১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন পালন

আমি একা এতবড় দায়িত্ব নিতে পারছি না : শাওন

হুমায়ূন আহমেদের কবরে মোনাজাত করছেন শাওন - ছবি : নয়া দিগন্ত

হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের ক্যান্সার হাসপাতাল করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি দুর্ভাগ্যবান যে, আমি একা এতবড় দায়িত্ব নিতে পারছি না। এ হাসপাতাল নির্মাণ করতে হলে পরিবারের সবাইকে একমত হয়ে উদ্যোগটা নিতে হবে এবং শুরু করতে হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার।

গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে দুই বাংলার জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ও লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে তার সহধর্মীনী মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ওইসব কথা বলেন।

শাওন বলেন, ক্যান্সার হাসপাতাল আর্থিক কারণে হচ্ছে না- এ বিষয়টা ঠিক না। এ হাসপাতালের উদ্যোগটা নিলে অবশ্যই একটু একটু করে হলেও অর্থের সংকুলান হয়ে যাবে। এখানে উদ্যোগ নেয়াটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। যেটা আমি একা নিতে পারছি না। এখানে পরিবারের সবাইকে একমত হতে হবে।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন তার পরিবার এবং ভক্তরা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাথে পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ূন আহমেদের হাতেগড়া নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন করা হয়। বুধবার সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশ পল্লীতে ভিড় জমায়।

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ূন আহমেদের হতে গড়া নুহাশ পল্লীতে ৭৭১টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভোর পাঁচটার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কবরের পাশে ফাতেহা পাঠ, কবর জিয়ারত ও মোনাজাত করেন। এসময় নুহাশপল্লীর কর্মচারী ও অসংখ্য হুমায়ূন ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে শাওন বলেন, এর জন্য হুমায়ূন আহমেদ যে নুহাশপল্লীতে শায়িত আছেন সেই নুহাশপল্লীর ভিতরেই একটি জায়গা মনে মনে পছন্দ করে রেখেছি। যে জায়গায় হুমায়ূন আহমেদ অনেক হাঁটাহাঁটি করতেন অনেক লম্বা একটা জায়গা স্থান, যেখানে গাছ কাটতে হবে না। আর হুমায়ূন আহমেদের হাতে লাগানো একটি গাছও যেন না কাটতে হয় সে বিষয়টি মাথায় রাখতে চেয়েছি। স্মৃতি জাদুঘরের জন্য জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে এর একটি ডিজাইনও করা হয়েছে। যা তিনি নিজেই করেছেন। তিনি নিজে একজন স্থপতি হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের সমাধির ডিজাইন, স্কুলের ডিজাইনও তিনি করেছেন। আর স্মৃতি জাদুঘরের ডিজাইনও তিনি করে রেখেছেন।

জাদুঘর করার ব্যাপারে শাওন বলেন, পরিবারের সবার সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছি। বিষয়টি হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সবাইকে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা সম্মতি পাব এবং হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ শুরু হবে।

শাওন আরো জানান, শিক্ষা বিস্তারের ব্যাপারে হুমায়ূন আহমেদের একটা প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। ওনার গ্রামে কোন মাধ্যমিক স্কুল ছিল না। সে হিসেবে তিনি তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া কুতুবপুরে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। এ স্কুলটির নাম শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ। হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিনে সবচেয়ে বড় যে সুখবর সেটা হচ্ছে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ স্কুলটি নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত এ বছর এমপিওভূক্ত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর সাতটি বছর এ স্কুলটি বিভিন্ন ধরণের ক্রান্তিকালের সম্মুখীন হয়েছে। আমার সাধ্য খুবই ছোট, কাঁধও খুব ছোট, এই ছোট কাঁধে যতটুকু সম্ভব দায়িত্ব নেবার চেষ্টা করেছি। হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা তার কাছের মানুষেরা আমার পাশে ছিল, স্কুলের পাশে ছিল।

মরহুম লেখকের কবর জিয়ারত শেষে নুহাশপল্লীতে হোয়াইট হাউসের পাশে স্থাপিত হুমায়ূন আহমেদের ম্যুরালের সামনে আপেল গাছ তলায় দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের ৭১তম জন্মদিনের কেক কাটেন মেহের আফরোজ শাওন। এসময় শতাধিক হুমায়ূনভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরাসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীর বৃষ্টিবিলাসে ভাস্কর আসাদুজ্জামান খানের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চতুর্থ একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী হয়। এতে কাঠ ও বিভিন্ন গাছের শেকড় দিয়ে তৈরী ৭১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ভাস্কর আসাদুজ্জামান খান বলেন, স্যার একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আজ স্যারের ৭১তম জন্মবার্ষিকী। তাই গাছের শেকড় দিয়ে তৈরি ৭১টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভাস্কর্য দিয়ে এই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে তাকে সমাহিত করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement