২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টঙ্গী পাইলট স্কুল এণ্ড গার্লস কলেজে কোচিং বাধ্যতামূলক!

- প্রতীকী ছবি

টঙ্গী পাইলট স্কুল এণ্ড গার্লস কলেজে মোটা অংকের কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়মিত ক্লাশ শেষে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে গণহারে প্রায় আধা ঘণ্টার কোচিংয়ের নামে মাসে এক হাজার টাকা করে ফি নেয়া হচ্ছে। মাসিক বেতনের সাথে অতিরিক্ত এই টাকা গুনতে হওয়ায় অভিভাবকদের মাথায় যেন বাড়ি পড়েছে।

অভিভাবকরা জানান, প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাশ শেষে ৫ম, ৮ম ও ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরকে বেলা ১২:৫০টা থেকে ১৩:১৫টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ মিনিটের বাধ্যতামূলক কোচিং করানো হয়। অতিরিক্ত এই ক্লাশের নামে প্রভাতি শাখার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০০ হাজার টাকা করে এবং দিবা শাখার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয় ৫০০শ’ টাকা করে কথিত কোচিং ফি। প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর মাসিক কোচিং ফি বাবদ প্রায় দশ লাখ টাকার মধ্যে অধ্যক্ষ নিজে আশি ভাগ এবং বাকি ২০ ভাগ টাকা যেসব শিক্ষক কোচিং ক্লাশ নেন তাদের মধ্যে বণ্টন করা হয় বলে সূত্র জানায়।

এছাড়া জেএসসির নিবন্ধন, ফরম ফিলাপ, এডমিট কার্ড ইত্যাদি অজুহাতে বছরে তিন কিস্তিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিনা রশিদে মোট ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা করে আদায় করা হয়। অথচ এক্ষেত্রে সব মিলিয়ে বোর্ড নির্ধারিত ফি সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা।

চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৭০০ টাকা করে গত এপ্রিল মাসে প্রথম বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আদায় করা হয়েছে। পরবর্তী দুই কিস্তি যথাক্রমে ফরম ফিলআপ ও এডমিট কার্ড বিতরণের অজুহাতে নেয়া হয়। আর এসব টাকা আদায় করা হয় বিনা রশিদে সরাসরি শ্রেণী কক্ষ থেকে।

এমনকি জেএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষার নামেও প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতারণা করে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হয়। অথচ জেএসসিতে ব্যবহারিক পরীক্ষার কোনো অস্তিত্বই নেই। প্রতিবছর পরীক্ষার পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী যে কোন বন্ধের দিন ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিষ্ঠানে নিয়ে ৩০০ টাকা করে রেখে বলা হয় ‘আর পরীক্ষা লাগবে না’।

এদিকে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বার মাসের বেতন নেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত আরো চার মাসের বেতন নেয়া হয়। এছাড়া মডেল টেস্ট, একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ বা ইয়ার চেঞ্জ, ব্যবহারিক পরীক্ষা, সেশন ফি, রেজিস্ট্রেশন ও ফরম ফিলআপ ইত্যাদি নানা অজুহাতে অতিরিক্তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রসংসাপত্র বাবদ বিনা রশিদে এক হাজার টাকা করে, মূল সনদপত্র ২০০ টাকা করে এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (নম্বরপত্র) ৫০০ টাকা করে নেয়া হয়। অথচ এসব খাতে কোন টাকা নেয়ারই নিয়ম নেই।

একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সেশন ফি’র নামে গুনতে হয় সাত থেকে নয় হাজার টাকা। নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রত্যেক অকৃতকার্য বিষয়ে জরিমানার নামে আদায় করা হয় পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা করে। বছরের শুরুতে প্রতি শ্রেণীতে ভর্তি ফি নেয়া হয় সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে। ছেলে হোক বা মেয়েই হোক প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা করে মাসিক বেতনে প্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশুনা করতে হয়।

পরীক্ষার ফি নেয়া হয় পাঁচশত থেকে সাতশত টাকা করে। প্রতিষ্ঠানটিতে মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি অনেক কিন্ডারগার্টেন বা প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বেশি। এছাড়া প্রতি বছরই নিবন্ধন ও ফরম ফিলাপের নামে সরকার নির্ধারিত ফি’র দুই থেকে চার গুণ বর্ধিত হারে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রায় ১৬ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার পর বর্তমানে অভিনব কায়দায় আবারো অতিরিক্ত ফি নেয়া হচ্ছে।

এদিকে প্রতি বছরই বিভিন্ন প্রকাশনা কোম্পানী তাদের বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অধ্যক্ষকে সেলামির নামে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে থাকে।
অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অধ্যক্ষ বই থেকেও কমিশন খান। যার ফলে অভিভাবকদেরকে বাধ্য হয়ে বেশি মূল্যে বই কিনতে হয়। কারণ, স্কুলে আগাম বখরা দেয়ায় লাইব্রেরিগুলো কমিশন বা কম মূল্যে বই বিক্রি করতে চায় না।

অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, সরকার শিক্ষকদের বেতন ও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও আমরা এর কোনো সুফল ভোগ করতে পারছি না। এমপিও বা সরকারি অংশের বেতন, শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন, সেশন ফি ইত্যাদি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট তাদের একটি বড় আয়ের উৎস্য। এরপরও তারা অতিরিক্ত বেতনসহ নানা অজুহাতে অভিভাবকদের ওপর এক ধরণের জুলুম চালিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকে।

এসব ব্যাপারে জানতে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোঃ আলাউদ্দিন মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা বাধ্যতামূলকভাবে কোনো কোচিং করাই না। অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ‘সরাসরি সাক্ষাত’ এর প্রস্তাব দিয়ে ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা জানান, এভাবে গণহারে ও বাধ্যতামূলকভাবে কোচিং করানোর কোনো বিধান নেই। তবে পড়ালেখায় দুর্বল এমন শিক্ষার্থীর অভিভাবক যদি বিশেষ কোচিং কারানোর লিখিত আবেদন জানান; সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০০ টাকার মাসিক কোচিং ফি নিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে কোচিং করানো যেতে পারে। এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ মারা যায়নি : পুলিশ সুপার হামাসকে কাতার ছাড়তে হবে না, বিশ্বাস এরদোগানের জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তার উদ্যোগ ভালো লেগেছে : সীতাকুন্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১০ দেশের অংশগ্রহণে সামরিক মহড়া শুরু করল আরব আমিরাত গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা? কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের ২৫ দিন পর উদ্ধার যুবকের লাশ উদ্ধার ভুয়া সনদ সিন্ডিকেট : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ

সকল