২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রকৌশলীকে মারধর, কাজী জাফরউল্লাহর রাজনৈতিক সচিব আটক

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সঙ্গীদের হাতে প্রহৃত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সমরজীত ঘরামীসহ ওই অফিসের ৩ অফিস সহকারী। এসময় অফিস কক্ষ ভাংচুরও করা হয়।

খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আজ রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর রাজনৈতিক সচিব ও সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল হক অপুকে গ্রেফতার করলেও ঘটনার সাথে জড়িত তার সঙ্গীরা পালিয়ে গেছে।

হামলার ঘটনায় আহত অন্যরা হলেন, অফিস সহকারী শেখ মোঃ সেলিমুজ্জামান, মোঃ সাঈদুল ইসলাম ও বলাই চন্দ্র দাস। ঘটনার পর আহতদের স্থানীয় জনতা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন।

ভাঙ্গা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সমরজিত ঘরামী সাংবাদিকদের বলেন, ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহর রাজনৈতিক প্রতিনিধি এনামুল হক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজা রোববার বেলা ১১টার দিকে তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সমরজিত ঘরামিকে প্রহার করেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। তাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এলে ওই অফিসের ভিএস ম্যাশন সাইদুর রহমান, মেকানিক্যাল সেলিমুজ্জামান ও বলাই কুমার দাসকেও প্রহার করা হয়।

তিনি বলেন, রোববার সকালে আমি ও আমার সহকারীগণ অফিস খুলতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজা ও সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল হক অপু অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা আমার নিকট ৫টি আর্সেনিকমুক্ত টিউবয়েল দাবি করেন। আমি আইন বর্হিভূত কোন কাজ করতে পারব না বলতেই তারা আমার উপর চড়াও হয়ে উঠে। আমি তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করলে তারা আমাকে বেদম প্রহার করার পর অফিস কক্ষের ভেতরে তালা দিতে যায়। এসময় আমার অফিস সহকারীরা বাধা দিলে তাদেরকেও মারপিট করা হয়। তাদের আক্রমণের মোবাইল ফোনসহ বেশ কয়েকটি দামি জিনিস নষ্ট হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্যরা এগিয়ে আসলে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

এ ঘটনার পর উপ-সহকারি প্রকৌশলী সমরজিত ঘরামী বাদী হয়ে এনামুল হক অপু ও আকরামুজ্জামান রাজাকে আসামী করে ভাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এ ঘটনার পর। তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাঈদুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপ-সহকারি প্রকৌশলী সমরজিত ঘরামীর সাথে আওয়ামী লীগের দুই নেতার কথা কাটাকাটি এবং মারপিটের খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ পাঠাই। এরপর এনামুল হক অপুকে আটক করা হয়। এব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) হিমাদ্রী খীসা বলেন, সরকারী কোন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে কোন অবহেলা থাকলে তা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট লিখিত অভিযোগ দিতে পারতো। কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে মারপিট কোনভাবেই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে এব্যাপারে মামলা হয়েছে এবং একজন আটক আছে। আমি আশা করব পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকী আসামীদেরকেও আটক করবে। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতাই সংবাদকর্মীদের কাছে কোন ধরনের বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। ঘটনার পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজা এলাকা ত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement