১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নয়াদিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর দারোগা ও মেম্বারের উদ্যোগে সমঝোতা

সেই বৃদ্ধ বন্দর আলীর দায়িত্ব নিলো সন্তানরা

নয়াদিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর দারোগা ও মেম্বারের উদ্যোগে সমঝোতা - নয়া দিগন্ত

অবশেষে বৃদ্ধ বন্দর আলীর দায়িত্ব নিয়েছে তার সন্তানেরা। নয়াদিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার বিকেলে সোনারগাও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ ও স্থানীয় মেম্বার মোশাররফ হোসেনের উদ্যোগে থানার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে মেম্বারের বাড়িতে সালিশের আয়োজন করা হয়। সেখানে বৃদ্ধ বন্দর আলীকে আর কোন কষ্ট দিবে না এবং ভরনপোষণ ঠিকমত করবে এমন মুচলেকা দেন তার সন্তানরা।

স্থানীয় মেম্বার মোশাররফ হোসেন জানান, বৃদ্ধ বন্দর আলীর মুলত বয়স ১০৮ বছর। তার তিন স্ত্রী এবং ৮ সন্তান। এক মাস আগে তার তৃতীয় স্ত্রী ফুল বাহার মারা যান। এর আগে তার প্রথম স্ত্রী আলবাহার ও ২য় স্ত্রী সাজেমুন মারা যান। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তার পুত্র মোতালেব (৬২) মান্নান (৬০) এবং কন্যা মোমেনা (৫৫) জন্ম নেন। ২য় স্ত্রী সাজেমুনের সংসারে আব্দুল জব্বার (৫২) আব্দুর রহিম (৪৫) ও কন্যা নুরতাজ বেগম (৪০) জন্ম নেন। এবং তৃতীয় স্ত্রী ফুলবাহারের ঘরে আরজুদা (৩৮) এবং ফতেমা (৩৬) নামের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।

মোশাররফ হোসেন আরো জানান, নয়াদিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর থানার দারোগা আবুল কালাম আজাদ তাকে ফোন করেন। বন্দর আলীকে তার পুত্ররা খেতে দেয় না ছেলের বউরা নির্যাতন করে এমন বিষয়টি জানিয়ে সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিতে বলেন। পরে দারোগা আজাদ এবং আমি আমার বাড়িতে বসে বন্দর আলীর ছেলেদের ডেকে এনে বিষয়টি নিস্পত্তি করে দেই।

তিনি জানান, সালিশে মধ্যে বন্দর আলীর ছেলেরা তার বাবার প্রতি আর কোন নির্যাতন করবে না। ঠিকমত খেতে দিবে এমন মুচলেকা দেয়। এবং সিদ্ধান্ত হয় ছেলে আব্দুর রহিমের কাছে ৬ মাস এবং বাকী ৬ মাস মোতালিব ও আব্দুল জব্বারের কাছে থাকবে। এবং দারোগা আজাদ এবং আমি প্রতিসপ্তাহে বৃদ্ধ বন্দর আলীর জন্য ৫শ’ টাকা প্রদান করবো এমন সিদ্ধান্ত হয়।

মোশাররফ হোসেন আরো জানান, বন্দর আলী অনেক প্রবীণ মানুষ, একসময় এলাকায় মুড়ির ব্যবসা করতো। তার বাড়িতে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরী হতো পরে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হতো। কেউ জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজের বয়স লোকজনের কাছে ১২৮ বছর বলেন। দারোগা আজাদের কাছে এটাই বলেছেন তিনি। তবে এলাকার প্রবীণ লোকজন থেকে জানা গেছে তার বয়স মূলত ১০৮ বছর ।

সোনারগা থানার এস আই আবুল কালাম আজাদ জানান, স্থানীয় মেম্বারের বাড়িতে বসে বৃদ্ধ বন্দর আলীর ছেলেরা তার বাবার সাথে আর কখনো জুলুম করবে না এমন মুচলেকা দিয়েছে। তারপর যদি তার বৃদ্ধ বন্দর আলীর ভরণ পোষনের দায়িত্ব না নেয় তা হলে তাহলে এ বৃদ্ধ বাবার দায়িত্ব আমি নিলাম।

তিনি জানান, অবশেষে সেই বৃদ্ধ বাবার মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। বৃদ্ধ বাবা এখন থেকে থাকবে রাজার হালে, খাওয়া দাওয়া ও থাকার কোন সমস্যা হবে না। কারণ তার ছেলেরা এবং ছেলের বউরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আমিও আজ থেকে হয়ে গেলাম সেই বৃদ্ধ বাবার একজন সন্তান এবং তাকে দেখার শুনার দায়িত্বটা আমার কাধেও নিয়ে নিলাম।

বুধবার নয়াদিগন্তে সংবাদে বলা হয়েছিল, দুই চোখে পানি টলমল। বয়সের ভারে নুজ্য। বন্দর আলী নামের প্রবীণ এ বৃদ্ধ গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুটি গুটি পায়ে লাঠি ভর দিয়ে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায়। সোনারগাঁও থানার চরভবনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। থানায় এসে খুঁজতে থাকেন দারোগা আবুল কালাম আজাদকে।

দারোগা আবুল কালাম আজাদকে পেয়ে আবেগ আপ্লুত প্রবীন বন্দর আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বাবা তুমি আমাকে বাচাঁও। আমার ছেলে এবং ছেলেদের বউরা আমাকে খাবার দাবার দেয় না এবং কোন খোঁজ খবরও রাখে না উল্টো আমাকে ওরা নির্যাতন করে। মারে । আমাকে খেতে দেয় না।

বৃদ্ধ বন্দর আলীর অভিযোগ পেয়ে দারোগা আজাদ তাকে সাথে করে নিয়ে বন্দর আলীর বাড়ি চরভবনাথপুর গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখেন প্রবীন বন্দর আলীর জীবনের করুন দৈন্যদশা।
দারোগা আজাদ জানান, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হবে একজন প্রবীন মানুষের শেষ জীবনের নিদারুন কষ্টের দৃশ্য। একটি গোয়াল ঘরের মতো থাকেন বৃদ্ধা বন্দর আলী। পলিথিন দিয়ে ঘেরা ঐ ঘরে তার কাটে দিনাতিপাত।

 


আরো সংবাদ



premium cement