২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
স্মৃতির সোনালিশিখা

যেমন দেখেছি তাকে

-

পাঁচ.

জীবনের বাঁকে বাঁকে উদ্যত কত ঘটনা-রটনা ও গল্প। ধাবমান গতির টানে দূর নিকট হয়ে ওঠে। নিকটও সরে যায় দূরের দিকে। চলতে চলতে কত যে অচেনা মানুষ চেনা হয়ে ওঠে। প্রাণের আনন্দে হয়ে ওঠে আপনজন। দেখতে দেখতে ঘনিষ্ঠ হয় অনেকে। ঘনিষ্ঠজনদের বন্ধু হয়ে যান কেউ কেউ। জীবন সংগ্রামের ঘূর্ণিতে ফের কখনো কখনো বন্ধুই হয়ে যান প্রতিপক্ষ। এভাবে জীবনে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা যেন যমজ ভাই। একসাথেই তাদের চলা। একসাথেই বলা। একসাথেই চলে গ্রহণ-বর্জনের লীলা। খ্যাতির নেশা, প্রতিহিংসা, পরশ্রীকাতরতা এবং স্বার্থপরতা বন্ধুকে শত্রু বানিয়ে তোলে, শত্রুকেও কখনো কখনো নিয়ে আসে বন্ধুর কাতারে। কে কখন কী স্বার্থের দণ্ড উঁচু করে অথবা প্রতিহিংসার অনল জ্বালিয়ে বন্ধুত্বের কোমল আনন্দ পুড়িয়ে জুড়িয়ে নেয়ার আয়োজন করে, কে বলতে পারে তার যথার্থতা! চিরচেনা মুখটি আকস্মিক অচেনার বাঁশি ফুঁকায় যদি কী-ই বা করার থাকে তখন। সময়ের বদল হয়। মানুষও বদলে যায়। একদা যার মুখ না দেখার দুঃখ পোড়াত মন। একদিন সেই মুখই না দেখার প্রতিজ্ঞায় অন্ধ হয়ে ওঠে। এভাবে মানুষের সম্পর্ক সেতু গড়ে। আবার বিস্ময় বিমর্ষতায় দুমড়ে-মুচড়ে চুরচুর হয়। একদিন যাকে দেখলে খুশিতে ভরে উঠত মন, আজ তার জন্য ফোঁস করে ঘৃণার ফণা। এই কি জীবনের বিস্ময়! কী রহস্যের স্রোত কেবল দুকূল ভাসায় জীবন নদীর। জীবনের এ রহস্য ভেদ করে কে?
শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ দু’জন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আড্ডায়-আসরে আনন্দে দু’জনের উপস্থিতি সময়কে জাগিয়ে তুলত অন্যভাবে। দু’জন একসাথে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে সে অনুষ্ঠানের ভার-বন্ধন সম্পূর্ণ ভিন্নতায় জ্বলে উঠত। শ্রোতা-দর্শকের মনের আবেগ কল্লোলিত ঝরনার মতো উচ্ছল হতো। বিরাজ করত এক ধরনের অন্য রকম ছবি, দৃশ্য ও দর্শনের আবহ। কবিতার স্বাপ্নিক চৈতন্যের কারু যেন স্বচ্ছ জলের মতো বহমান। দু’জনের এক অনুষ্ঠান মানে বাংলা কবিতার আধুনিক উচ্চ মঞ্চ। অন্যরকম মর্যাদায় উজ্জ্বল হয়ে উঠত অনুষ্ঠান।
আকস্মিক এমন সৌন্দর্যের বুকে চলল বিভক্তির করাত। এ বিভক্তি ব্যক্তিগত রেষারেষির নয়। রাজনৈতিক রোষানল থেকে উত্থিত। আমাদের দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুধু মানুষকে বিভক্ত করেনি, শিল্প-সাহিত্যে তুলে দিলো ভাগাভাগির দেয়াল। শিল্প-সাহিত্য তো মানুষের জন্য। জীবনের জন্য। যে সাহিত্য জীবনকে ভাগ করে মানুষ ভাগ করেÑ তাকে কী বলা যায়! বিশ্বের কোথাও শিল্প-সাহিত্যে বিভক্তির কুৎসিত ঘটনা এমন করে নেই। রাজনৈতিক বারুদ যখন সাহিত্যের শরীরে আগুন ধরায়, সাহিত্যের হৃদয় নির্মমভাবে ছাই হয়ে যায় তখন। আমাদের তাই হয়েছে।
আল মাহমুদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল শামসুর রাহমানের। শুরুটা রাহমান ভাইয়ের তরফ থেকেই হয়েছে। কোনো অনুষ্ঠানে অথবা কবিতার আসরে আল মাহমুদ থাকবেন জানলে অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন না শামসুর রাহমান। দাওয়াত নিয়ে কেউ গেলে জিজ্ঞেস করতেনÑ কে কে থাকবে? যখন উচ্চারিত হতো আল মাহমুদের নাম, বলতেন আমি যাবো না। কিন্তু আল মাহমুদ কখনো এমন গোঁ ধরেননি; বরং অংশগ্রহণ করার পক্ষে ছিলেন দ্বিধাহীন।
এভাবে দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেল। দীর্ঘ হতে থাকল বিভক্তির রেখা। পরবর্তী কবিদের মধ্যেও দাগ টেনে দিলো এ বিভক্তির খঞ্জর। একদিন জিজ্ঞেস করলাম আল মাহমুদকেÑ সাহিত্যে এ বিভাজন কি আদর্শিক নাকি রাজনৈতিক। মুহূর্ত দেরি না করেই জবাব দিলেনÑ এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। বললেন, এ দেশে কেউ আদর্শিক লড়াই করে না। কেউ না। ডান-বাম-মধ্যপন্থী সবার পাঁজরে ঝুলছে স্বার্থের ঝোলা। সবার চোখেই ক্ষমতার চশমা আঁটা। সব কিছুর বিচার অনুগত দাসানুদাসের ওপর নির্ভরশীল। এভাবে সাহিত্যের বিচার চলে না। এ কারণে আমাদের সাহিত্যে চিহ্নিত করার কোনো রীতি নেই। থামলেন তিনি।
জিজ্ঞেস করলামÑ শামসুর রাহমান একদা বন্ধু ছিলেন আপনার, তার বিষয়ে কী বলবেন?
আল মাহমুদের জবাবÑ তার ব্যাপারে আমার কোনো অনুযোগ নেই। অভিযোগও নেই। তার যা ভালো লাগে তাই তিনি করবেন। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।
যে অনুষ্ঠানে আপনি থাকেন, শামসুর রাহমান সেখানে থাকেন না। যেতে অস্বীকার করেন, কেন?
এটি একান্ত তার ব্যাপার। এ নিয়ে আমার কোনো খেদ নেই। কে এলো আর কে এলো না, এ নিয়ে আমার ভাবান্তর নেই। আমি জানি, একজন কবিকে তার কবিতা নিয়েই দাঁড়াতে হয়। কালের অক্ষর লিখতে হয় কবিকে। কোনো জমায়েত অথবা বাহবার ওপর কবির সাফল্য নির্ভর করে না। আরো বললেনÑ দেখো, এক সময় কবিদের তালিকায় এক নম্বরে ছিল শামসুর রাহমান। আমার নাম ছিল তেত্রিশ নম্বরে। ধীরে ধীরে মধ্যখানের সংখ্যাগুলো ঝরতে লাগল। আর উপরে উঠতে থাকল আমার নাম। এখন দেখো, শামসুর রাহমান-আল মাহমুদ হয়ে গেল। আমি জানি, এটি কোনো দৈব ঘটনা নয়। আকস্মিকও নয়। আমি মনে করি, এটি কবিতার শক্তি।
না, কোনোভাবেই ব্যক্তি শামসুর রাহমানের বিপক্ষে কোনো কথা বললেন না আল মাহমুদ।
শামসুর রাহমানের শ্যামলীর বাসায় একদিন বিকেলে তাকে জিজ্ঞেস করেছিÑ আল মাহমুদ যে অনুষ্ঠানে থাকেন সে অনুষ্ঠান বয়কট করেন কেন? খুব ছোট জবাব ছিল তারÑ এটি আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
ব্যক্তিগতভাবে রাহমান ভাই ছিলেন বেশ নম্র স্বভাবের। মিষ্টিকথার মানুষ। হাস্যোজ্জ্বল মুখ। কাউকে রাগ করে কথা বলতেন না। কবির সৌন্দর্য ছিল তার অবয়বেÑ ব্যবহারে।
এটি বেশ লক্ষণীয়Ñ তারা দু’জন কেউ কারো বিরুদ্ধে কথা বলেননি। ব্যক্তিগত আক্রমণও ছিল না কারো বিরুদ্ধে। মাহমুদ ভাই চোখে তখন খুব কম দেখতেন। রাহমান ভাইও কম দেখার দলের। আল মাহমুদ তার কবিতার বই উড়াল কাব্যে একটি কবিতায় লিখেছেনÑ এই শহরে দুইটি কানা/মাহমুদ কানা শামসু কানা।
দু’জন কানা হলেও হৃদয় উন্মুক্ত ছিল দু’জনেরই। ফলে পরবর্তী সময়ে আবার মিলে গেলেন দুই বন্ধু। একই মঞ্চে দু’জনকে দেখা গেল পাশাপাশি। আহা, কী সুন্দর ছিল এমন দৃশ্য!
দু’জন মিলে যাওয়ার পেছনে একজন ব্যক্তির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সৈয়দ আলী আহসান। নেপথ্য নায়কের ভূমিকা নিতে হয়েছিল তাকে।
একদিন সৈয়দ আলী আহসান আল মাহমুদকে যেতে বললেন তাঁর বাসায়। বললেন, কথা আছে। মুখোমুখি বলব।
ঠিক সন্ধ্যায় হাজির হলেন আল মাহমুদ। আমাকেও নিয়ে তোলেন সঙ্গে। আলী আহসান স্যারের বাসা উত্তর ধানমন্ডি, কলাবাগান বশির উদ্দিন রোড। লাল ফকিরের মাজারের কাছাকাছি। নিচতলা বাসা। দরজায় নক করলে কেউ একজন খুলে দিলো দরজা। বাসার মাঝখানে একটি কক্ষ, যা ড্রয়িংরুম নয়। এক ধরনের বৈঠকখানা। কেউ এলে এই কক্ষে সাক্ষাৎ দিতেন আলী আহসান স্যার। এ কক্ষেই মাঝে মাঝে বসত সাহিত্য আড্ডাÑ কবিতার আসর। কক্ষটির একটিই জানালা। প্রায়ই খোলা থাকত এটি। জানালার মুখে ছিল একটি হাসনাহেনার ঝোপ। বেশ ঝাঁপানো ঝোপ থেকে মিহি বাতাসে ঢুকত ফুলের সৌরভ। মায়াবী ঘ্রাণে মুখর হতো কক্ষটি। কী যে ভালো লাগার অনুভূতি, শিরশির ছড়িয়ে যেত সারা শরীরময়।
আমরা কক্ষে ঢুকতেই দেখি লাঠির মাথায় এক হাত আরেক হাতের ওপর রেখে বসে আছেন স্যার। এমন করে নির্মোহ একা বসে থাকতে দেখিনি তাকে। বললেনÑ আসুন আল মাহমুদ। আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। স্যারের ডান পাশের সোফাটায় বসলেন মাহমুদ ভাই। বাম পাশে আমি।
কোনো ভূমিকা ছাড়াই আল মাহমুদকে লক্ষ করে বললেনÑ মনে কোনো বিদ্বেষ রাখা ভালো নয়। বিদ্বেষ মনের ভেতর প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। আর প্রতিহিংসা মানুষকে বিবেকহীন করে তোলে। বিবেকরুদ্ধ কোনো কাজই মানুষের জন্য শুভ নয়।
কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না মাহমুদ ভাই। স্যার হঠাৎ কেন এমন কথাগুলো উচ্চারণ করছেন। স্যারের মুখের দিকে দু’চোখ তুলে চেয়ে থাকলেন আল মাহমুদ।
স্যার বললেনÑ মনের দিক থেকে স্বচ্ছতা প্রকাশ করেন যিনি, জগতে তার মূল্য বেশি। তাকে সুনজরে রাখে মানুষ। তার প্রতি বিশ্বস্ত হয় সবাই। বিবাদ-বিসম্বাদ কল্যাণকর নয় কোনো অর্থেই। বরং মনের দুষ্কৃতি উগড়ে দিলে মন হয়ে ওঠে ঝকঝকে আয়নার মতো।
আল মাহমুদ তখনো চুপ। মনে হয় বোঝার চেষ্টা করছেন, কেন এসব কথার অবতারণা। কী বলতে ডেকেছেন এই মনীষী, দুই হাতে লাঠিটি তেমন করেই ধরা স্যারের। খানিকটা শ্বাস নিয়ে বললেনÑ কাল শামসুর রাহমান এসেছিল। এসেছিল তার একটি কাজে। এ কথাগুলো বলেছি তাকেও। অনুরোধ করেছি, আল মাহমুদের সাথে সম্পর্কের অবনতি মিটিয়ে নিতে।
কী বলেছেনÑ শামসুর রাহমান? জিজ্ঞেস করলেন আল মাহমুদ।
স্যার বললেনÑ শামসুর রাহমান বলেছেন, তার কোনো আপত্তি নেই মিলে যেতে। বলেছেন, বিরোধ বিরোধকেই উসকে দেয়। আল মাহমুদের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো রেষারেষি নেই। আমরা সবাই সময় ও পরিস্থিতির শিকার।
নড়েচড়ে বসলেন আল মাহমুদ। বললেন, স্যার কারো প্রতি আমার বিদ্বেষ নেই। প্রতিহিংসা নেই। শুধু আক্রান্ত হলে তার প্রতিবাদ করি এবং সেটিও কলম দিয়েই করি। পরহিংসায় কাতর হওয়ার স্বভাব আমার নেই। আমি বরাবর কবিতায় অসুন্দরের বিরুদ্ধে শব্দ নির্মাণ করেছি এবং করে যাবো শেষ দিন পর্যন্ত।
সৈয়দ আলী আহসান বললেন, সে কথা আমি জানি আল মাহমুদ। কিন্তু আমি চাইছি শামসুর রহমান আল মাহমুদ এক টেবিলে বসুক।
এতে বাংলা কবিতার বাগান নন্দিত হবে। অনেক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবে বাংলা কবিতা।
তা ছাড়া জীবন তো ক্ষুদ্র। এ ক্ষুদ্র জীবনে কী হবে এত ভেদের রেখা টেনে?
আল মাহমুদ বললেন, আমি তো বলেছিÑ এ সমস্যা আমার দিক থেকে শুরু হয়নি। এর শেষও আমার হাতে নেই। তবে এটুকু বলি, স্যার একজন কবি হিসেবে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য খোলা আমার মন। খুশিই হলেন সৈয়দ আলী আহসান। বললেন, আশা করি একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ রচিত হবে বাংলা কবিতার।
স্যারের এ উদ্যোগ এত ভালো লাগল, ভেতরটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল আমার। কল্পনা করছিলাম বসে বসেÑ শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ আবার এক মঞ্চে। বাংলা কবিতার ভুবন নতুন হয়ে উঠবে!
মাহমুদ ভাইকে কখনো ব্যক্তি কুৎসা রটনায় অথবা চর্চায় দেখিনি। কারো প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ-আক্রোশ প্রকাশ করতেও নয়। সাহিত্যাঙ্গনে ভাগাভাগি যা-ই হোক, তিনি তার কবিতার ক্ষেত্রে আপস করেননি। তবে তার আক্ষেপ ছিল বেশ। এসব বিষয়ে কথা তুললে বলতেনÑ আমি এমন একটি সমাজে আছি, যে সমাজ আমার চিন্তার অনুকূল নয়। যে সমাজ বুঝতেই পারেনি আমাকে। কেবল বৈরিতা, কেবল প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে আজীবন।
আলী আহসান স্যারের সাথে আলোচনা কিংবা যে কারণেই হোক শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ এক মঞ্চে পাশাপাশি হলেন। বসলেন দু’জন দু’জনের পাঁজর ঘেঁষে। অনুষ্ঠানটি ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে। দোতলায়, এখন কনফারেন্স রুম। তখন ভিআইপি রুম ছিল। কবি বিপ্লব ফারুকের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আমিও একজন আলোচক ছিলাম। দীর্ঘ দিনের বরফ গলল। একজন আরেকজনের হাত ধরে কুশলবিনিময় করলেন। এরপর আরো বেশ কিছু অনুষ্ঠানে দু’জন একসাথে ছিলেন। অনুষ্ঠানের বাইরেও যোগাযোগ ছিল দু’জনের।
শামসুর রাহমানের মৃত্যুর কিছু দিন আগের কথা। আল মাহমুদ তখন গুলশানের বাসায় বসবাস করেন। একদিন শেষ বিকেলে গেলাম তার বাসায়। ঠিক লিফটের গোড়ায় দেখি দাঁড়িয়ে আছেন রাহমান ভাই। অপেক্ষা করছেন লিফট নামার। কী আনন্দ! সালাম দিলাম। মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলেন। হ্যান্ডশেক করে বললেন, চলো একসাথেই ওঠা যাক। তোমরা তো টগবগে ইয়াং। আমাদের মতো বৃদ্ধদের চলাফেরায় আছে বেশ হেপা।
আপনি তো চিরতরুণ রাহমান ভাইÑ বললাম আমি। মন ইয়াং হলেও শরীর কি আর মানে! মানুষের জীবনে বার্ধক্য এলে মনের সাথে শরীর বিশ্বাসঘাতকতা করে। শরীর যখন মনের বিপরীতে ছোটে, কিছুই করার থাকে না রে।
বলতে বলতে আমরা পৌঁছে গেলাম মাহমুদ ভাইয়ের ড্রয়িংরুমে। রাহমান ভাই আসবেন এটি জানতেন মাহমুদ ভাই। ফলে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। খানিকটা কেতাদুরস্ত হয়ে ছিলেন। আমরা ড্রয়িংরুমে ঢোকার সাথে সাথে তিনিও ঢুকলেন। কী যে অমায়িক দৃশ্য ছিল সেটি। দু’জন দু’জনকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। বসলেন পাশাপাশি। বসেই রাহমান ভাই মাহমুদ ভাইয়ের দু’টি হাত নিজের হাতে নিলেন। হাত ধরে বেশখানিকক্ষণ চেয়ে থাকলেন আল মাহমুদের দিকে। মুখে ছিল না কোনো ভাষা। কিন্তু দেখলাম, এক তীব্র অভিব্যক্তি ভাষার ঊর্র্ধ্বের কোনো রঙ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল শামসুর রাহমানের গোটা মুখে। বেশ কিছু সময় কেটে গেল এভাবে। যেন দু’জন দু’জনকে অনুভব করছেন অন্তরের গহিন রহস্য দিয়ে। বাংলা ভাষার দু’জন শ্রেষ্ঠ কবির নির্বাক মুহূর্তের এমন চিত্র সময় তার ক্যামেরায় তুলে নিয়েছে হয়তো। আর তুলে নিলো আমার বিস্মিত মনের চোখ। যে চিত্র জীবন্ত আমার মনের আরশিতে। মাঝে মাঝে অকারণ ভেসে ওঠে এসব দুর্লভ মুহূর্তের ছবি।
(চলবে)

 


আরো সংবাদ



premium cement