২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিমের রাজনৈতিক মর্যাদার লড়াই

- ছবি : সংগৃহীত

মাদারীপুর সদর উপজেলার পরিষদ নির্বাচন মঙ্গলবার (১৮ জুন)। এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান খান (কালু খান)।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কাজল কৃষ্ণ দে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কৃষিবিদ আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিমের অনুসারী। অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান কালু খান সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ছোট ভাই।

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাদারীপুরে শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিমের আধিপত্য দীর্ঘদিনের। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী, রাজনৈতিক কর্মসূচী দুপক্ষই আলাদাভাবে পালন করে আসছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুপক্ষের রাজনৈতিক মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। দুপক্ষই নির্বাচনে জয় পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে। সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিলসহ নানা কর্মসূচী করেন তারা।

প্রভাবশালী দুই নেতার পছন্দের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে ইতোমধ্যে অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি।

তবে, ভোটাররা চান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। নাম না প্রকাশে কয়েকজন ভোটার জানান, তারা পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিতে চান। প্রশাসন ও সরকারের কাছে তাদের চাওয়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তারা নির্বাচনে কোন ঝামেলা চান না। বিগত দিনে দুপক্ষ আধিপত্য ও নির্বাচন নিয়ে মারামারি করে, আর এর খেসারত দিতে হয় সাধারণ জনগণকে। তাই ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ও ভোট দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার সুষ্ঠু পরিবেশ চান তারা।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নের প্রাক্কালে সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান শফিক খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান কালু খান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

কিন্তু দলের হাইকমান্ড কাজল কৃষ্ণ দে'কে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেয়। এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। এ অবস্থায় অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান কালু খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নামেন।

অন্যদিকে দলের মনোনয়ন না পেলেও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। রোজা ও ঈদের কারণে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা জমে না উঠলেও ঈদ শেষে উপজেলা জুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজল কৃঞ্চ দে নৌকার প্রতীক নিয়ে মাদারীপুরের রাজনীতিতে দলের প্রতি তার ত্যাগ, অবদান ও নির্মোহতা হিসাব করে জয়ী হওয়ার প্রত্যাশায় কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তার সঙ্গে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মোল্লা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা।

অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে ৬ বার নির্বাচিত সভাপতি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার বারবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান কালু খান।

তার সঙ্গে আছে তারই মরহুম পিতা মাদারীপুর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক এমপি মৌলভী আছমত আলী খানের আদর্শ, বড় ভাই সাবেক নৌমন্ত্রী, মাদারীপুর-২ আসন থেকে ৭ বারের নির্বাচিত এমপি প্রভাবশালী শ্রমিকনেতা শাজাহান খানের ব্যক্তিগত ইমেজ ও পারিবারিক ঐতিহ্য। ভোটারদের মাঝে এসব কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের মন জয় করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

ওবাইদুর রহমান কালু খানের পক্ষে কাজ করছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মী, ইউনেয়ন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একাংশ। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে উভয় প্রার্থী জয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন। তবে এবারের নির্বাচন হবে স্মরণকালের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। যা দেখার জন্য ভোট গ্রহণের পর ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে প্রার্থীদের- এমন মন্তব্য করেছেন নির্বাচন বোদ্ধারা।

এবার উপজেলা নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু ভূইয়ার বড় ছেলে, মাদারীপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম তুষার ভূইয়া, নাকসুর সাবেক জিএস ছাত্র নেতা মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ সাহাবুদ্দিন হাওলাদার, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান পারভীন জাহান, নতুন মুখ নার্গিস আক্তার, ফারজানা নাজনীন, রোকসানা পারভীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ১৮ জুনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাচনে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯২ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৪ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৮ জন।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালাদার বলেন, মোট ১১৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১১০ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ তাই প্রতিটি কেন্দ্র একজন উপ-পরিদর্শক ও ৫ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ৩টি কেন্দ্রে একটি মোবাইল টিম থাকবে। পাশাপাশি ১০টি কেন্দ্রের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। যাতে করে নির্বাচনে কেউ কোন রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, ৩টি কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। ভোট শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। কোন ধরনের নাশকতা কিংবা অপ্রতিকর পরিবেশ তৈরী হতে দেয়া যাবে না।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা রয়েছে। চারদিকে শুধু নৌকার সমর্থক। তবে কেউ যদি নির্বাচনের দিন কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কেন্দ্র দখল করতে চায়, তাহলে জনগণ পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলবে।


আরো সংবাদ



premium cement