১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাহিত্য কবিতাবলী

-

জাহাঙ্গীর ফিরোজ
স্বপ্নের পালাগান

স্বপ্নের দুয়ার থেকে ফিরে এসে
দাঁড়িয়েছি দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি।
ভয়াল সময় যেন অজগর
দীর্ঘ অশেষ
ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে স্বদেশ।
দুঃস্বপ্নের গহ্বরে কোনো জোনাকিও নেই
নিকষ আঁধার সে তো মূকপর্ব্বতের ছায়া
দয়ামায়াহীন প্রমত্তা কালি
রঙ্গমঞ্চে চলিতেছে স্বপ্নের পালাগান
মুহুর্মুহু করতালি।
পালাগান থেকে ফিরে এসে দেখে বুক খালি।

 

 

 

 

মোশাররফ হোসেন খান
তোমার শহর

তোমার শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি
নিয়ে যাচ্ছি সাথে করে ধুলায় মাড়ানো কিছু কষ্ট,
রেখে দেবো যতœ করে যেন না হয় নষ্ট।
ভালো থেকো তুমি আরো ভালো থেকো
তোমার শহরে একদিন এসেছিলাম মনে রেখো।
এই শহরে যেখানেই দেখবে তুমি পানির ফোঁটা
মনে করো বুকের গভীর থেকে উঠে আসা
আমার দীর্ঘশ্বাসের অশ্রু ওটা!...

যে শহরে তোমাকে পেলাম না সেটা শহর কেমন করে হয়?
নাকি সেখানে আছে কেবল অদৃশ্য কোনো বরাভয়!
দুই.
নিজেকে আড়াল করার জন্য
অদৃশ্যে, কোথায় লুকিয়ে আছো?
নাকি কোনো বনভূমিতে ঘুমিয়ে পড়েছো?

তুমি ডাকোনি বলে আজ আর ফুল ফোটেনি
পাখিরা জাগেনি সাগরে জোয়ার আসেনি
আজ আর কোনো জাহাজও ভাসেনি
সমস্ত শহর ডুবে আছে কালো মেঘে
কোথায় চলে গেছ এই শহরকে একলা রেখে?

কিসের এত কষ্ট, বুকভরা কিসের এত জ্বালা!
তোমার জন্য বৃক্ষ পল্লব
গুটিয়ে নিয়েছে ডালপালা।
তোমাকে না পেয়ে এই শহরের
সকল সড়ক আরো সরু হয়ে গেছে
পাহাড় ধসে কত ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে
শোকের বন্যায় ভেসে গেছে কত শস্যদানা!
তোমার শূন্যতায় বন্যবরাহ অবিরত দিচ্ছে হানা।

তোমার নাম ধরে ডাকে কর্ণফুলী শতবার,
তোমার শূন্যতায় এই শহরে নেমে এসেছে হাহাকার!
তোমার শূন্যতায় সকল পাখি গুটিয়ে নিয়েছে ডানা
তোমার শূন্যতায় এই শহর হয়ে গেছে কানা!

তোমার নাম ধরে এই শহর ডাকছে বারবার
আড়াল থেকে বেরিয়ে এসো সামনে দাঁড়াও একবার।

তিন.
আমি তো দূরের যাত্রী, ঠিকানা নেই যার
শূন্যে ভাসা কবির খবর কে রাখে আর?

 

 

 

ইলিয়াস ফারুকী
ঘোর লাগা মানুষের বিবেক

এই বন্দরে ভিড়বে জাহাজ সাওদাগরির,
এই বন্দরে উড়বে পতাকা জারিজুরির,
জম্পেশ আড্ডায় নাচবে যখন কথার শরীর
ঠিক তখন হোঁচট খাবে যুদ্ধজয়ী মস্ত বীর।

ধর মার কাট হাহাকার চতুর্দিকে,
সত্যি, মায়া, শৌর্য বীর্য সব ফিকে,
আছে যার পেশি, সেই সত্য সেই টিকে
বাকিরা সবাই দয়ায় মায়ায় আছে ধিকে।

আওয়াজ তোলো যুদ্ধ করো নিজের সাথে
বিবেক জাগাও তাড়না লাগাও নিজের আঁতে
প্রতিবাদে ভেতর তোমার যদি তাঁতে
কঠোর শপথে হয়ে বলীয়ান আর থেকো না দুধে-ভাতে।

দ্বিধার মানুষ মরে বাঁচে ঘৃণা নিয়ে নিজের সাথে
এই বাঁচা কী বেঁচে থাকা, এই বাঁচায় কী জীবন মাতে।

 

 

 


শাহীন আরা আনওয়ারী
জীবনের পাণ্ডুুলিপি

কবিতার চোখে জ্বলে
জীবনের বর্ণীল পাণ্ডুলিপি।
সবুজ পাতায় শিরায় শিরায়
আলোক্লোরোফিলের মায়াবী সুখ।
চোখে বহমান নীল ঝর্ণার আবহমান ধারায়।
জীবনের পক্ষে সব কণ্ঠগুলোর গড় একই।
তাল রাগ ঠাট মেলে একই নীল যমুনায়।
কবিতার ছন্দে জীবন সাজে সুরভিত নীলে।
সুগন্ধি স্বপ্নে বিভোর তার দিনলিপি।
জীবনের স্বপ্নরা হাঁটে প্রেমের পথে।
সাজে কবিতায় গানে ছন্দের ঢেউয়ে।
জীবনকে চাঁদমুখো করার চেষ্টায় কবিতা।
আঁকে রুপালি চোখের অবয়ব।
শিল্পের মণিকোঠায় জীবন অমর হয়ে জ্বলুক।

 

 

 

মাহফুজুর রহমান সৌরভ
যে শহরে বসবাস ছিল

একদিন আমিও তোমার এই শহরের বাসিন্দা ছিলাম
যখন তোমার আমার তুমুল সম্ভাবনা ছিল
একটি মোহিত সকাল
কি নিদারুণ বিরহের দুরারোগ্য চন্দ্রগ্রস্ত রাতের শামিয়ানায়
ঢেকে যায় রাধা-কৃষ্ণের বৃন্দাবন
এখন নষ্টালজিক রোদ্দুরে চোখের ল্যান্সে ভেসে ওঠেÑ
আমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রথাগত জন্মকাহিনী
নিকুঞ্জ উৎসব ছেড়ে দলছুট পাখি উড়ে যায়
বিমূর্ত সঙ্গীত নিয়ে অন্ধকার ব্রথেলে
একদিন আমারও তোমার ঐ শহরে নোঙর ছিল
নীলাকাশ ছুঁয়ে যাওয়া জ্যামিতিক সড়কে
যেদিন ইচ্ছের ভাবনাগুলো হেঁটেছিল
সুদিনের সমান্তরাল পথ
আমি হেঁটে যাই মহাশ্মশানের বিবর্তনের জীর্ণ গৃহকোণে
দীর্ঘশ্বাসে অন্ধকার ছায়া অদ্ভুত কঙ্কাল হয়ে আসে
আমাদের প্রার্থনা সভায়

আহা! ঐ শহরে আমার বসবাস ছিল
যখন অলৌকিক জ্যোৎস্না চুমু দিয়েছিল
মফস্বলি মানবের জাগরণী ঠোঁটে।

 

 


শামসুদ্দিন হীরা
পাইনের বনে ক্ষোভ

ঝর্ণার স্রোতে গড়িয়ে শোকে ভয়ার্ত নীরবতা
তরতাজা যুবক খুনে খুনে লাল
থেমেছে স্পন্দন
চারদিকে আজ গুমোট আঁধারে
ঝড়ের কুলক্ষণ
আলো ক্ষীণ হতে হতে আঁধার ছড়িয়ে
সামরিক গাড়িগুলো বেপরোয়া আওয়াজ
উচ্ছ্বল যুবতীরা অনাগত ভাবনায় অসার
শিশুরা কান্না ভুলে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে
টগবগে যুবক প্রচণ্ড আক্রোশে ফুঁসছে
বৃদ্ধা বাবার অস্থির চৈতন্য ঘরময় পায়চারী
সমানতালে হানাদারের বুটের গটগট তাল
ক্রমশ জনশূন্য রাজপথ, জরুরি হর্ন আর
উপত্যকা থেকে ভেসে আসে ধূর্ত শেয়ালের ডাক
রাজ্যময় সারমেয়যুগদের পৈশাচিক উল্লাস
যোগ দেয় হাস্যকর গণতন্ত্রের চেলাচামুণ্ডারা
এপাড়েও উৎসবে মাতে প্রতিবিম্ব বন্ধুজন
সাধ্যকার তাদের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তোলার
তাদের ঔদ্ধত্য ধারা কাবেরী নদী হয় পদ্মায় গড়ায়
দিবানিদ্রায় নষ্ট কবি ও স্শুীল নামের ‘মানুষেরা’
গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বসতচিহ্ন পুড়ছে জমানো স্মৃতি
সুতোর বুননে সুতোর কারুকাজ শতরঞ্চিতে ছোপ
দূর পাহাড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলি পাইনের বনে ক্ষোভ

 

 


প্রদীপ দত্ত
তুমি আর আমি

কবুতর ভালোবাসা
নাকের তিল, চোখের তীর;
বন্যতা, ভালোবাসার জঙ্গল
অথবা সাগরপাড়েও থাকতে পারতাম:
বাগেরহাট অথবা কলাপাড়া
যেখানে সাগরের বসবাস।

ভুল তীর ভোলা বা পটুয়াখালী
ওখানে অন্তর নেই
শুদ্ধ ভালোবাসার, স্বার্থপরতা
সুখ স্বপ্ন কুরে কুরে খায়
বিশুদ্ধ ভালোবাসা।

অমরাবতীর তীরে ভোর রাতে
এসো সখি স্নান করÑ
হিমশীতল জলে
পান কর বিদগ্ধ ভালোবাসা।

যা শপিং মলে বিক্রি হয় না
কোনো মুদ্রায়!!


আরো সংবাদ



premium cement

সকল