২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইউপি সদস্যকে অপহরণ করে টাকা আদায়, পুলিশ নিতে চায় চুরির মামলা

অপহরণের শিকার ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন - নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ইটনা উপজেলার এক ইউপি সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বুধবার সকালে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের গেটের কাছ থেকে শত শত মানুষের সামনে অস্ত্রের মুখে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর দুর্বৃত্তরা ওই সদস্যেকে মারপিট করে তার স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ইউপি সদস্যের এক আত্মীয় অপহরণকারীদের কাছে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

অপহরণের শিকার ওই ইউপি সদস্যের নাম মোঃ জসিম উদ্দিন (৩৩)। তিনি ইটনা উপজেলার ৮নং জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য। ঘটনার দিন তিনি একটি মামলার কাজে কিশোরগঞ্জ আদালতে যাচ্ছিলেন।

এ ঘটনায় অপহরণকারী দলের এক সদস্যকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আটক ও তার কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা উদ্ধার করা হলেও গত দুই দিনেও পুলিশ বিষয়টিকে অপহরণের মামলা হিসেবে গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের গৌরাঙ্গবাজার এলাকায় একটি অনলাইন পত্রিকার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অপহরণের শিকার ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জসিম উদ্দিন জানান, একটি মামলার কাজে বাড়ি থেকে বুধবার সকালে কিশোরগঞ্জ শহরে এসে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অটোরিকশা করে কিশোরগঞ্জ আদালতের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। অটোরিকশাটি আদালতের অদূরে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের গেইটের সামনে আসা মাত্রই অস্ত্র হাতে দশ বারো জনের একটি দুর্বৃত্ত দল তার অটোরিকশাটিকে ঘিরে ফেলে।

অস্ত্রধারীরা পূর্ব থেকেই টার্গেটে রাখা জসিম উদ্দিনকে টেনে-হিঁচড়ে অটো থেকে নামিয়ে অন্য একটি অটো-রিকশাতে নিয়ে তোলে। এ সময় জসিম অপহরণকারীদের সাথে ধস্তা-ধস্তি শুরু করলে শত শত লোক এসে সড়কে ভিড় দেয়। তবে অপহরণকারীদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।

এ সুযোগে জসিম উদ্দিনকে নিয়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে চোখ বেঁধে সদর এলাকার মাইজখাপন ইউনিয়নের নীলগঞ্জ এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে তাকে (জসিমকে) আটকে রাখা হয়। এ সময় জসিম উদ্দিনের কাছে থাকা ১৭ হাজার ৫০০ টাকা ও ওপ্পো ব্র্যান্ডের এনড্রয়েড একটি মোবাইল সেট অপহরণকারীরা নিয়ে যায়।

অপহরণের পর ওই এনড্রয়েড মোবাইল ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণের টাকা চাইতে বলা হয় জসিমকে। অপহৃতের পরিবারের লোকজন মুক্তিপণের এ টাকা দিতে দেরি করায় তারা জসিমকে মারধর শুরু করে এবং তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

পরে অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নম্বর ০১৯২৭৮৭০৫৬৭-এ জসিম উদ্দিনের এক ব্যবসায়ী বন্ধুর মাধ্যমে তার পরিবারের লোকজন ২০ হাজার টাকা পাঠালে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তাকে (জসিমকে) মুক্তি দেয়া হয়।

জসিম জানান, মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়ে বুধবার রাতে অপহরণ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় তিনি মামলা করতে গেলে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক বিষয়টিকে অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বিকাশ নম্বরের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে এমদাদুল হক সজল (৩২) নামে অপহরণকারী দলের এক সদস্যকে শহরের গাইটাল এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে থেকে আটক করে পুলিশ।

তার কাছ থেকে মুক্তিপণের ২০ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়। সজল কিশোরগঞ্জ আমিন সার্ভেয়ার সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমানের ছেলে। সজল আটক হওয়ার পর হাবিবুর রহমান ছেলেকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য শহরের প্রভাবশালী কয়েক নেতাকে নিয়ে বার বার থানায় যান। এদিকে ঘটনার বিষয়ে বুধবার রাতে অভিযোগ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত বিষয়টিকে অপহরণ মামলা হিসেবে নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘প্রভাবশালীদের চাপে পুলিশ ঘটনাটিকে অপহরণ হিসেবে না দেখে সাধারণ চুরির ঘটনা হিসেবে মামলা নিতে চাচ্ছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছি। দেশের আইন অনুযায়ী আমি ন্যায় বিচার চাচ্ছি। পুলিশ অপহরণকারী দলের একজনকে আটক করেছে, অপহরণের সব আলামত পেয়েছে। অপহরণকারীরা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তারপরও পুলিশ ঘটনাটিকে চুরি হিসেবে দেখছে। পুলিশ বলছে, টাকা উদ্ধারের বিষয়টি মামলায় উল্লেখ করা যাবে না। মামলা নিতে হলে চুরির মামলা নেয়া যাবে।’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলা নিতে হলে তো সাক্ষ্য-প্রমাণ লাগবে। তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তিনি কিছুই বলতে পারছেন না।’

তার অভিযোগের ভিত্তিতে আপনারা তো বিকাশে নেয়া অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্তিপণের ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছেন - এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘টাকা কেন নেয়া হয়েছে, কী কারণে নেয়া হয়েছে, এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’


আরো সংবাদ



premium cement