২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফররুখ আহমদ ছড়াশিল্পের নিপুণ কারিগর

-

১০ জুন ১৯১৮-১৯ অক্টোবর ১৯৭৪
ছড়া রচনায় বাংলাসাহিত্যে কবি ফররুখ আহমদের অবদান অবিস্মরণীয়। কলেবরের দিক থেকে কিংবা উৎকর্ষ বিচারেও ফররুখ আহমদের অবদান কম নয়। ফররুখ আহমদের শিশু-কিশোর ছড়া-কবিতার ভাষা, ছন্দ, ভাব, বিষয় ও শিশু-মনস্তত্ত্বের বিচারে তাঁকে বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিশু-সাহিত্যিক হিসেবে অভিহিত করা যায়। তাঁর রচিত বিভিন্ন শিশু-কিশোর ছড়ার দিকে আলোকপাত করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
ফররুখ আহমদের উল্লেখযোগ্য ছড়াগ্রন্থগুলো হলোÑ পাখীর বাসা (১৯৬৫), হরফের ছড়া (১৯৬৮), নতুন লেখা (১৯৬৯), ছড়ার আসর-১ (১৯৭০)। কবির মৃত্যুর পর প্রকাশিত তিনটি গ্রন্থÑ চিড়িয়াখানা (১৯৮০), ফুলের জলসা (১৯৮৫), কিস্সা কাহিনী (১৯৮৫)। গুণগত মানের দিক থেকে ফররুখ আহমদের শিশুতোষ ছড়া-কবিতা অসাধারণ। শিশু-মনস্তত্ত্ব বিচারে এবং শিশুদের উপযোগী ভাব-ভাষা ও ছন্দ ব্যবহারে তিনি অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। তাঁর প্রথম রচিত শিশু-কিশোর গ্রন্থের নাম ‘পাখীর বাসা’। এটি প্রকাশের সাথে সাথে পাঠকদের কাছে বিপুলভাবে সমাদৃত হয় এবং এ বইয়ের কবি ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেন। ‘পাখীর বাসা’Ñ বিভিন্ন পাখি নিয়েই বেশি ছড়া রচিত হয়েছে। তিনি নামছড়াটি ভূমিকাস্বরূপ শুরু করেছেন এভাবেÑ
আয় গো তোরা ঝিমিয়ে পড়া দিনটাতে,
পাখীর বাসা খুঁজতে যাবো একসাথে ॥
(পাখীর বাসা : পাখীর বাসা)
গ্রামীণ জীবনযাত্রায় শিশুরা যে অবাধ বিচরণ সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিশুরা ঝিমিয়ে পড়া দুপুরে নির্ঘুম থেকে নানা দুষ্টুমি করে বেড়ায় আর তারা পাখির বাসা খুঁজতে লক্ষ্য করেÑ
কাঠবিড়ালী পশমী কোটে
বিষম রোদে হাঁপিয়ে ওঠে,
কাকের করুণ কান্না ঠোঁটে
মিলায় দূরে দূরে ॥ (চৈত্রের গান : ঐ)
‘হরফের ছড়া’ বাংলা একাডেমি থেকে গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে। হরফের ছড়া গ্রন্থে কবি ফররুখ আহমদ শিশুদের বাংলা বর্ণমালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ভাষা শিখতে হলে প্রথমে বর্ণ বা অক্ষরজ্ঞান থাকতে হয়। বর্ণ দিয়ে শব্দ, শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি করে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। তাই বর্ণ-পরিচয় অতি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতিটি বাংলা বর্ণ বা হরফ নিয়ে একেকটি ছড়া রচিত হয়েছে। এগুলো এতই সুন্দর ও আকর্ষণীয় যে, শিশুরা এসব ছড়া পড়ে সহজেই বাংলা বর্ণমালা বাংলা শব্দ গঠন শিখতে পারবে। যেমন ‘অ’ বর্ণ নিয়ে ছড়াÑ
অ- য়ে অতসী-তিসির মাঠ
অশত্থ গাছের সামনে হাট।
‘ক’ বর্ণ নিয়ে একটি ছড়াÑ
ক-য়ের কাছে কলমিলতা/কলমিলতা কয়না কথা
কোকিল ফিঙে দূর থেকে/কলমি ফুলের রঙ দেখে।
এভাবে শিশু শুধু একটি বর্ণের সাথে পরিচিত হচ্ছে না, সাথে সাথে সে তার পরিচিত পরিবেশে পরিদৃশ্যমান বিভিন্ন বিষয়ের সাথেও পরিচিত হয়ে উঠছে। এভাবে একটি বর্ণের সাথে পরিচয় ঘটাতে গিয়ে কবি সে বর্ণ দিয়ে তৈরি অনেক শব্দের সাথে বা তার পরিচিত পরিবেশের অনেক বিষয়ের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
‘নতুন লেখা’ ছড়াগ্রন্থে মোট ৬৮টি ছড়া-কবিতা সঙ্কলিত হয়েছে। এ গ্রন্থে বিভিন্ন স্বাদের ছড়া রয়েছে। প্রকৃতিবিষয়ক, প্রাণিবিষয়ক, শিশু বা ব্যক্তিকে নিয়ে বিভিন্ন হাসি-তামাশা, রূপকথা বা আরব্য রজনীর কাহিনী, ধর্মবিষয়ক ইত্যাদি। এ গ্রন্থের হাসিবিষয়ক একটি ছড়াÑ
কাষ্ঠ হাসি দেখে কারো/যায় যে জ্বলে পিত্ত,
কাষ্ঠ হাসির মহড়াটা/চলছে তবু নিত্য! (হাসি : নতুন লেখা)
মেঘের ছড়া, বৃষ্টির ছড়া, পয়লা আষাঢ়, বর্ষার গান, ইলশেগুঁড়ি, বৃষ্টি নিয়ে বেশ কিছু ছড়া রয়েছে। ভরা বর্ষার পূর্ব মুহূর্তে আকাশ মেঘলা থাকে তখন আকাশে মেঘ আনাগোনা করে। এরপর বর্ষা আসে। মুষলধারে বৃষ্টি নামে। গ্রাম বাংলার মাঠঘাট জলে টইটম্বুর হয়ে ওঠে। তখন গ্রাম বাংলার পরিবেশ হয়ে ওঠে অত্যন্ত নাজুক। এমন বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ পাওয়া যায় নিম্নোক্ত ছড়াটিতেÑ
বৃষ্টি এলো কাশবনে/জাগল সাড়া ঘাসবনে। বকের সারি কোথায় রেÑ লুকিয়ে গেল বাঁশবনে। (বৃষ্টির ছড়া : ঐ)
‘চিড়িয়াখানা’ ছড়াগ্রন্থে মোট ৩২টি ছড়া-কবিতা সঙ্কলিত হয়েছে। চিড়িয়াখানায় থাকে বিচিত্র প্রাণীর সমাবেশ। এ গ্রন্থে কবি স্থলচর, জলচর, উভচর, সরীসৃপ দিয়ে ৩২টি প্রাণীর সচিত্র সমাবেশ ঘটিয়েছেন। প্রাণী ছাড়া অন্য বিষয় নিয়ে কোনো ছড়া নেই এ গ্রন্থে। প্রাণী জগতের সবচেয়ে সুন্দর ও ভিতু প্রাণী হলো হরিণ। হরিণের এমন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে নিচের ছড়াটিতেÑ
হরিণ ঘাটা নদীর বাঁকে
দল বেঁধে ভাই হরিণ থাকে,
একটু খানি শব্দ হলে
হাওয়ার আগে হরিণ চলে
বিজলি আলো ঝিলিক দিয়ে,
মিলায় যেন চোখ ধাঁধিয়ে।
(হরিণ : চিড়িয়াখানা)
বলা যায়, ফররুখ আহমদ শিশু মনোস্তত্ত্ব বুঝেই শিশুদের জন্য নান্দনিক ছড়া-কবিতা রচনা করেছেন। এগুলো বিষয়বস্তুর দিক থেকে যেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ তেমনি শিশু-কিশোরদের মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে সম্পূর্ণ উপযোগী। এতে তারা যেমন আনন্দ পায়, তেমনি নানা বিষয়বস্তুর আকর্ষণ তাদেরকে এগুলো পাঠ করতে উৎসাহ জোগায়। আনন্দ লাভের সাথে সাথে তারা অনেক শিক্ষণীয় বিষয়ও জানতে পারে। সার্বিক বিচারে শিশুতোষ ছড়া রচনার ক্ষেত্রে বাংলা শিশুসাহিত্যে ফররুখ আহমদের অবদান অবিস্মরণীয় এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আদমদীঘিতে ২৩০ চালকল বন্ধ : বেকার ৭ হাজার শ্রমিক সাকিবে উজ্জীবিত বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজে সমতা কুলাউড়ায় জঙ্গল থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার ঈদগাঁওতে মাদককারবারি গ্রেফতার শিক্ষায় ব্যাঘাত : ফেসবুক-টিকটক-ইনস্টাগ্রাম-স্ন্যাপচ্যাটের বিরুদ্ধে ২৯০ কোটি ডলারের মামলা আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী

সকল