২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আগুন জ্বালিয়ে ফের শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ - নয়া দিগন্ত

রাষ্ট্রয়াত্ত পাটকল শ্রমিকদের ডাকা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডেমরায় সড়কে আগুন জালিয়ে ফের সড়ক অবরোধ করেছে রাষ্ট্রয়াত্ত লতিফ বাওয়ানী ও করিম জুট মিলের শ্রমিকেরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার শ্রমিক আগুন দিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করাসহ লাঠি মিছিল করে।

উল্লেখ্য, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে ডেমরায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব কর্মসূচী পালন করেন শ্রমিকেরা। এ ঘটনায় রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার ডেমরা যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

ধর্মঘটের শেষ দিনেও মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকেরা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ও বৈদ্যুতিক পোল ফেলে বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে তারা রাস্তায় টায়ার ও কাঠে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এ সময় আগের মতোই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ডেমরা-যাত্রাবাড়ী, ডেমরা-রামপুরা ও ডেমরা-শিমরাইল সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে শ্রমিকরা এ্যাম্বুলেন্স ও শিক্ষার্থীদের গাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন।

এদিকে যানজটে আটকা ডেমরা ও আশপাশের এলাকার কর্মজীবী ও অফিসগামী লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। তবে দুপুরে জুট মিল কর্তৃপক্ষের দেয়া আশ্বাস ও সিবিএ নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে শ্রমিকরা রাস্তা থেকে অবরোধ সরিয়ে নেন।

ঘটনাস্থলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, শ্রমিকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বর্তমানে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা আন্দোলনে নেমেছেন। অনেকে আবার সুদের ওপর টাকা নিয়ে চলছেন। আয়ের বেশিরভাগ অংশ দিয়ে এখন সুদের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের।

পাশাপাশি শ্রমিকরা দাবি করেন, বিজেএমসি ভেঙ্গে দিয়ে মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুট মিলগুলোকে নিতে হবে। কারণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলে শ্রমিকদের বেতন ঠিকভাবে পাওয়াসহ তাদের অধিকার সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে বিজেএমসির অধীনে থেকে জুট মিলের ভিতরে তাদের অভ্যন্তরীণ জীবনযাপন খুবই কষ্টকর। বসবাসের জন্য সিটভাড়া, গ্যাস বিল ও অন্যান্য সুবিধার টাকা বেতন থেকে কেটে নিলেও সুবিধার কিছুই পান না তারা।

বাথরুমে নষ্ট বদনার পরিবর্তে নতুন বদনার ব্যবস্থা পর্যন্ত কতৃপক্স করে না বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা। এছাড়া ভাল পাটের পরিবর্তে মিলের মধ্যে পচা পাট দিয়ে রাখে। এ নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলন করলেও কোন লাভ হয় না। বিজেএমসির চেয়ারম্যান গত ২৮ মার্চের মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ঘটনাস্থলে ডেমরার পাটকল সিবিএ নেতা মোহাম্মদ আলী, তোফাজ্জল হোসেন তোতা, মোঃ ইস্রাফিল, আবুল হোসেন, জাকির মাস্টার ও আয়েত আলীসহ কয়েকজন নয়া দিগন্ত অনলাইনকে বলেন, আগামী ৬ এপ্রিল জুট মিল কর্তৃপক্ষ সারা বাংলাদেশের পাটকল নেতাদের ডেকেছেন। ওখানে বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হবে।

নেতারা আরো বলেন, আগামী ৬ এপ্রিল কর্তৃপক্ষ যদি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না দেয়, তাহলে ৭ এপ্রিল থেকে আন্দোলন চলবে।

এদিকে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, পাটকল শ্রমিকদের দাবি পূরণের লক্ষ্যে গত ১৮ মার্চ সোমবার বেলা ১১ টায় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশ বিজেএমসি’র কনফারেন্স রুমে এক আলোচনা সভা হয়। বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগ নেতৃবৃন্দ ও মিলের সিবিএ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব শাহ মোহাম্মদ নাছিম (এনডিসি) এ আলোচনা সভা করেন।

ওই সভায় সভাপতিত্বও করেন শাহ মোহাম্মদ নাছিম। এ সময় শ্রমিকলীগ ও পাটকলের সিবিএ নেতৃবৃন্দরা বিজেএমসি’র বর্তমান সংকটময় অবস্থা ও পূর্ব ঘোষিত ৯ দফা দাবির বিষয়গুলো তুলে ধরে বক্তব্য দেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো দাবি পূরণ করেনি কর্তৃপক্ষ।


আরো সংবাদ



premium cement