২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাক্ষুসে পদ্মার ছোবলে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

- ছবি : নয়া দিগন্ত

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও টংগীবাড়ির দিঘিরপাড় পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এছাড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েকদিনে লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রাম ও লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অনেক পরিবারের ভিটেমাটি পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন তীরবর্তী এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। দীঘিরপাড় এলাকার মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার পথে।

সরেজমিনে ভাঙন এলাকা ঘুরে লোকজনকে বাড়িঘর ভেঙে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

ভাঙনের কারণে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য আশ্রয়ে। নদী ভাঙনের শিকার কুমারভোগ ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, গত তিন দিনে তার এলাকায় অন্তত ৭০ হাত জায়গা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। “নদী ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ৬টি ঘর ভেঙে নিতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।” প্রতিদিনই ভাঙন আরো ভয়াল রূপ নিচ্ছে।

জাকির হোসেনের প্রতিবেশী জিন্নত আলী, সুজন শেখ ও রিমা আক্তারও একই রকমের হতাশা ব্যক্ত করেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রফিজউদ্দিন বলেন, নদীর পাড়ে মাসের পর মাস ভারী জাহাজ ও ট্রলার ভিড়ানোর কারণে ভাঙনের মাত্রা আরো বেশি হয়েছে।

তিনি জানান, গত শতকের নব্বই দশকে টানা ১০ বছর পদ্মার ভাঙনে তেউটিয়া ও ধাইদা ইউনিয়ন দুটির অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরপর দুই দশক ভাঙন বন্ধ থাকে। ৫/৬ বছর আগে খড়িয়া থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে বালু ফেলে শিমুলিয়াঘাট তৈরি করা হয়। ফলে পদ্মার এই শাখা নদীটির বাঁক পরিবর্তন হওয়ায় স্রোত এসে খড়িয়া গ্রামে সরাসরি আঘাত করে। তাই প্রতি বছর বর্ষাকালে নদীতে লৌহজংয়ের কোথাও না ভাঙলেও খড়িয়া ভেঙেই চলেছে বলে তিনি জানান।

খাড়িয়া গ্রামে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভিটেমাটি নদী ভাঙনের মুখে থাকা মাহবুব হোসেন বলেন, “আমরা ত্রাণ কিংবা আর্থিক সহযোগিতা চাই না। সরকারের কাছে একটাই দাবি-নদী শাসন করে আমাদের ভিটেমাটি রক্ষা করা হোক।

স্থানীয়দের অভিমত, খড়িয়া গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ চলছে। সেতুর হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের সঙ্গে সামান্য কিছু খরচ করে নদী শাসনের কাজ করলে এ এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষা পেত। বেঁচে যেত বাপদাদার ভিটে বাড়িসহ হাজারো এলাকাবাসী।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মুরাদ আলী ভাঙন ও বন্যা কবলিত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেছেন।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খাঁন বলেন, “খড়িয়ার ভাঙন সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। এলাকাটি ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতুর নদী শাসনের আওতায় রয়েছে। আগামী অর্থবছরে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।” ১০ টি পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা জেলা প্রশাসক মো: মনিরুজ্জামান তালুকদার পরিদর্শন করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement