১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি রিনার পথচলা (ভিডিও)

প্রতিবন্ধকতা থামাতে পরেনি রিনার পথচলা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ইচ্ছাশক্তি থাকলে কাউকেই যে থমকে দাঁড়াতে হয় না, তার একটি বড় উদাহরণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে রিনা।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যার বাজার ইউনিয়নের দামোদরদী গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহানের জন্মগত প্রতিবন্ধী মেয়ে রিনা আক্তার। জন্মগতভাবে রিনার একটি পা নেই এবং অপর পা খুব ছোট ও বোধ শক্তিহীন। তাই তার চলাচলের একামাত্র অবলম্বন মায়ের কোল। দুই বছর আগে মৃত্যুবরণ করা রিনার বাবা ছিল শরবত বিক্রেতা। হাটে বাজারে বেলের শরবত বিক্রি করেই চলাত তার চার সন্তানের বড় সংসার। রিনা সংসারের তৃতীয় সন্তান। বড় বোনের বিয়ে দিয়ে দেয় ছোট থাকতেই। মেঝ ভাই রিনার মাত্র দেড় বছরের বড়। মাধ্যমিক পাশ করলেও বাবা মারা যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে গিয়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার। জিবিকার তাগিতে শুরু করেন বাবার শরবত ব্যবসা। ছোট বোন পান্না বৈদ্যার বাজার এন এ এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রিয় পাঠক এতক্ষণে নিশ্চই আপনাদের রিনার পারিবারিক আবস্থা সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেছে।

এবার শুরু করা যাক রিনার পথ চলার গল্প। ২০০০ সালে জন্ম হওয়া রিনাকে নিয়ে জন্মের পর থেকেই শুরু হয় তার বাবা মায়ের দুঃশ্চিন্তা। কিভাবে চলবে রিনার জীবনযাত্রা। একটি ভাল চাকরি করে নিজেকে পরিচালনা করবে রিনা, সেই স্বপ্ন বাসা বাঁধে রিনার দরিদ্র বাবা মায়ের বুকে। তাই তাকে ভর্তি করে দেয়া হয় ব্রাক পরিচালিত স্থানীয় এক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয় থেকে রিনা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪.৮৩ পেয়ে সফলতার সাথে পাশ করে। তার এই ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে তার মা-বাবা তাকে স্থানীয় বৈদ্যেরবাজার এনএএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। সেখান থেকে রিনা ২০১৪ সালে জিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে (জিপিএ-৪.৯০) পেয়ে সফলতার সহিত কৃতকার্য হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পিরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে (জিপিএ-৪.৫০) পেয়ে সফলতার সহিত উত্তীর্ন হয়। পরে রিনা সোনারগাঁ উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হওয়ার জন্য গেলে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার জন্য ভর্তি হতে পারেনি। পরে সমাজের মানুষের সহযোগিতায় সে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। এ বছর রিনা এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

রিনার সাথে কথা হলে রিনা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার মা খুব কষ্ট করে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি আমার সমর্থ অনুযায়ী ভালো রেজাল্ট করার চেষ্টা করি। রিনা জানায়, এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। উচ্চ শিক্ষা শেষে একজন সফল ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন ব্যক্ত করে এই অদম্য যোদ্ধা।

অদম্য মেধাবী রিনার মা মরিয়ম বেগম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা গরিব, আমার মেয়ে শত বাধাকে অতিক্রম করে পড়ালেখা করছে। আমার স্বামী মারা যাওয়ায় আমার সংসার চালানো যাচ্ছে না। এর মাঝে রিনা ও তার ছোট বোন পান্নার পড়ালেখার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই তিনি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের একান্ত সহায়তা কামনা করেন।

স্থানীয় বৈদ্যার বাজার ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ বাসেদ মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, মেয়েটির বাবা নেই। সে খুব দরিদ্র পরিবারে থেকেও কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সমর্থ অনুযায়ী সবসময় তাকে সাহায্য সহযোগিতা করি।

এবিষয় জানতে চাইলে সোনারগাঁ উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শাহানা সুলতানা নয়া দিগন্তকে বলেন, জানান, রিনা খুব ভালো একটি মেয়ে। সে আমাদের কলেজে ব্যবসায়ী শিক্ষা বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। আমি যতদূর জানি ছোটবেলা টইফয়েড হয়ে ওর পা দু’টো স্বাভাবিক মানুষের পায়ের মতো বৃদ্ধি পায়নি। এবং তার ছোট পা দুটিতে বোধ শক্তি নেই। রিনা তার মায়ের কোলে করে কলেজে আসে বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন কুমার সরকার নয়া দিগন্তকে বলেন, অধম্য মেধাবী রিনা আক্তার ও তার পরিবারকে সহয়তার জন্য উপজেলা প্রশাসন এগিয়ে আসবে। আমি ওই মেধাবীর খোঁজ-খবর নেব। তাকে যতদূর সহযোগিতা করা যায় আমরা তা করার চেষ্টা করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement