২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লোহার খাঁচায় এক ছেলের মৃত্যু, আরেকজনকে উদ্ধার

লোহার খাঁচায় এক ছেলের মৃত্যু, আরেকজনকে উদ্ধার - ছবি : অন্য দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাবা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে যুবক দুই ছেলেকে ঘরের ভিতর লোহার খাচায় বন্দি রেখে ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। দিনের পর দিন খাবার না দিয়ে মারধরে বৃহস্পতিবার রাতে এক ছেলে মারা গেছে।
এসময় আরেক ছেলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়। এরপর পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে আরেকজনকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করে। এঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করেনি।

বৃহস্পতিবার রাতে ফতুল্লার দক্ষিণ রসুলপুর এলাকায় হাবিবুল্লাহ ক্যাশিয়ারের বাড়িতে এঘটনা ঘটে।

হাবিবুল্লাহর বড় ছেলে নিহত হেমায়েত হোসেন সুমন (৩৫) এবং উদ্ধার করা হয় দ্বিতীয় ছেলে সাফায়েত হোসেন রাজুকে। হাবিবুল্লাহর দাবি, তার ওই দুই ছেলে মানসিক রোগী। ঘরে বন্দি রেখে চিকিৎসা করানো হয়।

দক্ষিণ রসুলপুর এলাকায় তার পৃথক তিনটি টিন সেড বিল্ডিং বাড়ি রয়েছে। এরমধ্যে একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। দীর্ঘদিন তিনি কবি কাজী নজরুল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করেছেন। সম্প্রতি তিনি সেখান থেকে অবসরে আসেন।

উদ্ধার হওয়া ছেলে রাজুর দাবি, তিনি নোয়াখালী জেলার রামনগর কেএমসি হাই স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার মা মোহসেনা বেগম ইন্তেকাল করেন। এরপর তার লেখাপড়া বাদ দিয়েএ তাকে ফতুল্লায় নিয়ে আসেন বাবা হাবিবুল্লাহ। এর কিছুদিন পর তার ছোট খালা কহিনুর বেগমকে বিয়ে করেন বাবা হাবিবুল্লাহ। কহিনুর বেগমও কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেন। পরে আরেকজনকে বিয়ে করেন। তবে ওই নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করে চলে যান। তারপর এক বছর আগে হনুফা বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তাদের দুই ভাই সুমন ও রাজুর উপর অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়। দুই ভাইকে দইটি রুমে এক বছর যাবত তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। কখনো খাবার দেয়া হয় আবার কখনো লাঠি দিয়ে বাবা ও সৎ মা মারধর করে।

রাজু আরো জানান, কয়েক দিন আগে রাতে সুমনকে অনেক মারধর করে। এরপর সারা রাত কান্নাকাটি করেছে। তখন আমি অনেক চিৎকার করে আশপাশের লোকজনদের ডাকা ডাকি করেছি কিন্তু আমার বাবা ও সৎ মায়ের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি ও আমার ভাই পাগল না। আমার বাবা যে জমি তার দাবি করেন, ওই জমির অর্ধেক মালিক আমার মা মোহসেনা বেগম। এই জমি একাই তার বাবা ও সৎ আত্মসাৎ করার জন্য তাদের দুই ভাইকে পাগল আখ্যা দিয়ে ঘরে আটক রেখে নির্যাতন করতেন। তার বড় ভাই সুমন নির্যাতনেই মারা গেছেন বলে রাজুর দাবি।

হাবিবুল্লাহ তার দ্বিতীয় ছেলে রাজুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ৫ জন ছেলে কন্যা সন্তান নেই। দুজন মানসিক রোগী। অপর তিনজনের মধ্যে সেফায়েত হোসেন মোহন, ফাহিম হোসেন শাহিন ও ফাহাদ হোসেন শাকিল লেখাপড়া করে। অসুস্থ দুই ছেলেকে চিকিৎসা করেছি অনেক। বড় ছেলে অসুস্থ হয়েই মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফজলুল হক জানান, নিহতের শরীরের পিছনে পচন ধরেছে। আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহরের জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আরেকজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যামে তার বাবা হাবিবুল্লাহর কাছে রাখা হয়েছে এবং তাকে যেনো আর বন্দি করা না হয় সে বিষয়ে কঠোর ভাবে বলা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement