১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্রাইস্টচার্চ হত্যাকাণ্ড : ওমর ফারুকের লাশ আসছে মঙ্গলবার

স্ত্রী সানজিদা জাহান নেহার সাথে নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ওমর ফারুক - নয়া দিগন্ত

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ওমর ফারুক লাশ মঙ্গলবার রাতে দেশে আসছে। নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে রাত সাড়ে ১০টায় ওমর ফারুকের লাশ দেশে আসবে। পরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিষয়টি সোমবার রাতে নয়াদিগন্ত অনলাইনকে জানিয়েছেন বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নিহত ওমর ফারুকের আত্মীয় আতাউর রহমান মুকুল।

ওমর ফারুকের তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে তার বন্দরের বাড়িতে।

জানা যায়, অসময়ে বাবার মৃত্যুতে পরিবারের হাল ধরেছিলেন ওমর ফারুক। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পাড়ি জমান সুদূর নিউজিল্যান্ডে। ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন হয়। নাগরিকত্ব পেয়ে যান সেখানে। দেশে এসে ধুমধাম করে বিয়ে করেন। আবার ফিরে যান চলতি বছরের ১৮ই জানুয়ারি। কিন্তু প্রবাসে থাকলেও তার মনটা পড়ে ছিল পরিবারের কাছে। সময় পেলেই মা-বোন ও স্ত্রীর খোঁজ নিতেন তিনি।

স্ত্রীকে সতর্ক করতেন যেন সাবধানে থাকে। অনাগত সন্তান যেন মাতৃগর্ভে নিরাপদে থাকে। নানা চিন্তা। স্ত্রী সানজিদা জাহান নেহার সঙ্গে আগত সন্তানকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখতেন ফারুক। হামলার আগের দিন বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটেও স্ত্রী নেহার সঙ্গে কথা বলেন ওমর ফারুক। স্ত্রীর খোঁজ নিয়ে তাকে সাবধানে চলাফেরা এবং নিজের প্রতি খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে অসুস্থ মায়ের যত্ন নিতে ও ছোট বোনকে দেখে রাখার কথা বলেন তিনি।

কিন্তু কে জানতো এটাই ফারুকের সঙ্গে নেহার শেষ কথা হবে। তার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন দুঃসংবাদ দরজায় কড়া নাড়ছে। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ওমর ফারুক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তিনি মারা যান।

নিহত ওমর ফারুকের পরিবারে এখনো শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ফারুকের মা রহিমা খাতুন পাগলপ্রায়। অনেকটা বাকরুদ্ধ ওমর ফারুকের তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সানজিদা জাহান নেহা। তার অনাগত সন্তান জন্ম নেয়ার আগেই পিতৃহারা হলো।

নিহত ফারুকের পারিবারিক তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জের বন্দরের রাজবাড়ি এলাকার মৃত আবদুর রহমানের ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে ওমর ফারুক (৩৫) তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট বোন এখনো অবিবাহিত। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডে যান ওমর ফারুক। সেই দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার পর ছুটিতে দেশে এসে ২০১৭ সালের ২৯শে ডিসেম্বর সানজিদা জামান নেহাকে বিয়ে করেন ফারুক। এরপর সর্বশেষ গত বছরের ১৬ই নভেম্বর দেশে এসে চলতি বছরের ১৮ই জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড যান ফারুক।

ফারুকের স্ত্রী সানজিদা জামান নেহা বলেন, হামলার আগের দিন মধ্যরাত এবং নিউজিল্যান্ড সময় সকাল ৮টায় ফারুক তাকে ফোন করে তার ও পরিবার সদস্যদের খোঁজখবর নেন। সেই সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিজের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার কথা বলেন। এটাই ছিল ফারুকের সঙ্গে নেহার শেষ কথোপকথন।

তিনি জানান, টেলিভিশনে নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজের পর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক হতাহতের খবর পেয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠি। এবং সেখানে ফোন করে ওমর ফারুকের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করি। তার রুমমেটের কাছ থেকে জানতে পারি- লাঞ্চ ব্রেকের পর ফারুক মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যায়। এরপর কি হয়েছে তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি সে।

পরে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের কনস্যুলারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ওমর ফারুক আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছে। পরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় জানতে পারি ওমর ফারুক মারা গেছেন।

ঐ রাতে নিউজিল্যান্ডে যোগাযোগ করে লাশ শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভগ্নিপতির বড় ভাই মোশারফ হোসেন।

তাদের দাবি, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিটিকে হারিয়ে সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইলো না তাদের।


আরো সংবাদ



premium cement