১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ধান আবাদ কইরা আমি এহন পথের ফকির’

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মকবুল হোসেন - নয়া দিগন্ত

‘আমার ছয় লাখ টাকা ছিল। গত ছয় বছরে ধান আবাদ কইরা সব টাকা ফুরাইছি। এহন অন্যের জমিতে কামলা না দিলে খাইতে পারি না। ধান আবাদ কইরা আমি এহন পথের ফকির।’ ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের বর্গাচাষী মকবুল হোসেন।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন,‘আমি এইবার ৩০০ শতাংশ জমিতে ধান আবাদ করছি। কামলার অভাবে, টাকার অভাবে ধান কাটতে পারতাছি না। ঘরের ধানের ভাত খাইয়া অভ্যাস। তাই আবাদও ছাড়তে পারি না। এইবার আমার খরচ হইছে এক লাখ টাকা। ধান পামু ১৫০ মণ। এর মধ্যে জমির মালিকের ৭৫ মণ, বর্গাচাষী হিসাবে আমার ৭৫ মণ। বর্তমান বাজার অনুযায়ী যার দাম ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। তাইলে বাকী টাকা আমি কই পামু? আঙ্গরে এহন (আমাদের এখন) মরণদশা।’

শুধু মকবুল হোসেন নয়, এমন আক্ষেপ এখন সকল ধানচাষীর।

রকিবুল ইসলাম নামে মির্জাপুরের এক কৃষক বলেন, বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি মণ ধান ঘরে তুলতে এক হাজার টাকার উপরে খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করছি তার অর্ধেক দামে। এবার আমরা পথে বসে গেছি।

টাঙ্গাইলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু তাতে খুশি হতে পারছেন না কৃষক। একদিকে ধানের দাম কম, অন্যদিকে শ্রমিকের মূল্য বেশি। আবার অধিক মূল্য দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকের অভাবে সময়মত ধান ঘরেও তুলতে পারছেন না চাষীরা। ধান বিক্রি করে কৃষকের উৎপাদন খরচও উঠছে না। এসব কারণে টাঙ্গাইলের কৃষকেরা এখন অনেক ক্ষুব্ধ; যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে পাকা ধানে আগুন দেয়ার মধ্য দিয়ে।

ধানের দাম কম থাকায় এবং শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে না পারায় রাগে, ক্ষোভে-দুঃখে নিজের পাকা ধানে আগুন লাগিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানান টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক সিকদার। গত ১২ মে তিনি কেরোসিন ঢেলে পাকা ধানে আগুন লাগিয়ে দেন। পরে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে ক্ষুব্ধ কৃষকের সাথে সমবেদনা জানাতে ও তাদের কষ্টের ভাগি হতে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত ১৫ মে তিনটি কলেজের ১৫ জন শিক্ষার্থী সেই কৃষক মালেক সিকদারের ক্ষেতের ধান কেটে দেন।

চাষীরা জানান, বর্তমানে ধানের দাম কম থাকায় তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ধান আবাদ করে অতিমাত্রায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। যেখানে একমণ ধানের উৎপাদন খরচ এক হাজার টাকার উপরে, সেখানে এক মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। গত বছর এই সময় একজন শ্রমিকের মূল্য ছিল ৫০০ টাকা। এবার তা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। শ্রমিককে তিনবেলা খাবারও দিতে হয়। কৃষকদের বাঁচাতে হলে ধানের দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিত।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে। ফলনও হয়েছে ভাল। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই সময়ে ধানের বাজার কিছুটা কম থাকলেও কৃষক যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখেন তবে ক’দিন পরেই অধিক মূল্য পাবেন। তাপাদহসহ নানা কারণে বর্তমানে কিছুটা শ্রমিক সংকট রয়েছে বলে তিনি জানান।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement
সম্ভাবনা সত্ত্বেও সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে ঘাটতির কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী লাল গালিচা, ডুবুরি আর একলা সন্ন্যাসী রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে কিশোরীর মৃত্যু জামালপুরে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অটোরিকশা চুরির মামলা কেএনএফ সদস্যদের আদালতে উপস্থাপন, ৫২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর ৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সকল