২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবনে বড় সাধ ছিল পৃথিবী দেখার, এ ইচ্ছা কী পূরণ হবে না?

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ভৈরব শহরের কালীপুর গ্রামে একই পরিবারে ৪ ভাই-বোন জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। দুঃখে কষ্টে জীবন কাটছে তাদের। অন্ধ হওয়ার কারণে তিন বোনের আজও বিয়ে হয়নি। প্রতিবন্ধী এক ভাইয়ের সামান্য আয়ে কোন রকমভাবে জীবন নির্বাহ করছে তিনটি বোন। দুইবেলা রুটি একবেলা ভাত আর ডাল দিয়ে খেয়ে জীবন-যাপন করছে তারা। অর্থের অভাবে কোন দিন চোখের চিকিৎসা পর্যন্ত করতে পারেনি তারা।

এসব দুঃখ আর কষ্টের কাহিনী জানালেন তারা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা হলেন, ভৈরব পৌর শহরের কালিপুর গ্রামের মৃত ওসমান গনির বড় ছেলে মোঃ গোলাম হোসেন (৪৮), মেয়ে রহিমা বেগম (৪২), জায়েদা বেগম (৩৫) ও সাজেদা বেগম (৩০)। তারা আপন ভাইবোন। অন্ধ হওয়ার কারণে তিনবোনের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কেউ কোনদিন আসেনি। একারণে আজও তারা তিনবোনের বিয়ে হয়নি। তবে ভাই গোলাম হোসেন বিয়ে করেছে এবং তার স্ত্রীসহ দুটি ছেলেও রয়েছে বলে জানান তিনি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গোলাম হোসেন জানান, আমরা চার ভাইবোন জন্ম থেকেই অন্ধ। পৃথিবীর কোন কিছুই আমরা দেখতে পাইনি। জন্মের পর শিশুকাল থেকে আমার বয়স ৩০ পর্যন্ত বাবা আমার চোখের চিকিৎসা করেছেন। ঢাকা, চট্রগ্রাম শহরে বড় বড় চোখের ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্ত কাজ হয়নি।

আমার বাবা জীবিত থাকতে ডাক্তাররা বলেছিল, বিদেশে চিকিৎসা করলে আমার চোখ ভাল হতে পারে। কিন্ত আমাদের অর্থ সামর্থ না থাকায় আজও বিদেশে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। আমার জন্মের পর একে একে জন্ম নেয়া তিনটি বোনও জন্মান্ধ। আমি যেহেতু দেশে চোখের চিকিৎসায় ভাল হয়নি, তাই বাবা বোনদেরকে কোনদিন চোখের চিকিৎসা করেনি।

তিনি জানান, অনেক দুঃখ-কষ্ট নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে আমাদের। তিনি বলেন, ভৈরব উপজেলা সমাজ কল্যাণ অফিস থেকে প্রতিবন্ধী অন্ধ হিসেবে তিন বোন তিন মাস পর পর ২ হাজার ১০০ টাকা করে সরকারি ভাতা পায় কিন্ত আমি ভাতা পাইনা। কিন্ত এই টাকা দিয়েতো বোনদের সংসার চলেনা।

জন্মান্ধ জায়েদা বেগম বলেন, আমরা মনে হয় পাপী। তা না হলে আল্লাহ আমাদের ৪ ভাইবোনকেই অন্ধ করে জন্ম দিলেন কেন? চলতে পারিনা, খেতে পারিনা, ভাল কাপড়ও নেই আমাদের। সরকার তিন মাস পর পর ২ হাজার ১০০ টাকা ভাতা দেয় কিন্ত এ টাকায় দুইবেলা রুটিও জুটেনা। প্রতিবন্ধী এক ভাই শ্রমিকের কাজ করে কিছুটা সহযোগীতা করে। সরকার যদি আমাদেরকে চলার মত অর্থ দিয়ে সহযোগীতাসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করত তাহলে উপকৃত হতাম। আর চিকিৎসায় যদি চোখ ভাল হত তবে দুনিয়ার আলো- বাতাসসহ সবই দেখতে পেতাম। এত কষ্ট হতনা আমাদের।

অন্ধ আরেক বোন রহিমা বেগম বলেন, জীবনে বিয়ের স্বাদ পেলাম না। যদি বিয়ে হত তাহলে দুটি সন্তান থাকলে আমাদের সেবাযত্নসহ খাবার যোগারের ব্যবস্থা করত। এলাকার এমপি নেতারা কোনদিন আমাদের খবর নেননি। মাঝেমধ্য মনে হয় বেঁচে থাকাটাই আমাদের বৃথা। সবসময় ভাই-বৌসহ অন্যের সহযোগীতায় চলাফেরা করতে হয়। বছরে দুটি পুরান কাপড় পরেই কোনরকম অনাহারে অর্ধাহারে আজও বেঁচে আছি।

অন্ধ সাজেদা বলেন, এ জীবন বড় কষ্টের জীবন। মাঝেমধ্য মনে হয় মরে যাব। কিন্ত মরার কোন পথ নেই। জীবনে বড় সাধ ছিল পৃথিবীর সবকিছু দেখতে। কিন্ত এ সাধ আশা আকাঙ্খা কোনদিন আমাদের পূরণ হবে বলে মনে হয়না।

অন্ধ গোলাম হোসেন বলেন, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় দয়ালু। তিনি যদি আমাদেরকে সংসার চলার মত অর্থ সহযোগীতা দিয়ে চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন তাহলে চির ঋণী হয়ে থাকতাম। আর চোখ ভাল হলে আমরা পৃথিবীর সবকিছু দেখতে পারতাম।

তিনি এ প্রতিনিধিকে অনুরোধ করেন, তাদের দুঃখ-দূর্দশার খবরটি মিডিয়াই প্রকাশ করলে হয় তো বা সরকারের নজরে আসতে পারে। আর সরকারের নজরে আসলে আমরা হয়তো উপকৃত হতাম।


আরো সংবাদ



premium cement