১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলের চার মাসের মাথায় একই স্থানে বাবা নিহত

- ফাইল ছবি

ছেলে মাসুম মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার চার মাসের মাথায় একই স্থানে কাভার্ডভ্যান চাপায় ঘটনাস্থলে বাবা নুরু মিয়া নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে কাঁচপুর ইউনিয়নের ললাটি বাসট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে নিহতের ছেলে মাসুম মিয়া চলতি বছরের ৮ জুন মাসে একই স্থানে একটি ট্রাক চাপায় নিহত হয়।

এ ঘটনায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশন গত ১২ জুন সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই দুর্ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ওই এলাকায় একটি ফুটওভার নির্মাণের দাবি জানানো হয়। ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবির চার মাস পেরিয়ে গেলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। নিহত নুরু মিয়ার লাশ বিকেলে ললাটি এলাকায় জানাযা শেষে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নুরু মিয়ার মৃত্যুতে ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এলাকাবাসী পুনরায় ওই এলাকায় ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের দাবী জানান। তাদের দাবি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ না হলে এভাবেই একের পর এক তাজা প্রাণ ঝড়ে যাবে। ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের দাবি মানা না হলে মহাসড়ক অবরোধসহ কঠিন কর্মসূচীর পালন করবেন এলাকাবাসী।   

জানা যায়, উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের ললাটি গ্রামের মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে নুরু মিয়া মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে অটোরিক্সাযোগে নয়াপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে মদনপুর থেকে বস্তলগামী একটি অজ্ঞাতনামা কাভার্ডভ্যান অটোরিক্সাকে ধাক্কা দেয়। এসময় অটোরিক্সা থেকে নুরু মিয়া রাস্তায় ছিটকে পড়ে যায়। এসময় কাভার্ডভ্যান নুরু মিয়ার উপর দিয়ে চালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই নুরু মিয়া নিহত হন। ঘটনার পর চাপা দেয়া কাভার্ডভ্যানটি দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী নুরু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এদিকে গত ৮ জুন নিহত নুরু মিয়ার ছেলে মাসুম মিয়ার একই স্থানে রাস্তা পারাপারের সময় বেপরোয়া ট্রাক চাপায় নিহত হয়েছেন। ছেলের মৃত্যুর চার মাসের মাথায় বাবার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী। 

এলাকাবাসীর দাবি, কাঁচপুর ইউনিয়নের ললাটি বাসস্ট্যান্ড থেকে বটতলা পর্যন্ত পাঁচশ মিটারের দূরত্বের মধ্যে রাস্তা পার হতে গিয়ে গত ১৫ বছরে এ গ্রামের ১৪জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে মো. দেলোয়ার, জাহিদুল আলম শামীম, মোসাম্মৎ তসিরুন বেগম, মোসাম্মৎ শিউলি আক্তার ও তার দাদা মো. জলিল, মো. মজিবুর রহমান, মো. সিরাজুল হক, মো. মাসুম ও তার বাবা নুরু মিয়া। এছাড়াও এ গ্রামে বেড়াতে এসে আরও দু’নারী ও এ শিশু নিহত হয়।

ললাটি গ্রামের বাসিন্দা ও গজারিয়া কলিমউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মোনতাজউদ্দিন মর্তুজা জানান, সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে বাংলাদেশে মহামারী রূপ নিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইন ও শাস্তির বিধান রাখতে হবে। দোষী চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ থাকলে চালকরা সাবধানে গাড়ি চালাতে বাধ্য হবেন। সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে মামলা দায়েরের বিধানের ব্যবস্থা করা উচিত।

ললাটি গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, ললাটি বাসস্ট্যান্ডে একটি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ফুট ওভার ব্রীজের দাবী মানা না হলে মহাসড়ক অবরোধসহ কঠিন কর্মসূচীতে যাবে গ্রামবাসী।

কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, লালাটি বাস স্ট্যান্ডে সড়ক দূর্ঘটনায় আমাদের গ্রামের ১৫ জনকে হারিয়েছি। এ লাশের মিছিল থামাতে হবে। একটি ফুট ওভার ব্রীজ হলেই তা সম্ভব হবে। জরুরি ভিত্তিতে ললাটি বাস ট্যান্ডে একটি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

নিহত নুরু মিয়ার ভাই মো. হান্নান মিয়া জানান,  ভাতিজা ট্রাক চাপায় মারা যাওয়ার পর আমরা সংবাদ সম্মেলন করে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ঠেকাতে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ দাবী করেছিলাম। দাবীর কোনটাই পুরন হয়নি বরং ভাতিজার মৃত্যুর চার মাসের মাথায় আমার ভাইকেও হারাতে হলো।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফফর হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি আমার যোগদানের আগে ঘটেছে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।


আরো সংবাদ



premium cement