২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতি ও জাতীয় সংস্কৃতি

-

জাতির সাথে জাতপাতের সম্পর্ক গভীর। সুতরাং বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা গেলে জাতি ও জাতীয়তা সম্পর্কে এবং জাতীয় সংস্কৃতি বিষয়ে স্বচ্ছ চিত্র পাওয়া যাবে। জাত-এর সংজ্ঞা দ্বিবিধ। যদিও ‘জাত’ শব্দটি এক ও অভিন্ন। এক জাত হচ্ছে জন্ম বা জন্মেছে এমন। অন্য জাতকে বলা হয় বর্ণ বা বংশগত বা জন্মগত সামাজিক অধিকার কিংবা গোত্রগত বা গোষ্ঠীগত বিষয়।
ধর্ম-বর্ণ-গোত্র অনুসারে মানবকুলের শ্রেণীবিভাজন হচ্ছে জাতির পরিচয়। যেমনÑ মুসলিম জাতি, হিন্দু জাতি, খ্রিষ্টান জাতি ইত্যাদি। আবার রাষ্ট্র কিংবা দেশ বা সংস্কৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগকেও জাতির সংজ্ঞা বলা হয়। যেমনÑ ফরাসি জাতি, জার্মান জাতি কিংবা বাঙালি জাতি। জাতির আরো অনেক পরিচয় আছে। যেমনÑ ব্যবসা, কর্ম এবং আচারগত পরিচয় (মুচি, সুইপার, নাপিত, গোয়াল, জেলে প্রভৃতি)। মানবজাতির বিভিন্ন শাখাগত বিভাজনও জাতির চিত্র তুলে ধরে। যেমনÑ আর্য জাতি, মঙ্গোলীয় জাতি, মুসলিম জাতি ইত্যাদি। এসব জাতির পরিচয় দিতে ইংরেজিতে বলা হয়েছে চবড়ঢ়ষব যধারহম পড়সসড়হ ফবংপবহঃ, ষধহমঁধমব, যরংঃড়ৎু, ৎরষরমরড়হ বঃপ.
জাতীয় শব্দটি জাতির সাথে সব সময় জড়িয়ে থাকা বিষয়। কারণ এটা জাতি সম্পর্কিত, জাতিগত বা গোত্রসম্বন্ধীয়। ইংরেজিতে যাকে বলা হয়েছেÑ অঃঃধপযবফ ঃড় ড়হব'ং ড়হি পড়ঁহঃৎু, পরঃরুবহ ড়ভ ধ ংঢ়বপরভরবফ পড়ঁহঃৎু. আর জাতীয়তা হচ্ছেÑ স্বজাতিপ্রীতি কিংবা স্বদেশবাসীর হিতৈষণা বা জাতি বৈশিষ্ট্য। সুতরাং এসব ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা থেকে এটা স্পষ্ট যে, সমগ্র বিশ্ব নানাভাবে বিভাজিত এবং বিশ্বের মানুষ নানা বর্ণে, ধর্মে, গোত্রে, চাল-চলনে ও চিন্তাভাবনায় ভিন্ন ভিন্ন। এসব কারণেই শিল্প-সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ধারায় রূপ লাভ করে। যাকে দেশীয় বা জাতীয় বলে চিহ্নিত করা যায়। আর এ কারণেই এক এক অঞ্চলের শিল্প কিংবা সংস্কৃতির অন্তর্গত বিষয়গুলো দেখেই বলা যায় এটি ভারতীয়, এটি ইউরোপীয়, এশীয় কিংবা চীনের, জাপানের। এ হলো বিষয়ের বাহ্যিক দিক। কিন্তু এমন অনেক কিছু আছে যার রয়েছে অভ্যন্তরীণ দিক। যেমন সঙ্গীত, শিল্প ও কাব্য। সঙ্গীতের চাল বা ধারা, রীতি, প্রথা, কিংবা ঢঙ বা কৌশল দেশে ভিন্ন প্রকৃতির হলেও সঙ্গীতের প্রাণ যা সুরের দোলায় দোলে, সেই দোলানোতে কিংবা হৃদয়কে সুর মূর্র্ছনায় বিমোহিত করার ক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ লক্ষ করা যায় না। কারণ, এ ক্ষেত্রে রসই প্রধান ভূমিকা পালন করে। শিল্পী এবং তাত্ত্বিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘কালানুগত প্রথা আচার বিচার ধরে সৃষ্টি হয় চালচোলেরÑ যেমন বাঙলা কীর্তন এবং পশ্চিমের ওস্তাদী গান। এখানে চাল দুটোকে স্বতন্ত্রভাবে দেখাচ্ছে, কিন্তু যখন রসের দিক দিয়ে দেখি তখন বিষয়ের উচ্চ-নীচ চালের রকম সকম দিয়ে এতে ওতে যে ভিন্নতা তার হিসেবের খাতার দরকারই হয় নাÑ বীণা বাজছে, কি পিয়ানো, না বাঁশি, বিলিতি সুর বাজছে, না দেশী বাউল না দরবারি এটা ভুল হয়ে যায়। রসটি পাওয়াই হলো আসল কাজ...।’ (বাগীশ্বরী) শিল্প প্রবন্ধাবলী, পৃ. ১৭১)। সুতরাং রস বিচারে এ কথা বলা যায় যে, রসের ক্ষেত্রে শিল্পের কোনো পার্থক্য থাকে না। এখানে বাছবিচার চলে না। লক্ষ করার বিষয় হচ্ছেÑ যারা পড়ালেখা এবং গবেষণার মাধ্যমে শিল্পকে জানতে চান, তারা জাতির সাথে জাতীয় শিল্পের সম্পর্কের বিষয়কে গুরুত্ব দেন, যারা শিল্পের কারিগরি দিককে প্রাধান্য দেন তারা শিল্পকেই প্রাধান্য দেন। জাতীয় কিংবা জাতীয় নয়, এ বিষয়টি তাদের কাছে গৌণ। কাজের দক্ষতা এবং শিল্পের চমৎকারিত্বও তাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য। আর এক শ্রেণীর মানুষ আছেন, যারা শিল্পে রসের সন্ধান করেন, প্রাণের সন্ধান করেন। এদের কাছে শিল্পের রস এবং প্রাণই প্রধান। অন্যসব গৌণ। বর্তমান বিশ্বে শিল্প এভাবেই হচ্ছে। শিল্প বিচার ও সৃষ্ট শিল্পের গুণ বিচারই হচ্ছে তাতে জাতীয় চরিত্র আছে কি নেই তার তোয়াক্কা না করেই। কিন্তু বিজ্ঞ পণ্ডিতদের ধারণা নিছক শিল্পের শিল্পত্ব কিংবা নিজত্ব নিয়ে আছে, কোনো জাতির সাথে সম্পর্ক নেই কিংবা কোনো জাতির পরম্পরাগত ধারার সাথে সম্পর্ক নেইÑ এমন শিল্পে কিংবা সংস্কৃতির বিষয় বিশ্বের কোথাও নেই। থাকার কোনো যুক্তিও নেই। সুতরাং জাতিগত প্রথা বিচ্ছিন্ন, জাতিগত ঐতিহ্যহীন ধ্যান-ধারণা নিয়ে শুধু রসের জগতে বিচরণ করতে গেলে মুক্তার বদলে মাটির ঢেলাকে মুক্তা হিসেবে গ্রহণ করার সম্ভাবনা শতভাগ। কারণ শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে শিল্পীর যে রুচির কথা বলা হয়, সেই রুচির মূল্য খাবারের ক্ষেত্রে। শিল্পের ক্ষেত্রে হৃদয়ের সংযোগ রয়েছে হেতু নিজ রুচি অচল। কারণ, শিল্প শিল্পীর নিজের জন্য নয়। শিল্প দর্শকের জন্য। শিল্পবিশারদ পণ্ডিত দর্শকের জন্য, গবেষকের জন্য। শিল্প তাত্ত্বিকেরা মনে করেন, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের মিলন ঘটানোতেই রসের সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে রুচির প্রাধান্য দুয়ের মাঝে প্রাচীর বা দেয়ালের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শিল্পের নামে স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম দেয়। শিল্প হয় বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি। ভারতে ব্রিটিশদের রাজত্ব কায়েম হলে এক শ্রেণীর শিল্পী ভারতীয় ধারা পরিত্যাগ করে পশ্চিমা ধারায় শিল্পচর্চায় আত্মনিয়োগ করলে ইংরেজ পণ্ডিত ই বি হ্যাভেল ব্যথিত হয়েছিলেন এবং এটা যে ভারতীয় শিল্পী ও শিল্পের জন্য ক্ষতিকর, সেটা অনুধাবন করেছিলেন। ফলে তিনি ভারতীয় শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নন্দলাল বসুসহ বেশ কিছু শিল্পীর সহযোগিতায় ভারতীয় শিল্পের ধারাকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, ই বি হ্যাভেল ১৮৯৬ সালে কলকাতা সরকারি আর্ট কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর কলেজের আর্ট গ্যালারিতে পশ্চিমা ধারার যত শিল্পকর্ম ছিল তার সবই তিনি সরিয়ে ফেলেছিলেন। কলকাতার সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্ট-এর সদস্যরাও পশ্চিমা ধারার চর্চাকারীদের বিরোধিতা করেছেন। সোসাইটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘এ দেশে বসে জার্মান বা আমেরিকার আর্থসামাজিক পটভূমির প্রেক্ষিতে ছবি আঁকেন যারা আমরা তাদের সঙ্গে নেই। পোস্ট মডার্নিজমের নামে এক ধরনের নকলনবিসি কাজ আমাদের সংস্কৃতির ক্ষতি করছে।... গ্লোবালাইজেশনের নামে এই কুম্ভিলক প্রথা একদিন আমাদের দেশীয় শিল্পকলার ক্ষেত্রে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিতে পারে।’ (রোদে ধান ছায়ায় পান, নবম সংখ্যা, অগ্রহায়ণ ১৪১৬, কলকাতা, পৃ. ৫৬)।
‘কুম্ভিলক’-এর অর্থ হচ্ছেÑ যিনি বা যারা অন্যের বিষয়ের ভাব ভাষা প্রভৃতি চুরি করে নিজের নামে চালায়। উল্লেখ্য, ভারতীয় শিল্পীরা পশ্চিমা ধারায় শিল্পচর্চা করলেও ভারতের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্মকে সব সময়ই শিল্পে স্থান দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। তা সত্ত্বেও তাদের সম্পর্কে এরূপ কঠোর সমালোচনা। কঠোর সমালোচনা শুধু ভারতের শিল্পীদের ক্ষেত্রেই হয়েছে তা নয়, খোদ পশ্চিমা জগতের শিল্পীদের সম্পর্কেও বিরূপ সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমের দেশগুলোতে এ সময়ে আর শুদ্ধ শিল্পচর্চা হচ্ছে না।’ এ বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ সালে লন্ডনের রয়াল একাডেমি অব আর্টস কর্তৃক চার্লস স্যাচির সংগ্রহের আধুনিক শিল্পকর্মের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। এই প্রদর্শনীতে ৩৪ বছর বয়স্কা শিল্পী ট্রেসি এমিনের দু’টি শিল্পকর্ম ছিল। এর মধ্যে একটির শিরোনাম ছিলÑ ‘(১৯৬৩-১৯৯৫) : এই সময়কালের মধ্যে যাদের সঙ্গে শুয়েছি’। অন্যটির শিরোনাম ছিল ‘তাঁবু’। এই তাঁবুর ভেতরে তাঁবুর গায়ে শিল্পীর মা ও তার যৌনসঙ্গীদের নাম লিখে ভরে রেখেছিলেন (বাংলায় শিল্পচর্চার উত্তরাধিকার, গৌতম দাস, কলকাতা-৭০০০০৯, পৃ. ২১৫)।
আমি নিজে ১৯৮৫ সালে আমেরিকা সরকারের ফুলব্রাইট গ্রান্টের অধীনে নিউ ইয়র্কে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সোহতে প্রতিষ্ঠিত শত-সহস্র আর্ট গ্যালারির মধ্যে কিছু কিছু পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেসব গ্যালারিতে দেখেছি আর্টের নামে কিভাবে স্বেচ্ছাচার করা হচ্ছে। একটি গ্যালারিতে চলছিল ভাস্কর্য প্রদর্শনী। দেখলাম গ্যালারির মেঝেতে কালো রঙের মাটি দিয়ে ১ ফুট পরিমাণ উঁচু করে ভরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এটাই ভাস্কর্য! ভাস্কর্যের যে সংজ্ঞা রয়েছে, তার সাথে এর কোনো মিল নেই। আরেক গ্যালারিতে চলছিল পেইন্টিংয়ের প্রদর্শনী। এই গ্যালারিতে প্রবেশ করে দেখলাম বর্গাকার গ্যালারির চার দেয়ালে চার বর্গফুটের অসংখ্য সাদা ক্যানভাস একই উচ্চতায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো ক্যানভাসের কোথাও রঙ বা পেনসিলের কোনো ব্যবহার নেই। এমনকি শিল্পীর স্বাক্ষরও নেই। এই হচ্ছে পেইন্টিং প্রদর্শনী! এ শূন্য ক্যানভাসগুলোর সাথে পেইন্টিংয়ের সংজ্ঞার কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ আধুনিকতার নামে এসবই করা হচ্ছে পশ্চিমা জগতে! একজন নারী শিল্পী ৩৩ বছর কতজন পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন তার বর্ণনা হচ্ছে শিল্প। শিল্পের এ অবস্থা দেখে বিজ্ঞজনেরা বলেছেনÑ ‘আধুনিকতার নামে শিল্পের মৃত্যু ঘটেছে পশ্চিমে। শিল্পের নামে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ২১৬)।
সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে শিল্প-সংস্কৃতিরও যে অগ্রগতি সাধিত হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই অগ্রগতির ধারাবাহিকতা থাকা চাই। তা না হলে উন্নতির বিষয়টি অস্পষ্ট হয়ে যায়। জাত কিংবা জাতি সমৃদ্ধ হলেই যে শিল্পকলাও সমৃদ্ধ হবে এমন নয়। অনেক দেশ আছে যাদের শিল্পকলার সাথে তাল মিলিয়ে অন্য ক্ষেত্র এতটা অগ্রসর হতে পারেনি। আবার এমন দেশও আছে যাদের অন্যান্য ক্ষেত্র সমৃদ্ধ হলেও শিল্পকলা ততটা সমৃদ্ধ হতে পারেনি। জাপানের কথা ধরা যায়। আজকের জাপান জাত হিসেবে যত বড়, যত সমৃদ্ধ হয়েছে এবং যত সভ্য হয়েছে ততটা উন্নতি কিংবা সমৃদ্ধ হয়নি জাপানের শিল্পকলা। প্রাচীন জাপান জাতি হিসেবে উৎকর্ষ সাধনে ব্যর্থ হলেও শিল্পকলার উন্নয়নে সমর্থ হয়েছিল। এ জন্য প্রাচীন অসভ্য জাপানের কাছে আজকের উন্নত সভ্য জাপানের হার হয়েছে (শিল্পকলার ক্ষেত্রে) বলে অনেকেই মন্তব্য করে থাকে। কারণ, জাপানের শিল্পও এখন পশ্চিমের কুম্ভিলক প্রথায় আক্রান্ত। অথচ শিল্প কোনো দেশের অতীতকে বাদ দিয়ে অগ্রসর হতে পারে না। অতীতমুখী নয়, কিন্তু অতীত ঐতিহ্য বিচ্ছিন্নও নয় শিল্প। এটাই শিল্পের মূল কথা। আর এই মূল কথাই প্রমাণ করে যে, শিল্প হবে জাতীয় পতাকাবাহী তা যেভাবেই করা হোক না কেন। ইতিহাস তাই বলে। আদিকালের শিল্প থেকে যাত্রা শুরু করলে আজ অবধি পৌঁছতে যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে, সেই দীর্ঘ পথের বাঁকে বাঁকে দেখা যাবে জাতীয় শিল্পের রূপ। সেখানে দেখা যাবে বিভিন্ন জাতির নিজস্ব কর্মকাণ্ডের ধারা ও ধর্মীয় প্রভাব। তবে শিল্পকলার ক্ষেত্রে সব দেশ যে একইভাবে উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে এমন নয়।

কিন্তু সব দেশের শিল্পেই রয়েছে তাদের জাতীয় পরিচয়। শিল্পের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, জাত এবং জাতি যদি বড় হয়, সমৃদ্ধ হয়, তাহলে সেই জাতির শিক্ষা এবং শিল্প আপনা থেকেই জাতীয় রূপ ধারণ করে। ফলবৃক্ষ যেমন মালীর পরিচর্যা ছাড়াই বড় হয় এবং ফল দেয়, তেমনি কিন্তু ফলহীন বৃক্ষের পেছনে যতই পরিচর্যা করা হোক না কেন তাতে ফল ধরে না। কখনই কোনো ফল দেয় না। মানুষের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে। যে দেশে জাতীয় জীবন বলে কোনো কিছু নেই, সে দেশের মানুষের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঠাগার, ধর্মশালাসহ যা কিছু করা হোক না কেন; তাতে সঠিক ফল পাওয়া যাবে এমনটি বলা যায় না। এর বক্তব্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সুতরাং জাতির একটা সুস্পষ্ট পরিচয় থাকা জরুরি। তা না হলে তাদের শিল্প সংস্কৃতিতে জাতীয় চরিত্র প্রতিফলিত হয় না।
আমাদের এ অঞ্চলে (অখণ্ড ভারতে) ব্রিটিশ জাতি প্রায় দুই শ’ বছর দাপটের সাথে অবস্থান করেছে। এ অঞ্চলকে শাসন করেছে। ফলে দীর্ঘ এ সময়টিতে এই অঞ্চলের মানুষদের বিরাট অংশ ব্রিটিশদের অনেক কিছু গ্রহণ করেছে। অনেকে ব্রিটিশদের মতো সাহেব বনেছেন। সাহেবি কায়দায় জীবনযাপন করেছেন। ফলে শিল্প-সংস্কৃতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সাদা চামড়ার অনুকরণে এ দেশের কালো চামড়ার যারা সাহেব বনেছেন, তারা সাদা চামড়ার সাহেবদের বাহবা পেলেও এ দেশের দেশপ্রেমী মানুষদের কাছে তারা শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারেননি। হয়েছেন সমালোচনার পাত্র। কারণ তারা ভারতের নিজস্ব জাতিসত্তা, শিল্প-সংস্কৃতিপরিপন্থী কাজ করেছেন। শিল্পীদের অনেকেই এই পথ অনুসরণ করায় কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন, যা আগেই উল্লেখ করেছি। আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশেও শিল্প-সংস্কৃতিতে নিজস্ব জাতীয় আদর্শ গড়ে ওঠায় প্রায়ই এ নিয়ে পত্রপত্রিকা, টিভি, টকশো, সভা-সমিতিতে বিজ্ঞ পণ্ডিতদের আলোচনা করতে দেখা যায়। সবাই চান বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির জগৎ বিদেশী প্রভাবমুক্ত হোক এবং বাংলাদেশের নিজস্ব জাতীয় আদর্শ সমৃদ্ধ হোক। নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির মাধ্যমে বিশ্বে পরিচিত হোক বাংলাদেশ। এ প্রত্যাশা শুধু কয়েকজন পণ্ডিত ব্যক্তির নয়, বোধ করি এ প্রত্যাশা বাংলাদেশের সব মানুষের। কারণ বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে নিজস্ব জাতীয় রূপ প্রতিফলিত না হলে বাংলাদেশের পরিচয়ই অস্পষ্ট থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে; যা কারো কাম্য নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম

সকল