বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আ. রউফের গ্রামের সড়ক বিলীন হচ্ছে নদীতে
- ফরিদপুর সংবাদদাতা
- ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১৭
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ এর ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী ২০ এপ্রিল শনিবার। তৎকালীন ইপিআর এর চট্টগ্রামের ১১ নং উইং-এ কর্মরত এই বীরশ্রেষ্ঠ ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুবাহিনীর সাথে এক সম্মুখ প্রতিরোধযুদ্ধে অদম্য সাহসিকতার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। শত্রুপক্ষের ২টি লঞ্চ ও একটি স্পিডবোট ডুবিয়ে ও ২ প্লাটুন শত্রুসেনাকে খতম করেন।
একপর্যায়ে ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকসেনাদের একটি মর্টার সেলের আঘাতে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার একটি টিলার উপড়ে তাকে দাফন করা হয়।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সাবেক সালামতপুর গ্রামের মসজিদের ইমাম মেহেদি হাসানের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন মুন্সি আব্দুর রউফ। এই গ্রামটির নতুন নামকরণ হয়েছে রউফনগর হিসেবে। শৈশবে পিতাকে হারিয়ে পরিবারের উপার্জনের হাল ধরতে তিনি ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস সংক্ষেপে ইপিআর এ যোগ দেন। তার মা মুকিদুন্নেসা বেগম মারা গেছেন। তার দুই বোনের বড় বোন বিধবা জোহরা বেগম (৬০) দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে পৈত্রিক ভিটায় বীরশ্রেষ্ঠ ভাইয়ের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন। আর আদরের ছোটবোন হাজেরা বেগম (৫৫) থাকেন পাশের জেলা রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলার সাংগুরা গ্রামে।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের স্মৃতিকে অমলিন রাখতে সরকার তার নিজ গ্রামে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার’ স্থাপন করেছে। ৪৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবারের উদ্যোগে স্মৃতি জাদুঘর চত্বরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া কোরআন খানী অনুষ্ঠিত হবে।
এসব আয়োজনের উদ্যোক্তা বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের বড় বোন জোহরা বেগম এতে অংশ নেয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন। জোহরা বেগম এক বার্তায় বলেন, ‘আমার জীবনে এক ভাইকে হারিয়ে সকল শহীদ ও মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ পেয়েছি। সবার প্রতি আমার আকুল আবেদন, আসুন সবাই মিলে সোনার দেশ গড়ি।’
বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামের সড়কটি বিলীন হচ্ছে নদীতে
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের গ্রামের বাড়ি যওয়ার একমাত্র সড়কটি দীর্ঘদিনেও সংস্কার করা হয়নি। মধুমতি নদীর ভাঙনর কারণে সড়কটি দিনের পর দিন নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। সড়কটি দিয়ে রিক্সা-ভ্যান দুরের কথা, পায়ে হেটে চলাও কষ্টকর। বৃষ্টি এলে সড়কটি দিয়ে সবধরণের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মোঃ হাজি রুস্তম মৃধা বলেন, দেশবিদেশ থেকে অনেকে এই গ্রামে আসেন এই বীরশ্রেষ্ঠ’র স্মৃতি দেখতে। কিন্তু যাতায়াতের সড়কটি আজো উন্নত হয়নি। ইট বিছানো পথে জায়গায় জায়গায় গর্ত। অনেকটা স্থান মধুমতি নদীতে বিলীন হচ্ছে।
একই গ্রামের ইয়াকুব শেখ বলেন, আমরা গ্রামবাসী অসুস্থ্য হলেও গ্রামে কোন অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারেনা। আমাদের নদী ভাঙনরোধ ও যাতায়াতের সড়কটি সংস্কার করা খুবই জরুরী। এজন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
বেদখলে বীরশ্রেষ্ঠের সরকারী বাসভবন
এদিকে, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের পরিবারের জন্য জমিসহ একটি বসতবাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছিলো সরকার। তবে সরকারী সেই বাসভবনে এখন আর মুন্সি আব্দুর রউফের পরিবারের কেউ কিংবা স্বজনেরা থাকেন না। বড় বোন জোহরা থাকেন পিতার পুরনো ভিটায়। ছোট বোন হাজেরা রাজবাড়ি জেলাতে।
জানা গেছে, মুন্সি আব্দুর রউফের মা মুকিদুন্নেসা বেগম জীবিত থাকতে তার দেখাশোনা করতেন ইয়াকুব মোল্যা নামে এক ব্যক্তি। মুকিদুন্নেসার বেগম মারা যাওয়ার পর মারা গেছেন ইয়াকুব মোল্যাও। বর্তমানে ইয়াকুব মোল্যার পরিবার এই সরকারী বাসভবনটিতে বসবাস করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা