশের সমস্ত নদীই আমার হয়ে গেল। বাংলাদেশের বড় নদীগুলোতে আমি সাঁতার কেটেছি। পানি চোখে দেখেছি। কোন নদীর পানি কতটা লবণসিদ্ধ আমি বলতি পারি।
বললাম, মেঘনা তো আপনার স্মৃতির নদী! ঠিকই বলেছ। মেঘনা আমার স্মৃতির ও কর্মের নদী। এই মেঘনাতেই আমি ভেসেছি দিনের পর দিন। রাতের পর রাত। মেঘনার তলপেটে ড্রেজার হাতড়ায় এরকম একটি লাইন আছে আমার। আমি জোয়ার-ভাটার হিসাব জানতাম। কিন্তু জোয়ার ও ভাটার বিস্ময়রূপ আমি প্রত্যক্ষ করেছি এই মেঘনার বুকের ওপর বোটে বসে। আমি পানির গজ মেপেছি। এটি ছিল আমার চাকরি। গজ মাপতে গিয়ে নদীর সাথে বন্দী হলো আমার আত্মা। আমি নদীর স্রোত ও ঢেউয়ের বুকে খুঁজে পেয়েছি জীবনের এক তাৎপর্যময় দিক। ঢেউ সব কিছুকে তোলপাড় করে। আর স্রোত সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ যে তোলপাড় করা বিষয় এবং ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার খেলা জীবনের গোপন রহস্যের সাথে মিলে যায়। নদীর সন্ধ্যা কি যে বিষণœতা ছড়ায়, না দেখলে উপলব্ধি করা যায় না। নদীর বুকে রাতের আকাশ! আহা এখনো আমার চোখে জমে আছে নক্ষত্রের সেই সব মুখ। যা আকাশে ও নদীর বুকে একই সাথে ফুটে থাকত। খোলা আকাশ নদীর। যতদূর চোখ যায় কেবলি নক্ষত্রের মেলা। পানির স্রোতের সাথে এসব নক্ষত্র ভেসে যেতে দেখেছি। এত মেঘহীন আকাশের ঝলমলে সুন্দরের কথা। যখন আকাশ ছেয়ে থাকত মেঘে। মেঘের ঝাঁপিতে ঢেকে থাকত নক্ষত্রের চোখ। তখন নদীর আকাশ ভীষণ ভয়ঙ্কর। আকাশের কালো মুখ নদীর জলে আরো কালো হয়ে ফুটত। ঝড়ের ভয়ে পরান কেঁপে উঠত। নৌকোর বাতিগুলো পানিতে পড়ে ছড়াত দীর্ঘ আলোর রেখা। সেই রেখা ভেঙে ভেঙে দুলত ঢেউয়ের চূড়ায়। আলো ভেঙে খান খান হতো। কী যে ভালো লাগার ছিল সেসব স্মৃতি। আজ মেঘনার বুকের ওপর দাঁড়িয়ে সেসব দিনের ছবি ভাসছিল মনের ভেতর।
নদী নিয়ে ভয়ের কোনো ঘটনা মনে পড়ে? জিজ্ঞেস করলাম।
একটি ঘটনা নয়। বেশ ক’টি ঘটনা আছে। একটি আমার প্রফেশনের সাথে জড়ানো। এই মেঘনাতে। রাতের বেলা হঠাৎ ঝড় উঠল। ঝড় তো ঝড়! ভীষণ বেগের ঝড়। মনে হচ্ছিল আমাদের নাওটি দুমড়ে-মুচড়ে আছাড় দেবে বুঝি! এত প্রচণ্ড বাতাসÑ আমি কমই দেখেছি। মাঝি কিছুতেই হাল ধরে রাখতে পারছিল না। ঝড়ের বেগ পতিত হলো স্রোতের ওপর। স্রোতের গতি বেড়ে হলো ভয়ঙ্কর। স্রোত আমাদের খড় কুড়োর মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
নিয়ে গেল মেঘনার মোহনায়। যেখানে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলে গেছে মেঘনা। ভাগ্য ভালো, মোহনায় পড়ার আগেই কমে গেলে ঝড়ের গতি। ফলে সে যাত্রায় বেঁচে যাই আমরা। নইলে পরিণতির কথা ভেবে আজো কাঁটা দেয় শরীরে। আমরা তখন মেঘনা-গোমতির ব্রিজে। এখানে আর নামতে চাইলেন না কবি। বললেন, এই গোমতি আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে মুড়িয়ে আছে। এই গোমতির তীরেই নার্গিসের বাড়ি। কাজী সাহেব (কাজী নজরুল ইসলাম) নার্গিসকে বিয়ে করেছিলেন। বাসর রাতেই নজরুল ভীষণ অভিমানে একরকম পালিয়ে গেলেন নার্গিস থেকে। সে যে গেলেন আর এলেন না কোনো দিন। ষোলোটি বছর নজরুলের অপেক্ষা ছিলেন নার্গিস। নজরুল ফিরলেন না আর। ষোলো বছর পরে আজিজুল হাকিম নামে একজন কবিকে বিয়ে করেন। গোমতি নিয়ে আছে নজরুলের বেশ কিছু গান। যে গান বিরহের ধ্বনি তোলে আজো।
নদীর স্মৃতির কথা বলছিলেন মাহমুদ ভাই?
হ্যা, বলছিলাম। আরেকটি স্মৃতির কথা মনে পড়ছে বেশ। যেদিন মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিলাম। একটি বড় খোলা নৌকায় চড়ে বসছিলাম আমরা। তিতাসের কূলেই ছিল নৌকাটি। সেই আমার তিতাস নদীই বুকে নিলো আমাদের। একরকম ঠাসাঠাসি করেই বসল সবাই। নৌকার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বলে কথা। তা-ই হলো আমাদের। কাকে রেখে কে যাবে? এমন জিজ্ঞাসার ঘূর্ণাবর্তে সবাই হলো যাত্রী। তিতাসের ঘোলা জলে ভেসে চলল আমাদের নাওটি। নাওয়ের যাত্রী কারো চোখ ভয়শূন্য নেই। কারো মুখে নেই আশার চিন। বরং সবার চোখে অজানা আতঙ্ক! মৃত্যুর ভয়Ñ যেকোনো সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বুলেট এসে বিঁধতে পারে বুকের ভেতর। ফিনকি দেয়া সেই রক্তের সাথে বেরিয়ে যাবে জীবনের সব। এমন ভয়ে আমরা সবাই কাতর। আমাদের লিডার ছিল শহীদ নামে এক তুখোড় মুক্তিযোদ্ধা। এমন সাহসী লড়াকু খুব কমই দেখেছি। তার সঙ্গী ছিল আরো চারজন মুক্তিযোদ্ধা। এ পাঁচজন ছাড়া আমরা সবাই মৃত্যুভয়ে কাতর।
শহীদের বুকে সাহস ছাড়া আর কিছু ছিল না। নতুন ওঠা সূর্যের রঙের মতো ছিল তার চোখ। সেই চোখ সত্যিই যেন জ্বলছিল। প্রতিটি মুহূর্তে তার চোখ খোলা। দৃষ্টি সতর্ক। এবং মনে হয় অনেক দূর দেখার দৃষ্টি।
তিতাসের কূল ঘেঁষেই চলছিল আমাদের নৌকো। প্রচণ্ড ঢেউ না থাকলেও আমাদের ভারী নৌকোটি বেশ কাঁপিয়ে দেয়ার মতো ঢেউয়ের অভাব ছিল না। মাঝে মাঝে ঢেউয়ের ঝাঁপটায় মনে হচ্ছিল ঢেউয়ের বুকে তলিয়ে যাবে নৌকোটি। এসব ভয়ও শহীদের চোখেমুখে নেই। ঢেউয়ের আছাড়ি পিছাড়ি যেন কোনো বিষয়ই নয় তার কাছে। অথচ ভয়ের চোটে মহিলাদের অনেকেই কেঁদে ফেলছে। যা হোক আমরা প্রায় পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। নৌকা ভিড়ল কূলে। কিন্তু আমরা মাটিতে পা দেয়ার আগেই মাঝ নদীতে হানাদার বাহিনীর টহল বোটের নজরে পড়ে গেলাম আমরা।
কূলে পা দেয়ার আগেই শুরু হয়ে গেল গুলি। রাতের অন্ধকারের যে নীরবতা মুহূর্তে খান খান হয়ে গেল গুলির শব্দে। শহীদ আমাদের সবাইকে নৌকার পাটাতনে শুয়ে পড়তে বলল। ভয়ে থরথর করে কাঁপছি সবাই। মৃত্যু যেন ভাসছে চোখের সামনে। সবাইকে পাটাতনে শুয়ে থাকতে বলে শহীদ একা নৌকাটি ঠেলে ডাঙ্গায় ভেড়াল। তার সাথের চারজন মুক্তিযোদ্ধা তাদেরও শুইয়ে দিলো নৌকোয়। পাল্টা গুলি ছোড়ার কথা বলল চারজনই। শহীদ রাজি হলো না। বললোÑ আমরা গুলি করে পালিয়ে যেতে পারব। কিন্তু আমাদের সাথের এতগুলো মানুষ মারা পড়বে। আমাকে একরকম ঠেলে বলল শহীদÑ কবি সাহেব, আপনি এদের নিয়ে গাছের আড়ালে আবডালে এগোতে থাকুন। আমরা ওদের মোকাবেলা করব। একটি কথা আমি কখনো ভুলতে পারি নাÑ আমাদের সাথে দু’টি হিন্দু মেয়ে ছিল। দুই বোন। বাড়ি ছিল ভৈরবে। নৌকা থেকে নামলাম আমরা। নেমে দাঁড়াতেই ওই দু’টি মেয়ে আমার দু’টি হাত চেপে ধরল। থরথর কাঁপছিল ওদের গোটা শরীর। যেমন বাঘের তাড়া খেয়ে হরিণের দেহ কম্পিত হয় তেমন করে। মনে হচ্ছিল আর হাঁটতেই পারবে না ওরা। খুব করে সাহস দিচ্ছিলাম আমি। কিন্তু আমার হাত কিছুতেই ছাড়ছিল না দু’জন। এ অবস্থায় যতটা সম্ভব দ্রুত হেঁটে আমরা গাছের আড়াল হলাম। কিছুদূর এগোতেই শুরু হলো ঝমঝম বৃষ্টি। নদী থেকে তখন একটানা গুলির শব্দ ভেসে আসছে। আমরা শুয়ে পড়ব এ বৃষ্টির মধ্যেই। শুয়ে পড়ার আগেই আমার ডান হাতে ধরা মেয়েটির গায়ে ঢুকে গেল বুলেট। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে আর বৃষ্টি ধুয়ে দিচ্ছে রক্তের স্রোত। নেতিয়ে পড়ল মেয়েটি। একসময় দেখলাম তার দেহের প্রাণপাখি উড়ো গেল। বোনের লাশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার বাম হাত ধরা মেয়েটি। আহা জীবন। এবাবেই নিভে গেল সহসা। মেয়েটির লাশ রেখেই এগিয়ে চললাম আমরা। পেছনে পড়ে রইল অন্ধকারে ঢাকা তিতাস। আর আমাদের সাথে করে নিয়ে আসা শহীদ ও তার চারজন মুক্তিযোদ্ধা। এভাবে তিতাস আমার স্মৃতিতে গেঁথে আছে।
ততক্ষণে আমরা পৌঁছে গেলাম কুমিল্লা। হোটেল নূরজাহানে আমরা নাশতা খেতে থামলাম। হাত-মুখ ধুয়ে খানিকটা ফ্রেশ হয়ে বসলাম নাশতার টেবিলে। আল মাহমুদের চেহারায় তখনো জেগে ছিল স্মৃতির দহন। [চলবে]


আরো সংবাদ



premium cement