২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেগম রোকেয়ার সাহিত্য বাঙালি নারী সমাজ

-

বেগম রোকেয়া বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের পথিকৃৎ ও খ্যাতিমান সাহিত্যিক। তার সমকালে বাঙালি নারী সমাজ সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় অজ্ঞতার কারণে অবহেলিত ও বঞ্চিত ছিল। আর এসব অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি চালিয়েছেন ুরধার মসিযুদ্ধ। তাই বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণই তার সাহিত্য সাধনার মূল উপজীব্য। তার সাহিত্যের অগ্নিশিখায় অজ্ঞতার অন্ধকার দূরীভূত হয়ে আলোর প্রভা উদ্ভাসিত হয় এবং মুসলিম নারী সমাজে জাগরণ সৃষ্টি হয়।
বেগম রোকেয়ার সমকালে বাঙালি নারী সমাজের অধঃপতনের প্রধান কারণ ছিল শিক্ষার অভাব ও অজ্ঞতা। এ সময় নারীশিা বা মেয়েদের শিার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছিল না। মৌলভী রেখে শরিফ শ্রেণীর মেয়েদের ঘরে আরবি শিাদানের ব্যবস্থা করা হলেও তাদের বাংলা-ইংরেজি শিা হতো না। এতে নারী মনের সুকুমারবৃত্তির বিকাশ তো হতোই না অধিকন্তু নানা কুসংস্কার বাসা বাঁধত।
বাঙালি মুসলিম নারী সমাজের এহেন করুণ দশা দেখে ব্যাথিত হয়ে তিনি নারী সমাজকে উদ্ধার করতে প্রথমেই নারী শিার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। নারী শিার প্রতি উদাসীনতাকেই তিনি নারী সমাজের দুঃখ-দুর্দশার মূল কারণ উল্লেখ করে বঙ্গীয় নারী শিা সমিতি-র সভার অভিভাষণে বলেন, ‘মোছলমানদের যাবতীয় দৈন্য-দুর্দশার একমাত্র কারণ স্ত্রীশিায় ঔদাস্য।’
তিনি যথার্থই বুঝতে পেরেছিলেন সমাজ ও জাতির উন্নতির জন্য প্রয়োজন নারীশিার। নারী শিতি না হলে জাতি বা সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সমাজের ও জাতির উন্নতির লে তিনি নারী শিার গুরুত্ব উল্লেখ করে ১৯০৪ সালে নবনূর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে লেখেন, ‘আমরা উচ্চশিা প্রাপ্ত না হইলে সমাজও উন্নত হইবে না।... তাই আমাদিগকে সকল প্রকার জ্ঞান চর্চা করিতে হইবে।’
নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য রূপচর্চার পরিবর্তে জ্ঞানচর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। অলঙ্কারকে তিনি নারীর জন্য দাসত্বের শিকল মনে করেছেন। এজন্য অলঙ্কারের শিকল থেকে নারী জাতিকে মুক্ত করতে বেগম রোকেয়া বোরকা প্রবন্ধে মেয়েদের অলঙ্কার ছেড়ে জ্ঞানচর্চার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘নারীর শোভন-অলঙ্কার ছাড়িয়া জ্ঞানভূষণ লাভের জন্য ললনাদের আগ্রহ বৃদ্ধি হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
বেগম রোকেয়া নারী সমাজে যেমন শিার চেতনা জাগ্রত করেছেন তেমনি নারীশিা বিস্তারের ল্েয ১৯০৯ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। অনেক বাধা-বিঘœ অতিক্রম করে বাঙালি মুসলিম সমাজের শিা বিস্তারে এ প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া তিনি ১৯১৬ সালে আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম নারী সমাজকে সঙ্ঘবদ্ধ করেছেন।
বেগম রোকেয়ার সমকালে সমাজের প্রায় অর্ধেক অংশ তথা নারী সমাজকে বাদ দিয়ে এবং তাদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রেখেই সমাজ উন্নয়নের চেষ্টা করা হতো। নারীর সহযোগিতা ছাড়া পুরুষের একার পে সমাজ উন্নয়ন যে সম্ভব নয় তৎকালীন মুসলিম সমাজ তা বুঝত না, অফিস-আদালতে নারীদের কাজ করার কথা বাঙালি মুসলিম সমাজ চিন্তা করতেই পারত না।
তৎকালে স্বামী-স্ত্রীর শিা ও জ্ঞানের পার্থক্যও ছিল ব্যাপক। স্বামী যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা গবেষণায় নিয়োজিত স্ত্রী তখন ঘরের মধ্যে গৃহস্থালির ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ব্যস্ত।
বেগম রোকেয়া বাঙালি নারী সমাজের মুক্তির জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। নারী সমাজকে জাগ্রত করতে তিনি প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছেন। তিনি নির্যাতিত ও অসহায় নারী সমাজকে পুরুষের অত্যচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রেরণা ও শক্তি জুগিয়েছেন। নারী সমাজকে অধিকার আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন বেগম রোকেয়া। তিনি পুরুষের সমকতা অর্জনের জন্য নারী সমাজকে সামাজিক বাধা উপো এবং কঠোর পরিশ্রমের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পুরুষের সমকতা অর্জনের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয়, তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে লেডী কেরানী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডী-ম্যাজিস্ট্রেট, লেডী-জজ, লেডী-ব্যারিস্টার সবই হইব। পঞ্চাশ বৎসর পর লেডী ঠরপবৎড়ু হইয়া এদেশের সমস্ত নারীকে ‘রাণী’ করিয়া ফেলিব।” প্রকৃতপক্ষেই বাঙালি নারীকে রাণী করার তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। বাঙালি নারী আজ রাণীতেই পরিণত হয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, অনেক মন্ত্রীসহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা আসীন হয়েছেন। তারা পুরুষ সমাজের আধিপত্যের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়েছেন। অধিকন্তু সর্বস্তরে নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত চেষ্টা-আন্দোলন অব্যাহত আছে। নারী সমাজের এ উন্নতি-অগ্রগতির জন্য সমগ্র বাঙালি জাতি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার কাছে ঋণী।


আরো সংবাদ



premium cement
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা তালায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি পরিবারের মাঝে জামায়াতের সহায়তা প্রদান শেরপুরের মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট আবারো বৃষ্টির শঙ্কা দুবাইয়ে, চিন্তা বাড়াচ্ছে ইউরোপ সিদ্ধিরগঞ্জে চোর আখ্যা দিয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা মানিকগঞ্জে অটোরিকশা-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে প্রকৌশলী নিহত ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী ছিলেন সমাজ বিপ্লবী পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে একটি সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে : মন্ত্রী মোস্তাফিজ চলে আসাটা যেভাবে দেখছেন চেন্নাইর কোচ ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

সকল