২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দিগন্ত সাহিত্য কবিতা

-

রেজাউদ্দিন স্টালিন
ফুটবল খেলা

আমাদের মৃত্যু খেলা শুরু হয় জন্মের আগেই
আমরা খেলি আমাদের করোটির বল হৃদয়ের মাঠের ওপর
খেলোয়াড়রা হলো আমাদের পুত্রকন্যা আর স্বজনের পাঁজর
তারা খেলে প্রতিপক্ষ মেরুদণ্ডদের সঙ্গে

পাঁজরেরা শট নেয় আর মেরুদণ্ডেরা ঠেকায়
মেরুদণ্ডেরা ফাউল করে আর অক্ষিকোটর দেখায় লাল কার্ড
এইভাবে সময় হারিয়ে যায় সময়ের গর্ভে
ফুরিয়ে আসে দর্শক চোয়ালদের উত্তেজনা
কিন্তু কেউ কোনো গোল পায় না।

অতিরিক্ত সময়ের খেলায়
করোটিবল ফেটে বেরিয়ে যায় আমাদের প্রাণের রক্তবায়ু
খেলোয়াড় মেরুদণ্ড আর পাঁজরদের পা ভিজে ওঠে মৃত্যুর হাওয়ায়
আর খেলা অমীমাংসিত থাকে গোলশূন্যভাবে।

আবু জাফর আবদুল্লাহ
অর্ধাঙ্গ হৃদয়

দুঃখই আমার বিশ্বস্ত বন্ধু
কেননা, সুখ আমার থেকে পালিয়ে গেলেও
দুঃখ অনবরত থাকে আমার সঙ্গে।
আসলে মানুষই বিশ্বাস ভঙ্গ করে
রমণীকুল আমাদের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ;
অথচ তারাই দুঃখকে লালন করে
তা উপহার দেন আমাদের পরমানন্দে;
তারা সব কিছু বোঝে,
শুধু বোঝে না অর্ধাঙ্গ হৃদয়।

ক্যামেলিয়া আহমেদ
বিমর্ষ নারী

শৈশবে বুঝিনি, কৈশোর ছিল না
প্রাকযৌবনা মাতৃত্ব ভর করে শরীরে!

দু’হাতে কাঁকন পরায়নি কেউ
কানে ঝুমকোও দেয়নি, দেয়নি ফুলের মালা
তবু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ শিল্পে শিল্পিত,
আমি একজন নারী

নিতে হবে মাতৃত্বের স্বাদ
গর্ভে ধারণ করতে হবে সন্তান
স্বার্থক করতে হবে নারীত্বকে
এ এক নির্মম দায়ভার!

যার কখনো বধূ সাজা হয়নি, হয়নি বাসরঘর
তাকেও প্রমাণ দিতে হয় নারীত্বের!

বধূ না হয়ে মা হওয়ার যে বিকৃত আনন্দ
সে জোয়ারে ভাসছি ত্রিশ বছর
মর্মে মর্মে অনুভব করেছি দিনগুলি
সে অনুভূতি হতে মুক্ত হতে পারিনি আজো
পারিনি দায়বদ্ধতা এড়াতে
সুযোগ হয়নি নিজেকে ভালোবাসবার!

নারীকে নিয়ে যা চাওয়া-পাওয়া
ষোলো আনাই দিয়েছি তার
হারিয়েছি শুধু নিজ সত্তা
আজ আমি রিক্ত, বিধ্বস্ত জরাজীর্ণ এক মানবী
বারবার শুধু মনে হয়
আমি একজন নারী, শুধুই নারী
বিমর্ষ নারী!

শাহীন আরা আনওয়ারী
স্বপ্নজাল

মহাকালের পথিক বলেই স্মৃতিময়
পাখির পাখায় ওড়াতে চাই
বর্ণিল স্বপ্নের সংসারলিপি
রুপালি অক্ষরে লিখতে চাই মহাকালের পাতায়।
বৃক্ষের মৌনতার মিছিলেও গেয়ে যায় স্বপ্নরা
স্বপ্ন আমাদের সাথী
যা কেবল বয়ে আনতে পারে নির্ভেজাল সুখ
নির্মাণ করতে পারে গতিময় জীবন
যেখানে দুঃখের পোড়খাওয়া হৃদয়গুলো
ধুঁকে ধুঁকে কাঁদে না।
যেখানে অনাহার অবিচারের কৃষ্ণকালো শাসন
এবং গোখরা সাপগুলো নিশ্চিহ্ন হবে
আর মৃত্যুপ্রহরের অপেক্ষা নয়।
হিমালয়ের শীর্ষচূড়ায়
উড়–ক জীবনের উদ্যমী সাহসী পতাকা
বেঁচে উঠুক মানবতার
সাফল্যশিখা
হাসতে শিখুক জীবন
পাতার মতো কোরোফিলের আনন্দ
আসুক জীবনে। নির্ভর শুধু স্রষ্টায়।

রুহুল আমিন রোদ্দুর
কিছু মানুষ কিছু বন্ধন

কিছু কিছু বন্ধন থাকে তা যতই ভঙ্গুর হোক না কেন!
মনকে প্রতিনিয়ত আন্দোলিত ও শিহরিত করে তোলে
আঁকড়ে ধরে কাছে রাখতে।
কিছু কিছু সম্পর্ক থাকে যা রক্তের বাঁধনে বাঁধা না পড়লেও
রিক্তের বাঁধনে আত্মার সাথে বাঁধা পড়ে যায় আজীবন।
কিছু দূরত্ব থাকে, সম্পর্কের মাঝে যত আলোকবর্ষ
দূরত্ব সৃষ্টি করুক না কেন
কাছে আসার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় প্রবলভাবে।

নির্ঘুম রাতের কতগুলো বোবাকান্না থাকে;
যা শুধু দু-একটি হৃদয়ের অ্যান্টিনায় আটকে পড়ে।
কিছু কিছু মানুষ জন্মায় শুধুই দুঃখকে নিবিড় পরিচর্যায় পালন করতে।
দু-একটা মানুষ লাগেই;
যার কাছে নীরবে কেঁদে কষ্ট-ব্যথাগুলো জমা রাখা যায়।
আর,
একটা দরজা তো লাগেই; গৃহত্যাগী ভোঁ ভোঁ ঘোরা
মানুষটাকে গৃহে আটকাতে।

নির্জন রাতে নিশ্চুপ বুকে তারা সমান কিছু হাহাকার থাকে
যা মন আকাশে সারাণ জ্বলে পুড়ে য়ে পড়ে সকলের অগোচরে।
দু-চারটা মানুষ তো থাকতেই হয়
অশ্রু জলে না হোক; কাঁধে নিয়ে মহাকালের কাছে সমর্পিত করবার।

সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা
হয়নি এখনো দেখা

জীবনের পরতে পরতে গভীর আবেগের শ্রাবণ ছিলো জৌলুসে ভরা। তখন যা ছিলো হাতের সীমানায় তাই আজ হন্যে হয়ে খুঁজি বিশ্ব বিধাতার কাছে।
দিনান্তে চেয়ে দেখি সব পাখি ফিরেনি আপন ডেরায়। তবু পথ চেয়ে থাকা হয়! কতো পূর্ণিমা গেলো পার হয়ে!
কতো দূরত্ব সঙ্কীর্ণ হয়ে এলো এক নিমিষে হৃদয়ের গহীন চিলেকোঠায়। এখনো নতুন কিছু দেখি আর নতুনভাবে বুঝি নিজের মতো করে।
পাশে তাকিয়ে দেখি যা কখনো আমার ভাবা হয়নি তাই আজ আছে খুব কাছে। একটু চমকে উঠি! এমন সময় চুপি চুপি এই ুদ্র প্রাণ ডেকে বলে,
তোমার জীবনে আরো কত কী যে হয়নি এখনো দেখা...!

রফিক হাসান
আগুন বৃত্তান্ত

আগুনের সাথে বন্ধুত্ব আমার বহুদিনের
জন্মের পর থেকে শরীরময় জ্বলে ধিকিধিকি
আগুন, কখনো উর্ধ্বমূখী তাপমাপার কাঁটা
শিরা-উপশিরা রক্ত-মাংসে চলমান স্ফুলিঙ্গ

নিক্ষেপিত নিজের গড়া নরককুণ্ডে, আগুন
আমাকে খায় না, চারপাশে জ্বলে লেলিহান শিখা
বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখি অগ্নিরূপ, কী অপূর্ব!

পথে পথে আজও ঘুরে বেড়ায় নব্য নমরূদ
ছিটকে পড়ে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান
লুট হয় হাজার বছরে গড়া সোনার বাগদাদ
শরবিদ্ধ দেহ মুখ লুকায় প্রান্তর কিনারে
কেউ গোপনে শত্রুকে ফেলে দেয় ইটভাটায়
দীর্ঘ হয় গুমের তালিকা, ব্যর্থ হলে শত্রু
নিধন কৌশল, আগুন হয় সুশীতল বাতাস


আরো সংবাদ



premium cement