১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভিক্ষুকের ঘরে দেড় বস্তা টাকা আর ৮৮ কেজি কয়েন!

ভিক্ষুক সাজেদা বেগম - সংগৃহীত

ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন ভিক্ষুক সাজেদা (৭৫)। সাথে থাকেন তার মেয়ে আমেনা। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই শোরগোল পড়ে যায় ভিক্ষুক সাজেদার ভাড়া বাড়ির চারদিকে। শোরগোল তো আর যেনতেন শোরগোল নয়। গুপ্তধন উদ্ধারের খবরে ভিড় করে শত শত মানুষ। কিন্তু কি উদ্ধার হয়েছে? ভিক্ষুক সাজেদার ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে দেড় বস্তা টাকা আর ৮৮ কেজি কয়েন। আর এই টাকার মোট পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর দক্ষিণ মাণ্ডা এলাকার মাদরাসা রোডে জাকির হোসেনের বাড়িতে। এ বাড়িতেই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন ভিক্ষুক সাজেদা। পরে টাকা ও কয়েনগুলো উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় মুগদা থানা পুলিশ।

এদিকে এসব টাকা ভিক্ষা করে সঞ্চয় করেছিলেন বলে দাবি করেন সাজেদা বেগম ও তার মেয়ে আমেনা। এরপরই এসব টাকা ও কয়েন মা-মেয়ের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

বাড়িটির মালিক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ট্রেজার) জাকির হোসেন জানান, বৃদ্ধা সাজেদা তার মেয়ে আমেনাকে নিয়ে তিন মাস আগে মাসিক চার হাজার টাকায় দুটি ঘর ভাড়া নেন। তারা পেশায় টোকাই ও ভিক্ষুক। মুগদা এলাকায় নাজমা নামে তার আরেক মেয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন বলে মা-মেয়ে সে সময় জানিয়েছিলেন।

জাকির হোসেন বলেন, প্রতিদিনই রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন জিনিস বস্তায় ভরে ঘরে রাখেন মা ও মেয়ে। একপর্যায়ে ভাঙাড়ির জিনিসপত্র দিয়ে তারা দুই ঘর ভরে ফেলে। এ জন্য তাদের ঘরের বাইরে ঘুমাতে হতো।

এভাবে এক মাস কেটে গেলে তাদের কাছে ঘর ভাড়ার টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু তারা গড়িমসি করতে থাকেন। এভাবে কাটে আরও প্রায় দুই মাস। গত কয়েক দিন আগে ভাড়া চাওয়া হলে মেয়ের বাড়ি টাকা আনতে যাচ্ছেন বলে জানান। এর পর তারা সেখানে গিয়ে আর ফেরেননি।

জাকির হোসেন আরো বলেন, ভেবেছিলাম ভাড়া জোগাড় করতে না পারায় তারা আর ফিরবেন না। তাই গত সোমবার সকালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সাজেদা বেগমের ঘর থেকে বস্তার স্তূপ সরিয়ে বাইরে ফাঁকা স্থানে রাখি।

একটি বস্তা অনেক ভারী ছিল। পরে টোকাইরা বস্তা খুলে কাপড়ের ভাঁজে টাকা ও কয়েন দেখতে পান। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে প্রায় দেড় বস্তা এক-দুই টাকার নোট ও বিপুল পরিমাণ কয়েন উদ্ধার করে। গণনা করে দেখা যায় সেখানে এক লাখ ৮ হাজার ৬৬০ টাকা এবং কয়েন আছে।

তিনি আরো জানান, ছয় থেকে সাতজন মানুষ দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণনা করে পাওয়া যায় ৭৬ হাজার টাকা (এক টাকা, দুই টাকা থেকে শুরু করে ১০০-৫০০ টাকার নোট) ও ৮৮ কেজি টাকার কয়েন (চার আনা থেকে শুরু করে ৫ টাকা)।

পরে স্থানীয়দের সহায়তায় মেয়ে নাজমার বাসা থেকে সাজেদা বেগম ও আমেনাকে আনা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সাজেদা বেগম জানান, ১২ তারিখে বাড়ি ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এতদিন তারা আসতে পারেননি। তাদের অবর্তমানে ঘরের তালা ভেঙে টাকার বস্তা, মালপত্র বের করা বাড়িওয়ালার উচিত হয়নি। এগুলো আমার দীর্ঘদিন ধরে জমানো ভিক্ষার টাকা।

বৃদ্ধা সাজেদার মেয়ে আমেনা জানান, বাবা মোঃ সোবহান মারা গেছেন। পেটের দায়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা দড়িহাসরাস থেকে তারা ঢাকায় এসে কোনো কাজ না পেয়ে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষার টাকা বস্তায়, কাপড়ের ভাঁজে রাখতেন মা। টাকা জমানোটা মায়ের নেশা। তার আরও দুই ভাইবোন ছিল। কিন্তু তারাও মারা গেছেন।

এ বিষয়ে মুগদা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা বলেন, ভিক্ষুক বৃদ্ধা ও তার মেয়ে এই টাকার মালিক। তাদের পাওয়া গেছে। পরে কথা বলে মা-মেয়ের কাছে টাকাগুলো হস্তান্তর করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement