১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর মার্কসিট জাল, অতঃপর...

মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর মার্কসিট জাল, অতঃপর... - নয়া দিগন্ত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে অভিভাবকের বকুনি থেকে রক্ষা পেতে কম নম্বর পাওয়া ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের স্থানীয় একটি কম্পিউটার দোকান থেকে জাল মার্কসিট তৈরির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি অভিভাবকের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় ওই ছাত্র বাড়ী থেকে পালিয়ে ফেরিতে গিয়ে ওঠে। ফেরীর নামাজ রুমে দিন-রাত কেটে যায় তার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চর মৌকুড়ী গ্রামের বাসিন্দা ওমান প্রবাসী জিয়াউল হকের ছেলে তুর্য হোসেন সোয়াত (১৩) স্থানীয় লোটাস কলেজিয়েট স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।

স্কুলের অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষায় সে ৯ বিষয়ে ৭৫০ নম্বরের মধ্যে ৩৭৬ নম্বর পায়। যা তার মা শেফালী খাতুনের মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তুর্য কম নম্বর পাওয়ায় তার মায়ের বকুনি থেকে রক্ষা পেতে তার এক বন্ধুর পরামর্শে স্থানীয় তিথী কম্পিউটার সেন্টার নামে একটি দোকানে যায়। সেখান থেকে দোকানীর সহযোগিতা নিয়ে সে তার নম্বরপত্রের নম্বর পাল্টে ৩৭৬ এর স্থলে ৫৭৬ করে বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরদিন ২১ অক্টোবর সোমবার সকালে তার মাকে জাল নম্বরপত্র দেখালে তিনি জাল নম্বর পত্র টের পেয়ে রেগে যান এবং এ নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলবেন বলে তুর্যকে জানান।

এ অবস্থায় তুর্য ওই দিন স্কুলে না গিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে চলে যায়। পরে একটি ফেরীতে উঠে নামাজের স্থানে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে। ফেরীতেই তার সারাদিন-সারারাত কেটে যায়। এর মধ্যে তাকে না পেয়ে অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শহরে মাইকিং, ফেসবুকে প্রচারণা ছাড়াও থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার প্রতিবেশী এক মহিলা ঢাকা থেকে বাড়ী ফেরার পথে তুর্যকে ফেরীতে কান্না-কাটি করতে দেখে তার কাছে এগিয়ে যায়। তুর্যকে তিনি চিনতে পেরে বাড়ীতে নিয়ে তার অভিভাবকদের কাছে পৌছে দেন।

এ বিষয়ে তিথি কম্পিউটার সেন্টারের মালিক শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার দোকানের এক কর্মচারী ওই জাল মার্কসিটটি তৈরি করেছিল। আমি জানার পর তাকে দোকান থেকে বের করে দিয়েছি।

তুর্যের মা শেফালী খাতুন জানান, সামান্য বিষয়ে সে (তুর্য) এতোটা ঘাবড়ে গিয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে যাবে তা কখনই ভাবিনি। ছেলের কাছ থেকে ভালো রেজাল্ট আশা করলেও এই নিয়ে তাকে বকাঝকা করেননি বলে তিনি দাবি করেন।

লোটাস কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, তুর্যের উপর অভিভাবকদের বাড়তি প্রত্যাশা ও ওই কম্পিউটার দোকানের কারসাজির কারণে আজ তুর্যের জীবন বিপন্ন হতে চলেছিল।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, কোমলমতি শিশুদের উপর কখনই কোন বিষয়ে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়। তুর্য বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারতো। জাল মার্কসিট তৈরী করার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement