১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবন ও সমাজের দর্পণ

-

সাহিত্যকে যেকোনো সমাজের দর্পণ বা আয়নারূপে অভিহিত করা হয়। সাহিত্য হচ্ছে সুন্দরের প্রতীক, কল্যাণের অগ্রদূত, জনসাধারণের উপকারের উৎস। মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার স্মৃতি, অনুভূতিকে লেখনীর মাধ্যমে কাগজের পাতায় জীবন্ত করে তোলাই সাহিত্য। সাহিত্য হচ্ছে চিন্তা-দর্শন, আদর্শ, মেধা বিকাশের নাম। সাহিত্য হচ্ছে সুন্দর বিষয়ের সুন্দর বর্ণনা। সাহিত্য হচ্ছে অনুভূতির রূপায়ণ, হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া বর্ণনা। মানুষের অনুভূতি, কল্পনা, সৌন্দর্য, ভাবনা প্রভৃতি সুন্দরভাবে প্রকাশই হলো সাহিত্য। যা আমাদের চিত্তে আনন্দময় অনুভূতির স্বীকৃতি জাগায়, যা মানবহৃদয়ে পৌঁছে দেয় স্পন্দন, অনুপ্রাণিত করে বিভিন্ন কাজে। সাহিত্যের মূল অবলম্বন হচ্ছে, মানুষের জীবনের নানান দিক। সাহিত্যের আবেদন দীর্ঘস্থায়ী। সাহিত্যের পরিধি ব্যাপক। সাহিত্য এক বিশেষ শিল্পকর্ম, যা শুধু প্রকৃত মানস গঠনে সাহায্য করে, যা থেকে প্রয়োজনীয় প্রাণরস গ্রহণ করে মানবজীবন হয়ে ওঠে প্রাণচঞ্চলমুখর। কোনো জাতির নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা সব কিছুই সাহিত্যের মাধ্যমে মূর্ত হয়ে ওঠে। একটি জাতির পূর্ণ অবয়ব প্রতিবিম্বিত হয় তার সাহিত্যের ভেতর।
সাহিত্য মানুষের চিন্তা-চেতনা ধ্যান-ধারণার সংমিশ্রণ। কোনো জাতিকে জানার জন্য তার সাহিত্য জানা প্রয়োজন হয়। সাহিত্যে উত্তীর্ণ হতে কেবল শব্দ ও বাক্যের গাঁথুনি, নাকি বিষয়েরও কিছু ভূমিকা আছে এ বিষয়ের আলোচনা পুরনো। কেউ বলেন, অনুভূতির রূপময় ও হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া উপস্থাপনাই সাহিত্য। সে বর্ণনায় বিষয়বস্তু কী, তা মুখ্য নয়। পক্ষান্তরে কারো কারো কথা হচ্ছে মহৎ ও সুন্দর বিষয়ের উপস্থাপনাই সাহিত্য। মন্দ ও নিন্দিত বিষয়ের বর্ণনা আর যাই হোক সাহিত্য হতে পারে না। আসলে শব্দ কিংবা বিষয়ের দুর্বলতা যেকোনো বর্ণনাকেই সাহিত্যের সীমানা থেকে ফেলে দিতে পারে। অপর দিকে বর্ণনার মাধুর্যের পাশাপাশি বিষয়ের মহত্ত্ব পারে শব্দের যেকোনো বিন্যাসকে সাহিত্যে উত্তীর্ণ করতে। সাহিত্য রচনা, লেখালেখিতেও একটি লক্ষ্য থাকা জরুরি। লক্ষ্যহীন সাহিত্য যতই শক্তিধর ও শাণিত হোক তা শুধু শাব্দিক কারুকার্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং তার প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে খুবই স্বল্পমেয়াদি ও সাময়িক। সাহিত্য হচ্ছে জীবনের জন্য এবং জীবন হবে সাধনার জন্য। সে হিসেবে সে সাহিত্যই গুরুত্ববহ, মানুষ যে সাহিত্যের কল্যাণে জীবনের উন্নয়ন সাধন করতে পারে, আলোর দিশা পেতে পারে। একজন আদর্শ সাহিত্যিক তার দেখা ও কল্পনার জগতে স্থাপন করে সাহিত্য নামক শিল্পকর্মে। বাইরের রক্ত-মাংসের আড়ালে যে মানুষ লুকিয়ে থাকে, সাহিত্যিক সেই গোপন মানুষটিকে সর্বসমক্ষে টেনে আনেন।
আমাদের সাহিত্য আমাদের ইবাদত। সাহিত্য আমাদের আরাধ্য। যে সাহিত্যে কোনো লক্ষ্যের দিকনির্দেশনা নেই আমাদের কাছে তা নিরর্থক। তার কোনো কার্যকর গুরুত্ব নেই জীবন ও সাহিত্যে। মানবতার সৌধ নির্মাণের পরিবর্তে যদি সাহিত্যের দ্বারা মানবতা ও মনুষ্যত্ব ধ্বংসের কাজ আনজাম দেয়া তাকে গ্রহণ করা যায় না। মানবিক রিপু ও তাড়নাকে চাঙা করে তোলা শুধু সাহিত্যের কাজ নয়। সাহিত্য তো সেটাইÑ যার আবেদন মানবতার পুনর্গঠন, মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন ও মানবতার কল্যাণ উচ্চারণ করা। আরো সহজ ভাষায় বলা যায়, যে সাহিত্য জীবন ও মানবতার কাজে আসে না, নিছক আনন্দ-বিনোদনেই সীমাবদ্ধ সেই সাহিত্য সমাজের কাজে আসে না। নিছক ভাষাগত ও শাব্দিক কারুকার্য তো একটি তুচ্ছ ও নিষ্ফল ক্রীড়াশৈলী ও জাদুকরীর নামান্তর। এমন সাহিত্যের দ্বারা মানবতার কল্যাণ আসে না। যে সাহিত্য মানুষের মূল্যবোধ জাগ্রত করতে পারে না; যেখানে মনুষ্যত্বের বিকাশ নেই, যার মাধ্যমে হয় না আত্মার উন্নতি, মন হয় না প্রশান্ত, মানবতায় হৃদয় হয় না ভরপুর, সে সাহিত্য কখনই জীবনধর্মী সাহিত্য হয় না। সে লেখক কখনো হয় না মানবিক লেখক বরং সে সাহিত্যই সুসাহিত্যÑ সুন্দর ও সত্যের পরিচয় গ্রহণে সক্ষম একজন সাহিত্যিকের কাজ শুধু প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের কথামালা উপস্থাপনের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। শুধু ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া ধারণ করে এগিয়ে চলা নয়। তার কাজ হচ্ছে সত্য-ন্যায়, কল্যাণ ও সৌন্দের্যের স্বপ্ন দেখানো। সহজ-সাবলীল ও সুন্দর বর্ণনার মধ্য দিয়ে মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলে অন্ধকারে আলোর মশাল প্রজ্বলিত করাই একজন আদর্শ সাহিত্যিকের প্রধান দায়িত্ব। যাদের যোগ্যতা আছে, সাহিত্য রচনার মাধ্যমে সুন্দরের সার্বজনীন বাণী পয়গাম মানুষের কাছে তুলে ধরা জরুরি।
সাহিত্যের এপথ যেমন পুষ্পিত নয়, তেমনি ফুলাঙ্কিতও নয়। সাহিত্যের রাজপথে সবাই সফলতা অর্জন করতে পারে না। একমাত্র তারাই পারে এ দুর্গম পথ ও পথের বিভিন্ন আঁকবাঁক ও চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছতে, যাদের রয়েছে প্রশস্ত মন, সৎ সাহস ও অসীম ধৈর্য। সাহিত্যযুদ্ধে সাফল্য অর্জনে প্রয়োজন সাধনা, নিরন্তর প্রচেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম, তীব্র ইচ্ছা, অদম্য স্পৃহা, প্রশস্ত মন ও অসীম ধৈর্যশক্তির। সাহিত্যের ভাষা সহজ-সরল হওয়াই উচিত। সাহিত্যে জটিল ও দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে পাঠক এর সুফল লাভে ব্যর্থ হয়। তাই সাহিত্যের ভাষা হতে হবে সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল, ঝরনার মতো প্রবাহমান; যাতে তা সব মানুষের বোধগম্য হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

সকল