২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
স্মৃতির সোনালি শিখা

যেমন দেখেছি তাঁকে

-

ছয়.

মোটামুটি একটি দীর্ঘ জীবন কাটিয়েছেন আল মাহমুদ। দীর্ঘ জীবনে চলার পথে কত চোখের সাথে চোখাচোখি হয়েছে তার। কত মুখের ছবি অবিকল রেখে দিয়েছে মন। কত মানুষ হয়েছে তার কাছাকাছি। তিনি কতজনের কাছাকাছি হয়েছেনÑ এসবের হিসাব নেই। জীবনের দিনগুলো বেশ হিসাবের। কিন্তু মানুষের সাথে সম্পর্কের সেতুগুলো হিসাবহীন। কিছু সম্পর্ক বিলকুল ভুলে যায় মানুষ। কিছু ভোলে না মোটেই। আবার কিছু ভোলা-অভোলার মায়াজালে আটকে যায়। এ ধরনের সম্পর্কগুলো থেকে থেকে মনে হয়। থেকে থেকে ভুলে যায়। এভাবেই চলে জীবন গাড়ি।
সম্পর্কেরও থাকে নানা রকমফের। কোনোটি প্রেমের সম্পর্ক। কোনোটি ভালোবাসার। কোনোটি বন্ধুত্বের। আবার কোনোটি থাকে সাহায্যের হাত। সব সম্পর্কই মানুষের জীবনে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের ঘাটে ঘাটে এসব সম্পর্কের জাল বিছানো থাকে বলেই মানুষ প্রাণচাঞ্চল্যে পথ চলার সাহস পায়। সম্পর্ক যেমনি হোক, সম্পর্কের কিছু দায় থাকে। এ দায় থেকে মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মতো উদারতার আশ্রয় খোঁজে। সুযোগ পেলেই কৃতজ্ঞতার ফুল ঝেড়ে উপকারী সৌরভের কথা মনে করে। অকপটে স্বীকার করে ঋণ। আল মাহমুদের জীবনে এমন কিছু মানুষ ছিলেন, যাদের কথা বারবার তুলতেন তিনি। তাদের কাছে ঋণীÑ বলতেন একথা। সুযোগ পেলেই জানাতেন কৃতজ্ঞতা। অন্তত আড্ডায় স্বীকৃতি এনে নিজেকে কৃতজ্ঞ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করতেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলতেন তিনি। বলতেন, আমি তার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তার ঋণ আমি স্বীকার করি অকপটে। বঙ্গবন্ধুর বিশাল হৃদয়ের কথা, উদারতার কথা, বলতেন। মানুষের প্রতি মমতার দিকটি প্রকাশ করতেন। বলতেনÑ বঙ্গবন্ধু আমাকে জেলে পুরেছেন, এ কথা সত্য। আবার জেল থেকে তিনিই মুক্ত করেছেন। শিল্পকলা একাডেমির চাকরিটি তার একক আগ্রহেই হয়েছে। সার্টিফিকেটহীন একজন কবিকে তার মতো ব্যক্তিত্ব না হলে কে-ই বা চাকরি দিতে পারতো? ‘কাবিলের বোন’ উপন্যাসটি আল মাহমুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। এ উপন্যাসটির বিষয়ে মাহমুদ ভাই বলেছেনÑ বঙ্গবন্ধুর প্রতি যৎসামান্য ঋণ আমি শোধ দেয়ার চেষ্টা করেছি এ উপন্যাসের মাধ্যমে। এ উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুকে মহান নেতা হিসেবে উপস্থিত করেছেন কবি। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, সাতই মার্চের ভাষণ এবং ’৭১-এ পাকিস্তানিদের হাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার এ বিষয়গুলো সম্মানের সাথে উঠে এসেছে কাবিলের বোন উপন্যাসে। এটি মুক্তযুদ্ধ-বিষয়ক উপন্যাস। তার আরো একটি উপন্যাসÑ ‘উপমহাদেশ।’ এটিও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। দু’টি উপন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ওপর এমন উপন্যাস খুব কমই রচিত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা অসংখ্যবার শুনেছি তার মুখে। ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করতেন নামটি। জানাতেন কৃতজ্ঞতা। জিয়াউর রহমান তাকে ডেকে নিলেন। তার ওপর দায়িত্ব দিলেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের।
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলামÑ মাহমুদ ভাই কেন গেলেন জাসাসে? জবাবে বললেনÑ একটি দেশের প্রেসিডেন্ট যখন বলেনÑ কবি আপনাকে আমার প্রয়োজন, কী করে না যাই বলো! সত্যিই তো দেশের প্রেসিডেন্ট যাকে আশা করেন, তার তো যেতেই হয়। তিনি গেছেন। গেছেন আনন্দের সাথে।
একবার দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জাহাজে করে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। সমুদ্রের সম্পদ-গভীরতা এবং সমুদ্রাকাশের উদারতা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের দেখানোর অভিপ্রায় ছিল জিয়াউর রহমানের। তিনি তাই দেখিয়েছেন। তাই নিয়ে বক্তৃতা শুনিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া সেই জাহাজেও তুলেছিলেন কবি আল মাহমুদকে। সমুদ্রের কোলে বসে বলেছিলেনÑ কবি এই তরুণ-তরুণীরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। এদের বুকে স্বপ্ন জাগিয়ে দিতে হবে। কবিরা স্বপ্নদ্রষ্টা। কবির স্বপ্ন রুয়ে দিতে চাই ওদের বুকে। এভাবে আল মাহমুদ সম্মানিত হয়েছেন একজন রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনিও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে লিখেছেন গল্পÑ ‘তৃষিত জলধি’ এবং একটি কবিতা ‘ডানাওয়ালা মানুষ’।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিষয়ে তার ছিল একটি প্রশংসার জায়গা। অকপটে বলতেন এ প্রশংসার কথা। বলতেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভালোবাসতেন কবিদের। তাদের যথাযথ সম্মান দিতে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। কবিদের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তার ছিল গঠনমূলক ভূমিকা। তিনি কবিতাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মানিত প্রাসাদ বঙ্গভবনে টেনে নিয়েছিলেন। এশিয়া কবিতা উৎসবের আয়োজনে সাহায্য দিয়েছেন অকাতর। বিশ্বকবিদের আসর জমিয়েছেন বাংলাদেশেÑ ঢাকা মহানগরীর বুকে। এসব কথা স্মরণ করতেন আল মাহমুদ। বিশেষ করে এরশাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ছিল এরশাদ বেশ ক’জন কবিকে গুলশানের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্লটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আল মাহমুদের গুলশানের বাড়িটি সেই প্লটেই দাঁড়িয়েছিল। ‘কেয়ারি’ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির সাহায্যে হয়েছিল বাড়িটি। আল মাহমুদ ছাড়াও প্লট পেয়েছিলেন কবি শামসুর রাহমান, কবি সৈয়দ শামসুল হক, কবি ফজল শাহাবুদ্দীনসহ বেশ ক’জন। ফজল ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে অনেকবার এরশাদের সাথে একান্ত আলাপচারিতা হয়েছে আমার। দেখেছি তার সাহিত্যরুচি। কবি ও কবিতার প্রতি তার মমত্ববোধ প্রশংসার যোগ্য। দেখেছি আল মাহমুদের প্রতি তার ভীষণ মুগ্ধতা।
কবি আবদুর রশিদ ওয়াছেকপুরীর কথা বহুবার শুনেছি তার মুখে। ওয়াছেকপুরী কাফেলা পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন। কাফেলা পাঠকপ্রিয় পত্রিকা ছিল তখন। কাফেলায় একটি গল্প ছাপা হলো আল মাহমুদের। নাম ‘জীবন’। প্রকাশের পর গল্পটি বেশ আলোচিত হলো। এই গল্পের সূত্র ধরেই কাফেলা অফিসে হাজির হলেন আল মাহমুদ। আবদুর রশিদ ওয়াছেকপুরীর সাথে সেখানে দেখা এবং প্রথম দেখার সম্পর্কটি বারবার দেখার উৎসে পরিণত হয়। ওয়াছেকপুরীই তাঁকে বলেছিলেনÑ তোমার গদ্যের হাত অসাধারণ। কবিতার পাশাপাশি গদ্য রচনায় নিজেকে নিয়োজিত করো। এ অনুপ্রেরণাই আল মাহমুদকে গদ্য লেখায় উৎসাহিত করেছিল। নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন তিনি। ছাপার বিষয়ে তো বটে, অর্থনৈতিকভাবেও। ওয়াছেকপুরীর বিষয়ে বেশ আফসোস ছিল আল মাহমুদের। বলতেনÑ ওয়াছেকপুরী একজন নির্ভেজাল কবি ছিলেন। তার কবিতা আমার বেশ ভালো লাগত। কিন্তু এক সময় তিনি সুফি দর্শনে আকৃষ্ট হয়ে ছেড়ে দিলেন কবিতা। জটিল রহস্যময় তাসাউফের ডোবায় ডুব দিয়ে অন্তর্হিত হয়ে যান সাহিত্য থেকে। মানুষের জীবন এক অন্তহীন রহস্যের নদী, যা শত উপন্যাসে লিখেও শেষ করা যায় না। একজন কবিকে অনেক কিছু ছেড়ে দিতে হয় কবিতার জন্য। কিন্তু আবদুর রশিদ ওয়াছেকপুরী কবিতাই ছেড়ে দিলেন বিস্ময়করভাবে। এ বেদনা কখনো ভোলেননি আল মাহমুদ।
আফজাল নামে একজন প্রেসম্যানের কথা গাঁথা ছিল তাঁর স্মৃতিতে। যেদিন ওয়াছেকপুরীর সাথে পরিচয় হলো সেদিনই পরিচয় হলো আফজালের সাথে। ‘জীবন’ নামে যে গল্পটি ছাপা হলো কাফেলায়, সে গল্পটি কম্পোজ করেছিলেন এই আফজাল। আল মাহমুদের সাথে পরিচয় হওয়ার সাথে সাথে আফজাল উচ্চশি প্রশংসা করলেন গল্পটির। এরপর ক্রমাগত তার সাথে সম্পর্ক গভীর হতে থাকল। আফজাল পরে কাফেলা থেকে যোগ দিলো সমকালে। সমকাল থেকে এক সময় চলে এলেন বাংলা একাডেমির প্রেসের দায়িত্বে। আল মাহমুদের ভাষায়Ñ আমার জীবনে আফজাল ছিল আমার লেখার কম্পোজার। এমন হাসিমুখ মানুষ আমি কমই দেখেছি। প্রেস লাইনের লোক যে এমন সাহিত্যরসিক ও লেখকদের ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হতে পারে, তা আমি আর দেখিনি।
ঢাকার জীবনের কথা যখনই আলোচনায় প্রকাশ হতো লুৎফর রহমানকে স্মরণ করতেন তিনি। তিনিও ছিলেন একজন কবি। ছিলেন একদা আল মাহমুদের দাদার বাড়ির গৃহশিক্ষক। তার বিষয়ে মাহমুদ ভাইয়ের স্মৃতিচারণ ছিল বেশ আবেগী। একটি টিনের স্যুটকেস হাতে আল মাহমুদ ঢাকায় প্রথম যার আশ্রয়ে উঠেছিলেন তিনিই কবি লুৎফর রহমান। তিনিই আল মাহমুদের ঢাকার জীবনের প্রথম ঠিকানা। কবি হওয়ার বাসনায় একটি তরুণ আলো ঝলমল মহানগরীর উচ্ছ্বাসে এসে হাজির হলেন। লুৎফর রহমান সেই তারুণ্যের স্বপ্নের প্রশ্রয়দাতা। তিনি কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেলে চাকরি করেছেন দীর্ঘ দিন। সে সময় কলকাতার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে যৎসামান্য পরিচিতিও অর্জন করেছেন। আল মাহমুদ তাকে লুৎফর কাকু বলেই ডাকতেন। তাঁর এ কাকুও এক সময় রহস্যমানব হয়ে উঠলেন। এক রাতে শুয়ে শুয়ে বেশ কিছু উপদেশ দিলেন আল মাহমুদকে। বলেছিলেনÑ তোমার লেখার অসাধারণ ক্ষমতা আছে, কিন্তু তুমি কবিতায় বেশি খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছ। বিষয় দু’টি নিয়ে তোমাকে অনেক ভাবতে হবে। দেখো আমাদের দেশে কথাশিল্পীর বড়ই অভাব। কিন্তু কবিরা রাজত্ব দখল করে বসে আছে। তুমি একটু ভেবেচিন্তে তোমার পথ ঠিক করে নিয়ো। এমন উপদেশ দিতে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি। ঘুমিয়ে গেলেন আল মাহমুদ। ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে দেখেন আশ্রয়দাতা লুৎফর রহমান নেই, বিছানা গুটানো। কই যে চলে গেলেন অনেক দিন দেখা মেলেনি তার। বেশ কিছুদিন পর এলেন তিনি। কোথায় গেলেন কী করলেন বললেন না কিছুই। এসেই বললেনÑ দৈনিক মিল্লাতে প্রুফ সেকশনে লোক নেবে। এসো তোমাকে প্রুফ কাটা শিখিয়ে দেই। এই লুৎফর রহমানই আল মাহমুদকে পত্রিকার প্রুফ কাটার চিহ্ন চিনিয়েছেন। শিখিয়েছেন কিভাবে একটি লেখাকে নির্ভুল করে তুলতে হয়।
কবি আহসান হাবীবের কথা বেশ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতেন আল মাহমুদ। বলতেন তাঁর মতো রুচিশীল সম্পাদক এবং অসাধারণ কবিত্ব শক্তির অধিকারী উদার মানুষ খুব কমই জন্মেছেন বাংলা সাহিত্যে। যদিও তার সাথে প্রথম সাক্ষাৎটি মোটেই জমে ওঠেনি মাহমুদ ভাইয়ের। ঘটনাটি একটি মজার গল্পেই বটে। বেশ রসালো ভাষায় শুনেছিলাম আল মাহমুদের মুখে। গল্পটি যেমন বলেছিলেনÑ একদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই ছন্দের দোলায় দুলতে থাকলাম আমি। মুখ না ধুয়েই প্যাড টেনে লিখতে বসে গেলাম। খুব দ্রুত একটি কবিতা লেখা হয়ে গেল। কবিতাটি ছোট এবং ছন্দে নির্মিতি পেল। নাম দিলাম ‘স্বীকারুক্তি’। লিখে মনে হলো বেশ উত্তীর্ণ কবিতা এটি। যেহেতু কবিতাটি সফল কবিতা বলে মনে হলো, তাই দৈনিক আজাদের সাহিত্য মজলিশেই দেবো বলে ঠিক করলাম। তখন আজাদের সাহিত্য পাতা সম্পাদনা করতেন তৎকালীন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আহসান হাবীব। টিনের স্যুটকেসটায় ছিল একটি সাদা হাফশার্ট এবং একটি সাদা ফুলপ্যান্ট। মনে হচ্ছিল একটি সাদা ক্যাডস থাকলে ভালোই হতো। হাফশার্টটি সাদা প্যান্টের সাথে ইন করে এক জোড়া রাবারের স্যান্ডেল পরে ছুটলাম আজাদ অফিসের দিকে। গেটে পৌঁছালে দারোয়ান জিজ্ঞেস করলেনÑ কার কাছে যাবে খোকা? মুকুলের মহফিলে? মোদাব্বের সাহেব তো এখনো আসেননি। আমি দ্রুত বললামÑ না না আমি সাহিত্য বিভাগে যাবোÑ কবি আহসান হাবীবের কাছে। সন্দেহের দৃষ্টিতে আরেকবার আমাকে দেখে বললেনÑ যাও যাও তিনি আছেন।
গেটটা পেরিয়ে নিজেকে আরেকবার দেখলাম। দারোয়ান খোকা বলার কারণটা কী? দেখে মনে হলো আমার পোশাকটিই আমাকে ছেলে মানুষ ঠাওরাচ্ছে। আমি পৌঁছে গেলাম কবি আহসান হাবীবের সামনে। তিনি টেবিলে মাথা নুয়ে কী যেন সম্পাদনা করছিলেন। টেবিলের এ পাশে বসে আছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী এবং শিশুসাহিত্যিক গোলাম রহমান। আহসান হাবীব মাথা তুলেই আমাকে দেখতে পেলেন। আমি কোনো ভূমিকা না করেই বললামÑ আমি একটি কবিতা দিতে এসেছি। আমার বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটি ডিপ ডিপ করছিল। বুক পকেটে কবিতাটিও কাঁপছিল সেই সাথে।
আহসান হাবীব পাশের একটি কামরার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, মুকুলের মহফিল ওই দিকে। আমি চঞ্চল কণ্ঠে বললাম, আমি সাহিত্য বিভাগে কবিতা দিতে এসেছি। তিনি খানিকটা বিস্মিত হলেন বোধহয়। হাত বাড়িয়ে বললেন, দেখি।
আমি পকেট থেকে কাঁপা হাতে ‘স্বীকারুক্তি’ খুলে দিলাম তার হাতে। কবিতাটি দু-তিনবার পড়লেন তিনি। পড়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি তুলে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। একটু হাসলেন, বললেনÑ ভালো। তবে এ কবিতাটি যে আজাদের সাহিত্য পাতায় ছাপা যাবে না! বলে কবিতাটি ফেরত দিলেন আমাকে। আমার মনে হলো, আকাশ ভেঙে পড়েছে আমার মাথার ওপর। আমি কোনো কিছু না বলে প্রতিবাদ দেখানোর মতো করে দ্রুত বেরিয়ে এলাম তার কক্ষ থেকে। ক্ষুব্ধ হয়ে গেল আমার মন। তখন আমার কোনো বিবেচনা বোধই কাজ করেনি। পরে মনে হলো, তিনি তো আমার কবিতাকে ভালো বলেছেন। কিন্তু হয়তো আমার কবিতায় এমন কিছু শব্দ রয়েছে, যা আজাদে ছাপার যোগ্য নয়। এই ভেবে কিছুটা লজ্জিতই হলাম। পরে কবি হিসেবে তার অসাধারণ কাব্যিক শক্তি এবং তার সম্পাদনা শিল্পের সাথে আমার অন্তরঙ্গতা হলো চিরদিনের মতো আনন্দময়।
কবীর চৌধুরীর কথাও তিনি মাঝে মাঝে উত্থাপন করতেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা বলতেন। বলতেনÑ বিশ্বসাহিত্যকে বাংলা ভাষার সাথে প্রণয় ঘটিয়েছেন যারাÑ কবীর চৌধুরী তাদেরই একজন। আবার বাংলা সাহিত্যকেও বিশ্বদরবারে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন তিনি।
আল মাহমুদের নির্বাচিত কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন কবীর চৌধুরী। ‘সিলেক্টেড পোয়েমস অব আল মাহমুদ’ নামে যা প্রকাশ পেয়েছিল। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ভাষা ইংরেজিতে অনূদিত এই কবিতা গ্রন্থের বিষয়ে আল মাহমুদ ছিলেন পুলকিত। তিনি বলতেনÑ কবীর চৌধুরী আমার কবিতা বিশ্ব কবিতার আসরে তুলে ধরার আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন। বিশ্বের নানা দেশ থেকে যখন কবিরা এসেছেন বাংলাদেশে, আল মাহমুদ এ বইটি পুলকের সাথে তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে। কখনো কোনো অ্যাম্বাসি চেয়ে পাঠালেও এ বইটি পাঠিয়ে দিতেন তিনি। নয়া দিগন্তের ঈদ ম্যাগাজিনের বেশ ক’টি সংখ্যায় অনুবাদ-উপন্যাস লিখেছেন কবীর চৌধুরী। নোবেল বিজয়ী থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের খ্যাতিমান কথাশিল্পীদের সাত-আটটি উপন্যাস অনুবাদ হিসেবে ছেপেছি আমরা। এসব অনুবাদ-উপন্যাসের বিষয়ে আল মাহমুদ বরাবরই প্রশংসা করেছেন। বলেছেন আমাকে, যতটা পারো ছেপে যাও, কবীর চৌধুরীর মতো এমন করে কাজ করার ক্ষমতা সব লেখকের থাকে না।
লেখালেখি সত্যিই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অফিস করার পর অবসর সময় কাটে সবার। কিন্তু একজন লেখকের অবসর বলে কোনো সময় থাকে না। তাকে লিখে যেতে হয় পৃথিবীর রহস্য, জীবনের রহস্য এবং বিশ্বজগতের লীলায়িত গোপন সংরাগের নিত্যতা। একজন কবি তার কবিতায় এসবই বেঁধে দেয়ার চেষ্টা করেন সযতেœ। যা করেছেন আল মাহমুদ। [চলবে]

 


আরো সংবাদ



premium cement
এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য

সকল