১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রীপুরের একি ‘শ্রী’!

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড এলাকার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী ব্রীজ সংলগ্ন খালে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে শ্রীপুর পৌরসভা। এতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে চরমভাবে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।

দুর্গন্ধের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক, যাত্রী এবং পথচারীরা। দেখলে মনে হবে সড়কের উপর যেন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। মহাসড়কের পাশে থাকা ময়লা অপসারণ করে উৎকট গন্ধ থেকে পথচারীদের রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি আশা করছেন এলাকাবাসী।

ময়লা-আবর্জনা ফেলার দু’পাশে পৌর কর্তৃপক্ষ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লিখে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখছে। সাইনবোর্ডে লিখা আছে “এই জায়গায় ময়লা ফেলানো সম্পূর্ণ নিষেধ, ময়লা ফেললে ১০,০০০ টাকা জরিমানা, নির্দেশক্রমে পৌর কর্তৃপক্ষ”।

অথচ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় পৌরসভার নির্ধারিত ভ্যানে করে ময়লা ফেলতে দেখা গেছে। ভ্যান চালকের নাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি নাম পরিচয় দেননি।

সাংবাদিককে ভ্যান চালক বলেন, ‘আমার নাম লেইক্কা কি করবেন। আমাকে কইছে এহানে ফেলতে, তাই আমি ফালাইতেছি।’

কে ময়লা ফেলতে বলছে জানতে চাইলে বলেন, ‘পৌরসভার স্যারেরাই বলছে এহানে ময়লা ফালাইতাম।’

স্থানীয়রা জানান, এ মহাসড়ক দিয়ে দিনরাত শতশত যানবাহন চলাচল করে। মহাসড়কের ওই স্থান অতিক্রম করার সময় অনেক যাত্রী বমি করেন। পথচারীরা নাক-মুখ চেপে ধরে চলাচল করেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক শ্রীপুর পৌরসভার প্রবেশমুখে ময়লা-আবর্জনার এমন স্তুপ দেখে অনেকেই শ্রীপুরের “শ্রী” নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ নিজেই আইন ভঙ্গ করছে। সেখানে সাধারণ মানুষ কিভাবে আইন মেনে চলবে। তাছাড়া, শ্রীপুর পৌরসভা কতটুকু “শ্রী” নিয়ে আছে তা পৌরসভার প্রবেশদ্বার দেখলেই সহজে বুঝা যায়।

শুক্রবার দুপুরে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, সড়কের এক পাশে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তুপ, মরা পশু, মুরগির নাড়িভুড়ি পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাশ দিয়ে নাক ঢেকে চলছেন পথচারীরা।

স্থানীয়রা বাসিন্দারা বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান। ময়লা ফেলা অব্যাহত থাকায় এলাকার সকল শ্রেণীর লোকজনের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

চ্যাম্পিয়ন পরিবহনের চালক মফিজুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের এ স্থানে আসলেই আর সামনে যেতে মন চায় না। ১০০ মিটার সড়ক পার হতে অনেক কষ্ট হয়। বিরক্তিকর দুর্গন্ধ। বমি চলে আসে। এরকম অবস্থা অনেক দিন থেকে চলছে। আমরা দ্রুত এই অবস্থার সমাধান চাই।

স্থানীয় জৈনা বাজার এলাকার একটি বেসরাকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ আল-আমীন বলেন, প্রতিদিন গাজীপুর থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। কিন্তু সড়কের এই স্থানে (গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী) এলে ময়লা আবর্জনা থেকে উৎকট গন্ধ ছড়ায়। নাক চেপে গাড়িতে চালতে হয়। যাত্রীরাও নাক-মুখ চেপে চালককে দ্রুত গাড়ি চালাতে তাড়া দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাস্টারবাড়ী এলাকার বাসিন্দা বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করলেও পৌরবাসী কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। ফলে ব্যস্ততম এ মহাসড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এখানকার ময়লা আবর্জনা অনেক সময় সড়কের উপর চলে আসে। পাশাপাশি হোটেল রেষ্টুরেন্টসহ অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ময়লা এখানে ফেলা হচ্ছে। এতে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, শ্রীপুর পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা আমার চোখে পড়েনি। ফলে বাধ্য হয়ে সড়কের পাশে মায়লা ফেলছে। আমাদের পক্ষ থেকে সড়কের পাশে ময়লা ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। নিরুপায় হয়ে লোকজন সড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। অতীতে সড়কের পাশে ফেলা ময়লা আমি নিজ খরচে অপসারণও করেছি। প্রশাসন, স্থানীয় কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ এগিয়ে আসলে সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা সম্ভব। তারা সবাই মিলে একটি জায়গা নির্ধারণ করে দিলে সড়কের পাশে কেউ ময়লা ফেলবে না।

ব্যাবসায়ী তমিজ উদ্দিন বলেন, ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মারাত্মক পরিবেশ দুষণের কবলে পড়েছে আশেপাশের এলাকা। পৌরসভার শোভাবর্ধন, সৌন্দর্য রক্ষা, নাগরিকদের পরিবেশ দুষণের হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পৌর কর্তৃপক্ষের অন্যতম দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অথচ সেই শ্রীপুর পৌরসভা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে চলেছে।

শ্যামলী পরিবহনের চালক আমজাদ হোসেন জানান, মহাসড়কের এ স্থানে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কোনো কোনো সময় অতিরিক্ত ময়লা জমে সড়ক দখল করে রাখে। এতে সড়কের প্রশস্ততা কমে যায়। ময়লা ময়লা পচে পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এতে করে এ স্থান দিয়ে চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালকেরা স্লিপ খেয়ে দুর্ঘটনায় পরার সম্ভাবনা রয়েছে।

শ্রীপুর পৌরসভার পরিদর্শক (কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর) জহির রায়হান বলেন, শ্রীপুর পৌরসভার ময়লা ফেলানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। আমরা কয়েক দিন পর পর মহাসড়কের পাশ থেকে ময়লা পরিষ্কার করে থাকি।

ময়লা ফেললে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়ে তিনি বলেন, পৌরসভার বাহিরের কেউ এখানে ময়লা ফেললে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ শামছুল আরেফীন বলেন, একটি নিরাপদ সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে । দুর্গন্ধে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। আশা করছি মহা সড়কের পাশে ময়লা না ফেলানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

গাজীপুরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফ উদ্দিন জানান, গত ১১ জুন জেলা প্রশাসকের মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। পৌরসভা বিনা অনুমতিতে আমাদের রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছে। এতে আমরা ভীষণ বেকায়দায় পড়েছি। রাস্তার অর্ধেক অংশে ময়লা ফেলায় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা পৌরসভাকে জানিয়েছি এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি একাধিকবার বিষয়টি তুলেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই বিষয়টির সমাধান হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের অংশ নিতে মানা সবল-দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে? জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত

সকল