১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেঘচাপা রোদ

-

আপাতত তুমি তোমার বাবার বাড়িতে আছো। কখন চলে যাবে এতটা নিশ্চিত করে লিটু বলতে পারল না। দু’বছর পর একই কারণে আমি যেন আবারো অস্থির হয়ে উঠলাম। সে অস্থিরতার বোঝাটা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরে আসছি। আম-কাঁঠালের বাগানগুলো আমার ফেরার পথে সামান্য ছায়া দিলেও পায়ের পাতা পর্যন্ত ডুবে যাওয়া ধুলোভর্তি এ পথে তা অতি নগণ্য। ধুলোভর্তি রাস্তার যেখানে যেখানে আম অথবা কাঁঠালগাছের ছায়া পড়েছে, সেখানে ভেসে উঠছে তোমার মুখচ্ছবি। ভীষণ অস্থিরতার কারণে আমার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ থেকে লোনা জল বেরিয়ে এলেও সে ছায়াগুলো শুষে নিচ্ছে এ শরীরের ভাঁজে ভাঁজে জমা বিষাক্ত যত অবসাদ। যদিও এখন পর্যন্ত আমার শরীরে সেই ধুলো আর ধুলোর দাগ লেগেই আছে। আমি তেমন একটা বাড়ির বাইরে থাকি না। তবে আজকে আমার বাড়ি ফিরে আসা কেউ দেখলে নিশ্চিত ভাববে, নিশ্চয় আমার বাড়িতে আগুন লেগেছে অথবা ওই পর্যায়ের কোনো বিপদের কারণে আমি এত দ্রুত হাঁটছি। ভাংড়ার কাছ থেকে আগলাকে আলাদা করে রাখা ওই অকেজো সাঁকোটি পার হয়ে কিছুটা পথ আসতেই অল্প পরিচিত একজন মানুষ এমনকি আমি তার নামও জানি না। রাস্তায় প্রায়ই দেখা হয় আর আমি তাকে সালাম দিইÑ এ পর্যন্তই। সে জিজ্ঞেস করল, ক্যারে বাপু, হাঁটি ক্যা? সাইকেল কই? আমি বললাম, চাচা আজ সাইকেল লি যাই নি। তাই কাবাশিত নামি এপার দি হাঁটিই যাছি। লোকটি চলে গেল। রোজ অথবা অন্য দিন দেখা হলে এ লোকটির সাথে যে স্বরে কথা বলি আজ বোধহয় সেই স্বরে বলা হলো না। লোকটিও হয়তো আমার কণ্ঠের এই শূন্যতাটুকু লক্ষ্য করেছে।
বাড়ির ভেতরে পা রাখার আগেই বাইরের উঠোনে ধানের খড়ের গাদার কাছে মায়ের সাথে দেখা হলোÑ কি হচ তোর? হঠাৎ মায়ের এমন প্রশ্নে আমি আরো একটু চমকে উঠলাম। অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকায় মা আবারো জিজ্ঞেস করল, কী হচ? আমি থতমতো হয়ে বললাম, আজ খুব গরম। মা হাঁটতে শুরু করল, তাঁর পেছনে পেছনে আমিও বাড়ির ভেতরে আসলাম। মা আমার উত্তরে যে খুব একটা সন্তুষ্ট হয়নি, এটা আরো স্পষ্ট বোঝা গেল যখন তিনিও আমার মতো গম্ভীর হয়ে উঠলেন। হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসার কিছুক্ষণ পরই বিদ্যুৎ চলে গেল সেই অজুহাতে আমিও খাবার ছেড়ে উঠে প্রতিদিনের অভ্যাসমতো আম বাগানের দিকে যাচ্ছি। কিছুটা পথ হেঁটে আবারো ফিরে এলাম। ঘরে ঢুকে এ দু’বছরে তোমার জন্য জমানো ভিন্ন ভিন্ন সময়ের সাক্ষীগুলোকে খুঁজে বের করলাম। ওদের সাথে নিয়ে আমি এক পা-দু’পা করে তোমার বাড়ির দিকে যাচ্ছিÑ এরই মধ্যে ভাবলাম দু’একজন বন্ধুকে অন্তত সাথে পাবো কিন্তু বন্ধুদের কাউকেই পেলাম না। আর কী করা? একা একাই যাচ্ছি অনেক দিনের চেনা এই পথ, যদিও তুমি চলে যাওয়ার পর এই পথে দু’একবারের বেশি আমি এসেছি বলে মনে পড়ছে না। প্রথমে একটা পথের অনেকটা এগিয়ে গিয়ে দেখি পথটা বন্ধ। তাও নতুন করে বন্ধ করা হয়েছে বলে মনে হলো না। বেশ আগে থেকেই বন্ধ করা। পেছনে ফিরে, বিকল্প পথে আমি তোমার বাড়ির কাছাকাছি অর্থাৎ ওই জোড়া নারকেল গাছ দুটোর কাছে যেতেই পুকুরের ঐ পাড় থেকে একজন ইশারায় জিজ্ঞেস করল, কোত যাবেন? তার বাড়িতে নাকি? আমিও ইশারায় তাকে বললাম, না। আমি তাকে মিথ্যা বলিনি। কারণ, তোমার বাড়ির গলির কাছে পা রেখেও আমি নিশ্চিত হতে পারিনি, বাড়ির ভেতরে যাবো, না অন্য কাজ আছে বলে চলে যাবো, এমন কথা ভাবতে ভাবতে কাঁপা কাঁপা পায়ে বাড়ির ভেতরে পা রাখলাম। অনেক বড় একটা বদলের ঝড় বয়ে গেছে তোমার বাড়ির ওপর দিয়ে। চারা পেয়ারা গাছগুলো আজ প্রায় পুরো উঠোনই দখল করে নিয়েছে এমনকি উঠোনের এক কোণে থাকা ওই রক্তজবার গাছটিও ওদের আগ্রাসনের বাইরে পড়েনি। দু’বারের বেশি আজো আমাকে ডাকতে হলো না। তুমি দরজার ওপাশে থেকে বললে, ক্যাডা গে? ভিতরে আসেন। কেমন আছো, কেমন আছেন থেকে শুরু করে অনেক কথা হলো। আজো তুমি বসে আছো সেই চেয়ারটায় যেখানে এর আগেও বসতে। তবে সেদিনের মতো সালোয়ার-কামিজ পরে নয় শাড়ি পরে। রঙের ব্যাপারে আমি খুব উদাসীন না হলেও তেমন একটা যে রঙ চিনতে পারি না এটা সত্যি। পরে অবশ্য জেনেছি ওটা বেগুনি রঙের ছাপা শাড়ি। তোমাকে এর আগে কখনো শাড়ি পরা অবস্থায় আমি দেখিনি অর্থাৎ এর আগে তুমি কখনো শাড়ি পরনি, এক ঘণ্টার জন্যও তুমি কখনো শাড়ি পরলে আমি নিশ্চয় নিশ্চয়ই জানতাম। আগামীকাল ভোরের সূর্য উঠা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও এতে কোনো সন্দেহ নেই। আজ এই প্রথমবার তোমাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলাম। তোমার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, এমনিতেই তুমি বেশ পাতলা ছিলে, আরো শুকিয়ে গেছ। কথা বলার ভঙ্গিও বেশ বদলে গেছে, কেন? আমার এত সব প্রশ্নের উত্তরে তুমি কেবল একটি ছোট্ট কথা বললে, বি হয় গেছ তো তাই! কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি প্রচণ্ড অবলীলায় তুমি কথাগুলো বলতে পারোনি। কোথায় যেন একটু বেধে যাচ্ছিল। কথা প্রসঙ্গে তুমি আরো বললে কেউ কাখু ভালোবাসলে, সেও তাক ভালোবাসে। মুখেই সব কথা বুলা লাগে? এ কথাগুলো শোনার পর আমি আর যেন আমার মধ্যে থাকতে পারছিলাম না। ইচ্ছে হচ্ছিল... এখনিই ঐ চট্টগ্রাম থেকে হুসাইন মোহম্মদকে ডেকে আনি আর বলি, এই দেখ, আমার সেদিনের বিশ্বাস মিথ্যা ছিল না। যত পরেই হোক সে স্বীকার করেছে সেও আমাকে ভালবাসত, সামান্য হলেও আমাকে অনুভব করত। অথচ তুই কখনোই বিশ্বাস করিসনি। এই একটি কথা শোনার জন্য আমি প্রত্যেক দিন কত রঙে নিজেকে সাজিয়েছিÑ তার ঠিক নেই। শুধু সে আমাকে মিথ্যা করে হলেও একবার বলবেÑ সে আমাকে ভালোবাসে। আমি বুক ফুলিয়ে সবাইকে বলবÑ আমিও কারো ভালোবাসার যোগ্য।
বিয়ের দুই অথবা তিন দিন পর তোমার বাড়ির দিকে যেতেই কচুরিপানায় ভর্তি যে ডোবাটি তার পুবপাড়ে দাঁড়িয়ে জিয়া ভাইয়ের বৌ আমাকে বলেছিল, বিয়ের দিন তুমি নাকি কোনোভাবেই তোমার বাবার বয়সী ওই লোকটিকে বিয়ে করতে চাওনি। অনেক বকাবকি অবশেষে অনেক মারধর করার পর ঐ টাকপড়া লোকটির হাতে তোমাকে তুলে দিয়েছে তোমার আত্মীয়স্বজনেরা। সেদিন এই কথাগুলো শোনার পর আমি বলেছিলাম, ধুর! ওরকম কাঁন্দাকাটি ম্যা মানুষেরা বি’র সুমায় করিই থাকেÑ এগিন আপনের কাছেই রাখেন ভাবী। আজ আর ঐ কথাগুলো ভাবীর কাছে রাখতে পারছি নাÑ আমার ইচ্ছে করছে এ মুহূর্তে আমি ঐ কথাগুলো নিয়ে এসে আমার বুকের ভেতরে লুকিয়ে রাখি। আমার সম্পদ আমার কাছে।
আজ দিনের আলো আমাকে না বলেকয়েই কখন যেন চলে গেছে। তুমি ওঠে একটা কেরোসিনের বাতি নিয়ে এলে। কেরোসিনের বাতি দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কারেন নাই? কাল তালকুড় নামাত লাগি মিটার উপরি গেছÑ এ কথাগুলো বলতে বলতে তুমি আবারো বসে পড়লে। আমরা বসে আছি ঠিক আমাদের সেই আগের দিনগুলোর মতো। আজকেও তোমার মা একবার মাত্র এ ঘরে এসেছিলেনÑ তাও আমি যখন প্রথম ঘরে ঢুকে চৌকিতে বসেছিÑ তিনি আসতেই আমি জিজ্ঞেস করলামÑ মামী, ভালো আছেন? মামা কোত গেছ? তিনিও বেশ দ্রুত আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে চলে গেলেন। তাকে অথবা মামাকে দেখলে আগে আমার ভীষণ ভয় হতো। কিন্তু আজ কেন জানি আর ভয় লাগল না। নানা নেই! তিনি থাকতে আমি এদিকে আসতাম। তবে তিনি চলে যাওয়ার পরও আমি এ পাড়ায় অনেক এসেছিÑ তা শুধু তোমাকে এক পলক দেখার জন্য। বলতে গেলে স্কুলের সময়টুকু ছাড়া আমি সারা দিন এ পাড়াতেই থাকতাম। আমার স্কুলজীবনের বন্ধুগুলোর তালিকায় তোমার পাড়ার ছেলেরাই যে বেশি ছিলÑ তা বোধহয় এতক্ষণে আর বলার দরকার নেই। আমার এ পাড়াতে আসা নিয়ে নানীর একটা বড় মাথাব্যথার কারণ হলোÑ কখনো তিনি ডেকে আমাকে সহজে তার ঘরে নিয়ে যেতে পারেননি। অথচ তোমার মা ভুল করেও একবার ডাকলেই হয়Ñ আমি তার বাড়িতে গিয়ে হাজির এবং যা খেতে দেয় তাই নিয়ে বসে পড়ি। এ কারণে আমার নানী এবং মামীদের বড় একটা হিংসার শিকার হতেন তিনি। তাদের অভিযোগÑ আপন মামা-মামীরা তো কেউ না! চাচাতো মামীই সব। তারা হয়তো কেউই আন্দাজ করতে পারেননি যে, আমি তোমার মায়ের কারণে তোমাদের বাড়িতে যাই না। তবে তোমার মায়ের সেই অকৃত্রিম ভালোবাসা অস্বীকার করার মতো ক্ষমতা আমার নেইÑ কোনো দিন যদি মহাপ্রলয় আসেÑ সেদিনও আমার সেই ক্ষমতা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কথায় কথায় তুমিও ঘর ছেড়ে বাইরের উঠোন পর্যন্ত এলেÑ সেখানেই দেখা হলো তোমার মায়ের সাথেÑ ওখানে থেকেই আবারো ঘরের ভেতরে বসার জন্য তিনি বারবার অনুরোধ করতে লাগলেন। বারবার তিনি একটা কথাই বলছিলেনÑ তুমি আর এদিক আসই না। আমারখে এখিবারে পর করি দিছো? আমি কোনোভাবেই তাঁর কথা রাখতে পারলাম না। তিনি জানেন, আমি কী কারণে আজ এতদিন পরে এখানে এসেছিÑ তারপরও তাঁর এমন নির্মল ব্যবহারেÑ শ্রদ্ধায় আমার মন গলে গেল। আজ যখন আমি ফিরে আসছি, আমার শুধু তাঁর কথাই মনে পড়ছিল। শুধু একটি কথাÑ হ্যাঁ সত্যিই তিনি মা। তোমার বাড়ি-শিলাদের বাড়ির সীমানাও পার হয়ে এসেছিÑ আমি তোমাকে ফিরে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিলাম। এমন সময় তোমার শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার প্রশ্ন এলে আমি বললামÑ কিন্তু ঠিকানা? তুমি সামান্য একটু আমার দিকে হেলে এসে আস্তে করে বললে, পরশু স্কুলে আসেন।
আমি বাড়িতে ফিরে আসলাম অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ আগেই। তবুও আব্বার মুখ ভার, আমি ভয়ে ভয়ে কিছু বললাম না। একবার ঘরে ঢুকে আবার বেরিয়ে যাচ্ছিÑ সে সময় আব্বা ডেকে বললেনÑ খা ল্যাও। আমি বারান্দা পেরিয়ে ঘরে ঢুকে খেতে বসলামÑ স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার উদ্দেশ্যে। আজ অনেকদিন পর আব্বা আমাকে জমিজমা, ফলফসলাদির দিকে লক্ষ্য রাখার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে অনেক কথা বললেন। গত দেড়-দু’বছরে আব্বা আমাকে এগুলো বলার সুযোগ পাননি।
মা বোধহয় ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন, একদিন তোমার ওপাড়ায় যাওয়ার ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল। আজকের ঘটনাও কি মা জেনে গেছে? নাকি আমি এমনি এমনি ভয় পাচ্ছি? গতকাল দুপুরের পর থেকে ফয়সাল, মানিক, আহসান এমন অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেÑ তোর মাথার চুল কী হলো? আবার কেউ বলল, না একেবারেই ভালো লাগছে না, রোগা রোগা ভাব, বড় চুলই ভালো ছিল। কী ব্যাপার বল তো বাবরি চুল থেকে একদম আর্মি কাটিং...। এমনকি সেলুনে কাচি ধরার পরও রেবতি দা বলল, কী দাদা সত্যিই ক্যাটি ফ্যালব? ভালো লাগবেন? কাউকেই কারো কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিইনি হেসে হেসে বলেছি না এমনি। কিন্তু তোমাকে মিথ্যা বলব না। রানু তুমি একটু পেছনে ফিরে দেখত মনে করতে পারো কি না কেমন ছিলাম আমি আমার স্কুল জীবনে, আজ তোমার মনে নাও পড়তে পারে।
আজ স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠান। একঝাঁক ছেলেমেয়ে আজ স্কুল থেকে বিদায় নিচ্ছে, এই তো কদিন আগে এ রকমই মেহগনির পাতা ঝরা এমনি এক সকালে তারা এই স্কুলে এসেছিল। আজ তাদের যাওয়ার সময় হয়েছে। তবে এই যাওয়া আনন্দের! আমার চলে যাওয়ার দৃশ্যÑ তোমার চলে যাওয়ার দৃশ্যটি দু’চোখের পাতায় ভেসে আসছিল। তখন আমিও হারিয়ে যাচ্ছিলাম ওদের ভেতরে, ওই স্বেচ্ছাসেবকদের ভেতরে। তবে পাথুরে পৃথিবীর হিসেবে আমি বিদায়ী ছাত্র কিংবা স্বেচ্ছাসেবকদেরও কেউ না, হতেও পারব নাÑ আজ সে বয়স আর নেই। কিন্তু যে কারণেই হোক তুমি আবার স্কুলে এসেছ। তাই পুরোদস্তুর সেই স্কুল ড্রেসে না পারি তবুও যতটুকু পারা যায়Ñ একটি দিন অন্তত সেই আমি হতে চাইলাম। স্কুলও আজ রোজার ঈদে যেমন পোশাকে সাজে ঠিক সেই পোশাকে সেজেছে। যুঁথি আর তুমি ঝাল মুড়ির দোকানের দিকে চলে যাচ্ছো ঐ ঝাল মুড়ির দোকান নিয়েও স্মৃতির খাতায় বেশ ক’টি পাতা আছে। থাক সেই পাতাগুলো আর উল্টাব না। এখন তোমাকে ডাকা দরকার। ডাকার উদ্দেশ্য নিয়ে আমি ঐ কাঁঠাল তলা পর্যন্ত এগিয়েছি তখনই দেখলাম তুমি ফিরে এলে। ভারি ভারি বক্তব্যের পালা শেষ। এখন নাচ, গান, কৌতুক, কবিতা আবৃত্তি নানা ধরনের অনুষ্ঠানে ভরা পদ্মার মতো পরিপূর্ণ আজ স্কুলের মঞ্চ। ইশারায় তুমি আমাকে মঞ্চের কাছাকাছি একটি জায়গায় ডাকলে আমিও ইশারায় বললাম না ঐ নতুন বিল্ডিংগুলোর ওপাশে এসো। তুমি কোনো প্রশ্ন না করে একান্ত অধীনস্থের মতো আমাকে অনুসরণ করলে।
গতরাতে স্বপ্নেও যা আমি কল্পনা করতে পারিনি এমন অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে যাচ্ছে সব ঘটনা। বিয়ের আগে তুমি এই স্কুলে থাকতে আমি কতদিন স্বপ্ন দেখেছি দুজন একসাথে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাবো, বাদাম খাবো... কিন্তু কখনোই কোনো কিছুই সম্ভব হয়নি। আজ আমি এত বেশি আনন্দিত যে আজকেই যদি আমার পরপারের ডাক আসত। তাহলেই আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। অনুষ্ঠান শেষ তুমিও চলে যাবে। অনেক কথার ফাঁকে আমি আবারো তোমার ঠিকানা চাইলাম। তুমি বললে, যদি পারেন তো বের করে লিয়েন দেখি তো কেমন দরদ। এই তোমার সাথে আমার শেষ কথা।
পরদিন শুনলাম সেদিন বিকেলেই তুমি চলে গিয়েছিলে। তোমার চলে যাওয়াগুলো সত্যিই অসম্ভব নিষ্ঠুর প্রকৃতির। আমার বুকের প্রত্যেকটি হাঁড়ে হাঁড়ে আমি ব্যথা অনুভব করিÑ গত দু’বছর আগে এমনি এক শুক্রবার বিকেলে তুমি চলে গিয়েছিলে। আমি জানতাম তুমি তোমার নানীর বাড়িতে বেড়াতে গেছোÑ মাঝে মধ্যেই এমন যেতে। আবার ফিরেও আসতে। অথচ সেদিনের পর তুমি আর ফিরে আসোনি। সেই ক্ষত শুকাতে আমার সময় লেগে ছিল অনেকদিন। আজো হঠাৎ সামান্য একটু আঘাত লাগলেই সেখানে আবারো জেগে ওঠে পুরনো ব্যথা। সেই ব্যথাগুলোর বয়স বাড়ে; কিন্তু দুর্বল হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২

সকল