২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিশ্বখ্যাত মহাকাব্য ও মহাকবি

-

মহাকাব্য: ইলিয়ড

দ্য ইলিয়ডÑ (কখনো কখনো একে সঙ অব ইলিওন বা সঙ অব ইলিয়ামও বলা হয়) জগদ্বিখ্যাত সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্য এটি। বর্তমান বিশ্বের মহাকাব্য গবেষকদের মতেও তাই। এই মহাকাব্যটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একশ’ মহাকাব্যের মধ্যে প্রথম স্থানে আছে। এটি রচনা করেন অমর মহাকবি হোমার। গ্রিকদের কাছে এই মহাকাব্যটি একটি অমূল্য রতন। শুধু গ্রিকই নয়, বিশ্বসাহিত্যে এটি একটি অমূল্য সম্পদ। ট্রোজানদের সাথে গ্রিকদের যুদ্ধের কাহিনীকে কেন্দ্র করে মহাকবি হোমার এ মহাকাব্যটি রচনা করেছিলেন। ট্রয় (ইলিয়াম) নগরী গ্রিকদের মিত্রজোট দিয়ে প্রায় দশ বছর ধরে অবরুদ্ধ ছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজা আগামেমননের সাথে মহাবীর একিলিসের যুদ্ধের কথা বর্ণিত হয়েছে এই মহাকাব্যে। অত্যন্ত শিল্পসম্মতভাবে, নানা কাহিনীর মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে এই মহাকাব্য। যদিও ইলিয়ডের কাহিনী গড়ে উঠেছে শেষ বছরের মাত্র কয়েক সপ্তাহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ইলিয়ডে আরো উল্লেখ করা হয়েছে এই সাত দিনের অবরোধের সময়ে যেসব কিংবদন্তি যোদ্ধারা এসেছিলেন যুদ্ধ করতে, তাদের জীবনের প্রেম কাম ইত্যাদি সব কিছু নিয়ে। এ ঘটনার সূত্রপাত পূর্বপুরুষের মধ্যেকার শত্রুতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ইত্যাদি। যুদ্ধের নানা ধরনের ছোটখাটো কাহিনীও এই মহাকাব্যে উঠে এসেছে।
এই মহাকাব্যে আছে কিছু ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিফলন। যেমন একিলিসের হঠাৎ মৃত্যু এবং ট্রয় নগরীর পতন। যদিও এসব ঘটনা সচরাচর ঘটেই থাকে, তাই আমাদের কাছে মনে হয় এগুলো খুব একটা আশ্চর্য ধরনের কিছু নয়। কিন্তু মহাকবি হোমার তাঁর অসাধারণ মেধা-মনন ও প্রতিভার বলে কাব্যের মাধ্যমে করে তুলেছেন অসাধারণ এক জগৎ। ফলে তার মহাকাব্য হয়ে উঠেছে বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্য। যা হোক, যুদ্ধ, দেব-দেবী, দৈত্য-দানব, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল এবং পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদের জীবন এই মহাকাব্যে এমনভাবে এনেছেন মহাকবি হোমার, যা বিশ্বসাহিত্যে আজো বিরল।
মহাকাব্য ইলিয়ড। এর আছে আরো একটি ধারাবাহিক খণ্ডÑ ওডিসি। সেটিও পৃথিবীখ্যাত আর একটি মহাকাব্য। যে মহাকাব্যটি মহাকবি হোমারই রচনা করেছিলেন। মহাকাব্য গবেষকদের মতেÑ ইলিয়ড পৃথিবীতে লিখিত সব মহাকাব্যের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন এবং শ্রেষ্ঠ। এর পরই আছে ওডিসি। ওডিসি পৃথিবীতে লিখিত সব মহাকাব্যের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন এবং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য। পশ্চিমা বিশ্বে অর্থাৎ সমগ্র ইউরোপের সাহিত্যেও এই দুই মহাকাব্য সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মের মর্যাদা নিয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে। পণ্ডিতদের মতে মহাকবি হোমার ইলিয়ড রচনা করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতকে। একেবারে আধুনিক সংস্করণে ইলিয়ডে রয়েছে মোট ১৫ হাজার ৬৯৩টি চরণ। এই মহাকাব্য রচিত হয়েছে হোমারীয় গ্রিক ও প্রাচীন গ্রিক ভাষার অন্যান্য শব্দাবলি নিয়ে। এই গ্রিক ভাষা এবং আইওনিক শব্দাবলিকে আইওনিক গ্রিক বলে অভিহিত করা হয়। যেই গ্রিক ভাষা অত্যন্ত প্রাচীন এবং যেই ভাষা প্রচলিত ছিল শুধু গ্রিসের ইথাকা দ্বীপের আনাতোলিয়া অঞ্চলে। মাইকেল এন নাগলরের মতে মহাকবি হোমারের মহাকাব্য ইলিয়ড, মহাকাব্য ওদিসির চেয়ে অনেক বেশি জটিল ও ধ্রুপদী মহাকাব্য।
মহাকাব্য ইলিয়ড শুরু হয়েছে তার সেই বিখ্যাত উক্তিÑ ‘ইন মিদিয়াস রেস অর্থাৎ গেয়ে ওঠো জগৎবাসী মহাবীর একিলিসের জয়গান... যেখানে সে মহাযুদ্ধে নেমেছে আর এক বীর আগামেমননের সাথে।’ একিলিসের সাথে আগামেমননের এই যুদ্ধ হয় ট্রোজানের যুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে অর্থাৎ দশম বছরে। যদিও এই যুদ্ধ স্থায়ী হয় মাত্র ৪৫ দিন, তবু এই যুদ্ধের বিস্তৃতি, ভয়াবহতা, ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যবহৃত অস্ত্রের পরিমাণ কল্পনাতীত। মহাকাব্যে বর্ণিত যুদ্ধের বিষয় রয়েছে যেন প্রতিটি পাতায়।
ইলিয়ড শুরু হচ্ছে একিলিসের বীরত্ব গাথা নিয়ে। গাইছে স্বর্গের দেব-দেবীরা। সেখানে দেবদেবী ও একিলিসের পক্ষের যোদ্ধাÑ ‘এইকিয়ানস’ (যাদের হোমারের মহাকাব্যে আক্রমণকারী সৈনিক হিসেবে হোমার উল্লেখ করেছেন। যাদের মহাকাব্যের কোথাও ডগ্রক বলে উল্লেখ করা হয়নি।) ট্রোজানের যুদ্ধে উপলক্ষে সেসব গান গাওয়া হচ্ছে। সেই গানে উল্লিখিত হচ্ছে একিলিস, আগামেমনন ও খ্রাইসিস সম্পর্কে। যে খ্রাইসিস ছিল দেবতা অ্যাপোলোর খুবই ভক্ত এবং বোন। যার ওপরে দেবতা অ্যাপোলো ছিলেন অত্যন্ত প্রীত। খ্রাইসিস তখন ক্যাম্পে বন্দী। খ্রাইসিস দেবতা অ্যাপোলোকে অনুরোধ করল তাকে মুক্ত করার জন্য। খ্রাইসিসের ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে সেই বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করতে এসেছিলেন দেবতা অ্যাপোলো। কিন্তু আগামেমনন খ্রাইসিসকে তো মুক্তি দেনইনি, বরং তিনি অ্যাপোলো দেবতাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন। দেবতা অ্যাপোলো সেই অপমান ভুলতে পারেননি। তিনি সোজা স্বর্গে চলে গেলেন। সেখান থেকে তিনি প্লেগ রোগের রাজাকে পাঠিয়ে দিলেন সেই ক্যাম্পে, যেন আগামেমননের সব সৈন্য-সামন্ত নিয়ে সে নিজেও মারা যায়। ক্যাম্পে মারণব্যাধি প্লেগের ভয়াবহভাবে শুরু হয়ে গেল। তার দশম দিনে, যেখান থেকে এই মহাকাব্যের শুরু। সে দিন একিলিস একটি সম্মেলন করার জন্য তাঁর সৈন্যদের ডেকে পাঠালেন। ১২ দিন পরে ওলিম্পসের আসার সাথে সাথে থেটিস একিলিসকে নিয়ে দেবাদি-দেব জিউসেনের কাছে গেল। তারা নানা ধরনের কথা বলে বুঝল যে, দেবাদি-দেব জিউসের চিন্তাভাবনা কী! দেবাদি-দেব জিউস সব কথা কান পেতে শুনলেন, কিন্তু কোনো উত্তর বা প্রত্যুত্তর করলেন না। দেবাদি-দেব জিউস সব দেব-দেবীদের নিয়ে নাচ, গান, মদ্যপান, হাসি-ঠাট্টা নিয়ে মেতে উঠল। সব শেষে তারা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত হলো।
ফের যখন যুদ্ধ ডগ্রকদের বিজয়ের কাছাকাছি চলে এলোÑ তখন হেক্তোর নগরে ফিরে এসে নগরের সব নারীদের বললেন যে, তারা যেন দেবী এথেনার কাছে তাদের জয়ের জন্য কান্নাকাটি করে। কেননা তখন তাদের জয়ের জন্য তাদের সাহায্য করার মতো একমাত্র দেব-দেবীরা ছাড়া তাদের পক্ষে এখন আর কেউ নেই।
একিলিস এবার নতুন রূপে আবির্ভূত হলেন। তিনি সব এইকেইনদের ডাকলেন। নতুন করে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতির জন্য আহ্বান জানালেন। যুদ্ধে গেলেন এবং বিজয় অর্জন করলেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল