২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যানবাহনের দূষণে অসহনীয় রাজধানী

- প্রতীকী ছবি

রাজধানী ঢাকার জনজীবন বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ দূষণের কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দিনের পর দিন দেশে-বিদেশের খবরে আসছে রাজধানী ঢাকা দূষণের তীর্থভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আর একের পর এক টাইটেল জুটছে ঢাকার কপালে দূষিত আর বসবাসে অয্যোগ্য হিসেবে।

রাজধানী ঢাকা এখন নদী-পানি-শব্দদূষণের পাশাপাশি অযোগ্য হয়ে উঠছে মাত্রাতিরিক্ত যান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের দূষণের কারণে। খোদ পরিবেশ অধিদফতরের সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে গত ২০১৮ সালের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৯৭ দিনই ঢাকা শহরকে গ্রাস করে রেখেছিল দূষিত বাতাস। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১২০-১৬০ দিনই ছিল দূষিত। তবে এখন রাজধানী অপরাপর দূষণের সাথে মাতাত্রিরিক্ত যান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের নগরীকে একটি দূষিত নগরে পরিণত করতে যাচ্ছে।

গবেষণায় জানা গেছে যেসব এলাকা যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল অপেক্ষাকৃত কম, সেসব এলাকায় দূষণের মাত্রার মানও সবচেয়ে কম। যেসব এলাকায় অযান্ত্রিক গাড়ি চলাচল করে সেই এলাকাগুলোতে দূষণের মাত্রা তুলনামূলক কম। অন্য দিকে যেসব এলাকায় যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক উভয় গাড়ি রয়েছে সে এলাকাতে দূষণের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। যেসব এলাকাতে যান্ত্রিক গাড়ি চলাচল করে সেখানে বায়ু ও পরিবেশ দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। গবেষণা থেকে বলা যায়, যেসব এলাকায় যান্ত্রিক গাড়ির পরিমাণ বেশি সেসব এলাকায় বায়ুদূষণের পরিমাণও বেশি।

এসব তথ্য উঠে এসেছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের গবেষণায়। ঢাকার ১২টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তিনি বাতাসে বস্তু কণা (পারটিক্যাল মেটার-পিএম-২) পরিমাপ করে বের করেছেন এর পরিমাণ। এক পিপিএম হচ্ছে একটি চুলের সাত ভাগের একভাগের মতো। অর্থাৎ সূক্ষ্ম এ বস্তু কণা সহজেই একজন মানুষের ফুসফুস ও রক্তে ঢুকে যায়। তিনি তার গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যেসব এলাকায় গাড়ি নেই সেসব এলাকায় পিএম-২.৫ এর মান সবচেয়ে কম (৪০পিএম-২.৫)। যে এলাকাগুলোতে অযান্ত্রিক গাড়ি চলাচল করে সেই এলাকাগুলোতে বস্তু কণা ২.৫ এর পরিমাণ তুলনামূলক কম (৪৬.০পিএম ২.৫)।

অন্য দিকে যেসব এলাকায় যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক উভয় গাড়ি রয়েছে সেসব এলাকাতে পিএম-২.৫ এর পরিমাণ তুলনামূলক একটু বেশি (৮৪.৭ পিএম ২.৫)। যেসব এলাকাতে যান্ত্রিক গাড়ি চলাচল করে সেখানে পিএম ২.৫ এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (১৭২.২ পিএম ২.৫)। তার গবেষণায় উঠে এসেছে যেসব এলাকায় যান্ত্রিক গাড়ির পরিমাণ বেশি সেসব এলাকায় বায়ুদূষণের পরিমাণও বেশি। এ ব্যাপারে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, রাজধানী মেট্রোরেল চালু হলে অনেকাংশে প্রাইভেট কার চলাচল কমে যাবে। তা ছাড়া গণপরিবহন ও আধুনিক ফুটপাথের ব্যবস্থা করা গেলেও মানুষ হাঁটার সুযোগ পাবে।

রাজধানীতে ২০১৮ সালে এক লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৮টি যানবাহন চলাচলের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। সারা দেশে ২০১৮ সালে চার লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৪ যান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধিত হয়েছে। যার বেশির ভাগই হচ্ছে প্রাইভেটকার। অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, এটি রাজধানী ঢাকার জন্য আড়াইগুণ বেশি।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে মোট ২৬৯ জন ক্যান্সারের কারণে মারা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ফুসফুস ক্যান্সারে (৫৪ জন)। ইডনিসেফের এক গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বে ৩০ কোটি শিশু বায়ু দূষিত অধ্যুষিত এলাকায় বাস করে তাদের মধ্যে ২২ কোটিই দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে। এমনই বাস্তবতায় দেশে পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। ২০০৬ সাল থেকে বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে ধারাবাহিকভাবে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়।

দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার নয়া দিগন্ত বলেন, বাতাসে এ ধরনের দূষণ প্রতিরোধে অবশ্যই যানবাহল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগতভাবে, সামাজিক ও আইনিভাবে বায়ুদূষণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের নিজেদের বায়ুদূষণের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং অন্যদের বায়ুদূষণের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।

অন্য দেশের কথা বিশ্বের যে ২০টি শহরে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি, তাদের মধ্যে ১৬টি চীনের। বায়ুদূষণের ফলে চীনে বছরে ১২ লাখ মানুষ অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। দিল্লিতে এখন জোড়-বেজোড় সংখ্যা দেখে গাড়ি চালানো হচ্ছে, মাঝে মধ্যে গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হচ্ছে। চীনে এগুলো চালু হয়েছে অনেক দিন আগে। এমন বাস্তবতায় আজ বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশকে এখন ব্যবস্থা নিতে হবে দূষণের বিরুদ্ধে, কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিতে হবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে। বর্তমানে আমেরিকাতেও কার্যপ্রণালীর ওপর ভিত্তি করে পৃথক পৃথক অঞ্চল যেমন শিক্ষা, আবাসিক, বাণিজ্যিক শিল্প এলাকা গড়ে তোলার পরিবর্তে সুপরিকল্পিত ভূমির মিশ্র ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement