২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাহিত্য কবিতাবলী

-

রেজাউদ্দিন স্টালিন
বলতেই হবে

বলতেই হবে
সেই মাহেন্দ্রক্ষণের কথা
কিভাবে তার আয়ত চোখের ভেতর
আবিষ্কৃত হলো মৃত্যু
আলো অন্ধকারের ঢেউয়ের চূড়ায়-চূড়ায়
তার চুলের ঝিকমিক নক্ষত্রের কথা
বলতেই হবে ঝাউবীথির বিষণœ মেদুর ভ্রুর কথা
বক্ষময় বিচরণশীল অশ্বারোহীর উদ্দেশ্যের কথা
যখন তার মুখ অহোরাত্র মর্মরিত তন্ত্রীর তারে
নাম না জেনেও তাকে সর্বস্ব বলে, স্বাতী বলে-সম্বোধন

আকাশে দীপ্যমান গ্রহের নামে তাকে ডাকা
হৃদয়ের ডঙ্কা বাজিয়ে শাখ বাজিয়ে
খোল-করতাল বাজিয়ে আহবান
সে-কি শুনতে পায় না অনন্ত আর্তস্বর

প্রেমে প্রতীক্ষায় এত বিভোর অক্লান্ত
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মজনুকে এত বিদীর্ণ হতে কে দেখেছে
ইউসুফকে অপ্রতিরোধ্য হতে
এমনকি ম্যাকবেথকে আত্মসংহারক

অকপটে বলতেই হবে সত্যলব্ধ শ্লোকের কথা
শাহ্নামার চেয়ে দীর্ঘ ব্যঞ্জনাময় মহাকাব্য
বেদনা বিরোচিত পদ্মাবতীর পদের চেয়ে পুণ্যবান
বিদর্ভ আকাক্সক্ষার কথা বলতেই হবে
পথে পথে ছড়ানো ছিটানো ভগ্নাংশের কথা
আর ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী আত্মবিনাশের কথা

জানাতেই হবে প্রার্থনা
মঙ্গলের প্রভু এ জীবন মুক্ত করো মরীচিকা থেকে
সুন্দরের আরাধনা ক্লান্তি থেকে ত্রাণ করো
মানব রচিত বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে
হৃদয়কে বিচ্ছিন্ন করো জাগতিক থেকে
স্বনির্বাচিত করো সংমুগ্ধ সময়ে

শাহীন রেজা
রাত্রির কাছে রাত্রির পাশে

রাত্রির কাছে রাত্রির কাছে ছুটে আয় তুই রাত
তুই এসে ধর তুই এসে ছোঁ কবিতার দু’টি হাত

তোর সাথে হোক তোর সাথে হোক জোছনার মহাআড়ি
তুই খুলে ফেল চন্দ্রের বেশ কী কেমন তাড়াতাড়ি

তোর বুকে আঁকা তোর বুকে জমা ধূসরের ঝরাপাতা
তুই এসে কাছে বসে একা পাশে মেলে দিস খেরোখাতা

তোর চোখে চোখ মাঝি চলে একা শব্দের গুণ টেনে
ভরা বর্ষায় কে নায়রী যায় তার পথ কে’বা চেনে

রাত্রির ডাকে ডাহুকের ভাষা রাত্রিতে জাগে বেগ
তোর বুকে শুধু মৃগয়ার স্মৃতি চুলের গন্ধে মেঘ

রাত্রিতে এসে রাত্রিতে ভেসে ঘন হয় সব চিল
মনজুড়ে শুধু অচিনের ধ্বনি মনজুড়ে তামাবিল।

মিতা আলী
গ্রামের ছায়া

এই শহরের একটি কোণে একটু গ্রামের ছায়া
সেই ছায়াতে বসত আমার আনন্দেরই ধারা
সহজ সরল মানুষ আমি
পৃথ্বী-গ্রামের মাঝে
ধান-কুটিতে খাবার আমার
মাটির বাসন ধাতে
ইট-পাথরের শহরটাতে
পাথর কঠিন প্রাণের মাঝে হাঁপিয়ে যায় জান
তখন আমার ছোট্ট কুটির গায় যে কোমল গান
পাথর কঠিন সাথী আমার স্বর্ণ শিকল পায়ে
তবুও আমি গাইছি গান কোমল ধরার সনে
নিশ্চিত এক মুক্তি আছে
আছে মুক্তবায়ু
ভালোবাসায় হিসাব নিকাশ করতে নারি শুরু
আমি যেন আমার ধারায় শেষ দিনেও থাকি
সবুজ মনে সবুজ গ্রামের সেই ছবিটি আঁকি ॥

মোস্তফা হায়দার
চাপাবারুদে মেঘেরা

রাতের ধর্ষণলীলায় চোখ ওঠেছে আকাশে
জলের কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে পাহাড়
এতিম হতে হতে হারিয়ে গেছে রাজপ্রাসাদ
বিবর্ণতার বিচ্ছুরণ ভোরের চাদরে ভেসে আসে!

জলের পাতা নড়ার আবেগে কেঁদে ওঠে ভূমি
কাপ্তাই লেক বা হালদার নদী খনন
সময়ের ছেঁড়াকাঁথায় স্বপ্নের অনুরণন
ঐতিহ্যের পালাবদলে ভূমির নিঃশেষতা চুমি!

রাজপ্রাসাদের চাপাবারুদে মেঘেরা আঁতুড় নয়
ধনের পাতায় হাত রেখে করে যায় কর্ষণ
ইচ্ছের ফানুশে বিবেকের মরণে বাড়ছে ধর্ষণ
ভোরের কুয়াশার স্খলনে জাতির দরপতন হয়!

রাতের বিদায়ে জিহ্বারা একেকটা বনহংসু
জলের সোহাগে জলকামানে তারাই বড় দস্যু!

বিপ্লব ফারুক
সাম্যের সঙ্গীত

স্বপ্ন দেখতে দেখতে আজÑ ভিসুভিয়াসের
আগ্নেয়গিরিতে ফুল ফোটাতে পেরেছি।

আমি স্বপ্ন বিলিয়ে দেবো মানুষের মনে
তারা এ স্বপ্নের দেশে হয়ে উঠবে বীর
পৃথিবী শোষক ভয়ে পালাবে স্বদেশে
গোলাবারুদের গন্ধে আর পৃথিবীকে
কাঁদতে হবে না পরমাণু বোমার আতঙ্কে

শান্তির নহর বইবে আমাদের বুকে।

যা ঘটছে চাই না তাই ঘটুক জীবনে
সাম্রাজ্যবাদের চেনা স্বপ্ন চুরি করে
শৃঙ্খলিত করতে চাচ্ছে মানবাধিকার
আঁধারের দিন কেটে যাচ্ছে দেশে দেশে
চে-হত্যার প্রতিশোধ নেবে ভূখা নাঙ্গা

হে সাম্রাজ্যবাদ : তোমার সুদিন আজ
বিপ্লবের তোষানলে শেষ হয়ে যাবে।

সাম্যের অম্বরে স্নান করব যুগ যুগ।


আরো সংবাদ



premium cement