১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দিগন্ত সাহিত্য কবিতাবলী

-

শাশ্বত হাসান
আদুরে উপাখ্যান

আমি যাই বন্ধুহীন মড়কে
এক মৃতের পুরীতে
দখলদার আমার সব নিছে
তাতেও নয় সে খুশি।

আমি যাই, মড়কে যাই, আঁধারে যাই
সেখানে সেলিম দাদা আছেন
সইরা আছে খেলার সাথী
ওরাও আজ অখুশি, মড়কবাসী।

এতো প্রেম কোথায় গেল? আদুরে উপাখ্যান।
আশ্রম নাই, ঘর নাই।
নীল আকাশে, বরষার বন্দনা,
কোথায় দেখি?

একটি কদম ফুল, গাছ ফুল
গেল কই চৌত্রদাহে
উপকথার দেশে।

মরুদস্যু আমার সব নিছে
দাদা দাদীর আদুরে চুম্বন নিছে
রুক্ষ সব গোরবাসী
আহারে সময়!

পৃথিবীর প্রেমময় উপাখ্যান কাকে বলি।

শাহীন রেজা
উজানে ভেঙেছে মন
(কবি সৌমিত বসু, বন্ধু আমার)

উজানে ভেঙেছে মন
নদীগুলো ক্রমাগত নারীদের মতো
চিরল বটের ফাঁকে মুখগোঁজা কবুতর যেন
ধূসর দুপুর পায়ে বেঁধেছে ঘুঙ্গুর

কে যেন ঘোমটা টেনে
বোশেক নায়রী হয়ে ভেসে যায়
শ্রাবণের ঢলে

নদীর পাড়ের মতো ভাঙে বুক
ছলাৎ ছলাৎ
একাকী নাবিক সে তো টানে হাল
সময়ের, জীবনের
অতঃপর ফেরারি ঘুঘুর সাথে
একদিন বাঁশের কোড়লে

উজানে ভেঙেছে মন
যমুনার দুই পাড়ে আমরা দু’জন।

খুরশীদ আলম সাগর
হৃদয়ের এলবামে তুমি
(কবি আল মাহমুদকে)

আলোয়ান বাতাসে জড়ানো রোদের শরীর ছুঁয়ে
তুমি ভাঁজ করা রুমালে সুগন্ধি সেজে আজ ছবি
খুব আচানক ফিরে গেলে নিজ বাসভূমে
বোয়াল ভরা প্রিয় নদী তিতাসের কবি।

হিমেল বাহনে তুমি ছিলে চুপচাপ একা
তেলচিটচিটে নগর সভ্যতার যান্ত্রিক কোলাহল
এড়িয়ে পেয়েছো কার দেখা? হাসি খুশি খুব?
নিজের সৃষ্টির জলাধারে নীরবে দিয়েছো ডুব।

কী আশ্চর্য নিজেই তুমি চেয়ে নিলে
চলে যাবার দিনক্ষণ শুক্রবার
আমরা সবাই ধরে রেখেছি বুকের ভেতরের বিলে
তোমার কালজয়ী সব সাহিত্য সম্ভার।

নরম ঘাসের ওপর দেখিনি তোমার সোনালি চরণ
গভীর ঘুম উদযাপনকে তুমি আপন উষ্ণতায়
বন্দি করেছ নিজের ভেতর এবং মহাকালের দিকে
বখতিয়ারের ঘোড়া ছুটিয়ে তুলে নিলে এ কোন মরণ!

তোমার কবিতার পাললিক খামে বিচ্ছুরিত মহাকাল
তোমাকে ডেকে নিয়ে যায়, যাক
সৃষ্টির তুমুল আড্ডায় তোমাকে জানাই সাধুবাদ
বুকের ভেতর অলিন্দ-নিলয়ে করি স্মরণ।

আবু জাফর আবদুল্লাহ্
আর কাঁদিও না

আজকাল অনেক কান্নার দৃশ্য দেখি
পথে ঘাটে।
দেখি কান্নার ছবি পত্রিকার পাতায়
যা দেখে আমার নিজেরই কান্না পায়
কাঁদিনে। পুরুষের শব্দ করে কাঁদতে নেই।
তাই বলে চোখের পানি আটকাতে পারিনে।
এই কি ‘একুশের চেতনা’
নাকি গণতন্ত্রের মূলধারা?
এ কেমন আমার স্বাধীনতা, কেমন গণতন্ত্র?
হে আমার দেশ, আর কাঁদতে চাইনে
আর কাঁদিও না।
তুমি আমাদের সৎ এবং দেশপ্রেমিক
মানুষ দাও।
দাও একজন মমতাময়ী মা
অথবা একজন মমতাময় পিতা।

মিতা আলী
নশ্বর

আহ্, আমার এ আনন্দময় বাসস্থান
আহ্, আমার এ আহলাদিত সন্তান
বাহ্, এই বেঁচে থাকা।
আবারও আসছে দারুণ জারুল সময়
বেগুনি সবুজে মাতোয়ারা সংশয়,
পথের বাঁকে যে জারুল সাক্ষী ভালোবাসার
সে আজও আছে প্রদীপ্ত পথে জীবনের আরবার,
জানিতো জানতো বৈশাখ আসবেই
ভালোবাসা একাকার কে তারে রুখবে?
আমাদের মিলনায়তনে আনন্দ কোলাহল
জীবনের স্ব সুর চলছে চলবে
ঠিকানায় পৌঁছাতে কে তারে রুখবে?
তিন হাত জমিনে বিচারের কাল
তুমিই তুমি শুধু একক একার।।

মুহাম্মদ রেজাউল করিম
আমরা যাবো বহুদূর

এখন শীতের সন্ত্রাস
বরফ ঢাকা আমাদের পথ
যতদূর দৃষ্টি যায় দাঁড়িয়ে আছে
রাতের অন্ধকার অপলক
ঘন মেঘের তুমুল গর্জন

পথে পথে প্রচণ্ড ঝড়ের আদিম উল্লাস
সব নদীই ভাঙছে জীবনের পাড়
ক্ষয় হয় সোনালি ফসলের মাঠ
আমাদের ঠোঁটে শাশ্বত তৃষ্ণার ঢেউ
আমাদের হাতে মুক্তির সবুজ নিশান ও আকাশ

নিশীথের উদার আকাশ
বিশুদ্ধ আলোর বৃষ্টি দাও
আমরা যাবো অনেক দূর বহুদূর
মনজিলের শেষ সীমানায় ॥


আরো সংবাদ



premium cement