২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সন্তানকে নেশার জগত থেকে ফেরাতে গিয়ে উল্টো মাদকের মামলায় আসামী বাবা!

- ফাইল ছবি

মাদকের আগ্রাসন থেকে দুই সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে উল্টো মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মিথ্যা মামলায় জেল খাটলেন হত দরিদ্র ইসমাঈল হোসেন (৬০)। শুধু এখানেই শেষ নয়; একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তার জামিনের ব্যবস্থা করা হয়।

সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। মাদকের মামলায় জামিন পেলেও বর্তমানে এনজিওর মামলার প্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ইসমাইল।

ইসমাঈল হোসেন টঙ্গী প্রেসক্লাবে এসে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কেঁদে ফেলেছেন। এসময় তার অসহায় পরিবারটিকে রক্ষার আকুতি জানান সাংবাদিকদের কাছে।

‘আমার ওপর মাদকের আগ্রাসন চলছে; নাকি প্রভাবশালীদের আগ্রাসন চলছে বুঝবার পারছি না’ এমন মন্তব্য করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইসমাঈল জানান, নিজের দুই ছেলেকে নেশার জগত থেকে ফিরিয়ে আনার বহু চেষ্টা করেছেন। একাধিকবার মাদককাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে দিয়েছেন। এমনকি পুলিশের হাতেও তুলে দিয়েছেন।

বহু চেষ্টা সাধনা করে বড় ছেলেকে মাদকের নেশা থেকে ফেরাতে পারলেও এলাকার প্রভাবশালী মাদকের গডফাদার ও পুলিশের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার কারণে অপর সন্তানকে নেশার জগত থেকে ফেরাতে ব্যর্থ হন। এলাকার প্রভাবশালী এক গডফাদার তার ছেলেকে মাদকাসক্ত করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি আরো জানান, মাদকের আগ্রাসন থেকে দুই সন্তান বা নিজের পরিবারকে রক্ষার্থে এলাকার মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন। তাতেও কোন ফল হয়নি। অবশেষে নিজের বাড়ির পাশে হাতেনাতে মাদক কারবারিদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে গিয়ে বেপত্তি ডেকে আনেন।

গত ২৮-০৭-২০১৮ ইং তারিখ নিজের বাড়ির পাশের রাস্তায় ৫ যুবককে মাদক বিক্রি করতে দেখে তাদেরকে আটক করার চেষ্টা করেন। এসময় এলাকার প্রভাবশালী এক মাদক বিক্রেতা (সাবেক ইউপি মেম্বারের ছেলে) উল্টো ইসমাইলকে ডিবি পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

পরে ডিবি পুলিশের এসআই এস.এম শরীফুল ইসলাম প্রভাবশালী মাদক কারবারির সাথে যোগসাজশ করে ইসমাইলকে গাজীপুরের বাইমাইল এলাকায় একটি পাম্পের সামনে থেকে আটক দেখিয়ে ১০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জয়দেবপুর থানায় মামলা নং-২৩১(৭)১৮ দেন।

এ মামলায় তার সাথে আরো দুই যুবককে ২০ পিস করে ইয়াবাসহ আটক দেখানো হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মুদিদোকানী ইসমাঈল জেলে আটক থাকায় তার পরিবারের সদস্যরা অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতন জীবন যাপন করেন।

ইসমাইলকে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করতে তার স্ত্রী একটি এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নেন। জেলখানায় ইসমাইলের সাথে দেখা করে তার ব্যাংকের একটি অলিখিত চেকে স্বাক্ষর এনে ওই এনজিওতে জামানত হিসেবে জমা রাখা হয়। এভাবে ঋণের টাকা খরচ করে গত বছর ২৬ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে ইসমাইলের জামিনের ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে চেক ডিসঅনার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা বের হয়। বর্তমানে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ইসমাইলের প্রতিবেশীরা জানান, ইসমাইল কখনো মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল না। তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে মিথ্যা মাদকের মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিলে শুধু অভিভাবকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না; গোটা সমাজ ধ্বংস হবে বলেও মন্তব্য করেন ইসমাইলের প্রতিবেশীরা।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইসমাইলকে কখনো মাদক ব্যবসা করতে দেখা যায়নি। তবে তার দুই ছেলে মাদকাসক্ত ছিল। বড় ছেলে ইতোমধ্যে ভাল হলেও ছোট ছেলে এখনো নেশা করে। তবে তারা মাদক ব্যবসায় জড়িত না।

এব্যাপারে গাজীপুর ডিবির সাবেক আলোচিত এসআই (বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত) ও উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.এম শরীফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রায় এক বছরেরও আগের ঘটনা তাই সঠিক মনে পড়ছে না। তবে ১০০ পিস ইয়াবা সহজলভ্য নয়। যেহেতু ১০০ পিসসহ গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেহেতু সে কোন ভাল লোক না।


আরো সংবাদ



premium cement