২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্বামী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন স্ত্রী

স্ত্রী বিউটি বেগমকে (৪০) - ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুরের টঙ্গীতে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত স্ত্রী বিউটি বেগম (৪০) বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুরের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন এ তথ্য জানান।

ওই কর্মকর্তা জানান, ৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানার হিমারদীঘি, দত্তপাড়ায় জনৈক কুদ্দুসের বাড়ির ভাড়াটিয়া সাইফুল ইসলামের ভাড়াকৃত কক্ষ থেকে মো: সাইফুল ইসলামের (৫০) জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

ঘটনার সাথে সাথে পিবিআই গাজীপুর জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে। পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের এর তত্ত্বাবধানে পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সহযোগিতায় আসামি নিহতের স্ত্রী বিউটি বেগমকে (৪০) টঙ্গী দত্তপাড়া থেকে ৯ জুলাই সকালে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামি বিউটি বেগম গাজীপুর আদালতে আদালতে ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

মামলাল তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো জানান, আসামি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা করে জানান তিনি টঙ্গী কোকাকোলা ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন এবং স্বামী সাইফুল ইসলাম টঙ্গী এলাকায় রাস্তায় রাস্তায় পান সিগারেট বিক্রি করএতন। তার স্বামী মানসিকভাবে একটু অসুস্থ ছিল। গত দুই-আড়াই বছর ধরে তিনি আসামির চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করে আসছিলেন। যে কোনো পুরুষ মানুষকে জড়িয়ে তার সম্পর্কে খারাপ কথা বলত। সংসার খরচ ঠিকমত দিত না। ঘটনার দিন ৮ জুলাই সকাল বেলা বিউটি বেগম ঘুম থেকে উঠে ভাত রান্না করে তার স্বামী সন্তানদের খাইয়ে ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার কিছুক্ষন পর তিনি অসুস্থ বোধ করায় সকাল অনুমান ৯টার দিকে ছুটি নিয়ে বাসায় এসে দেখেন তার স্বামী সাইফুল ইসলাম খাটে ঘুমাচ্ছে।

তাকে দেখে স্বামী জিজ্ঞেস করেন, চলে আসলি কেন? তিনি তার অসুস্থতার কথা জানান। আসামি বিউটি বেগম ঘরের মেঝেতে ওড়না বিছিয়ে শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষন পর তার স্বামী ঘরের দরজা লাগিয়ে তার কাছে এসে তার শরীরে হাত দেয় ও শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়। এরপর তার স্বামী তাকে বলেন, তোর চুল ভেজা কেন? কয়জন পুরুষের সাথে আকাম করে আসছিস? এ বলে তার গলায় নখ দিয়ে খামচি দেয়, দুহাতে গলা চেপে ধরে। বিউটি বেগম তার হাত থেকে ছুটার চেষ্টা করেন। ধাস্তাধস্তির একর্যায়ে বিউটি বেগম অজ্ঞান হয়ে যান।

যখন বিউটি বেগমের জ্ঞান ফিরে দেখে তার স্বামী তার পাশে মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে। তখন তার খুব রাগ হয় এবং তার দীর্ঘদিনের শরীরিক ও মানসিক নির্যাতনের জন্য সৃষ্ট ক্ষোভে সকাল ১০টার দিকে ঘরে থাকা তরকারী কাটার ধারালো চাকু দিয়ে বিউটি বেগম তার ঘুমন্ত স্বামীকে জবাই করেন। স্বামীর শরীরের অনেক রক্ত দেখে তিনি পুণরায় জ্ঞান হারান। তার ছোট মেয়ে সানজিদা (১০) স্কুল হতে ফিরে এসে ঘরের দরজা বন্ধ পেয়ে সে নিচে খেলতে যায়।

নিচ তলায় থাকা কালে সে তাদের রুম হতে গরু জবাই করার মত গোংড়ানোর শব্দ পেয়ে পুনরায় রুমের দরজায় চলে এসে দরজা ধাক্কায়। তার চিৎকারে আশপাশের  লোকজন দরজায় ধাক্কা ধাক্কি করার অনেকক্ষণ পর আসামি বিউটি বেগমের জ্ঞান ফিরলে ভিতর হতে সে ঘরের দরজা খুলে দেন। তখন উপস্থিত লোকজন সাইফুল ইসলামকে রক্তাক্ত জবাই করা মৃত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন এবং মৃতদেহের পাশে একটি রক্ত মাখা ছুরি দেখতে পান।

আসামি বিউটি বেগমের চুলে ও পরনের কাপড়ে রক্ত লেগে ছিল, তার গলা ও গালে নখের আচড়ের দাগ দেখতে পায়। তারপর আসামি বিউটি বেগম সে রক্ত মাখা কাপড় চোপড় ধুয়ে গোসল করে তার মেয়ে শারমিনের বাসায় গিয়ে ঘুমায়।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, মামলাটি তদন্তাধীন। ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement