২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভাঙা ফ্রেম

-

ইউনিয়ন নির্বাচনের বৈরী হাওয়া শহর ছাড়িয়ে গ্রামগঞ্জে। মাসেক পর চাঁনপুর ইউনিয়ন নির্বাচন। ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে দুই দল। প্রধান বাড়ি আর মাতব্বর বাড়ি। প্রধান বাড়ির মানিক প্রধান এবং মাতব্বর বাড়ির ফারুক মাতব্বর প্রার্থী। উপজেলার নির্বাচন অফিসে দুই দলের গতায়াত অহর্নিশ। দুই দলই ব্যস্ত সভা সমাবেশ নিয়ে। মিছিলের মহড়া চোখকে ধাঁধিয়ে রাখে। এলাকার অবস্থা উননে ভাত ফোটার মতো টগবগে। হুমকি-ধমকির অস্ফুট শব্দ শোনা যাচ্ছে গ্রামের যত্রতত্র। সন্ধ্যারাতে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স খেলার মাঠে ককটেল ফোটানোর আওয়াজ কানে আসছে কয়েকদিন ধরে। আপামর জনসাধারণের ভেতর বিরাজ করছে অপ্রত্যাশিত এক আতঙ্ক। ভয় ত্রাসে জড়োসড়ো দুর্বল কৃষক জেলেরা। সবার মনোজগতে প্রশ্নের এক বিশাল জাহাজ ভিড় করেছে। এক দশক ধরে শান্ত, ঝগড়া-বিবাদহীন কালিকাপুর আবার রণাঙ্গন হচ্ছে না তো? আপনজন হারানোর বেদনা কারো হৃদয়কে ফালিফালি করে দেবে না তো? ঘরবাড়ি, গবাদিপশু আসবাবপত্র আগুনে ভস্ম হতে চলছে কি? শিক্ষার্থীদের বই-খাতা, শৈশবের নানান খেলার সরঞ্জাম, যতেœ আগলে রাখা স্মৃতির পাণ্ডুলিপি ছাই হয়ে উদাস শূন্যপটে ভর করে হারিয়ে যাবে কি?
আধমরা সকাল। সূর্যের আলোতে তেজ পড়তে শুরু করেছে। গ্রামের মানুষেরা কাজে লাগছে। কেউ কাজে ব্যস্তও। কালিকাপুর ঘাটে খেয়াপারের নৌকাটা সবেমাত্র নোঙর ফেলেছে। ক্ষাণিকবাদে হাট ভাঙলে লোক নিয়ে যাবে ময়নারগাঁও ও সুলতানপুর। মানিক প্রধানের ছোট ভাই সবুজ প্রধান খেয়াঘাটে সকালের স্নান করতে এলো। নৌকার গফুর মাঝির সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে আলাপ করছে। নিজেদের শক্তি-প্রাচুর্য, প্রশাসনিক সহযোগিতা, বংশের দাম্ভিকতার কথায় মুখে ফেনা তুলছে। মাতব্বর বাড়ির ফারুক মাতব্বরকে গোষ্ঠীসুদ্ধ বকছে। এমন সময় ঘাটে হাত মুখ ধুতে এসেছে ফারুক মাতব্বরের চাচাত ভাই কামাল ও সঙ্গে দু’জন। তারা গালমন্দের প্রতিবাদ করলে সবুজ লাপাত্তা হয়ে ওঠে। অকথ্য ভাষায় মন্দাচার করতে থাকে। সবুজদের এখন শক্তি সামর্থ্যরে কমতি নেই। সরকার পর্যন্ত তাদের পক্ষে। তার এ অশালিন গালমন্দ কামালরা সহ্য করতে না পেরে তার ওপর আক্রমণ করে। তিনজন মিলে তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। ঘুষির আঘাতে শরীরের কয়েক জায়গায় ফুলে রক্ত জমে ওঠে। ঘটনার খবর তড়িৎ বেগে পুরো গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান বাড়ির লোকেরা মরিয়া হয়ে ওঠে প্রতিশোধ নেয়ার। যেন প্রতিশোধ আর ক্রোধের অনলে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেবে মাতব্বর বাড়ির নাম নিশানা।
সবুজ আহত হওয়ার জের ধরে প্রধান বাড়ির লোকেরা প্রস্তুতিমূলকভাবে রামদা, ছুরি, বল্লম ও ইট-পাটকেল নিয়ে মাতব্বর বাড়ির ত্রি-সীমানা ঘেরাও করে ফেলেছে। অশালীন রকম গালমন্দ মিশ্রিত সেøাগানে কাঁপিয়ে তুলছে চার পাশ। তাদের দাপাদাপিতে প্রকম্পিত পায়ের তলের শক্ত মাটিও। তারা নানান যাতের কটু কথায় মাতব্বরদের ময়দানে নামতে বলছে। তাদের একজন হ্যান্ড মাইক দিয়ে ডাকছে ‘কলাগাছের ডাক্কা, বেটা হইলে আগ্গা, আজ দেখা যাইব কেডা মায়ের দুধ কত্দূর খাইছে।’ মাতব্বররা এই মুহূর্তে ঝগড়া করতে অপ্রস্তুত। তাদের সহায় সম্বল অপ্রতুল। কিন্তু বংশীয় মর্যাদা আর নিজেদের টগবগে রক্ত এবং অপমানজনিত অমø কথা একসাথে মিশে তাদের করোটিতে আঘাত করলে তারা নেমে পড়ে মাঠে। রণাঙ্গনে। এই জীবন যায়-যাক মাগার বাপ দাদার ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হতে দেব না; এমন অভিপ্রায় মাতব্বরদের।
সামান্য দূরত্বে মুখোমুখি দুই দল। যৎসামন্য ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়, চলে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি, হাতে হাতে মহড়া চলে চোখ ধাঁধানো দেশী অস্ত্র, শত্রু পক্ষকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় নানান হাতিয়ার। অপর পক্ষকে পরাস্ত করতে প্রধান বাড়ির মহিলারা বাতাসে উড়াচ্ছে ছাই ও মরিচের গুঁড়া। উড়ন্ত ছাইয়ে মাতব্বরদের সামনের দৃশ্য অন্ধকার এবং মরিচের গুঁড়ায় ঝলসে ওঠে জোড়া চোখ।
মাতব্বর গোষ্ঠী অল্প সময়ের বেশি ময়দানে নিজেদের থিতু রাখতে না পেরে পথ ধরে পালানোর। মাতব্বররা পিছু হাঁটতে শুরু করে। প্রধান বাহিনী অস্ত্র তাক করে তাদের পিছু নেয়। নাগালে পেলেই পাঠিয়ে দিবে পরপারে। মাতব্বররা এখন দৌড়াচ্ছে বাড়ির দিকে। বাড়ির কাছে এলে ধান ক্ষেতের আইলে হোঁচট খেয়ে জমিনে পড়ে যায় কামাল। সে প্রথমে ঘাড়ের ওপর একটা প্রকাণ্ড আঘাত অনুভব করে। পেছনে ফিরে তাকাতেই মাথায় পড়ে রামদার এক বিশাল কোপ। তারপর শুরু হয় এলোপাতাড়ি কোপ। রক্তে জবুথবু কামাল জমিনে পড়ে ছটফট করতে থাকে।
প্রধানরা বিজয় ধ্বনির বুলি উড়িয়ে উঠে পড়ে মাতব্বর বাড়ির প্রত্যেকটা উঠোনে। লুট করে অর্থ, অলঙ্কার এবং বিভিন্ন আসবাব। নেতাগোছের লোকদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় আগুনে। পুড়তে থাকে মাতব্বর বাড়ি। প্রধানরা বিজয়ী সেøাগানে বাড়ি ফিরে।
উত্তরের পথ ধরে ফাহাদ বাড়ি ফিরছে তখন। নানা বাড়ি থেকে। এলাকায় প্রবেশ করে দেখে, মানুষ এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। আগুনের ধোয়া ভাসছে বাতাসে। কান্নার শব্দ আসছে কিছুটা দূর থেকে। মনে হলো, তাদের বাড়ির কাছে। নানা দুশ্চিন্তা আর ব্যথিত মনে এলোমেলো পায়ে বাড়ির দিকে দৌড়ায়। বাড়ির পাশে এসে থমকে যায়। মোচড় দিয়ে ওঠে হৃদয়। বাঁশঝাড়ের আড়ালে দাঁড়ায়। চোখের জল যেন বান ডেকেছে। চোখের সফেদ জল গাল বেয়ে বুক ভিজাচ্ছে। অশ্রু ফোঁটার ভেতর ভাসছে আগুনে পুড়ন্ত তাদের ভিটে বাড়ি। দাউদাউ করে জলছে আগুন। আগুনের লেলিহান শিখা সবকিছু পুড়িয়ে ভস্ম করছে।
বাড়ির উঠোনে চেয়ারে বসে আছে মানিক প্রধান। তাকে ঘিরে বসেছে প্রধান বাড়ির লোকজন। কামালকে তার দলের লোকেরা প্রায় মেরে ফেলেছে শুনে সে আমোদে নেচে ওঠে। গলা ফাটিয়ে বলতে থাকে ‘আরো মার! ১০টা খুন করে আমার কাছে আসবি। তোর সাথে আমি আছি। বিকেলের দিকে ঢাকা থেকে আমার গ্রুপের লোকেরা আসবে। তাদের নিয়ে পিস্তল হাতে উন্মুক্ত ঘুরে বেড়াবে। এই প্রধানের ভয়ে যেন কালিকাপুরের মাটি পর্যন্ত থরথর করে কাঁপে।’
কামাল মিয়াকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে আনা হলো। রাত ৩টায় হাসপাতালের বেডে মারা যায়। মরে যাওয়ার পূর্বে ফাহাদকে দেখতে চেয়েছিল। কথা বলতেও। ভাগ্যে জুটেনি।
কালিকাপুরের ঝগড়ার কথা থানা ভেদ করে জেলা নাগাদ ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক পত্রিকাগুলোও নিউজ করে।
ফাহাদ বাবা মাকে খুঁজতে থাকে। তারা কোথাও নেই। পরিচিত কয়েকজন তাকে বুকে নিয়েছে। মাথায় হাত বুলিয়েছে। সবার কাছে বাবাকে খোঁজে। কেউ কিছু বলে না। তাকে দেখে খালাত ভাই বশির ছুটে আসে। গলায় ধরে কেঁদে ফেলে।
‘আঙ্কেলকে শালার পুতেরা অনেক মেরেছে। আঙ্কেলকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। তুই আমার সাথে বাসায় আয়। মা তোকে নিয়ে যেতে বলছে। তোর দাদি আমাদের বাসায়।’
বশিরদের বাসা পাশের গ্রাম বগডহরিয়াকান্দিতে।
ফাহাদ যেতে চায় না। নদীর পাড়ে যায়। বলে, এ পথে বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাবা এ পথে আসবে।
তার কথা শুনে দাদি আসে। বৃদ্ধ মহিলার আসতে কষ্ট হয়েছে। তেমন হাঁটতে পারে না। গিরায় ব্যথা। তার ওপর পুত্র শোক। আদরের নাতিকে নিতে এসেছে। ফাহাদকে ধরেই কান্না। বাবার শোক আর পুত্র শোকের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় খালা বাড়ি। ফাহাদ হাসপাতালে যেতে চাইল। খালু বলল, পরদিন নিয়ে যাবে।
রাতে ঘুম হয়নি ফাহাদের। ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমে রাত গভীর হয়। দুঃস্বপ্নে লাফিয়ে ওঠে বিছানায়। বাবাকে খোঁজে। বশির সান্ত্বনা দেয়। কাজ হয় না। শেষ রাতে আর ঘুমোয়নি। জানালার গরাদ ধরে তাকিয়ে থাকে রাতের শরীরে। একসাথে বাবার হাসি-কান্নার মুখ ভেসে ওঠে। দূরে দাঁড়িয়ে বান্ধবী শ্যামা যেন বলছেÑ কিরে, কলমদানিটা রাখতে পারলিনে। আমার মতো কলমদানিটাও পৃথিবী ছেড়ে চলে আসছে। কাঁদিস না দোস্তÑ তোর বাবা আমাদের এখানে বেশ ভালো থাকবে। ফাহাদ অস্ফুট বলেÑ বাবা। বাবা কোথায়। কোথায় তুমি বাবা!
বশির ঘুম থেকে উঠে তাকে ছুঁয়ে দেয়। ফাহাদ তাকে জড়িয়ে ধরে।
বলেÑ শ্যামা এসেছিল এখন। বাবা নাকি তার কাছে গেছে। বাবাও কি মারা গেছেরে বশির। বাবার সঙ্গে আমি কথা বলব।
এত রাতে আঙ্কেল ঘুমুচ্ছে।
একটু কথা বলবরে ভাই।
আচ্ছা, ভোর হলে কথা বলিস।
মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করল কালিকাপুরে। বিকেলে প্রশাসনের লোক এলো। প্রশাসনের লোক মানিক প্রধানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসেছে।
মাতব্বর বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক নেই। নারীও আছে অল্প ক’জন। অবলা নারী। ধ্বংসস্তূপ আর আগুনে ছাই এখন মাতব্বর বাড়ির অধিকাংশ ঘর। কয়েকটা ঘর থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। অনেক ঘরের টিনের বেড়ায় রামদার কোপ। বড় বড় ফুটো হয়ে আছে টিনে টিনে।
সকাল ৮টায় কালিকাপুরে কামাল মিয়ার লাশ আনা হবে। কালিকাপুর মাঠে নামাজে জানাজা শেষে সেখানে তাকে সমাধিস্থ করা হবে। লাশ আনার খবর মানিক প্রধানের কর্ণপাত হলে সে বলে, ‘এ লাশ কালিকাপুরের মাটিতে আনা যাবে না। তাদেরকে এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যে বা যারাই এলাকায় লাশ নিয়ে ঢুকতে চাইবে তাকে হত্যা করা হবে।’
প্রধানের এমন অত্যাচার ও অসভ্য আচরণের কথা পাশের ময়নারগাঁওয়ের মানুষ শুনলে তাকে চাপ দেয়। তারা হুমকি দিয়ে বলে যে, লাশ যদি এলাকায় ঢুকতে দেয়া না হয় তাহলে পুরো ইউনিয়নবাসী তার বিপক্ষে অবস্থান নিবে। প্রয়োজনে কঠিন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে তারা।
চাঁনপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের মানুষ সেই পূর্বকাল থেকে দেখে আসছে যদি কোনো দল প্রতিপক্ষের কাউকে খুন করে ফেলে, তাহলে খুনিরা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। বছর তক গ্রামে আসে না। পালিয়ে বেড়ায়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া কাহিনী সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রধানরা এলাকা ছাড়বে কেন? তাদের শক্তি সামর্থ্যরে কমতি আছে নাকি? তাদের দেশী-বিদেশী হাজারো অস্ত্র আছে। আছে ১০-১৫ জনের ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও টাকায় কেনা পাঁচজনের শৃঙ্খলা বাহিনী। টাকার কাছে যে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়, অধিকার খর্ব হয়, এটা চাঁনপুর ইউনিয়নবাসী এখন অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করছে।
প্রত্যুষে কালিকাপুরে লোকজন আসতে শুরু করেছে। পোড়া ঘরবাড়ি, ছিদ্র হওয়া টিন, মানুষের ব্যবহারিক আসবাব পড়ে আছে মাতব্বর বাড়ির সর্বত্রজুড়ে। কেমন যেন একটা গোঙানির শব্দ শোনা যায় এ বাড়ির বীভৎস বাতাসে। গুমরে কেঁদে উঠছে বসতভিটা। হতাশা দুরাশা আর বেদনার দীর্ঘশ্বাসের ছাপ লেগে আছে মাতব্বর বাড়ির আকাশে-বাতাসে জীবন চলার প্রতিটি মোড়কে। মাটি ফুড়ে গন্ধ আসছে এখানে সংসার ছিল, সুখী জীবন যাপনের বসতি ছিল, শিশুদের খেলার উঠোন ছিল, ছিল যতেœ রাখা কার্নিশ, বউ ঝির গল্পের অলিন্দ, মেঘনার মাঝির বৈঠা দাঁড় ও কৃষকের লাঙ্গল-জোয়াল। আজ অবেলার বৈরী হাওয়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে সব। ঘোরচক্রে ধুলোয় মিশে গেছে চলন্ত জীবন।
সকাল ৭টায় কালিকাপুর ঘাটে লাশের নৌকা ভিড়ে। মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে। আত্মীয়স্বজনের ক্রন্দলরোলে ভারী বাতাস। ছেলের লাশ কাঁধে তুলতে কত যাতনার দাবদাহের অনলে জলতে হয় এটা বোধহয় বৃদ্ধ আতহার মাতব্বরের চেয়ে ভালো আর এ জগতের কেউ বোঝে না। নীরব আর্তনাদের কলজে থেতলানো সুর বইছে বৃদ্ধ মাতব্বরের ভেতরজুড়ে। বাবার লাশের মাথার দ্বারে বসে আছে ফাহাদ। কষ্টের তীব্রতায়, এক রাত্রের ছায়াহীনতায়, দীর্ঘ সময় ধরে বাবা ডাক শুনতে না পারার যন্ত্রণায় ফাহাদ নিস্তব্ধ। সেই দুরন্ত চঞ্চল ফাহাদ নিথর নির্বাক। ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে সাদা কাপড়ে মুড়ানো বটবৃক্ষের দিকে। বাবার দেহটা একটু ছুঁতে ইচ্ছে করছে তার। বাবার শরীরের সেই চিরচেনা গন্ধটা শুঁকতে প্রবল বাসনায় সে ব্যগ্র।
লাশ মাঠে রাখা হয়েছে। নামাজে জানাজা হবে। জানাজা প্রারম্ভে নেতারা কথা বলছেন। বিচার হবে বলে জোর গলায় হাঁক ছাড়ছেন অনেকে। প্রশাসন তাদের সঙ্গে আছে বলে অনেক নেতা জনসাধারণকে আশ্বস্ত করছেন। কিন্তু প্রশাসন কি কামালদের সঙ্গে ছিল? কিংবা আজ আছে? যদি প্রশাসন থাকত তাহলে এখনো মানিক প্রধান কী করে কোন সাহসে সদর্পে পিস্তল হাতে এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। তার গুণ্ডারা এলাকায় মাতামাতি দাপাদাপি করে?
ফাহাদের মা রাবেয়া বেগম এখনো জেলা হাসপাতালে। স্বামীর মৃত্যুতে সেও মৃতপ্রায়। অবস্থা বেগতিক। যেকোনো মুহূর্তে সেও স্বামীর পথে চলে যেতে পারে।
কবরের পাশে অনেকক্ষণ বসে থাকে ফাহাদ। ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে থাকে কবরের দিকে। মাঝে মধ্যে অসহ্য রকম চিৎকার করছে। ভেতরটা যেন কেউ লোহার শক্ত চিরুনি দিয়ে আছড়ে দিচ্ছে তার। বশির তার হাত ধরে ওঠায়। বশিরের হাত ধরে ছায়াহীন পৃথিবীতে বাড়ির পথে নামে। জন্ম থেকে ঘুরে বেড়ানো পথঘাট, ইশকুলে যাতায়াতের রাস্তা, আলো ছায়ার পুকুর পাড়ও আজ যেন তার বড় অচেনা।
ফাহাদ হাঁটতে পারে না। পা দু’টি এলোমেলো জমিনে পড়ে। মনে হয় বছর একের কোনো শিশু হাঁটা শিখছে।
বাড়ির উঠোনে দাঁড়ায় ফাহাদ। তাদের ঘরদোরের কোনো অংশ ছাই। কোনো অংশ ধ্বংসস্তূপ। তার পড়ার টেবিল, শোবার ঘর, মা বাবা থাকার ঘর সবই আজ ভূলুণ্ঠিত কিংবা ভস্ম। তার হৃদয়টা হঠাৎ প্রস্তর হয়ে যায়।
কাঁদতে ইচ্ছা করছে না। তবুও বুকের ভেতর চাপা একটা আর্তনাদ তাকে বড় বেশি বেশামাল করে তুলছে। এবং তার হৃৎপিণ্ডকে ছিঁড়ে ফেলছে। দখিনা ধমকা হাওয়ায় সামনের ভগ্নস্তূপ থেকে একটা ভাঙা ফ্রেম উড়ে এসে তার পায়ের কাছে পড়ে। ছবির ফ্রেম। পারিবারিক ছবি। স্মৃতির আলপনা। সূর্যাস্তের লাল বিকেলে একটা হলুদ সরিষা ক্ষেতে ফাহাদকে তার মা বাবা চুমোয় ভরে দিচ্ছে। আজ ভাঙা ফ্রেমের তিনজন তিন জগতে। হ


আরো সংবাদ



premium cement
রিজওয়ানকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্র্যাডম্যান বললেন আফ্রিদি গোবিন্দগঞ্জে ট্রাক্টরচাপায় নারী নিহত অভিযোগ করার পর ইনসুলিন ইঞ্জেকশন কেজরিওয়ালকে! হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা তালায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি পরিবারের মাঝে জামায়াতের সহায়তা প্রদান শেরপুরের মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট আবারো বৃষ্টির শঙ্কা দুবাইয়ে, চিন্তা বাড়াচ্ছে ইউরোপ সিদ্ধিরগঞ্জে চোর আখ্যা দিয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা মানিকগঞ্জে অটোরিকশা-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে প্রকৌশলী নিহত ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী ছিলেন সমাজ বিপ্লবী

সকল