২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

২০ কোটি টাকার জাল ডলারসহ লাইবেরিয়ান নাগরিক গ্রেফতার

গাজীপুরে ২০ কোটি টাকা মূল্যের জাল ডলারসহ গ্রেফতারকৃত লাইবেরিয়ান নাগরিক জজ মাশাও - নয়া দিগন্ত

গাজীপুরে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের ডলার তৈরীর কালো কাগজ এবং বাংলাদেশী তিন হাজার টাকা সহ এক লাইবেরিয়ান নাগরিককে মঙ্গলবার আটক করেছে র‌্যাব-১এর সদস্যরা। আটককৃতের নাম মোস্তফা আলী (৪০)। তার পিতার নাম যোসেফ সামাহ। বাংলাদেশে সে ঢাকার বানানী এলাকার ডি ব্লকের ১৫ নং রোডের ৬৫ নং বাড়ির হোটেল সিটারস এ থাকতো। সে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের একজন সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। সে বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয় এবং সে ভিসা এবং পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধভাবে বাংলাদেশ অবস্থান করছে।

র‌্যাব-১’র স্পেশালাইজ কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, গত এক মাস পূর্বে সাইফুল নামের একজন বাংলাদেশীর ফেসবুক আইডিতে ঝধৎমবহঃ অংযষবু ইবংঃ নামে আইডি ব্যবহার করে মোস্তফা আলী’র পরিচয় হয়।

ওই পরিচয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিক সাইফুল ইসলাম এর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করে সে সাইফুল হক কে জানায়, তার কাছে কিছু ফান্ড আছে, যা সে আফগানিস্তান থেকে ইউএসএ পাঠাতে পারছে না ফলে সে ওই অর্থ বাংলাদেশে দারিদ্র মানুষের সাহায্যর জন্য ২.৫ মিলিয়ন ডলার সাইফুল হককে দেয়ার কথা জানায়। কিছুদিন পর সে সাইফুল হক এর কাছে ডিপ্লোমেটিক এজেন্টের মাধ্যমে একটি কনসাইনম্যান্ট ডেলিভারী পাঠায়।

পরে ওই কনসাইনম্যান্ট রিসিভ করতে চাইলে মোস্তফা আলী অভিনব কায়দায় প্রতারণার মাধ্যমে সাইফুল হকের কাছ থেকে প্রায় ০৮ লক্ষ টাকা আদায় করে নেয়। প্রতারণার ঘটনা টেরপেয়ে সাইফুল বিষয়টি র‌্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানীর কোম্পানী কমান্ডার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন আরো জানান, মোস্তফা আলী কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্য। সে মূলত বাংলাদেশে ফুটবল খেলা অথবা বিভিন্ন ব্যবসার নাম করে এদেশে প্রবশে করে। পরবর্তীতে সে এবং তার সহোযাগীরা মিলে এই প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। এই সকল বিদেশী নাগরিকদের সাথে সহায়তার জন্য বাংলাদেশী কিছু নাগরিক এই চক্রের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। যাদের কাজ হলো ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট নাম্বার সংগ্রহ করা এবং নিজেকে কাস্টম অফিসার বা কাস্টমসে কর্মরত পরিচয় দিয়ে ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করা। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের অচিরেই গ্রেফতার করার জন্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

তিনি আরো জানান, একটি ১০/১২ জনের চক্র (এদেশীয় সহযোগীসহ) বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছিল। তারা ফেসবুকে বিভিন্ন ভূয়া নামে একাউন্ট খুলে মহিলা, পুরুষ ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে সখ্যতা গড়ে তুলত। তারা নিজেদের আফগানিস্থানে যুদ্ধরত নারী/পুরুষ সৈনিক অথবা বিদেশী অথবা জাতিসংঘের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে সখ্যতা গড়ে তুলত অথবা এদেশীয় ব্যবসায়ীদের নিকট ব্যবসায় সুযোগ তৈরীর কথা বলত। র‌্যাব আরো জানতে পেরেছে যে, এই চক্রটি সাদা কাগজে কিছু রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে ডলার
তৈরী করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়েও প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে তারা লোভের একটা ফাঁদ তৈরী করত। সে বিষয়টাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য এদেশীয় কিছু লোক সহযোগীতা করত যারা বিভিন্ন ব্যক্তির একাউন্ট নম্বর জোগাড় করে দিত বিনিময়ে সে এবং ঐ সমস্ত একাউন্টের মালিকগণ নির্দিষ্ট কমিশন পেত। পরবর্তীতে সে তার ব্যবহৃত নম্বর বন্ধ করে দিত। এভাবেই তারা দিনের পর দিন প্রতারণা করে আসছিল। এই চক্রের মূল হোতা একজন নাইজেরিয়ান নাগরিক।

এছাড়াও বাংলাদেশী কিছু প্রতারকদেরকে র‌্যাব সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এই চক্রটি প্রতিমাসে ২০/২৫ লক্ষ টাকা উপার্জন করত এবং মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে এই টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিত বলে ধৃত
আসামী মোস্তফা আলী জানায়। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছেG 

 


আরো সংবাদ



premium cement