১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তারা তিনজন

-

অনন্তপুর গ্রামে তিনজন লোক বাস করে। শুধু কি তিনজন লোক বাস করে গ্রামটিতে? সংখ্যাটা তিন শ’ থেকে তিন হাজারও হতে পারে। এখানে যে তিনজন লোকের কথা উল্লেখ করেছিÑ তাদের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে এবং সেগুলো দোষ নাকি গুণ তা বোঝা না গেলেওÑ তারা যে গাঁয়ের অন্য লোকজন থেকে একটু আলাদা, অন্যরকম এটা সহজেই বোঝা যায়। কাকতালীয়ভাবে তিনজনেরই নাম রাজা। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তাদের চরিত্রে অদ্ভুত মিল আছে। তিনজনেরই কোঁকড়া কোঁকড়া বাবরি চুল। তিনজনেরই গোঁফ আছে। কিন্তু দাড়ি নেই কারো মুখেই। তিনজনেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে চেষ্টা করে। তিনজনই বিয়ে না করার পণ করে রেখেছে। তিনজনই প্রাণেমন বন্ধু। তিনজনই ভীষণ অলস ও অকর্মণ্য এবং তিনজনই কোনো গুপ্তধন কুড়িয়ে পেয়ে হঠাৎ বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিন যাপন করছে।
তিনজনই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে জ্ঞানার্জনের অদৃশ্য রথ নিয়ে গিয়েছিল কলেজ পর্যন্ত। কিন্তু সামনে আর এগোতে পারেনি, থেমেছেও একসাথে। হয়তো জ্ঞানার্জনের চেয়ে ধনার্জন বেশি লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা শুনেছে, ঝিনুকের ভেতরে মুক্তো, সাপের মাথায় মণি এবং ব্যাঙের মুখে এক ধরনের দামি পাথর থাকে। সেগুলো খুঁজে পেলে বিক্রি করে সাত রাজার ধনদৌলত পরিমাণ টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে। তারা এমন কথাও শুনেছে, যে সাপের মাথায় ওই মণিটা থাকেÑ সেটি নাকি মানুষের আড়ালে চলে যায়। বন-বাদাড়ে, মাটির গর্তে কিংবা গাছের খোড়লে লুকিয়ে থাকে। ব্যাঙের মুখে সেই দামি পাথরটা থাকলে ব্যাঙ সেটা মুখ থেকে বের করে মাটিতে রেখে রাতের আঁধারে এর আলোয় খাবার খুঁজে ফিরে। আর ঝিনুকের ভেতরের মুক্তো হলে সে মুখ বন্ধ করে চলে যায় জলের গভীরে।
কোথায় পাওয়া যাবে সেই মুক্তো, মণি কিংবা দামি পাথর? এসব অমূল্য ধন খুঁজে পেতে হলে অহর্নিশি জল-জঙ্গলে খুঁজতে হবে। তাই তারা তিনজন ঘর থেকে বেরিয়েছে। মনেপ্রাণে দৃঢ় পণ করেছে, যতদিন এই গুপ্তধন খুঁজে না পাবে, ততদিন তারা বাড়ি ফিরবে না।
আমার গল্প এই তিন রাজাকে নিয়ে। গল্পের প্রয়োজনে আমার তাদের ভিন্ন তিনটি নামে সম্বোধন করবÑ রাজু, রাজিব ও রাজন।
অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা জঙ্গলে বসে আছে তারা তিনজন। সারা জঙ্গলে শিয়াল আর ঝিঁঝি পোকার হল্লা। তাদের মুখে কোনো কথা নেই। চুপচাপ বসে সিগারেট ফুঁকছে। জঙ্গলের ভেতরে নীরবতা ভেঙে একটা গাছের ডালে শব্দ ফুটে ওঠেÑ রাতজাগা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ বোধ হয়। জঙ্গলের গহিন থেকে একটা শিয়াল দৌড়ে এসে তাদের দেখে থমকে দাঁড়ায়। অন্ধকারে তিনজন মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে যেদিক থেকে এসেছিল পিঠটান দিয়ে সেদিকেই দৌড় দেয়। জঙ্গলের ভেতরে বসে কয়েকটা সিগারেট শেষ করে ফেলেছে তারা। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ একচিলতে আগুনের ফুলকির মতো কিছু একটা তাদের চোখে পড়ে। তিনজনই চমকে ওঠে দৌড়ে যায় সেখানে। কুড়াতে গিয়ে হাতে পায় একটা জোনাকি পোকা। এতে তারা হতাশ হয় এবং এই হতাশা তাদের ক্ষতবিক্ষত করে। কিন্তু তারা বাড়ি ফিরে আসে না। জঙ্গলের ভেতরেই বসে থাকে। একচিলতে আগুনের ফুলকির অস্পষ্ট ঝিলিক যেন তাদের আরো উসকে দিয়েছে। জঙ্গলের ভেতরের অন্ধকার কিংবা শিয়ালের কোলাহল তাদের ছুঁতে পারে না।
এ মুহূর্তে ঝোপের আড়ালে বসে নিজেদের মনে হচ্ছে পুরনো অশ্বত্থ কিংবা প্রাচীন বটবৃক্ষ। সেই কবে থেকে আশার শিকড় মেলে, ডালপালা ছড়িয়ে বসে আছে তো, আছেই। যেখানে আগুনের ফুলকির মতো দেখেছিল, সেখানে আবার তাকায় তারা। না, তাদের সেই আকাক্সিক্ষত বস্তুটার দেখা পায় নাÑ যার জন্য এত অপেক্ষা, এত আকাক্সক্ষা না জানি বস্তুটা দেখতে কী রকম?
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী তারা আশায় আশায় আঁধারে বসে থেকে এক সময় আশাহত হয়ে পড়ে। একসময় বিরক্ত হয়ে রাজন বলে ওঠে, ‘আর কত দিন এভাবে জঙ্গলে বসে থাকলে গুপ্তধন খুঁজে পাবো?’
রাজু বলে, ‘ধৈর্য হারালে চলবে না।’
রাজিব বলে, ‘ধৈর্য ধারণ করার ধৈর্যও তো হারিয়ে ফেলেছি, আর কত দিন?’
রাজন বলে, ‘এভাবে বসে থেকে কী হবে?’
সত্যিই তো! এভাবে অন্ধকারে বসে থেকে কী হবে? এবার তাদের টনক নড়ে। তিনজন একসাথে গা-ঝাড়া দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। জঙ্গলের ভেতরটা আর তাদের কাছে ভালো লাগে না। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। তখনো সাপের মাথার মণি, ব্যাঙের মুখের দামি পাথর কিংবা ঝিনুকের ভেতরে অসংখ্য মুক্তো তাদের চোখের সামনে থেকে সরে যায়নি, বেলুনের মতো ভাসতে থাকে। আর সেটাই তাদের বুকের ভেতরে যন্ত্রণাকে দাহ করে। কিন্তু তাদের আশাহত করতে পারে না।
তারা জঙ্গলের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে ক্রমেই আলোর মধ্যে আসতে থাকে। আশপাশে তখন কোনো জনমানবের কোলাহল চোখে পড়ে না। শুধু তারা তিনজন। তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। তারা হয়ে পড়ে বিষাদকাতর ও উ™£ান্ত। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে বলে তারা আরো বিষাদগ্রস্ত, আরো উ™£ান্ত হয়ে পড়ে। গুপ্তধন পাওয়ার তাদের যে আশা তা যেন গুঁড়ো হয়ে, ধুলো হয়ে শূন্যে উড়ে যায়। রাত বাড়তে থাকে বলেই বাড়ি ফেরার তাগাদা দিয়ে রাজন আবার বলে, ‘চল, বাড়ি চলে যাই এভাবে আর কত দিন?’
রাজিব বলে, ‘আচ্ছা, আমরা যে জিনিসের আশায় রাতদিন এভাবে জল-জঙ্গলে ঘুরে মরছি, আসলে কি আদৌ তা আছে?’
রাজিবের কথায় সায় দিয়ে রাজনও বলে, ‘আসলেই কি গুপ্তধন বলে কিছু আছে?’
দু’জনের জিজ্ঞাসাই রাজুর উদ্দেশ্যে।
রাজু জবাব দেয়, ‘হ্যাঁ, আছে।’
রাজনও রাজিব একসাথে বলে, ‘কোথায় আছে?’
রাজু বলে, ‘ভার্র্জিনিয়া পাহাড়ে।’
রাজিব বলে ‘সেটা কোথায়?’
রাজু বলে, ‘মন্টভেল শহরে। জিরাফের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবড়োথেবড়ো পাথুরে এক পাহাড়। সেই পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে গেছে এঁকে বেঁকে চোরাগোপ্তা পথ, আর এই পথে গেলেই সন্ধান মিলবে থোমাস জেফারসন বিলের গুপ্তধন।’
রাজিব বলে, ‘থোমাস জেফারসনের বিলের গুপ্তধন মানে?’
রাজু বলে, ‘থোমাস জেফারসন বিল নামে এক ব্যক্তি ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে সোনা-রুপা শিকারে এক দুঃসাহসিক অভিযানে রোয়ানোক ছেড়ে পশ্চিমের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। কোলোরাডো নামক এক জায়গায় বিশাল সোনা আর রুপার গুপ্তধন পেয়ে সেগুলো নিয়ে ভার্জিনিয়ায় ফিরে আসে। বুফোর্ত নামক এক শহরের মাটির নিচে সব সোনা ও রুপা পুঁতে রাখে। কাকপীও জানতে পারে না।’
রাজিব বলে, ‘তারপর কী হলো?’
রাজু বলে, ‘তারপর আবার অভিযানে যায়। দু’বছর পর আবার সোনা ও রুপা নিয়ে ফিরে এসে সেই শহরেই মাটির নিচে পুঁতে রাখে।’
রাজন বলে, ‘এবারো কি কেউ জানতে পারেনি?’
রাজু বলে, ‘না। তবে রবার্ট মরিস নামে বিলের একজন বন্ধু ছিল। থাকত লিঞ্চবার্গ নামক শহরে। বিল একটি লোহার ছোট বাক্স সাথে নিয়ে সেই বন্ধুর কাছে যায়। বাক্সটি রবার্ট মরিসের কাছে ১০ বছরের জন্য আমানত রেখে ফিরে আসে। আসার আগে বন্ধুটিকে অনুরোধ করে আসে, যেন বাক্সটি খোলা না হয়। বাক্সটি খুলতে নিষেধ করার কারণেই রবার্ট মরিসের মনে কৌতূহল তৈরি হয়। কী আছে বাক্সের ভেতরে? কেন বাক্সটি খুলতে নিষেধ করে গেল বিল?’
রাজিব বলে, ‘রবার্ট মরিস কি বাক্সটি খুলেছিল?’
রাজু বলে, ‘না, খোলেনি। লুকিয়ে রেখেছিল বন্ধুর আমানত। কিন্তু এই বাক্সের ভেতরেই গুপ্তধনের সব রহস্য লুকানো ছিল। এর পরের বছর বিল একটি চিঠি লিখে রবার্ট মরিসকে মনে করিয়ে দেয়, সে যেন বাক্সটি লুকিয়ে রাখে। কেউ যেন জানতে না পারে বাক্সটির কথা। তারপর দীর্ঘ ২৩ বছর কেটে যায়। বিলের কোনো খবর পায় না মরিস। তারপর বন্ধুটি আর বেঁচে নেই ভেবে বাক্সটি খুলে ফেলে।’
রাজন বলে, ‘কী পেল বাক্সটি খুলে?’
রাজু বলে, ‘বাক্সে তিনটি কাগজ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’
রাজিব বলে, ‘কাগজে কী লেখা ছিল?’
রাজু বলে, ‘গাণিতিক সঙ্কেতের মাধ্যমে গুপ্তধনের কথা লেখা ছিল। প্রথম পাতায় গাণিতিক সঙ্কেতের মাধ্যমে নির্দেশ করা হয়েছে গুপ্তধনের সঠিক রহস্যের কথা। দ্বিতীয় পাতায় গুপ্তধনের বিভিন্ন জিনিসের নাম এবং পরিমাণ। তৃতীয় পাতায় লেখা ছিল বিলের সঙ্গী ও আত্মীয়স্বজনের নাম-ঠিকানা। বিল তাদের মধ্যে গুপ্তধন ভাগ করে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেছে।’
রাজিব বলে, ‘রবার্ট মরিস কি সঙ্কেতগুলোর মানে বুঝতে পেরেছিল?’
রাজু বলে, ‘না। সঙ্কেতগুলোর মানে বুঝতে ছুটে গিয়েছিল তার বন্ধু জেমস ওয়ার্ডের কাছে। জেমস ওয়ার্ড ছিল বিশিষ্ট গণিতবিশারদ। সে সমস্ত মেধা ব্যয় করে শুধু রহস্য কোডের অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছিল, আর কিছু না।’
রাজিব বলে ‘তারপর কী হয়েছিল?’
রাজু বলে, ‘বিলের তিনটি কাগজের রহস্য উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে জেমস ওয়ার্ড ‘দ্য বিল পেপারস’ নামে একটি বই প্রকাশ করে। এই বই প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে গুপ্তধন শিকারিদের মধ্যে নেশার ঝড় ওঠে। চোরাগোপ্তা পথে একে অন্যের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রমাগত মাটি খুঁড়তে থাকে। ১৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিকারিরা গুপ্তধনের আশায় পাহাড় খুঁড়েছে। কিন্তু বরাবরই সবাই হয়েছে ব্যর্থ। বিলের মিস্টেরি কোড বা গাণিতিক সঙ্কেতের অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি কেউই। সারা বিশ্বে এখনো গুপ্তধন শিকারিদের মাথার ঘাম ঝরছে এ তিন পাতা গাণিতিক সঙ্কেতের অর্থ উদ্ধার করতে গিয়ে। কারণ এই তিন পাতার মধ্যেই রয়েছে বিলের গুপ্তধনের সঠিক অবস্থান, আর এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলেই মিলে যাবে বিলের ২০ মিলিয়ন ডলারের গুপ্তধন।’
রাজন বলে, ‘বিলের গুপ্তধনের মধ্যে কী কী আছে?’
রাজু বলে, ‘দুই হাজার ৯২১ পাউন্ড সোনা আর পাঁচ হাজার ১০০ পাউন্ড রুপা।’
রাজিব বলে, ‘এগুলোর দাম বাংলাদেশী টাকায় কত হবে?’
রাজু বলে, ‘১২০ কোটি টাকার মতো।’
রাজন বলে, তুমি এসব কথা জানলে কী করে?’
রাজু বলে, ‘আমার বাবার কাছ থেকে জেনেছি। বাবা জেনেছিল দাদুর কাছ থেকে, হয়তো দাদু জেনেছিল তার বাবার কাছ থেকেÑ এভাবে বংশপরম্পরায় শুধু জেনেই আসা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধানে কেউ বের হয় না। তাই তোমাদের নিয়ে আমার এ অভিযান।’
রাজন বলে, ‘অভিযান না ছাই! গুপ্তধন তো থাকে মন্টভেল শহরে, এভাবে রাতদিন শুধু এখানে এ জল-জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে কি সেগুলোর সন্ধান মিলবে?’
রাজু বলে, ‘সেই গুপ্তধনের কিছু অংশ বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কিছু অংশ সাপের মাথায় মণি হয়ে, কিছু অংশ ব্যাঙের মুখে দামি পাথর রূপে আর কিছু অংশ ঝিনুকের ভেতরে মুক্তো হয়ে আছে। এখন আমাদের সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে।’
রাজিব বলে, ‘কিন্তু কোথায় খুঁজব?’
রাজু বলে, ‘এক কাজ করি, তিনজন একই জায়গায় না থেকে আলাদা আলাদা জায়গায় খোঁজ করা যাক।’
তার এই কথাটা রাজন ও রাজিবের মনে ধরে। একই জায়গায় তিনজন অযথা সময় নষ্ট করে কিছু হবে না। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয়, রাজু জঙ্গলের ভেতরে সাপের মণি খুঁজবে, রাজন খুঁজবে ব্যাঙের মুখের সেই দামি পাথরটা আর রাজিব চলে যাবে নদীর ধারেÑ সেখানে যত ঝিনুক আছে সব ক’টার খোলস খুলে খুলে মুক্তো খুঁজবে। বলা তো যায় না কোথায় কী আছেÑ হয়তো কেউ একজন পেয়েও যেতে পারে।
এরপর চোখের সামনে যত বন-জঙ্গল, ঝোপঝাড় পেয়েছে, পেয়েছে যত সাগর-নদী, খাল-বিল, পুকুর-নালা, সরোবর কিংবা উপত্যকা সবখানে হন্যে হয়ে তন্ন তন্ন করে গুপ্তধন খোঁজে। খুঁজে খুঁজে কান্ত-শ্রান্ত, ত্যক্ত-বিরক্ত এবং হতাশ হয়ে যখন তারা বাড়ি ফিরে আসতে উদ্যত হয়; তখনই একটা বাজারের সামনের ছোট একটা জঙ্গলের ভেতরে দেখতে পায় একটা গোলাকার বস্তুÑ যা বরফখণ্ডের মতো সাদা। রোদে চকচক করে, অন্ধকারে দেয় আলোর ঝিলিক। তারা ধরে নেয় এটাই সেই গুপ্তধনের অংশ কিংবা ব্যাঙের মুখের সেই পাথরটা অথবা সাপের মাথার মণিটা। তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। বস্তুটি হাতে নিয়ে তারা একেকজন একেকবার লোফালুফি করে। একজন শূন্যে ছুড়ে আরেকজন ক্রিকেট খেলায় ক্যাচ ধরার মতো সেটা ধরে উল্লাসে চিৎকার দেয়। লোকজন তাদের এই ক্ষুদ্র বস্তুটি নিয়ে এতটা আনন্দিত হওয়ার মর্মার্থ বোঝতে পারে না। সবাই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি মেলে তাকায়। কেউ কেউ অনুচ্চস্বরে বলেও ফেলে, ‘লোকগুলো কি পাগল!’
তিনজনের কারো কোনো হুঁশ নেই। কে কী বলে কিংবা কে কী ভাবে তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। তারা তো এখন আর গ্রামের অন্যদের মতো না। তাদের হাতের মুঠোয় আছে অমূল্যধন! যার জন্য কয়েক বছর ধরে জল-জঙ্গলে ঘুরেছে। তারা আত্মভোলা হয়ে আনন্দে নাচতে থাকে। তাদের ঘিরে মানুষের ভিড় ও কোলাহল বেড়ে যায়। এই ভিড়ের মধ্য থেকে একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি তাদের সামনে এগিয়ে এসে ছোঁ মেরে বস্তুটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে কিছুক্ষণ। তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, ‘এ তো দেখছি একখণ্ড পাথর!’
‘অ্যাঁ!’ তিনজনেই হাহাকার করে ওঠে। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement