২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভালো নেই সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীর কারিগররা (ভিডিও)

ভালো নেই সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীর কারিগররা - নয়া দিগন্ত

ভালো নেই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীর শাড়ি তৈরির কারিগররা। এক সময় যাদের হাতে জামদানী শাড়ি তৈরি হতো, এখন সেই হাতে তারা ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর এখন পর্যন্ত যারা এ পেশা টিকিয়ে রেখেছেন তাদেরও দিন চলছে অতি কষ্টে। ভারত থেকে আসা শাড়ি দখল করে নিয়েছে তাঁত পল্লীর তৈরি শাড়ির বাজার।

মানিকগঞ্জ শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার উত্তরে সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের সাভার গ্রামে তাঁতের শাড়ি তৈরির কারিগরদের বসবাস। বংশ পরমপরায় টিকে থাকা এই পরিবারদেরকে স্থানীয়রা মল্লিক বলে চিনে। বরাইদ এলাকার গ্রামেই আরেক পাড়ার নাম আগ সাভার। এক সময় দুইপাড়ার ২৫০টি পরিবারে তৈরি করা হতো জামদানী, বেনারসি, গামছা, সুতি, হাফসিল্ক ও লুঙ্গী। আর এ কারণেই জামদানী পল্লী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে এলাকাটি।

তবে জামদানী পল্লীতে এখন আর জামদানী শাড়ি তৈরি হয় না। এ পল্লীতে এখন কাতান, জামদানী, এনডি কটন, এনডি সিল্ক, সুতি শাড়ি, থ্রি পীচ, ওড়না, ধুপিয়ানসহ তাঁতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তাও আবার সীমিত আকারে। দিন দিন চাহিদা কমে যাওয়ায় শাড়ি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক তাঁত।

এই গ্রামে প্রথম জামদানী শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন প্রয়াত বদুর উদ্দিন মল্লিক। ১৯৬০ সালে নিজের বাড়িতে তাঁত বসিয়ে সাভার গ্রামে প্রথম জামদানী শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। দিন দিন শাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকলে সাভার ও আগ সাভারের নারী-পুরুষ সবাই তাঁতের কাজ শুরু করেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে দুইপাড়ায় প্রায় দেড় হাজার তাঁত বসানো হয়। শুরু হয় জামদানি ছাড়াও বেনারসি, কাতান, ধুপিয়ানসহ বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি তৈরির কাজ। আর তখন থেকেই সাভার ও আগ সাভার তাঁত পল্লী হিসেবে এলাকাবাসীর মুখে মুখে পরিচিত হয়ে ওঠে।

সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাউদ হাসান লাভলু জানান, সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীর তৈরি শাড়ির চাহিদা এতটাই ছিল যে, ঢাকার বিভিন্ন শাড়ির শো-রুম থেকে আগাম টাকা দিয়ে অর্ডার দেয়া হতো। সারা বছরের পাশাপাশি বছরের দুটি ঈদ ও বৈশাখ মাসে চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ কারণে বছরের দুই ঈদ ও বৈশাখের শুরুতে দিন রাত কাজ করত কারিগররা। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে শাড়ি আসায় ও কাচা মালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের কদর কমে গেছে। ভারতীয় শাড়ীর দাম কম হওয়ায় সেগুলো বাজারে চলে বেশি।

তিনি জানান, এ কারণে একের পর এক তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারিগররা বেকার হয়ে পড়ায় অনেকেই ভ্যান-রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে।

তাঁত পল্লীর তাঁত মালিক মোঃ বাদল মিয়া (৪২) জানান, আগের মতো কাজ নেই তাদের পল্লীতে। তারপরেও ৪টি তাঁত রয়েছে বাড়িতে। সেখানে কাজ করে ৯ জন কারিগর।

তিনি জানান, ভারতীয় শাড়িতে বাজার সয়লাব হওয়ায় ঢাকার মহাজনরাও নগদ টাকায় তাদের কাছ থেকে শাড়ি কিনতে চান না।
স্থানীয় মিনহাজ উদ্দিন জানান, গত পাঁচ বছর ধরে কাজ না থাকায় তার ১৩টি তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। তিনিও বেকার বসে আছেন। গত ১০ বছরে এখানকার কমপক্ষে ১ হাজার দুইশত তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।

হাফসিল্ক শাড়ি তৈরির কারিগর মোঃ শুকুর আলী (২৬) জানান, একদিনে তাঁতে দুই থেকে তিনটি শাড়ি তৈরি করা যায়। আবার যেগুলোতে হাতের কাজ বেশি সেই শাড়ি তৈরি করতে তিন দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

তাঁত পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। যে কয়েকটি তাঁত চালু আছে সেখানেই তৈরি হচ্ছে ঈদ উপলক্ষে সিল্ক, হাফসিল্ক, সুতি শাড়ি, এনডি শাড়ি ও জামদানী শাড়ি। ৫শত থেকে ১০ হাজার টাকা দামের শাড়ি তৈরি হয় তাঁত পল্লীতে। তাঁত মালিকরা জানান, ৫শত টাকায় পাইকারি দামে যে শাড়ি বিক্রি করেন, ঢাকার শোরুমে তা ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement