১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব ই আ লো চ না

পাথর সময়ে জীবনের জয়গান

-

যেসব তরুণ কথাশিল্পী এখন পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা নামে গল্পকে জটিল করতে নারাজ তাদের অন্যতম একজন আসাদুল্লাহ্ মামুন। গেল একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার গল্পগ্রন্থআত্মহননের আত্মহত্যা। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দেশজ পাবলিকেশন। আর খুশির সংবাদ হলো, ছোটগল্প শাখায় আত্মহননের আত্মহত্যা গ্রন্থটি লাভ করেছে দেশজ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার। আর এই পুরস্কার প্রাপ্তি থেকে অনুমান করা যায় যে মামুন আমাদের সেসব তরুণ লেখকের একজন যাদের গল্পমালা আমাদের আগামী দিনের কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই বলে পাঠক ভাববেন না এটিই তার প্রথম গ্রন্থ। এর আগে প্রকাশ হয়েছে তার বেশ কিছ কিশোর রচনা : ‘টাইম মেশিনে ছুটলো ছাগল’, ‘নিজের ফাঁদে শেয়াল’( দ্বিতীয় মুদ্রণ, ২০১৭) ও ‘পলাশিতে পলায়ন’ (২০১৮)।
আত্মহননের আত্মহত্যা গ্রন্থটিতে সর্বসাকুল্যে এগারোটি ছোটগল্প রয়েছে। গল্পগুলোর নাম: ‘বদলায় অথবা বদলায় না’, ‘আমরা সব কেমন হয়ে যাচ্ছি’, ‘আত্মহননের আত্মহত্যা’, ‘বিশ্বাস ও বৃষ্টি’, ‘কবিয়াল’, ‘কোথায় পাবো তারে’, ‘হাতের কাছে ভরা কলস’, ‘সে ও আমরা’, ‘সুপ্তসত্তা’ ও ‘রূপ-রূপকথা’। এই গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত গল্পগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত, সাধারণ জীবন-যাপনের ঘটনা নিয়ে রচিত গল্প। এর মধ্যে আছে ‘বদলায় অথবা বদলায় না’, ‘আমরা সব কেমন হয়ে যাচ্ছি’, ‘আত্মহননের আত্মহত্যা’, ‘বিশ্বাস ও বৃষ্টি’। দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক ঘটনাবস্তুর মিশেল বা দেশ ভাগের প্রসঙ্গ : ‘রায়ট রায়ট’, ‘আমরা সব কেমন হয়ে যাচ্ছি’, ‘কোথায় পাবো তারে’ (গল্পটিতে আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন লেখক।) তৃতীয়ত, কবি-জীবনের আলেখ্য হলো ‘কবিয়াল’ গল্পটি, যা পাঠকদের রবীন্দ্রনাথের যুগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নিয়ে যায় কবি-জীবনের গৌরবময় দিনগুলোতে। এ ছাড়া ভৌতিক বা অশরীরী বা অতিপ্রাকৃতিক গল্প বলা যায় ‘রূপ-রূপকথা’কে। যা হোক, এই ভাগগুলোই যে একেবারে সর্বসম্মত ঠিক তেমনটি দাবি করছি না। তবে মোটামুটিভাবে এই কয়েকটি দাগে ভাগ করা যায়। তার গল্পের প্রেক্ষাপটে আছে যেমন নাগরিক জীবনব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি, তেমনি পাশাপাশি গ্রামীণ জীবনের চালচিত্রও পাওয়া যায়। নগরজীবনে বেকারত্বের অভিশাপে মনুষ্য জীবনের যে আবস্থা তার চিত্র পাওয়া ‘আত্মহননের আত্মহত্যা’ গল্পে। তবে গল্পটি শেষ হয় আশাবাদ নিয়ে। লেখক যে জীবনকে খুব ভালোবাসেন, আত্মহত্যাকে কাপুরুষোচিত শৌচিত কাজ বলে মনে করেন তাই দেখি : ‘মনে হলো এখনো বেঁচে আছি! নুরু স্যুপ খাচ্ছে, সে বেঁচে আছে। অনেক দিন পর নিজের অস্তিত্বকে যেন আবার দেখতে পাচ্ছি। আমার বস্তিবাসী আশা কি সামান্য হলেও জাতে উঠবে? মনে হলো, আমাকে দ্রুত ফজল ভাইয়ের কাছে যেতে হবে। চাকরিটা খুব দরকার। কী আশ্চর্য, অসংখ্য ব্যর্থতার ঘায়ে সামান্য আশা সহজে মলম লাগিয়ে দিতে পারে!’ (আত্মহননের আত্মহত্যা)
তবে গল্পটির মধ্যে যে লাইনটি আলাদা ব্যঞ্জনা তৈরি করে তা হলো :
‘এই পাথর সময় আমাকে বিদায় দিলো, তোমরা কেন ফিরাবে আমায়।’ (আত্মহননের আত্মহত্যা)
সত্যি এক পাথর সময় যেন আমাদের সামনে। চার পাশে বেকারত্বে অভিশাপ বহন করছি আমরা। যে হারে কর্মমুখী মানুষ তৈরি হচ্ছে, প্রতি বছর উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যুবকশ্রেণী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বের হচ্ছে। সেই তুলনায় চাকরির অভাব। আর দুর্নীতির কবলে পড়ে নাজুক অবস্থা চাকরির বাজারের। সেখানে নুরুর মতো একজন যুবক আর কী-ই বা করতে পারে?
তবে জীবনের জয়গান কিন্তু মামুনের গল্পে ছড়িয়ে আছে। মামুনের গল্প পাঠককে দূরে সরিয়ে না দিয়ে কাছে টেনে নেয়। আর এটাই তার গল্পের সবচেয়ে বড় সফলতা বলতেই হয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল